একটি শব্দ ‘মা’। তাতেই যেন মিশে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, আত্মত্যাগ আর আশ্রয়ের গল্প। মা দিবস সেই ভালোবাসারই এক মহোৎসব, একটি দিন যেটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর উপলক্ষ। 

মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্বের অনেক দেশেই উদযাপন করা হয় মা দিবস। বাংলাদেশেও দিনটি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

মাতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ইতিহাস বহু পুরনো। প্রাচীন গ্রিসে মাতৃদেবী রিয়া এবং রোমে সিবেলের সম্মানে বসন্তকালে উৎসব পালন হতো। রোমানদের ‘হিলারিয়া’ উৎসব ছিল মায়েদের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। মধ্যযুগে ইউরোপে চালু হয় ‘মাদারিং সানডে’-যে দিনে সন্তানেরা উপহারসহ মায়ের কাছে ফিরে যেত।

আধুনিক মা দিবসের সূচনা হয় ২০ শতকে যুক্তরাষ্ট্রে। সমাজকর্মী অ্যানা জার্ভিস তাঁর প্রয়াত মা অ্যান জার্ভিসের স্মৃতিতে ১৯০৮ সালে প্রথমবারের মতো মা দিবস উদযাপন করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ১৯১৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে জাতীয় মা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেন। ধীরে ধীরে এটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে মা দিবসের প্রচলন অপেক্ষাকৃত সাম্প্রতিক। এর পেছনে রয়েছে বিশ্বায়ন, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব। যদিও আমাদের সংস্কৃতিতে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রতিদিনের জীবনের অংশ, তবে এই দিনটি মায়ের জন্য বিশেষ কিছু করার একটি সুযোগ এনে দেয়।

শহরের তরুণ-তরুণীরা মাকে শুভেচ্ছাবার্তা, উপহার বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান। অনেকে মায়ের প্রিয় খাবার রান্না করেন, কোথাও বেড়াতে নিয়ে যান বা শুধু পাশে বসে সময় কাটান-যেটাই হোক, দিনটি হয়ে ওঠে এক গভীর আবেগের বহিঃপ্রকাশ।

একজন মা শুধুই জন্মদাত্রী নন, তিনি সন্তান গড়ারও কারিগর। তার স্নেহ, শিক্ষা, আত্মত্যাগেই একটি মানুষ সামাজিক ও নৈতিক ভিত্তি লাভ করে। একটি শিশুর প্রথম শিক্ষক মা, যিনি কথা শেখান, নৈতিকতা শেখান, স্বপ্ন দেখতে শেখান।

মা দিবস সেই নিঃস্বার্থ অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এমন একটি দিনে হয়তো একটি সাদা কার্নেশন, একটি চিঠি বা কেবল একটি আলিঙ্গনই মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। যারা মা-কে হারিয়েছেন, তাদের জন্য দিনটি হয়তো স্মৃতিময় বেদনায় মোড়া, তবুও মা দিবস হয়ে ওঠে স্মরণ ও ভালোবাসার দিন।

পৃথিবীর এক প্রান্তে যখন সন্তান মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে ব্যস্ত, অন্য প্রান্তে তখন কিছু মা তাদের সন্তানদের হারিয়ে শূন্য হাতে বসে আছেন। ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান কিংবা সিরিয়ার মতো অঞ্চলগুলোতে হাজারো মা সন্তান হারিয়েছেন যুদ্ধ ও সহিংসতায়। সন্তান প্রসব সেখানে আনন্দ নয় বরং এক আতঙ্কের নাম। চিকিৎসার অভাবে, নিরাপত্তাহীনতায় অনেক মা প্রতিদিন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বেঁচে থাকেন। এই বাস্তবতা মনে করিয়ে দেয়-মা দিবস শুধুই একটি দিবস নয়, এটি এমন একটি দিন, যা মায়ের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গীকারও হতে পারে।

বাংলাদেশ সরকার নারীর ক্ষমতায়ন ও মায়েদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি)’ কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র মায়েরা পাচ্ছেন আর্থিক সহায়তা ও দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ বাড়ানো হচ্ছে।

‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ কর্মসূচিতে সফল নারীদের সম্মান জানানো হচ্ছে। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে হটলাইন, আইন সহায়তা এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ কর্মপরিকল্পনা মায়েদের সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এইসব উদ্যোগের মূল লক্ষ্য-একটি মায়ের হাতে যেন শুধু চুলোর খুন্তি নয়, থাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার, আয় করার সুযোগ এবং মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা।

ইসলামে মায়ের মর্যাদা অপরিসীম। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.

) বলেছেন- “তোমার জান্নাত রয়েছে তোমার মায়ের পদতলে।” এই বার্তাটি মা দিবসের তাৎপর্যের সঙ্গে দারুণভাবে মিলে যায়। বাংলাদেশের মতো ধর্মপ্রবণ সমাজে মা দিবসকে ধর্মীয় ভাবনা ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে উদযাপন করলে এর গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়তে পারে।

“প্রতিদিনই তো মা দিবস”- এই বাক্যটি যতই সত্য হোক, বাস্তবে আমরা প্রায়ই মাকে সময় দিতে ভুলে যাই। সেই ব্যস্ত জীবনে এই দিনটি হয়ে উঠতে পারে আমাদের অবহেলা পূরণের একটি উপলক্ষ। মাকে একটু সময় দেওয়া, ভালোবাসার কথা বলা, কিংবা শুধুই পাশে বসে থাকা-এই ছোট ছোট কাজেই ফুটে ওঠে মা দিবসের আসল সৌন্দর্য।

