ট্রাম্প নিজেই ভর্তি হতে পারেননি বলে কি হার্ভার্ডের ওপর এত ক্ষোভ
Published: 31st, May 2025 GMT
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ নিয়ে নানা জল্পনা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্পের ছেলে ব্যারন হার্ভার্ডে সুযোগ পাননি বলে ট্রাম্প ক্ষোভ পুষে রেখেছেন। তবে বিস্ময়কর এক তথ্য সামনে এনেছেন ট্রাম্পের জীবনীকার মাইকেল ওলফ। তিনি বলেন, ট্রাম্প নিজেই হার্ভার্ড প্রত্যাখ্যাত। তিনি হার্ভার্ডে ভর্তি হতে পারেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন সংবাদ ও মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম দ্য ডেইলি বিস্টের এক পডকাস্ট অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের বিষয়ে নতুন এই তত্ত্ব হাজির করেন ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’, ‘সিজ: ট্রাম্প আন্ডার ফায়ার’ এবং এ বছর বাজারে আসা ‘অল অর নাথিং: হাউ ট্রাম্প রিক্যাপচারড আমেরিকা’ বইয়ের লেখক মাইকেল ওলফ।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ট্রাম্পের ক্ষোভ নিয়ে সেখানে নতুন তত্ত্ব হাজির করেন মাইকেল ওলফ। গত বৃহস্পতিবার প্রচারিত দ্য ডেইলি বিস্ট পডকাস্টের উপস্থাপক ছিলেন জোয়ানা কোলস। পডকাস্টে হার্ভার্ডসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ক্ষোভ নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা।
ওলফ বলেন, ‘ট্রাম্প যা কিছু করেন, তার পেছনে অতিরিক্ত হিসাব-নিকাশ বা পরিকল্পনা থাকার দরকার নেই। তবে এ কথাও সত্য যে তিনি হার্ভার্ডে ভর্তি হতে পারেননি। তাই ট্রাম্পের এক পরিচিত বৈশিষ্ট্য হলো আইভি লিগের বিরুদ্ধে রাগ ধরে রাখা।’
আইভি লিগ হলো যুক্তরাষ্ট্রের আটটি প্রাচীন ও সুপরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গোষ্ঠী। এগুলো শিক্ষার উচ্চমান, শক্তিশালী একাডেমিক পরিবেশ, ইতিহাস ও সামাজিক মর্যাদার জন্য বিশ্ববিখ্যাত।
উল্লেখ্য হার্ভার্ডে সুযোগ না পেলেও ট্রাম্প পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র ওলফের ওই দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি লেখক মাইকেল ওলফ এবং দ্য ডেইলি বিস্টের বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর ছড়ানোর অভিযোগ করেন।
টেলর রজার্স নামের ওই মুখপাত্র বলেন, ওলফ ও জোয়ানা দুজনেই ক্লিকবেইটের জন্য মিথ্যা খবর ছড়াচ্ছেন। একজন সফল ব্যবসায়ী এবং ইতিহাসের সবচেয়ে পরিবর্তন ঘটানো প্রেসিডেন্ট হিসেবে সফল হতে ট্রাম্পের জন্য হার্ভার্ডের মতো অতি মূল্যায়িত এবং দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার কোনো দরকার ছিল না।
জনসাধারণের জন্য প্রকাশিত কোনো রেকর্ড বা প্রতিবেদন নেই, যা থেকে জানা যায় যে ট্রাম্প ১৯৬০-এর দশকে হার্ভার্ডে আবেদন করেছিলেন কি না। প্রকাশিত কোনো জীবনীতেও এমন দাবি করা হয়নি। ট্রাম্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন উঠলে হার্ভার্ডের আইনজীবীরা তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করবেন বলে ধারণা করা যায়।
ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রামের (এসইভিপি) সনদ বাতিল করেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টি নতুন বিদেশি ছাত্র ভর্তি করতে পারবে না। এতে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ বর্তমান বিদেশি শিক্ষার্থীর ওপর প্রভাব পড়েছে।
ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হার্ভার্ড একটি মামলা করেছে এবং প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে আইন ও বাক্স্বাধীনতার অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিসট্রিক্ট জাজ অ্যালিসন বোরোগস গতকাল শুক্রবার এক সংক্ষিপ্ত রায়ে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
