ছবি: সংগৃহীত

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রেনেড ছোড়ার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ফোরকান বেগম

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফোরকান বেগম। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক নারী প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ  করেন। একাত্তরের বাঙালি নারীদের ভূমিকা ছিল সে সময় সমরে ও নেপথ্যে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ফোরকান সমরে লড়া এক নারী। বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে ১৯৫০ সালের ৬ মে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম মো. তমিজউদদীন ভূইয়া এবং মায়ের নাম রোকেয়া বেগম।

১৯৬৬ সালে ঢাকা কামরুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সক্রিয় ছিলেন। উনসত্তুরের গণ অভ্যুত্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত। ১৯৭১ সারে তিনি স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

আরো পড়ুন:

৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর

শরীরে লুকিয়ে রেখেছিলেন গোপন নথি

২৫ মার্চ ১৯৭১-এ পাকিস্তানী বাহিনীর নিষ্ঠুরতা শুরু হলে ফোরকান বেগম নিজ গ্রামে চলে যান। গ্রামে গিয়ে একজন বিমান বাহিনীর সদস্য এবং দুইজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার সাক্ষাৎ পান। তাদের সহযোগিতায় পুটিনা বিদ্যালয়ের মাঠে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ডামি রাইফেল হিসেবে প্রথমে মানকচুর বড় বড় গাছ কেটে এবং কলার ডগা দিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। আর গ্রেনেড ছোড়ার প্রশিক্ষণ হিসেবে মাটির ঢেলা ছোড়ার প্রশিক্ষণ নেন। এবং পরে দক্ষতার পরিচয় দেন।

ফোরকান বেগম আরও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য আগরতলা যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। তারপর একদিন বান্ধবী ঝুনুকে সঙ্গে করে,মামা নাসির এর সঙ্গে আগরতলার উদ্দেশ্য রওনা হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিটঘর পৌঁছে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে একবার আটকে পড়েন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, একদিন আগে পাক সেনারা ওই গ্রাম থেকে লোক ধরে নিয়ে গেছে এবং ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে। সিএনবি রোডে পাক আর্মি টহল বাড়িয়ে দিয়েছে। বিটঘরে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সাহার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। নিখিলচন্দ্র, তখন বুয়েটের মেকানিক্যাল এর মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সে সময় পাক আর্মির ভয়ে গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ গ্রাম ছেড়ে ভারত চলে যাচ্ছিলেন, নিখিল ওইসব মানুষদের পারাপারে সহযোগিতা  করতেন। তিনি প্রায় রাতে সি এন বি রোডে টহলরত পাকবাহিনীর, টহল নস্যাৎ করার জন্য তাদের উপর গ্রেনেড ছুড়ে আক্রমণ করতেন। ৮ দিন সেখানে অবস্থান করার পর, ফোরকান বেগমসহ অন্যান্যদের পার হওয়ার সুযোগ ঘটে। আগরতলা পৌঁছে তাদের থাকার ব্যবস্থা হয় সাঈদ ভাই এর বাড়ি। 

সেখান থেকে জিবি হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে শরনার্থী শিবিরে সেবার কাজ শুরু করেন ফোরকান বেগম। একদিন খবর পান  আগরতলা শরণার্থী শিবির মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি পরিদর্শনে আসছেন। তিনি এবং ঝুনু সেখানে উপস্থিত হয়ে—মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি কেনেডির কাছে তুলে ধরেন। এবং বঙ্গবন্ধু কোথায় আছেন, কেমন  আছেন- তা জানার জন্য অনুরোধ জানান। পরবর্তী  ৭ দিনের মধ্যে কেনেডি বঙ্গবন্ধুর অবস্থান জানান। বঙ্গবন্ধুর অবস্থান জানার পর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উৎসাহ বেড়ে যায়।

এসে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। পাশাপাশি চালিয়ে যেতে থাকেন অসমাপ্ত, লেখা পড়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। 

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