যশোর থেকে অপহরণের একমাস পর সাতক্ষীরায় বাগানে মিলল ব্যবসায়ীর লাশ
Published: 27th, April 2025 GMT
যশোর থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। অপহরণের একমাস তিনদিন পর রোববার বিকেলে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার দক্ষিণ একসরা গ্রামের একটি বাগান থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। দুর্বৃত্তটা তাকে খুন করে মরদেহটি সেখানে পুঁতে রাখে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অপহরণের ঘটনায় রিপন ও সবুজ নামে দু'জনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এসময় সবুজের শ্বশুর খোকন মোল্লাকে আটক করা হয়েছে।
যশোর শহরের শংকরপুর ইসহক সড়কের বাসিন্দা ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম নিজ এলাকায় কাপড় ও টেইলার্সের ব্যবসা করতেন। বসবাস করতেন দোকানের পাশে কামরুল ইসলামের বাড়িতে ঘর ভাড়া নিয়ে। একই বাড়িতে ভাড়া থাকেন স্থানীয় রিপন হাওলাদার ও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার তালতলা বাজারের হবি গাজীর ছেলে সবুজ ওরফে রবিউল।
অপহৃত রেজাউলের ছেলে মেহেদী হাসান চয়ন বলেন, গত ২২ মার্চ রাত সাড়ে ১২টার দিকে রেজাউলকে মোবাইলে ডেকে নেয় সবুজ ও রিপন। এরপর থেকে তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। এ ঘটনায় তার পরিবার জিডি করেন। খোঁজ না পেয়ে এক সপ্তাহ পর অপহরণ ও গুমের অভিযোগ এনে সবুজ, রিপনসহ অজ্ঞাত ২-৩ জনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
পুলিশ জানায়, সবুজ ও রিপন যশোর শহরেই রেজাউলকে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দি করে ইজিবাইকে কিছুদূর নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ও পরবর্তীতে বাসে করে সাতক্ষীরায় নিয়ে যায়। এরপর সবুজ লাশটি তার শ্বশুরবাড়ির পাশে একটি বাগানে পুঁতে রাখে। কয়েকদিন পর বিষয়টি জানতে পারেন সবুজের শ্বশুর খোকন মোল্লা। তিনি লাশটি উত্তোলন করে পাশের আরেকটি বাগানে পুনরায় পুঁতে রাখে। পুলিশের অভিযানে আজ দুপুরে ওই বাগান থেকেই রেজাউলের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সবুজের শ্বশুর খোকন মোল্লাকেও আটক করা হয়েছে।
যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত জানান, পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণকারীদের শনাক্ত করে। এরপর অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সবুজ ও রিপনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা রেজাউলকে অপহরণ ও হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে, সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে ঘটনার রহস্য।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: যশ র হত য সব জ ও র জ উল ব যবস মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।
যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।
শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।
পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।
শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।
গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলামস্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।
আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’