প্রান্তিক পর্যায়ে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা বিস্তৃত হলেও এখানে বড় একটি সংকট রয়ে গেছে। দেখা যাচ্ছে, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও জনবলসংকট কোনো না কোনোটি থাকেই। বিশেষ করে চিকিৎসকসংকটের বিষয়টি গুরুতর। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তেমনটি দেখা যাচ্ছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, কোটচাঁদপুরে ৫০ শয্যার সরকারি হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ বহির্বিভাগের রোগী এবং ৬৫ জন ভর্তিকৃত রোগী থাকে। কিন্তু কোনো চিকিৎসক নেই। চারটি কক্ষে চারজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) রোগী দেখছেন। পাশের জরুরি বিভাগও সামলাচ্ছেন একজন সেকমো।
রোগী ও তাঁদের স্বজনদের অভিযোগ, দিনের পর দিন এভাবেই চলছে। কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নেই। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে তাঁদের চিকিৎসকসংকট চলছে। ১৯ জন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ আছেন মাত্র ৫ জন। যাঁদের মধ্যে একজন ডেন্টাল সার্জন ও একজন অবেদনবিদ। অন্যরা হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর ভর্তি রোগী দেখায় ব্যস্ত।
পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা গঠিত। এখানে দেড় লাখের বেশি মানুষের বাস। ভৌগোলিক দিক দিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পাঁচটি উপজেলার মাঝে অবস্থিত। যশোরের চৌগাছা, ঝিনাইদহের সদর, মহেশপুর, কালীগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা সদরের অনেকে এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে রোগীর চাপ থাকে। কিন্তু চিকিৎসক ছাড়া এ চাপ কীভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব? তা ছাড়া চিকিৎসক ছাড়া একটি হাসপাতালের কার্যক্রম চলবে, সেটিই তো কোনোভাবে আশা করা যায় না। বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে ৫০ শয্যার হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে, প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
এমন পরিস্থিতিতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক হাসপাতালটিতে নিয়োগ দিতে হবে। যেসব প্রক্রিয়াগত জটিলতা বা প্রশাসনিক অনুমোদন বিলম্ব ঘটাচ্ছে, সেগুলো দ্রুত সমাধানে মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এ ছাড়া ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের কার্যক্রম শুরু করার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।
চিকিৎসাসেবা মৌলিক অধিকার—একে শুধুই কাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে পরিপূর্ণ করা যায় না, প্রয়োজন পর্যাপ্ত ও দক্ষ জনবল এবং আন্তরিক সেবার নিশ্চয়তা। আমরা আশা করব, উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ও সেবা আরও উন্নত করতে বাড়তি মনোযোগ দেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক পর য য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভয় দেখাতে হামলা, নির্দেশদাতা এখনো পলাতক
চট্টগ্রাম নগরে কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার প্রাইভেট কার থামিয়ে হামলার ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে নগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে বান্দরবান থেকে কাজী মো. ইমন হোসেন (২৩) ও মো. সুজন (২৪)–কে গ্রেপ্তার করে ডিবি (পশ্চিম)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, এক ব্যক্তির নির্দেশে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে এ হামলা চালান। সেই নির্দেশদাতা এখনো পলাতক।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশীদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, হামলার সময় ওই ব্যক্তির মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়। কাস্টমস কর্মকর্তাকে ভয় দেখানোই ছিল হামলার লক্ষ্য। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
৪ ডিসেম্বর সকালে নগরের ডবলমুরিং থানার সিডিএ আবাসিক এলাকায় কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বদরুল আরেফিন ভাড়ায় নেওয়া প্রাইভেট কারে করে যাচ্ছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলে করে তিন ব্যক্তি তাঁদের গাড়ি থামিয়ে চাপাতি দিয়ে গাড়ির কাচে কোপ দেন। গাড়ির কাচ ভাঙার পাশাপাশি হামলাকারীরা একজন আরেকজনকে বলতে থাকেন, ‘গুলি কর, গুলি কর’। তবে দুই কর্মকর্তা দ্রুত গাড়ি সরিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসেন।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের ধারণা, সম্প্রতি বিভিন্ন অনিয়ম, রাজস্ব জালিয়াতি ও নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি আটকে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে জড়িত চক্র হামলা চালাতে পারে। কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যমানের নিষিদ্ধ পপি বীজ ও ঘন চিনি, প্রায় ৩০ কোটি টাকার নিষিদ্ধ সিগারেট এবং মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা বিপুল পরিমাণ প্রসাধনী জব্দ করা হয়েছে। এসব অভিযানে দুজন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। প্রসাধনী জব্দের পর মো. আসাদুজ্জামানকে ফোনে হুমকিও দেওয়া হয়।
হামলার নির্দেশদাতার পরিচয় এখনো প্রকাশ করেনি পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে তারা। তবে হামলায় ওই ব্যক্তির ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মো. তারেক মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, নিষিদ্ধ পপি বীজ, ঘন চিনি ও মিথ্যা ঘোষণায় আসা প্রসাধনী জব্দের কারণে একটি সিন্ডিকেট ক্ষুব্ধ। গত দুই মাসে এসব সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই বিভিন্ন নম্বর থেকে হুমকি আসছে।
আরও পড়ুনগাড়ি থামিয়ে কাচে চাপাতির কোপ, একজন বলতে থাকেন, ‘গুলি কর, গুলি কর’০৪ ডিসেম্বর ২০২৫