হার্ভার্ডে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি বন্ধ এবং আন্তর্জাতিক ছাত্রদের মতাদর্শগত দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করতে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে নতি স্বীকার না করায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ওপর ক্ষুব্ধ হন ট্রাম্প। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ করা ২২০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ফেডারেল তহবিল স্থগিত করেন। এ ছাড়া করছাড় সুবিধাও বাতিল করা হয়। পরে বিদেশি ছাত্র ভর্তিতেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ র ভ র ড ব শ বব দ য য ক তর ষ ট র র র জন য র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
অবাধ্য নারীদের জন্য কুখ্যাত গোপন ‘কারাগার’, কী হয় সেখানে
কালো বোরকায় আপাদমস্তক ঢাকা এক নারী একটি ভবনের দোতলার জানালার কার্নিশে বিপজ্জনকভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। সম্প্রতি এমন একটি ছবি সৌদি আরবে আলোড়ন তুলেছে। দ্বিতীয় আরেক ছবিতে দেখা যায়, একদল পুরুষ একটি ক্রেনের সাহায্যে ওই নারীকে নিচে নামিয়ে আনছেন।
ওই নারীর পরিচয় জানা যায়নি, তবে তিনি খুব সম্ভবত সৌদি আরবের কুখ্যাত গোপন ‘কারাগারে’ বন্দী থাকা নারীদের একজন। দেশটিতে যেসব নারী পরিবার বা স্বামীর অবাধ্য হন, বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কে জড়ান কিংবা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁদের এসব ‘পুনর্বাসনকেন্দ্রে’ পাঠানো হয়।
এটি ছিল শত শত বা এর চেয়েও বেশি কিশোরী ও তরুণীকে এমন সব কেন্দ্রে আটক রাখার চিত্রের এক বিরল উদাহরণ মাত্র। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এসব কেন্দ্রে তাঁদের ‘পুনর্বাসিত’ করে পরে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এটি ছিল শত শত বা এর চেয়েও বেশি কিশোরী ও তরুণীকে এমন সব কেন্দ্রে আটক রাখার চিত্রের এক বিরল উদাহরণ মাত্র। কর্মকর্তারা বলছেন, এসব কেন্দ্রে তাঁদের ‘পুনর্বাসিত’ করে পরে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।কেন্দ্রগুলো ‘দার আল–রেয়া’ বা ‘পরিচর্যাকেন্দ্র’ বলা হয়। সৌদি আরবে এসব কেন্দ্র নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা বা ছবি-ভিডিও শেয়ার করা প্রায় অসম্ভব। দেশটিতে নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে খুব একটা দেখা যায় না।
ছয় মাসের বেশি সময় ধরে গার্ডিয়ান এ প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে নানা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা বলেছেন, সেখানে তাঁদের নিয়মিত মারধর করা হয়, জোর করে নৈতিক আচরণগত শিক্ষা দেওয়া হয়। এ ছাড়া সেখান থেকে বাইরে যেতে বা বাইরের জগতের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ রাখতে দেওয়া হয় না।
কেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে বেশ কয়েকজন নারী সেখানে আত্মহত্যা করেছেন বা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। সেখানে নারীদের বছরের পর বছর বন্দী করে রাখা হয়। পরিবার বা একজন পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া তাঁরা কোথাও যেতে পারেন না।
সৌদি আরবের এক তরুণী বলেন, ‘সৌদি আরবে বড় হওয়া প্রত্যেক মেয়ে দার আল–রেয়ার কথা এবং সেখানকার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, তা জানে। এটি যেন এক নরক।’
ওই তরুণীকেও দার আল–রেয়ায় পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানান তিনি। বলেন, ‘যখন আমি জানতে পারলাম আমাকেও সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে, আমি আমার জীবন শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। আমি জানতাম সেখানে নারীদের সঙ্গে কী ঘটে। আমার মনে হয়েছিল, আমি এটা সহ্য করতে পারব না।’ তিনি পরে পালিয়ে নির্বাসনে চলে যান।
