২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ঠিকাদারি কাজ থেকে উৎসে কর কর্তনের সর্বোচ্চ হার কমানো হয়েছে।
সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।
প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “সম্ভাব্য মুনাফার পরিমাণ বিবেচনায় ঠিকাদারি কাজ থেকে উৎসে কর কর্তনের সর্বোচ্চ হার ৭ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশে হ্রাস করা হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিধান সংবিধান পরিপন্থি: টিআইবি
বাজেটের আকার আরো ছোট হওয়া উচিত ছিল: আমির খসরু
এ বিষয়ে এর আগে তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে কর কাঠামো ও নীতিমালাকে আরো কার্যকর ও প্রাসঙ্গিক করে তোলার জন্য প্রয়োজন কর যৌক্তিকীকরণ। এতে রাষ্ট্র পরিচালনায় অতি প্রয়োজনীয় রাজস্ব আদায়ে যেমন গতিশীলতা আসবে, তেমনি বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকবে অবারিত। কর কাঠামোর বিদ্যমান অসামঞ্জস্যতা দূরীকরণ এবং কর জাল সম্প্রসারণে অর্থ অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর মাধ্যমে কিছু কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে।”
ঠিকাদারি কাজের উৎসে কর কমানোর বিষয়টি এর আওতায় রয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড.
এবারের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এটাও গত বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে কম। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এডিপি ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
এবার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জোগান দেবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য খাত থেকে আসবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বা মোট লক্ষ্যমাত্রার ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব বাজেটের আকার ৫ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা।
এর আগে সোমবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের বিশেষ বৈঠকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
সংসদ না থাকায় এবারের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয়েছে।
ঢাকা/হাসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব ত ব জ ট উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
আর্থিক খাতকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন অপশাসনের মাধ্যমে এই খাতকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় তিনি এই মন্তব্য করেন। সেই সঙ্গে ব্যাংক খাতে নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেছেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং খাতের দীর্ঘদিনের কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সরকার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি, তারল্যসংকট, দেউলিয়াত্ব বা অস্তিত্বের জন্য হুমকি—এমন সব ঝুঁকির সময়োপযোগী সমাধান এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, সংস্কারের অংশ হিসেবে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো, ব্যাংকিং খাতে সংস্কার কর্মসূচির ভিত্তি তৈরি করতে ব্যাংকগুলোর সম্পদের ব্যাপক গুণগত পর্যালোচনা করা। নীতি ও প্রবিধানসমূহের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিতকরণে এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সুশাসন বজায় রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা। এ ছাড়া দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চুরি–পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত সরকারের সময়ে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন লুটপাট এবং দুর্নীতির ফলে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়লেও বারবার পুনঃ তফসিলীকরণের মাধ্যমে আর্থিক খাতের প্রকৃত অবস্থা গোপন রাখা হয়েছিল। কিন্তু আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ঋণ খেলাপি ও নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি। ফলে এই খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০২৩ সালের জুন মাসের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ২০ দশমিক ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
এই খাতের প্রকৃত চিত্র উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে সম্পদের মান পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা নিরূপণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।