সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এছাড়া, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন টাঙ্গাইল কটন মিলস লিমিটেডের ১.৩৬ একর জমি বিক্রয় এবং স্মার্ট কার্ড পার্সোনালাইজেশন ও তাতে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত লেখা মুদ্রণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড.
সভায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ পুলিশের অপারেশনাল কাজে ব্যবহারের জন্য ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান ও তার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভুত ঘটনায় দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে ৪৬০টি থানায় এবং অন্যান্য পুলিশ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের কারণে বাংলাদেশ পুলিশের বিপুল সংখ্যক যানবাহন ভস্মীভূত হয়। ফলে, দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য পিকআপ কেনা প্রয়োজন। এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে পিপিএ-২০০৬ এর ৬৮(১) এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ২০০টি ডাবল কেবিন পিকআপ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছ থেকে কেনার প্রস্তাব করা হলে তাতে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতিটি পিকআপের দাম ৮৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে ২০০টি পিকআপ কিনতে ব্যয় হবে ১৭২ কোটি টাকা।
সভা সূত্রে জানা যায়, বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন টাঙ্গাইল কটন মিলস লিমিটেডের ১.৩৬ একর জমি বিক্রয়ের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল কটন মিলস ১৯৬১ সালে ২৭.২৯ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে এটি জাতীয়করণ করা হয় এবং এর সার্বিক পরিচালনার দায়িত্ব বিটিএমসির কাছে ন্যস্ত করা হয়। বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় মিলের ১.৩৬ একর জমি বিক্রির প্রস্তাব করেছে বিটিএমসি।
২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর তারিখে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় জমি বিক্রির প্রস্তাব করা হলে মিলটির অব্যবহৃত জমি বিক্রি না করে সরকারের উন্নয়নমূলক বা জনহিতকর কাজে লাগানোর অনুমোদন দেওয়া হয়।
অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ওই সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও এখন বিটিএমসির আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির ১.৩৬ একর জমি বিক্রির প্রস্তাব করা হলে বর্তমান কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পের আওতায় স্মার্ট কার্ড পার্সোনালাইজেশন ও ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত লেখা মুদ্রণকাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
নির্বাচন কমিশনের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সহায়তায় সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পের লট-১ এর আওতায় মোট ১ কোটি ৫৩ লাখ ৪১ হাজার স্মার্ট কার্ড ৪৯ কোটি ৫৫ হাজার টাকায় পার্সোনালাইজেশন করে মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে। লট-২ এর আওতায় ২৫ লাখ ৫৯ হাজার স্মার্ট কার্ড পার্সোনালাইজেশনের মুদ্রণ কাজ পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে ক্রয়ের প্রস্তাব করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। প্রতিটি স্মার্ট কার্ড পার্সোনালাইজেশনে ব্যয় হবে ৩১ টাকা ৯০ পয়সা।
এছাড়া, হরিপুরে ১০০ (১০% কম-বেশি) মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বার্জ মাউন্টেড পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য প্রকল্পের স্পন্সর কোম্পানি স্মিথ কো-জেনারেশন (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বাবিউবো) সঙ্গে বিরোধীয় বিষয়ে ইউনাইটেড স্টেটস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য ডিস্ট্রিক কোর্ট অব কলম্বিয়ায় দায়ের করা মামলা আদালতের বাইরে মেডিয়েশনে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে সমঝোতা ও বর্ণিত পরিমাণ মার্কিন ডলার সংস্থানের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ল শ র জন য ব ট এমস প কআপ
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