ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি কত দূর এগোল, কী কী করেছে ভারত
Published: 21st, April 2025 GMT
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার প্রস্তাবিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় গতি এসেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বিশ্বের সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারেন, সেই সম্ভাবনা মাথায় রেখে বেশ আগে থেকেই কূটনীতি শুরু করেছে ভারত। ২৩ এপ্রিল ওয়াশিংটনে দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যায়ে প্রথম সরাসরি তিন দিনের আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। ভারতের একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছে।
এ সফরের গুরুত্ব আছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প যে ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন, এ সময়ের মধ্যেই ভারত প্রাথমিক পর্যায়ের চুক্তি নিষ্পত্তির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যে চুক্তির টার্মস অব রেফারেন্স বা কার্যপরিধি নির্ধারিত হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক্সপ্লেইনারে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করতে চায়, যা একধরনের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। দেশ দুটি এই প্রস্তাবিত বাণিজ্য চুক্তি দুটি ধাপে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা এ বছরের শরৎকালের (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মধ্যে প্রাথমিক চুক্তি করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।
এই প্রাথমিক চুক্তির লক্ষ্যে উভয় পক্ষ সীমিতসংখ্যক পণ্যের বাজারসুবিধা বৃদ্ধি এবং অশুল্ক বাধা হ্রাসের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারে। সেটা হলে পরবর্তী পর্যায়ে আরও জটিল আলোচনার (যেমন সরকারি ক্রয় ও ডিজিটাল বাণিজ্যের মতো বিষয়) ভিত্তি তৈরি হতে পারে। তবে উভয় পক্ষের জন্যই লাভজনক হলেই কেবল আগেভাগে চুক্তি করা সম্ভব হবে।
ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে। ভারত-অস্ট্রেলিয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য চুক্তি (ইসিটিএ) ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। এখন তারা ইসিটিএর পরিসর সম্প্রসারণ করে আরও বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তি করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল ভারত, চীনসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে পারস্পরিক শুল্ক (বা আমদানি শুল্ক) আরোপ করেন। যদিও ৯ এপ্রিল তিনি এই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন, যার মেয়াদ চলতি বছরের ৯ জুলাই পর্যন্ত। তবে এই স্থগিতের আদেশ চীন ও হংকংয়ের জন্য প্রযোজ্য নয়। এর মধ্যে প্রায় ৭৫টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আগ্রহ জানিয়েছে। চীনের পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে ২ এপ্রিল ঘোষিত ১০ শতাংশ ন্যূনতম শুল্ক কার্যকর থাকবে। এ ছাড়া ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ির সামগ্রীতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আছে।
২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন বা ৫০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে চায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। যদিও বর্তমানে দেশটির মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য মাত্র ১৯১ বিলিয়ন বা ১৯ হাজার ১০০ কোটি ডলারের।
মোট ১৯টি অধ্যায় নিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করা হবে। পণ্য, সেবা, শুল্ক সহজীকরণ, বিনিয়োগসহ আরও নানা বিষয় থাকবে এতে। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ভারতের বাজারে তাদের উৎপাদিত বৈদ্যুতিক গাড়ি, বিভিন্ন শিল্প পণ্য, মদ, দুগ্ধজাত পণ্য, পেট্রোকেমিক্যাল, আপেলসহ বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক হ্রাস করা হোক। এর বদলে ভারত চায় টেক্সটাইল, পোশাক, গয়না, রত্ন, চামড়াজাত পণ্য, রাসায়নিক, চিংড়ি, তেলবীজ ও হর্টিকালচার পণ্যের প্রবেশাধিকার।
২০২১-২২ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের পণ্য বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত ছিল ৪১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ১৮০ কোটি ডলার; আগের কয়েক বছরের তুলনায় যা বেশি। এই ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের সময় প্রথম এ নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী পিয়ুষ গয়াল ৪-৬ মার্চ ওয়াশিংটন সফর করেন। ওই সফরে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া–বিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ ২৫-২৯ মার্চ ভারত সফর করেন। তখনো এ নিয়ে আরেক দফা আলোচনা হয়। সেই সফরের পর এখন ভারতীয় দল যুক্তরাষ্ট্র সফর করছে।
