সম্প্রতি পোপ ফ্রান্সিস মারা যাওয়ায় পোপের পদটি খালি হয়েছে। কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাস্যরসের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, পোপ হিসেবে তিনিই নিজের প্রথম পছন্দ। এবার তিনি পোপের পোশাক পরা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। অবশ্য ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি। খবর বিবিসি

নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ছবিটি শেয়ার করার পর সমালোচনায় বিদ্ধ হতে দেখা গেছে তাকে। শেয়ার করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাদা পোশাকে ‘মিটর’ নামে পরিচিত পোপের টুপি পরে আছেন। তার গলায় একটি বড় ক্রুশও ঝুলছে।

ছবিটি এমন এক সময়ে প্রকাশ করা হয়েছে, যখন ক্যাথলিকরা পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে শোক পালন করছিলেন। ক্যাথলিকরা পরবর্তী পোপ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

নিউইয়র্কের বিশপদের প্রতিনিধিত্বকারী দ্য নিউ ইয়র্ক স্টেট ক্যাথলিক কনফারেন্স এই ছবি নিয়ে সমালোচনা করেছে।

গ্রুপটি লিখেছে, এই ছবিতে চালাকি বা মজার কিছুই নেই। আমরা মাত্রই আমাদের প্রাণপ্রিয় পোপ ফ্রান্সিসকে সমাহিত করেছি এবং সেন্ট পিটারের নতুন উত্তরসূরি খুঁজতে কার্ডিনালরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন করতে যাচ্ছেন। আমাদের নিয়ে উপহাস করবেন না।

ট্রাম্পই প্রথম প্রেসিডেন্ট নন, যার বিরুদ্ধে ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাস নিয়ে উপহাস করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বছর খানেক আগে ফ্লোরিডার টাম্পায় গর্ভপাতের পক্ষে এক সমাবেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্রুশের চিহ্ন দেখিয়েছিলেন, যা ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল।

শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্পের পোস্ট নিয়ে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান ভ্যাটিকানের মুখপাত্র ম্যাটিও ব্রুনি।

ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য বুধবার থেকে ভ্যাটিকান একটি সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পোস্টের তীব্র সমালোচনা করেছেন বামপন্থী ইতালিয়ান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যাত্তিও রেঞ্জি।

রেঞ্জি ইতালিয়ান ভাষায় এক্সে লিখেছেন, এটা এমন ছবি যা বিশ্বাসীদের ক্ষুব্ধ করে, প্রতিষ্ঠানকে অপমান করে এবং এটা দেখায় যে, ডানপন্থী বিশ্বের নেতা ঠাট্টা–বিদ্রুপ করতে পছন্দ করেন।

কিন্তু রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পোপতন্ত্রকে নিয়ে মজা করেছেন হোয়াইট হাউজ এমন বিষয়গুলোকে নাকচ করে দিয়েছে।

ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লিভিট বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তার শেষকৃত্যে যোগ দেয়ার জন্য ইতালি গিয়েছিলেন। তিনি ক্যাথলিক এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার কট্টর সমর্থক।

প্রসঙ্গত, ৮৮ বছর বয়সে পোপ ফ্রান্সিস গত ২১ এপ্রিল মারা যান। পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট পদত্যাগ করার পর ২০১৩ সালের মার্চে কার্ডিনাল জর্জ মারিও বার্গোগ্লিও ক্যাথলিক চার্চের নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত হন।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলও কি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে

১৫ বছর ধরে অনেক ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল আর সংগঠন মিলে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন।

এর ফলে হাসিনা সরকারের পতন হয় ও তিনি এবং তাঁর দলের কর্মীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এ পরিবর্তন শুধু একটা সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের ভয় ও দমনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সাহস, আশা ও গণতান্ত্রিক চেতনার একটি বড় জয় ছিল।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, কিছু গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনের সফলতাকে শুধু নিজের নামে দাবি করতে শুরু করে। কেউ কেউ বলতে থাকে, তাদের কারণেই সরকার পতন ঘটেছে। তাই তারাই ভবিষ্যতে ক্ষমতার একমাত্র ভাগীদার।

আবার কিছু ধর্মীয় বা আদর্শিক গোষ্ঠী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যারা আগে প্রকাশ্যে তেমন সক্রিয় ছিল না। এ ছাড়া কিছু নতুন দল, যারা আগে রাজনীতিতে খুব একটা পরিচিত ছিল না, তারাও হঠাৎ করে সামনে চলে এসেছে। তারা নিজেদের ‘নতুন শক্তি’, ‘ভিন্নধারার দল’ হিসেবে উপস্থাপন করে, কিন্তু তাদের আচরণে কখনো কখনো পুরোনো রাজনীতির কৌশলই দেখা যায়।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনা স্বৈরশাসকদের টিকে থাকার দুটি মূলমন্ত্রেই ব্যর্থ২২ আগস্ট ২০২৪

এই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী একসঙ্গে থাকলেও আন্দোলনের পর তারা নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ করছে। এতে আন্দোলনের মূল চেতনা—জনগণের অধিকার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেন ধীরে ধীরে পেছনের দিকে চলে গেছে।

এ বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে, যাঁরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরাই কি আবার ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গিয়ে নতুন একধরনের স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেবেন?

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্ট, ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