যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী প্রভাবশালী গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (থিঙ্কট্যাংক) হেরিটেজ ফাউন্ডেশন গত বছর ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলন ভন্ডুল করে দেওয়ার একটি নীতিপত্র প্রকাশ করেছিল। এটির নাম দেওয়া হয়েছিল প্রজেক্ট এসথার বা এসথার প্রকল্প। তখন সেটি তেমন একটা নজর কাড়েনি।

কিন্তু নীতিপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার আট মাস পর বর্তমানে এটি নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও অধিকারকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নীতিপত্রে প্রস্তাবিত নীলনকশা অনুসরণ করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এসথার প্রকল্পের রচয়িতারা তাঁদের প্রতিবেদনটিকে ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধে একটি সুপারিশমালা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তবে সমালোচকেরা বলছেন—এই নথির চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ইসরায়েলের সমালোচক সংগঠনগুলোকে হামাসের সহযোগী তকমা দিয়ে মানুষকে তাদের বিরুদ্ধে বিষিয়ে তোলা।

সমালোচকদের মতে, প্রজেক্ট এসথারে এমন কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে, যা ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের পক্ষে কথা বলে। বিশেষ করে কেউ ইসরায়েল সরকারের নীতির বিরোধিতা করলে তাঁর বাক্‌স্বাধীনতা ও সমিতি করার অধিকার খর্ব করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসথার প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ যুদ্ধকে ‘জাতিহত্যা’ বলে বর্ণনা করেছে।

জেনে নেওয়া যাক, প্রজেক্ট এসথার কী, এটি অধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে কীভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, এটির বিশ্লেষণ এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব কেমন।

হেরিটেজ ফাউন্ডেশন কী

হেরিটেজ ফাউন্ডেশন হলো ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক একটি প্রভাবশালী রক্ষণশীল থিঙ্কট্যাংক। এটির ঘোষিত লক্ষ্য হলো, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি, সংকুচিত সরকারব্যবস্থা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, ঐতিহ্যবাহী আমেরিকান মূল্যবোধ এবং শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে জননীতি তৈরি ও প্রচার করা।

সমালোচকদের মতে, প্রজেক্ট এসথারে এমন কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে, যা ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের পক্ষে কথা বলে। বিশেষ করে কেউ ইসরায়েল সরকারের নীতির বিরোধিতা করলে তাঁর বাক্‌স্বাধীনতা ও সমিতি করার অধিকার খর্ব করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ইহুদি সংগঠন জুইশ ভয়েস ফর পিসও (জেভিপি) হামাস–সমর্থক নেটওয়ার্কের অংশ বলে উল্লেখ করেছে হেরিটেজ ফাউন্ডেশন।

চলতি মাসের শুরুতে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রজেক্টটি পরিচালনা করছেন ভিক্টোরিয়া কোয়েটস। তিনি হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে উপজাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

‘প্রজেক্ট ২০২৫’-এর উদ্যোক্তাও হেরিটেজ ফাউন্ডেশন। এটিকে সমালোচকেরা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য সম্ভাব্য কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার রূপরেখা বলে আখ্যা দিয়েছেন।

গত বছর নির্বাচনের আগে ডেমোক্র্যাটরা বারবার প্রজেক্ট ২০২৫-এর দোহাই দিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। তবে সে সময় ট্রাম্প ওই দলিল থেকে নিজেকে দূরে রাখেন।

প্রজেক্ট এসথারের লক্ষ্য

এই উদ্যোগ বলছে, তারা ২৪ মাসের মধ্যে তথাকথিত ‘হামাস সমর্থন নেটওয়ার্ক’কে টিকিয়ে রাখা অবকাঠামো ভেঙে ফেলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।

প্রজেক্ট এসথারের মতে হামাস–সমর্থক নেটওয়ার্ক কী

প্রজেক্ট এসথারের রচয়িতাদের দাবি, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে কাজ করা সব সংগঠনই হামাস–সমর্থক নেটওয়ার্ক বা এইচএসএনের সদস্য।

এসথারের রচয়িতাদের ভাষায়, কথিত নেটওয়ার্কটি এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত, যারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে হামাসের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সাধনে কাজ করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং আমেরিকান নাগরিক ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর।

সোজা ভাষায় এই নথিতে দাবি করা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলন’ মূলত একটি ‘সন্ত্রাসবাদে সহায়তাকারী নেটওয়ার্ক’ হিসেবে কাজ করছে।

গত বছর ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে উত্তাল ছিল মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় এমনই একটি বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মুখোমুখি শিক্ষার্থীরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র হ ম স সমর ন টওয় র ক স ব ধ নত ইসর য় ল ক জ করছ লক ষ য র প রক ক জ কর সরক র নপন থ

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় দফা দাবিতে ‘আমরা ভোলাবাসী’র আন্দোলন ‘সরকারি আশ্বাসে’ স্থগিত

ভোলায় গ্যাস ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবিতে চলমান ছয় দফা আন্দোলন স্থগিত করেছে ‘আমরা ভোলাবাসী’। সরকারি আশ্বাসের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন নেতারা।

সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও আমরা ভোলাবাসীর জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সদস্য রাইসুল আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মোতাসিন বিল্লাহ, ভোলা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী, ভোলা আলিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোবাশ্বিরুল হক নাঈম, ইসলামী আন্দোলনের ভোলা উত্তর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তরিকুল ইসলাম, ভোলা সদর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. কামাল হোসেন ও আমরা ভোলাবাসীর সদস্যসচিব মীর মোশাররফ হোসেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভোলার গ্যাস স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের দাবিসহ ছয় দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে দাবি আদায়ে অগ্রগতি হয়েছে।

আমরা ভোলাবাসীর দাবির মধ্যে রয়েছে, ভোলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন, বিদ্যমান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুবিধা নিশ্চিত করা, ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণ, ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহ, গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন ও নদীভাঙন প্রতিরোধ।

সংগঠনটি জানায়, আন্দোলনের আগে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে মাত্র আট চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ জন। আরও চিকিৎসক, নার্স ও যন্ত্রপাতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে নতুন মেডিকেল কলেজ হলে, সেটি ভোলায় হবে। ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেও ফিজিবিলিটি স্টাডি ও নকশা সম্পন্ন হয়েছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

সার কারখানা ও ইপিজেড স্থাপনের জন্য জমি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নেতারা। গ্যাস–সংযোগের বিষয়ে জানানো হয়, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিকে ডিমান্ড নোট জমা দেওয়া ২ হাজার ১৪৫ গ্রাহককে গ্যাস–সংযোগ দেওয়া হবে এবং ন্যায্যমূল্যে ২০ হাজার সিলিন্ডার বিতরণ করা হবে।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে আবার কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের থেকে তরুণদের দূরে থাকতে হবে: মজিবুর রহমান
  • শিশু নাঈমের পাশে ইবি ক্রিকেট ক্লাব
  • ছয় দফা দাবিতে ‘আমরা ভোলাবাসী’র আন্দোলন ‘সরকারি আশ্বাসে’ স্থগিত