২০২১-২২ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের পণ্য বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত ছিল ৪১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ১৮০ কোটি ডলার; আগের কয়েক বছরের তুলনায় যা বেশি। এই ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আরও যা যা করেছে ভারত
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের হাত থেকে বাঁচতে ভারত শুরু থেকেই তৎপর। তারা জানত, মার্কিন পণ্যে শুল্ক কমানো না হলে তাদের অবস্থাও চীনের মতো হতে পারত। সে জন্য তারা আগে থেকেই কর হ্রাসসহ নানাবিধ উদ্যোগ নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য যেমন কাঠবাদাম ও ক্র্যানবেরিতে তারা আগেও শুল্ক কমিয়েছে। চলতি বছরের মার্চে তারা এসব পণ্যে আরও শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব দেয়। রয়টার্সের আরেক সাংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের মধ্যে ৫৫ শতাংশের ওপর শুল্ক কমাতে রাজি হয়েছে ভারত।
৬ মার্চ লোকসভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারতের গড় আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ করা হয়েছে। দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী জিতিন প্রসাদ এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ২০২৩ সালে ভারতের সরল গড় শুল্কহার ছিল ১৭ শতাংশ। ২০২৫-২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটের পর সরল গড় শিল্প শুল্ক ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
সম্প্রতি লোকসভায় অর্থ বিল পাসের সময়ে ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য যে ৬ শতাংশ করারোপ করা হতো, সেটাও তুলে নেওয়া হয়েছে। মূলত ইলন মাস্কের এক্স, গুগল ও মেটার ওপর এই শুল্ক আরোপ করা হতো। বার্তা পরিষ্কার, সুর নরম করেছে নয়াদিল্লি।
এ ছাড়া চলতি বছরের বাজেটে মার্কিন মোটরসাইকেলে শুল্ক হ্রাস করে ভারত। তখন মার্কিন ব্র্যান্ড হারলে ডেভিডসনের আমদানিতে ভারত আরও ১০ শতাংশ শুল্ক হ্রাস করে। এর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত হারলে ডেভিডসনের ওপরে ৫০ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছিল। এবারের বাজেটে যা আরও কিছুটা কমানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক কম র প কর মন ত র র জন য দশম ক আমদ ন বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগ বাদে ৫০ দলকে ইসির চিঠি
বার্ষিক আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন দিতে ৫০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত থাকায় আওয়ামী লীগকে চিঠি দেয়নি সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। সোমবার নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, বরাবরের মতো দলগুলোর কাছে নিরীক্ষা প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি সচিবালয়। ২০২৪ পঞ্জিকা বছরের হিসাব চেয়ে এবার ৫০টি নিবন্ধিত দলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইসির এ-সংক্রান্ত চিঠি দলগুলোর সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হয়।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, নিবন্ধন স্থগিত থাকায় এবার আওয়ামী লীগের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়নি। ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালুর পর প্রথম বাদ পড়ল অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে টানা দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটি। অপরদিকে একযুগ পর নিবন্ধন পুনর্বহাল হওয়ায় বার্ষিক লেনদেনের তথ্য দিতে এবার জামায়াতে ইসলামীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ইসিতে ৫০টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত রয়েছে। একটির নিবন্ধন স্থগিত ও চারটির নিবন্ধন বাতিল রয়েছে। নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিবছর জুলাইয়ের মধ্যে আগের পঞ্জিকা বছরের আর্থিক লেনদেনের প্রতিবেদন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এবার দলগুলোকে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বরের হিসাব দিতে হবে চলতি ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে।
স্বীকৃত চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিরীক্ষা করে ইসিতে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর। আইন অনুযায়ী পরপর তিন বছর দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান রয়েছে।