প্রজেক্ট এসথার: যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলন দমাতে যেভাবে কাজ করছে সংগঠনটি
Published: 31st, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী প্রভাবশালী গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (থিঙ্কট্যাংক) হেরিটেজ ফাউন্ডেশন গত বছর ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলন ভন্ডুল করে দেওয়ার একটি নীতিপত্র প্রকাশ করেছিল। এটির নাম দেওয়া হয়েছিল প্রজেক্ট এসথার বা এসথার প্রকল্প। তখন সেটি তেমন একটা নজর কাড়েনি।
কিন্তু নীতিপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার আট মাস পর বর্তমানে এটি নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও অধিকারকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নীতিপত্রে প্রস্তাবিত নীলনকশা অনুসরণ করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসথার প্রকল্পের রচয়িতারা তাঁদের প্রতিবেদনটিকে ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধে একটি সুপারিশমালা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তবে সমালোচকেরা বলছেন—এই নথির চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ইসরায়েলের সমালোচক সংগঠনগুলোকে হামাসের সহযোগী তকমা দিয়ে মানুষকে তাদের বিরুদ্ধে বিষিয়ে তোলা।
সমালোচকদের মতে, প্রজেক্ট এসথারে এমন কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে, যা ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের পক্ষে কথা বলে। বিশেষ করে কেউ ইসরায়েল সরকারের নীতির বিরোধিতা করলে তাঁর বাক্স্বাধীনতা ও সমিতি করার অধিকার খর্ব করার আহ্বান জানানো হয়েছে।গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসথার প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ যুদ্ধকে ‘জাতিহত্যা’ বলে বর্ণনা করেছে।
জেনে নেওয়া যাক, প্রজেক্ট এসথার কী, এটি অধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে কীভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, এটির বিশ্লেষণ এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব কেমন।
হেরিটেজ ফাউন্ডেশন কীহেরিটেজ ফাউন্ডেশন হলো ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক একটি প্রভাবশালী রক্ষণশীল থিঙ্কট্যাংক। এটির ঘোষিত লক্ষ্য হলো, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি, সংকুচিত সরকারব্যবস্থা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, ঐতিহ্যবাহী আমেরিকান মূল্যবোধ এবং শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে জননীতি তৈরি ও প্রচার করা।
সমালোচকদের মতে, প্রজেক্ট এসথারে এমন কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে, যা ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের পক্ষে কথা বলে। বিশেষ করে কেউ ইসরায়েল সরকারের নীতির বিরোধিতা করলে তাঁর বাক্স্বাধীনতা ও সমিতি করার অধিকার খর্ব করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ইহুদি সংগঠন জুইশ ভয়েস ফর পিসও (জেভিপি) হামাস–সমর্থক নেটওয়ার্কের অংশ বলে উল্লেখ করেছে হেরিটেজ ফাউন্ডেশন।চলতি মাসের শুরুতে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রজেক্টটি পরিচালনা করছেন ভিক্টোরিয়া কোয়েটস। তিনি হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে উপজাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
‘প্রজেক্ট ২০২৫’-এর উদ্যোক্তাও হেরিটেজ ফাউন্ডেশন। এটিকে সমালোচকেরা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য সম্ভাব্য কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার রূপরেখা বলে আখ্যা দিয়েছেন।
গত বছর নির্বাচনের আগে ডেমোক্র্যাটরা বারবার প্রজেক্ট ২০২৫-এর দোহাই দিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। তবে সে সময় ট্রাম্প ওই দলিল থেকে নিজেকে দূরে রাখেন।
প্রজেক্ট এসথারের লক্ষ্যএই উদ্যোগ বলছে, তারা ২৪ মাসের মধ্যে তথাকথিত ‘হামাস সমর্থন নেটওয়ার্ক’কে টিকিয়ে রাখা অবকাঠামো ভেঙে ফেলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
প্রজেক্ট এসথারের মতে হামাস–সমর্থক নেটওয়ার্ক কী
প্রজেক্ট এসথারের রচয়িতাদের দাবি, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে কাজ করা সব সংগঠনই হামাস–সমর্থক নেটওয়ার্ক বা এইচএসএনের সদস্য।
এসথারের রচয়িতাদের ভাষায়, কথিত নেটওয়ার্কটি এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত, যারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে হামাসের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সাধনে কাজ করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং আমেরিকান নাগরিক ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর।
সোজা ভাষায় এই নথিতে দাবি করা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলন’ মূলত একটি ‘সন্ত্রাসবাদে সহায়তাকারী নেটওয়ার্ক’ হিসেবে কাজ করছে।
গত বছর ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে উত্তাল ছিল মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় এমনই একটি বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মুখোমুখি শিক্ষার্থীরা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র হ ম স সমর ন টওয় র ক স ব ধ নত ইসর য় ল ক জ করছ লক ষ য র প রক ক জ কর সরক র নপন থ
এছাড়াও পড়ুন:
মে মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৮ মৃত্যু
মে মাসে সারাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে এক কিশোরসহ ছয়জন নিহত হন। পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে এক কিশোর আর দলটির সঙ্গে সংঘর্ষে জামায়াতে ইসলামীর একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ওই মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫৪টি ঘটনায় অন্তত ৩৫১ জন আহত হন। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মে মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার মানবাধিকার সংগঠনটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং এমএসএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রতি মাসে সংগঠনটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
নির্যাতনের শিকার ৩৬৮ নারী ও শিশু
মে মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ৩৬৮টি ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে এমএসএফ। সংগঠনটি বলছে, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫৯টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ ১৬টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৫টি। ছয়জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এ মাসে ২১ কিশোরীসহ ৪২ নারী আত্মহত্যা করেছেন। অপহরণের শিকার হয়েছেন পাঁচ কিশোরী ও দুই নারী। এ ছাড়া দুই শিশু ও দুই কিশোরী নিখোঁজ রয়েছে। মে মাসে এক শিশু, পাঁচ কিশোরী ও ১০ নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ ৮৬ শিশু, কিশোরী ও নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ শিশু ও কিশোরী রয়েছে।
৩৪ গণপিটুনির ঘটনা
এমএসএফ জানায়, মে মাসে অন্তত ৩৪টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সাতজন নিহত ও ৩৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।