মাকে খুশি করতে আজ প্রিয় ফুল উপহার দিন।  মায়ের জন্য নিজ হাতে রান্না করুন। হাতে লেখা চিঠি বা কার্ড দিন। মায়ের সঙ্গে পুরোনো অ্যালবাম দেখুন। সামাজিক মাধ্যমে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পোস্ট দিন। দূরে থাকলে ভিডিও কলে কথা বলুন। শুধু পাশে বসে কিছু সময় কাটানোও হতে পারে শ্রেষ্ঠ উপহার।

মা দিবস একটি দিনে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি চেতনা-ভালোবাসার, সম্মানের, কৃতজ্ঞতার। আসুন, আমরা শুধু একটি দিন নয়, প্রতিদিন মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করি। কারণ মায়ের মুখের হাসি-সেটিই তো আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ধন।

ঢাকা/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র উপহ র

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিপির নেতা-কর্মীরা ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ শিকার হচ্ছেন: তরিকুল ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা–কর্মীরা ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলটির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে যারা সম্মুখসারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং আমাদের এনসিপির যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা অবশ্যই মিডিয়া ট্রাইয়ালের শিকার হচ্ছেন।’

মিডিয়াকে ব্যবহার করে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করার জন্য অনেক অপশক্তি বর্তমানে কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তরিকুল ইসলাম। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫ উপলক্ষে আজ রোববার রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তরিকুল ইসলাম এ কথা বলেন।

অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে কোনো রকম সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে জানান এনসিপির যুব সংগঠনের আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এনসিপির নেতা–কর্মীদের বিতর্কিত করার জন্য এমন কোনো শক্তি নেই যে আজকে চেষ্টা অব্যাহত রাখছে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে তরুণেরা যখনই কিছু একটা করছে বা এনসিপি রিলেটেড (সম্পর্কিত) যখনই কিছু একটা আসছে, সেটা কিন্তু খবরের পাতার মধ্যে সাত দিন ধরে থাকে। কিন্তু সেই জিনিসটা অন্যদের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি না। অনেক গুরুতর অনেক কিছু হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেগুলো কখনো মিডিয়ার মধ্যে আসছে না।’

এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, তাসনিম জারাসহ অন্যদের গত ৫ আগস্ট কক্সবাজারে যাওয়া নিয়ে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারের একটা ইস্যু সামনে এনে সেখানে মিথ্যাচার করা হলো। বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে (মূলধারার সংবাদমাধ্যম) প্রচার করা হলো, সেখানে একজন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এনসিপির নেতৃবৃন্দ যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের বৈঠক হয়েছে এবং সব জায়গায় প্রচার করা হলো। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু এটা বিশ্বাস করে নিয়েছে যে আসলে আমাদের এনসিপির যাঁরা নেতৃবৃন্দ রয়েছেন, তাঁরা সেখানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এটা কিন্তু একটি ভিন্ন বার্তা দেয়, এটি অবিশ্বাসের জন্ম দেয়।’

এনসিপির এই যুব নেতা বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশের সব মিডিয়া থেকে শুরু করে যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, তারা যেন আমাদের প্রতি সেই সহনশীল আচরণ প্রদর্শন করে। তারা যদি তরুণদেরকে রাজনীতির ময়দান থেকে মাইনাস (বাদ) করার জন্য এ রকম উঠেপড়ে লাগে, সেটি বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত। কারণ, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না এই জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে তরুণেরাই কিন্তু সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। এ কারণেই কিন্তু আমরা গত ১৬ বছরের যে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ ছিল, সেটাকে ফেলে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি।’

লিখিত বক্তব্যে তরিকুল ইসলাম জানান, আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে প্রথমবারের মতো তাঁরা ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’ আয়োজন করছেন। ১২ আগস্ট মঙ্গলবার ফার্মগেটে অবস্থিত কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) এ এই সম্মেলন হবে।

সম্মেলনে যুব ইশতেহার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন তরিকুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় যুবশক্তির মুখ্য সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সোহেল, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিন মাহমুদ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, যুব উন্নয়নবিষয়ক সমন্বয়ক খালেদ মোস্তফা, সিনিয়র সংগঠক ইয়াসিন আরাফাতসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান ঘিরে থাকছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা: ডিএমপি কমিশনার
  • অনেকেই অন্যকে নিয়ে ট্রল করতে বেশি আগ্রহী
  • শিক্ষকদের কষ্টের কথা বলার জায়গা কম, শোনার লোকও নেই
  • যুব দিবসে সম্মাননা পাচ্ছেন ২০ তরুণ
  • চারুকলায় বর্ষা উৎসব ঘিরে প্রাণের মেলা
  • শিক্ষকেরা সম্মানিত হলেই সমাজ ও রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে
  • মাহবুব আলী খানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মহানগর ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল
  • এনসিপির নেতা-কর্মীরা ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ শিকার হচ্ছেন: তরিকুল ইসলাম
  • ৫২ বছর আগের ‘রংবাজ’-এর মতো চমকে দিল ‘উৎসব’
  • যুদ্ধবিধ্বস্ত সীমান্ত শহরে ভূগর্ভস্থ কবিতা উৎসব