লন্ডনভিত্তিক সৌদি আরবের অধিকারীকর্মী মরিয়ম আলদোসারি বলেন, ‘একজন তরুণী বা নারী যত দিন পর্যন্ত নিয়মকানুন মেনে চলার কথা স্বীকার না করবেন, তত দিন তাঁকে সেখানে থাকতে হবে।’
২০৩৪ সালে পুরুষদের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ সৌদি আরব। বিশ্বকাপের মতো এমন একটি বৃহৎ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজক হতে পারার ঘটনাকে উদ্যাপন করছে দেশটি। বিশ্বমঞ্চে সৌদি আরব নিজেদের প্রথাগত ধ্যানধারণায় পরিবর্তন আনার চিত্র তুলে ধরতে চাইছে।
অন্যদিকে কোনো নারী প্রকাশ্যে আরও অধিকার ও স্বাধীনতা পাওয়ার দাবি তুললে তাঁকে গৃহবন্দী ও কারাবন্দী করা হচ্ছে কিংবা নির্বাসনের মুখে পড়তে হয়েছে—এমনটাই বলছেন অধিকারকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, সৌদি আরবে নারীদের শাসন ও শাস্তি দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত কেন্দ্রগুলো শাসকগোষ্ঠীর স্বল্প পরিচিত, কিন্তু কার্যকর হাতিয়ার।
নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সারাহ আল-ইয়াহিয়া বলেন, কেন্দ্রের নিবাসীদের যেভাবে ডাকা হয়, তাতে এটা পরিচর্যাকেন্দ্র নয়, এটা কারাগার। তাঁরা পরস্পরকে নাম ধরে নয়, বরং নম্বর অনুযায়ী ডাকেন। যেমন নম্বর ৩৫—এখানে আসো।
একজন তরুণী বা নারী যত দিন পর্যন্ত নিয়মকানুন মেনে চলার কথা স্বীকার না করবেন, তত দিন সেখানে থাকতে হবে তাঁকে।মরিয়ম আলদোসারি, লন্ডনভিত্তিক সৌদি আরবের অধিকারকর্মীগত শতাব্দীর ষাটের দশকে সৌদি আরবজুড়ে এই পরিচর্যাকেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হয়। কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে কর্মকর্তাদের ভাষ্য, এগুলো বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত বা দণ্ডপ্রাপ্ত তরুণীদের আশ্রয়স্থল, যেখানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় নারী বন্দীদের পুনর্বাসন করা হয়, যেন তাঁরা আবার নিজেদের পরিবারে ফিরে যেতে পারেন।
সারাহ আল-ইয়াহিয়া এসব পরিচর্যাকেন্দ্র বন্ধ করার দাবিতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যেসব মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁরা বলেছেন, কেন্দ্রগুলোয় বন্দীদের ওপর নানা নির্যাতন চালানো হয়। কেন্দ্রে আসার সময়ই তাঁদের নগ্ন করে শরীরে তল্লাশি ও কৌমার্য পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়, তাঁদের ঘুম পাড়িয়ে রাখতে ওষুধ দেওয়া হয়।
এক মেয়ে সারাহকে বলেছেন, একটি কেন্দ্রে একবার একটি মেয়ে তাঁর পারিবারিক নাম প্রকাশ করেছিলেন। তাতেই তাঁকে শাস্তি হিসেবে বেত্রাঘাত করা হয়। ধর্মীয় অনুশাসন না মানলেও বেত্রাঘাত করা হয়। আর যদি অন্য আরেকটি মেয়ের সঙ্গে কাউকে একা পাওয়া যায়, তখনো মার খেতে হয়—সমকামী বলা হয় তাঁদের। বেত্রাঘাতের সময় পাহারাদারেরা (কেন্দ্রের নারী নিরাপত্তাকর্মীরা) সেটি পর্যবেক্ষণ করেন।
সারাহর বয়স এখন ৩৮ বছর, তিনি নির্বাসনে আছেন। বলেন, তাঁর বয়স যখন ১৩ বছর, তখন তাঁর মা–বাবা তাঁকে দার আল-রেয়ায় পাঠানোর হুমকি দিতে শুরু করেন। তাঁর দাবি, ‘আমি বাবার যৌন নিপীড়ন মেনে না নিলে তিনি আমাকে এ হুমকি দিতেন।’
‘অবাধ্য’ মেয়ে ও নারীদের দার আল-রেয়ায় যাওয়া অথবা বাড়িতে নিপীড়িত হতে থাকার মধ্যে একটি বেছে নিতে হয়।
কেন্দ্রগুলোয় পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে বেশ কয়েকজন নারী সেখানে আত্মহত্যা করেছেন বা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।সৌদি আরবে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে নির্যাতনের শিকার নারীদের সাহায্য করাটাও অপরাধ হয়ে দাঁড়ায়—এমনটাই দাবি করেন সারাহ। তিনি বলেন, ‘আমি একজন নারীকে চিনি, তিনি সহিংসতার শিকার এক নারীকে সহায়তা করেছিলেন। আর সে কারণে ছয় মাসের কারাদণ্ড হয় তাঁর।’
