ঈদ উৎসবে নারীর স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন
Published: 3rd, June 2025 GMT
উৎসব মানে আনন্দ। সবার আনন্দ উদ্যাপন নিশ্চিত করতে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে নারীর ওপর। নানা পদের রান্না, পরিবেশন, ঘর গোছানো, ধোয়ামোছা, আত্মীয়স্বজন সামলানোসহ দিনমান থাকে নানা কাজ। এটাই যেন নারীর ‘উৎসব’। উৎসবের ছুটিতে অনেক সময় সাহায্যকারীরাও থাকে না। তাই বাড়ির পুরো কাজের চাপ এসে পড়ে নারীর ওপর। এ থেকে হতে পারে নানা সমস্যাও।
পানিশূন্যতা
প্রচণ্ড গরমে রান্নাঘরে কাজ করতে গিয়ে ঘেমে–নেয়ে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। হতে পারে প্রস্রাবে সংক্রমণসহ নানা সমস্যা। তাই বারবার পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পান করা যায় ডাবের পানি, ফলের রস, লেবুর শরবত, পুদিনা বা জিরা পানিও। কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিন। ফ্যানের নিচে বা শীতল জায়গায় জিরিয়ে নিন।
মাংস সংরক্ষণে ‘হাইজিন’
কোরবানির ঈদে কাঁচা মাংস নারীদের গোছাতে হয়। এ সময় হাইজিন (স্বাস্থ্য বা পরিচ্ছন্নতাবিধি) বজায় রাখতে হবে। কাঁচা মাংস ধরার পর ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। নখের নিচে রক্ত ও জীবাণু লেগে থাকতে পারে। সম্ভব হলে কিচেন গ্লাভস পরে মাংস ধরা ও প্যাকেট করা উচিত। রান্নাঘরের মেঝে, বোর্ড, টাইলস, ছুরি–বঁটিও ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে জীবাণুনাশক তরল দিয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে
মুছে নিতে হবে। কেবল একজনেরই কাঁচা মাংস ধরা এবং তা রান্না বা পরিবেশনের মতো কাজ করা উচিত নয়। এতে খাবারে জীবাণু মিশে যেতে পারে। সব গুছিয়ে পরিচ্ছন্ন করে তবেই রান্না ও পরিবেশন শুরু করুন।
ত্বকের সমস্যা
যেকোনো উৎসব অনুষ্ঠানে বারবার ধোয়ামোছা করতে হয় বলে হাতের ত্বকে একজিমা, ফেটে যাওয়া বা ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। বারবার হাত না ভিজিয়ে একবারে কাজ শেষ করতে চেষ্টা করুন। গ্লাভস পরে ধোয়ামোছা করা ভালো। কারও ডিটারজেন্টে অ্যালার্জি থাকতে পারে। কাজ শেষে পরিষ্কার কাপড়ে হাত মুছে ময়েশ্চারাইজার বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিন।
নিজের দিকে খেয়াল
কাজের চাপে নারীদের নিজের খাবারের সময় মেলে না প্রায়ই। এমনকি ওষুধ খেতেও ভুল হয়ে যায়। কিন্তু নিজের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সময়মতো খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। নইলে ক্লান্তি চেপে বসবে। সবকিছু একদিনে রান্না করে ফেলতে হবে, এটা ঠিক নয়। দীর্ঘ ছুটিতে নানা ধরনের খাবার তৈরির জন্য অনেক সময় পাওয়া যাবে। তাই একসঙ্গে বেশি কাজের চাপ নেওয়া ঠিক নয়।
সবার সাহায্য
একজনের ওপর কাজের চাপ কমাতে পরিবারের সবার উচিত উৎসবে কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়া। খাবার পরিবেশন, টেবিল গোছানো, ধোয়ামোছার মতো কাজে অন্যরা এগিয়ে এলে নারীর কাজের চাপ অনেকটাই কমে। মাংস প্যাকেট করা ও সংরক্ষণেও অন্যরা সাহায্য করতে পারে।
মানসিক সুস্থতা
উৎসবে আনন্দ, বেড়ানো, স্বজন–বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো বা আড্ডা দেওয়ার ফুরসত অনেকেরই মেলে না। কিন্তু মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকার জন্য এসব সুন্দর সময় কাটানো জরুরি। নারীরাও যেন উৎসবে আনন্দ করতে পারেন, সেদিকে সবার নজর রাখা উচিত।
ডা.
তানজিনা হোসেন, অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
আগামীকাল পড়ুন: কোরবানির ঈদে স্বাস্থ্যসচেতনতা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।