যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ শুক্রবার বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইলন মাস্কের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে স্থানীয় সময় বেলা দেড়টায় এ যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আজই ট্রাম্প প্রশাসনে বিশেষ কর্মকর্তা হিসেবে মাস্কের দায়িত্বও শেষ হচ্ছে।

এ সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে গতকাল বৃহস্পতিবার লিখেছেন, ‘আজ তাঁর (মাস্ক) শেষ দিন, তবে যেমনটা বলা হচ্ছে ঠিক তেমনটা নয়, কেননা, তিনি থাকবেন সব সময়, আমাদের সঙ্গে, সব দিক থেকে সহায়তা করে।’

পোস্টে মাস্ক সম্পর্কে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘ইলন একজন অসাধারণ মানুষ।’

টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাস্ক যে ট্রাম্পের প্রশাসন ছাড়ছেন, তা তিনি আগেই জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে হোয়াইট হাউসও ইলন মাস্কের প্রশাসন ছাড়ার খবর নিশ্চিত করেছে।

ইলন একজন অসাধারণ মানুষ।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা স্থানীয় সময় গত বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ইলন মাস্ক প্রশাসন ছেড়ে যাচ্ছেন। আজ (বুধবার) রাত থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এর আগে ওই দিনই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেন মাস্ক। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই)’ অংশ হিসেবে তাঁর বিশেষ সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব শেষ হয়ে আসছে।

গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ট্রাম্প তাঁর নতুন প্রশাসনে যুক্ত করেন মাস্ককে। তাঁকে নবগঠিত ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগের’ দায়িত্ব দেওয়া হয়। এটা সরকারের সরাসরি কোনো অংশ নয়।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় ও কর্মিবহর কমানো ছিল এই বিভাগের কাজ। এ নিয়োগ নিয়ে দেশটিতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।

ট্রাম্প ও মাস্কের নেতৃত্বাধীন ডিওজিই মার্কিন ফেডারেল সরকারের প্রায় ২৩ লাখের বিশাল বেসামরিক কর্মিবহরের ১২ শতাংশ বা প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার জনকে ছাঁটাই করতে পেরেছে বলে রয়টার্সের এক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে।

বিশেষ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে মাস্কের সরকারি দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ৩০ মে (আজ)। ১৩০ দিনের ম্যান্ডেট নিয়ে দায়িত্বে আসেন মাস্ক। তবে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, ফেডারেল সরকার পুনর্গঠনে এবং এর ব্যয় ও জনবল কমাতে ডিওজিইয়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

ইলন মাস্ক বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিওজিইয়ের কার্যক্রম আরও জোরদার হবে। সরকারের মাধ্যমে এটা জীবনের অংশ হয়ে উঠবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন ডিওজিই ফেডারেল সরকারের প্রায় ২৩ লাখের বিশাল বেসামরিক কর্মিবহরের ১২ শতাংশ বা প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার জনকে ছাঁটাই করতে পেরেছে বলে রয়টার্সের এক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে।

গত মঙ্গলবার মাস্ক কংগ্রেসে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের কর ও বাজেট-সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের বিষয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। এ বিষয়ে সিবিএস নিউজকে তিনি বলেন, ‘বিশাল ব্যয়ের এ বিল দেখে আমি হতাশ হয়েছি। সত্যি বলতে, এটা বাজেটঘাটতি কমানোর বদলে বরং আরও বাড়াবে। সেই সঙ্গে ডিওজিইয়ের কাজের অবমূল্যায়ন করবে।’

ইলন মাস্কের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে শুধু বিতর্ক নয়, প্রতিবাদও হয়েছে। বেশ কিছু বিনিয়োগকারী তাঁর প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের উপদেষ্টার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে ও টেসলার ব্যবস্থাপনায় আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়ুনট্রাম্পের উপদেষ্টা হিসেবে যেসব কারণে আলোচিত ইলন মাস্ক১৩ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক র কর মকর ত সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির