সংসদীয় গণতন্ত্রই চায় ইসলামপন্থি ছয় দল
Published: 27th, May 2025 GMT
ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো সংসদীয় গণতন্ত্রই চায়। সংস্কার কার্যক্রমে অংশ নেওয়া এমন ছয়টি দলের কেউই শরিয়াহভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা, খেলাফত রাষ্ট্র চায়নি। ঐচ্ছিক শরিয়াহ আদালত স্থাপনের প্রস্তাব করেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। বাকি দলগুলো বিদ্যমান ব্যবস্থা অব্যাহত রেখে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতের প্রস্তাব করেছে।
এর বাইরে ঐচ্ছিক শরিয়াহ আদালত চেয়েছে আন্দালিব রহমান পার্থর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।
সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যুক্তের সুপারিশে একমত হয়নি ইসলামপন্থি দলগুলো। ধর্মভিত্তিক সব দল সংবিধানের মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা’ পুনর্বহালের প্রস্তাব করেছে। কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী আইন প্রণয়ন না করার প্রস্তাব করেছে দলগুলো। কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছে।
সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশনে লিখিত মতামত জানায় জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিস। প্রধান উপদেষ্টা ড.
ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও সমকালকে বলেছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমর্থন করেছে সব ধর্মভিত্তিক দল।
হেফাজতে ইসলাম-সংশ্লিষ্ট এবং কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলোর নেতারা সমকালকে বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে বাংলাদেশে উগ্রবাদের উত্থান হিসেবে দেখাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। ৫ আগস্টের পর পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকরা বারবার জানতে চেয়েছেন, ইসলামী দলগুলোর শরিয়াহভিত্তিক শাসন, খেলাফতভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা।
সংবিধান সংস্কার কমিশনে জামায়াত প্রস্তাব করেছিল, জরুরি অবস্থা জারি হলেও মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার স্থগিত করা যাবে না। ঐকমত্য কমিশনের মতামতে এবং সংলাপে তারাও উন্নত গণতন্ত্রের দেশগুলোর আদলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, জবাবদিহির প্রস্তাব করেছে।
দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সমকালকে বলেছেন, জামায়াত কখনও জোরজবরদস্তির মাধ্যমে ইসলাম কায়েম করার কথা বলেনি। জামায়াত সম্পর্কে যেসব নেতিবাচক প্রচারণা রয়েছে, সেগুলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ছড়ানো। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে জামায়াতের লক্ষ্য নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া; সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থনে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।
সংবিধান সংস্কার কমিশনে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন ১২ পৃষ্ঠার প্রস্তাবে ধর্মবিষয়ক একটি লাইন লিখেছে। এতে বলা হয়েছে, শরিয়াহবিরোধী আইন করা যাবে না। ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ সুপারিশেও দলটি ধর্ম-সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব দেয়নি। দলের মহাসচিব ইউনূস আহমদ বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক দলই শরিয়াহবিরোধী আইনের পক্ষে নয়।
৭ মে দ্বিতীয় দিনের সংলাপে শরিয়াহ আদালত স্থাপনের প্রস্তাব করে ইসলামী আন্দোলন। এর ব্যাখ্যায় দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকারের মতো বিষয়ে শরিয়াহ আইনে বিচার হয়। ইসলামী আন্দোলন প্রস্তাব করেছে, নিম্ন থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত পৃথক শরিয়াহ বেঞ্চ থাকবে। বাদী ও বিবাদী একমত হলে বিচারের জন্য শরিয়াহ আদালতে যেতে পারবেন। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যেমন সাধারণ ও শরিয়াহ পদ্ধতি রয়েছে। গ্রাহক যে পদ্ধতি পছন্দ করেন, তা গ্রহণ করেন। শরিয়াহ আদালতও তেমন ঐচ্ছিক হবে।
নেজামে ইসলাম পার্টি সংলাপে গুরুত্ব দিয়েছে স্থানীয় সরকারের স্বায়ত্তশাসনে। খেলাফত মজলিস সংবিধানের প্রতিটি অনুচ্ছেদ সংস্কারে প্রস্তাব দেয় কমিশনে। জমিয়ত ১৬৬ সুপারিশের ১০৯টিতে একমত পোষণ করেছে। দলটি দেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে। দেশের নাম ‘ইসলামিক প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ’ করার প্রস্তাব করেছে।
মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস ১৬৬ সুপারিশের ১৪৭টিতে একমত। এই দলটিও আনুপাতিক পদ্ধতির উচ্চকক্ষ, সাংবিধানিক কাউন্সিলসহ সরকার, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিনী সমকালকে বলেছেন, ইসলামপন্থি দল হিসেবে খেলাফত মজলিসের চূড়ান্ত লক্ষ্য খেলাফতের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। তবে তা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অর্জন করা হবে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে পারলে জনগণের মতামত এবং সমর্থনে খেলাফত কায়েম করবে খেলাফত মজলিস।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসল ম জ ট ইসল মপন থ ব যবস থ বল ছ ন মত মত ক ষমত ইসল ম দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভোট-গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার: খন্দকার মোশাররফ
ভোট বা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা এই সরকারকে সমর্থন ও সাহস দিয়ে প্রত্যাশা করেছি- অতি দ্রুত মানুষের নির্বাচনের অধিকার ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু ১০ মাস অতিক্রম করছে; আমরা দেখছি জনগণের অধিকারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভোটের অধিকার। আর ভোট ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মতো এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।
আজ বুধবার বিকেলে নয়া পল্টনে আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমরা বারবার তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি কেন অতি দ্রুত নির্বাচন দরকার। কারণ, সরকার দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য তারা ষড়যন্ত্র করছে। তা না হলে সংস্কার ও মামলার বিষয়টিকে নির্বাচনের সঙ্গে কেন যুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী টোয়েন্টি-থার্টি ভিশন ঘোষণা করেছে এবং তারেক রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে তুলে ধরছেন। অর্থাৎ আমরা সংস্কার নিয়ে সবসময় চিন্তা করেছি। কিন্তু সকল সংস্কার এককথায় করা যাবে না, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
বিএনপি নেতা বলেন, আমরা চাই নির্বাচনের সংস্কার অতি দ্রুত শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। তা না হলে তারুণ্যকে নিয়ে আমরা এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করব। এই ষড়যন্ত্র জনগণকে মোকাবেলা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রথমে ছাত্রদল-যুবদলকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। একইভাবে তার সুযোগ্য পুত্র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আজকের এই দিনে আমরা তরুণ সমাজের কাছে আবেদন জানাবো জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ভূমিকা রাখার জন্য। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ যারা নির্ধারণ করবে তারাই আজকের তরুণ প্রজন্ম। আর এই বিষয়টি জানান দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তারেক রহমান।
দীর্ঘদিন ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমাদের কী ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে আপনারা তা জানেন। মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাভোগ করতে হয়েছে, তারেক রহমানকেও বানোয়াট মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছিল। আমাদের একটি কর্মীও বাদ যায় নাই, যারা জেল খাটে নাই, মামলার শিকার হয় নাই। আর এই নির্যাতনের শেষ হয়েছে ছাত্র-যুবকদের আন্দোলনের মাধ্যমে, যোগ করেন তিনি।