সৌদি আরবে যদি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া কোনো নারীকে কেউ আশ্রয় দেন, সেটা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
নাম প্রকাশ না করে সৌদি আরবে নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একজন অধিকারকর্মী বলেন, ‘এসব নারীর শুভাকাঙ্ক্ষী বলতে কেউ থাকেন না। বছরের পর বছর তাঁরা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন। এমনকি তাঁরা যদি কোনো অপরাধ না করেন, তবু। কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ একজন পুরুষ অভিভাবক, বিয়ে করা অথবা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়া।’
বয়স্ক পুরুষ ও অপরাধী হিসেবে সাজা ভোগ করা ব্যক্তি—যাঁদের কেউ বিয়ে করতে চান না, তাঁর এসব কেন্দ্রে এসে পাত্রী খোঁজেন। কেউ কেউ এই নরক থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হিসেবে তাঁদের বিয়ে করতে রাজিও হন।
ফাওজিয়া আল-ওতাইবি নামের একজন অধিকারকর্মী বলেন, সৌদি আরবের অনেক পুরুষ মনে করেন, একজন নারীর এটাই প্রাপ্য। সরকার থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করায় তাঁদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
আমি একজন নারীকে চিনি। তিনি সহিংসতার শিকার এক নারীকে সহায়তা করেছিলেন। আর সে কারণে ছয় মাসের কারাদণ্ড হয় তাঁর।সারাহ আল-ইয়াহিয়া, সৌদি আরবের নির্বাসিত অধিকারকর্মীকেন্দ্রগুলো নিয়ে কেউ কথা বলার বা অনলাইনে কিছু পোস্ট করার সাহস দেখান না বলে জানান ফাওজিয়া। ২০২২ সালে তিনি সৌদি আরব থেকে পালিয়ে যান। বলেন, ‘আপনি সেখানে যাওয়ার পর কেউ আর আপনার খবর নেবে না। সেখানে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়, যেন নিপীড়িত নারীই লজ্জার মধ্যে পড়ে যান।’
যদি সৌদি আরবের সরকার নারীর অধিকারকে গুরুত্ব দিত, তবে তারা এসব পরিচর্যাকেন্দ্রের সংস্কার করত এবং নির্যাতনের শিকার নারীদের জন্য যথাযথ, নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলত বলে মনে করে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো।
মানবাধিকার গোষ্ঠী এএলকিউএসটি বলেছে, সৌদি আরবে লিঙ্গভিত্তিক নিয়ম চাপিয়ে দিতে দার আল-রেয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতিয়ার হিসেবে কুখ্যাত, যা সরকারের নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে পুরোপুরি বিরোধপূর্ণ।
পরিচর্যাকেন্দ্রগুলো নিয়ে সৌদি সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষায়িত পরিচর্যাকেন্দ্র রয়েছে, যা পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারী, শিশুসহ দুর্বল শ্রেণিকে সহায়তা করে। তিনি জোর দিয়ে এসব কেন্দ্রে জোরপূর্বক বন্দী রাখা, নির্যাতন বা কোনো কাজে বাধ্য করার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
মুখপাত্র বলেছেন, ‘এগুলো কারাগার নয় এবং কোনো ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়, গভীরভাবে তদন্ত করা হয়…নারীরা যেকোনো সময় এখান থেকে বের হতে পারেন—স্কুল, কর্মক্ষেত্র বা ব্যক্তিগত যেকোনো কাজেও যেতে পারেন। পরিবার বা অভিভাবকের অনুমোদন ছাড়াই যেকোনো সময় স্থায়ীভাবে সেখানে থেকে বেরিয়ে যাওয়ারও অধিকার রাখেন।’
কর্তৃপক্ষ বলছে, পারিবারিক নিপীড়নের অভিযোগগুলো একটি বিশেষায়িত ও গোপন হটলাইনের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় এবং এ–সংক্রান্ত মামলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যেন ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।