ইতালির স্থাপত্য প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ থেকে যা উপস্থাপন করা হচ্ছে
Published: 28th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের স্থাপত্যভাবনা, দক্ষতা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরতে ইতালির ‘ভেনিস দ্বিবার্ষিক স্থাপত্য প্রদর্শনী ২০২৫’-এ অংশ নিতে যাচ্ছে ‘ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ লিমিটেড’। ইউরোপিয়ান কালচারাল সেন্টারের আমন্ত্রণে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানটি। দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনীটির এবার ১৯তম আসর বসবে আগামী ১০ মে, চলবে পরবর্তী ছয় মাস।
এ নিয়েই আজ ২৮ এপ্রিল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। যেখানে দ্বিবার্ষিক স্থাপত্য প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের বিস্তারিত তুলে ধরেন ‘ভিত্তি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা ও স্থপতি ইকবাল হাবিব ও ইশতিয়াক জহির।
সংবাদ সম্মেলন শেষে স্থপতি ইকবাল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই বছর পরপর বিভিন্ন থিমে এই আয়োজন হয়। এখানে সারা পৃথিবীর স্থপতিদের আহ্বান জানানো হয়। তারপর আয়োজকেরা নিজেদের মতো করে অংশগ্রহণকারী নির্বাচন করেন। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল হাতিরঝিল প্রকল্পের জন্য। পরবর্তী সময়ে আমাদের অন্যান্য প্রকল্প দেখানোর পর আয়োজকেরা বড় পরিসরে প্রদর্শনীর জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানান।’
ভেনিসের এই প্রদর্শনীতে ‘ভিত্তি’ তাদের ৯টি প্রকল্প উপস্থাপন করবে। এসব প্রকল্প শহুরে ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সমন্বয়, পুনর্গঠন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে দেশীয় প্রয়োজনীয়তাকে সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার সঙ্গে সমন্বয় করেছে। যার মধ্যে প্রদর্শনীতে স্থান পেতে যাচ্ছে ‘হাতিরঝিল’, ‘বাবুরাইল খাল পুনঃস্থাপন’, ‘১৮টি ডিএনসিসি পার্কের পুনরুদ্ধার’-এর মতো বৃহৎ পরিসরের নগর পরিকল্পনা প্রকল্প। পাশাপাশি স্থান পাচ্ছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে স্থাপিত ‘একমাত্রা ডিবিবিএল একাডেমি’ প্রকল্প, পাবনার চাটমোহরের ‘বড়াল বিদ্যানিকেতন’, গাজীপুরের ‘বনের বাড়ি’ নামে আবাসিক বাড়ির মতো প্রকৃতির সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্থাপত্য প্রকল্প। এসব প্রকল্পে গড়া স্থাপত্য পরিবেশবান্ধব স্থানিক উপকরণ ব্যবহার করে স্থাপত্যকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এ ছাড়া স্থাপত্য ঐতিহ্য ও তাত্ত্বিক স্থাপনা পুনঃস্থাপনের প্রকল্প হিসেবে ‘ব্রিটিশ কাউন্সিল’, নারায়ণগঞ্জের ‘নগর ভবন’-এর মতো প্রকল্পের অন্তর্ভুক্তি থাকবে।
আরও পড়ুনসুলতানি আমলের মুদ্রাসহ হারিয়ে যাওয়া দেশ ও জনপদের মুদ্রাও আছে এই প্রদর্শনীতে ১৯ এপ্রিল ২০২৫ইকবাল হাবিব বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা বলতে চাই, স্থাপত্যেরও গণতন্ত্রায়ণ দরকার। ওপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে নয়, জনগণকে সম্পৃক্ত করে স্থাপত্যের চর্চা করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো। তিনি বলেন, ‘স্থাপত্যের নতুন পদ্ধতির জন্য বাংলাদেশকে বলব একটি বিশ্ব পরীক্ষাগার। কারণ, ছোট দেশ, অধিক জনসংখ্যা, জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাব, নির্মাণসামগ্রীর অভাব—এমন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েও আপনারা (স্থপতিরা) নিজস্ব পদ্ধতিতে এসব অতিক্রম করছেন।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের (আইএবি) সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শুধু ভিত্তি স্থপতিদের পরিচিতি হবে এমন নয়, এর মধ্যমে বাংলাদেশের স্থাপত্যের ব্র্যান্ডিং হবে। সারা দুনিয়া দেখবে, আমরা কী চিন্তা করি।’
আরও পড়ুনবাড়িটি দেখে অনেকেই রিসোর্ট ভেবে ভুল করতে পারেন০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প আম দ র স থপত
এছাড়াও পড়ুন:
‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।
আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।
রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।