মাথা ঘোরার সমস্যা হলে কেন চেকআপ করা জরুরি
Published: 19th, April 2025 GMT
মাথা ঘোরার সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে সাধারণত জানতে চান, মাথা ঘোরা কখন শুরু হয়, কতক্ষণ ধরে আছে। দিনের বা রাতের ঠিক কখন মাথা ঘোরা বেশি হয়। অথবা কোনো কাজ বেশি করলে মাথা ঘোরা বাড়ে, মাথা ঘোরা কোনো কাজ বা অ্যাকটিভির সঙ্গে সম্পর্কীত কিনা। মাথা ব্যথার সাথে বুক ধড়ফড় আছে কিনা।– এ সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার জন্য ভালো ভাবে খেয়াল করা দরকার মাথা ঘোরা ঠিক কখন বেশি হয়? এতে প্রাথমিকভাবে সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে মাথা ঘোরার সঠিক কারণ নির্ণয় করার জন্য কখনও কখনও ফুল চেকআপেরও দরকার হতে পারে।
ডা: খন্দকার আলামিন রুমী, মেডিসিন এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিটি হাসপাতাল একটি পডকাস্টে বলেন, ‘‘যারা বয়ষ্ক তাদের ব্লাড প্রেসার যদি বেশি আপ-ডাউন করে মাথা ঘোরাতে পারে। প্রেসার বেড়ে যাওয়া কিংবা প্রেসার কমে যাওয়া এই দুই কারণেই মাথা ঘোরাতে পারে। হার্টের সমস্যা থাকলেও মাথা ঘোরাতে পারে। যদি হার্ট রেট বেশি থাকে অথবা কম হয় এগুলোও মাথা ঘোরার কারণ হতে পারে। অনেক সময় শরীর দুর্বল থাকলে মাথা ঘুরতে পারে। আন্ডারলাইন যদি কোনো রোগ থাকে তাহলেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।’’
এই চিকিৎসক জানান, মাথা ঘোরার সঠিক কারণ নির্ণয় করার জন্য কখনও কখনও ফুল চেকআপ লাগতে পারে।
আরো পড়ুন:
হঠাৎ পিঠে ব্যথা হয় যেসব কারণে
দাঁতে গর্ত দেখা দিলে করণীয়
ডা: খন্দকার আলামিন রুমী বলেন,‘‘ কানের সমস্যার কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে। কানে যদি কোনো ইনফেকশন থাকে অথবা আমাদের শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখে এমন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মাথা ঘোরাতে পারে। রক্ত শূন্যতার সমস্যা হলেও মাথা ঘোরাতে পারে। মাথা ঘোরা সমস্যা দেখা দিলে কারণ নির্ণয় করার জন্য রোগীর কানে কোনো সমস্যা আছে নাকি ব্রেনে সমস্যা আছে সেগুলো নির্ণয় করার চেষ্টা করি। এ ছাড়া হার্টে সমস্যা নাকি হরমনে সমস্যা সেটাও দেখা হয়।’’
মাথা ঘোরানোর সমস্যা যদি ঘন ঘন দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই ফুল চেকআপ করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র সমস য র জন য চ কআপ
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।
আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা।
আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।
আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।
অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।
আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।
এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।
এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।
বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।
লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল