শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়
Published: 30th, April 2025 GMT
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।
সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।
জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।
এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে রাশিয়াকে ১০-১২ দিনের সময়সীমা ট্রাম্পের
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের পথে অগ্রগতি দেখানোর জন্য রাশিয়াকে নতুন সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পথে অগ্রগতি দেখা না গেলে রাশিয়াকে পরিণতি ভোগ করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে সাড়ে তিন বছর ধরে চলা এই সংঘাত নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে অগ্রগতি না হলে রাশিয়া ও দেশটির রপ্তানি পণ্যের ক্রেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। নতুন এই সময়সীমা ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, এর আগে এ ধরনের হুমকি বাস্তবায়ন নিয়ে ট্রাম্প দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকলেও এবার তিনি ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছেন।
‘আমি নতুন একটি সময়সীমা দিতে যাচ্ছি... আজ থেকে ১০ বা ১২ দিনের সে সময়সীমা। অপেক্ষা করার কোনো কারণ নেই... আমরা কোনো অগ্রগতিই দেখতে পাচ্ছি না।’ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টগতকাল স্কটল্যান্ডে অবস্থানকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ হুমকি দিয়েছেন।
স্কটল্যান্ডে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। পাশাপাশি সেখানে তিনি গলফও খেলেন।
সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, তিনি পুতিনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চলতি মাসের শুরুতে বেঁধে দেওয়া ৫০ দিনের সময়সীমা কমিয়ে আনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক চলাকালে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নতুন একটি সময়সীমা দিতে যাচ্ছি... আজ থেকে ১০ বা ১২ দিনের সে সময়সীমা। অপেক্ষা করার কোনো কারণ নেই... আমরা কোনো অগ্রগতিই দেখতে পাচ্ছি না।’
এ ব্যাপারে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিমিত্রি মেদভেদেভ মনে করেন, ট্রাম্প ‘সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার খেলা’ খেলছেন। আর এ ‘খেলা’ যুক্তরাষ্ট্রকে একটি যুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মেদভেদেভ লেখেন, ‘প্রতিটি নতুন সময়সীমার মানে হলো একেকটি হুমকি এবং তা যুদ্ধের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে নয়, বরং তাঁর (ট্রাম্পের) নিজ দেশের সঙ্গেই এই সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ’ ও ‘সময়োপযোগী’ উল্লেখ করে প্রশংসা করেছেন। তিনি মনে করেন, এই বক্তব্য শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জেলেনস্কি লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সময়মতো তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এবং দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শক্ত অবস্থানে যাওয়ার এটাই সঠিক সময়, যা অনেক কিছু বদলে দিতে পারে।
জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘এই ভয়াবহ যুদ্ধ বন্ধে ও মানুষের প্রাণ বাঁচানোর দিকে মনোযোগী হওয়ায় আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাই।’