ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৮৭ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা হতাহত হয়েছেন। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ অনেকেই ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে আছে। তাদেরকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। শুক্রবারের অভিযানের পর গত দেড় বছরে উপত্যকায় মোট নিহত ও আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে যথাক্রমে ৫০ হাজার ৬০৯ জন এবং ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৩ জনে। এই নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।
জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত প্রায় ২ মাসে দিনে গাজায় নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৬৭৮ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ৭ হাজার ৩০৮ জন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ জ গণহত য ইসর য় ল ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধ ও আঞ্চলিক উত্তেজনায় অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের আয়ের রেকর্ড, তালিকায় মাস্কের স্পেসএক্সও
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০০ অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গত বছর অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করে রেকর্ড ৬৭৯ বিলিয়ন বা ৬৭ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে।
সুইডেনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) নতুন এক প্রতিবেদনে এ পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।
গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ, সেই সঙ্গে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ক্রমে বাড়তে থাকা সামরিক ব্যয়ের ফলে দেশের ভেতর ও বাইরে ক্রেতাদের কাছে সামরিক পণ্য ও সামরিক সেবা বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে। ফলে অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে গেছে।
সোমবার প্রকাশিত এসআইপিআরআইয়ের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিগুলোর কারণে বিশ্বব্যাপী অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চল ছাড়া বাকি সব অঞ্চলেই ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে অস্ত্র বিক্রি থেকে আয় বেড়েছে।
এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলে আয় কমার কারণ চীনের অস্ত্রশিল্প। দেশটিতে অস্ত্রশিল্পে নানা সংকটের কারণে পুরো অঞ্চলে অস্ত্রশিল্পের আয় হ্রাস পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সমরাস্ত্র বিক্রিতে শীর্ষে থাকা তিন প্রতিষ্ঠান হলো, লকহিড মার্টিন, নর্থরপ গ্রুম্যান ও জেনারেল ডাইনামিকস। গত বছর অস্ত্র বিক্রিতে শীর্ষ থাকা ১০০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯টি অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জায়গা করে নিয়েছে।
২০২৪ সালে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্ত্র বিক্রি থেকে আয় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩৪ বিলিয়ন বা ৩৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার হয়েছে। র্যাংকিংয়ে জায়গা করে নেওয়া ৩৯ মার্কিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০টিরই আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স প্রথমবারের মতো সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনকারী শীর্ষ ১০০ কোম্পানির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে অস্ত্র বিক্রি থেকে কোম্পানিটির আয় দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ১৮০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স প্রথমবারের মতো সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনকারী শীর্ষ ১০০ কোম্পানির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে অস্ত্র বিক্রি থেকে প্রতিষ্ঠানটির আয় দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ১৮০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
ইউরোপের ২৬টি অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি থেকে আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সেগুলোর মোট আয় ১৩ শতাংশ বেড়ে ১৫ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
২০২৪ সালে অস্ত্র বিক্রি করে সবচেয়ে বেশি আয় বেড়েছে চেক প্রজাতন্ত্রের অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান চেকস্লোভাক গ্রুপের। ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর তাদের আয় ১৯৩ শতাংশ বেড়ে ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছে গেছে। তালিকায় থাকা এ প্রতিষ্ঠানটি ইউক্রেনের কাছে আর্টিলারি শেল বিক্রি করে গত বছর সবচেয়ে বেশি আয় করেছে।
ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের কারণে দেশটির অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের আয়ও বেড়েছে। এসআইপিআরআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনের জেএসসি ইউক্রেনিয়ান ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রির আয় ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
এসআইপিআরআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে ইউরোপের অস্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে কাঁচামালের চাহিদা বেড়েছে।
এসআইপিআরআই এ নিয়ে সতর্ক করে বলেছে, কাঁচামালের উৎস, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ খনিজের ওপর নির্ভরতার ক্ষেত্রে চীন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়ায় চ্যালেঞ্জ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরও পড়ুনকোন দেশ, কেন সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করে১৭ জুলাই ২০২৫তালিকায় রাশিয়ার মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছে। সেগুলো হলো, রোস্টেক এবং ইউনাইটেড শিপবিল্ডিং করপোরেশন। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সত্ত্বেও তাদের সম্মিলিত আয় ২৩ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ১২০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
আর গত বছর এশিয়া ও ওশেনিয়ার অস্ত্র নির্মাতাদের আয় ২০২৩ সালের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ কমলেও তারা সম্মিলিতভাবে ১৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে।
‘চীনা অস্ত্র ক্রয়ে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগের কারণে ২০২৪ সালে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র চুক্তি স্থগিত বা বাতিল করা হয়েছে।’এই অঞ্চলের আয় কমে যাওয়ার কারণ হলো, র্যাঙ্কিংয়ে থাকা ৮টি চীনা অস্ত্র কোম্পানির আয় সম্মিলিতভাবে ১০ শতাংশ হ্রাস পাওয়া।
এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো চীনের অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এনওআরআইএনসিওর আয় ৩১ শতাংশ হ্রাস পাওয়া।
আরও পড়ুনবিশ্বের সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করে কোন কোন দেশ, ক্রেতাই-বা কারা১১ জুলাই ২০২৫এসআইপিআরআইয়ের মিলিটারি এক্সপেন্ডিচার অ্যান্ড আর্মস প্রোডাকশন প্রোগ্রামের পরিচালক ন্যান টিয়ান বলেন, ‘চীনের অস্ত্র ক্রয়ে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগের কারণে ২০২৪ সালে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র চুক্তি স্থগিত বা বাতিল করা হয়েছে। এতে চীনের সামরিক আধুনিকায়নের প্রচেষ্টা এবং নতুন সক্ষমতা কখন কার্যকর হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে।’
চীনের অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কমলেও জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অস্ত্র নির্মাতাদের বিক্রি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে ইউরোপ থেকে অস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাইওয়ান ও উত্তর কোরিয়া ঘিরে আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধিও স্থানীয়ভাবে অস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
র্যাঙ্কিংয়ে থাকা পাঁচ জাপানি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত আয় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৩৩০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। তালিকায় জায়গা পাওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার চারটি প্রতিষ্ঠানের আয় ৩১ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪১০ কোটি মার্কিন ডলারে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-৩৫