জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আহত হননি তাঁরা। এরপরও সরকারের তৈরি আহত ব্যক্তিদের তালিকায় তাঁদের নাম উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতারণার মাধ্যমে এসব নাম তালিকায় ঢোকানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ভুয়া ২৫ আহত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আহত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে তাঁদের নাম বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আরও কেউ প্রতারণা করে তালিকায় নাম ঢুকিয়েছেন কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ভুয়া আহত এই ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজন ঢাকা জেলার, তিনজন করে ভোলা ও নারায়ণগঞ্জের। সিরাজগঞ্জের দুজন। বাকিরা অন্য জেলার।

ফাউন্ডেশন সেসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে ১৯ জনকে চিহ্নিত করেছে, যাঁরা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে জড়িত ছিলেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠিতে বলা হয়।

এ পর্যন্ত সারা দেশে আহত ১২ হাজার ৪৩ জনের নাম এসেছে সরকারি গেজেটে। আহত আরও ১ হাজার ৭০০ জনের নাম গেজেট আকারে প্রকাশের অপেক্ষায়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারণা করে আহত ব্যক্তিদের তালিকায় ঢোকা ২৫ জনের মধ্যে কয়েকজনের নামেও গেজেট হয়েছে। কয়েকজনের নাম গেজেট হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। তবে তাঁরা কেউ সহায়তা পাওয়া শুরু করেননি। এর আগেই বিষয়টি ধরা পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এপ্রিলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন একটি চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে। ওই চিঠিতে বলা হয়, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আহত দাবি করে অনেকে আবেদন জমা দিয়েছেন। ফাউন্ডেশন সেসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে ১৯ জনকে চিহ্নিত করেছে, যাঁরা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে জড়িত ছিলেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠিতে বলা হয়।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আরও ছয়জনের নামে অভিযোগ এসেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। তাঁরাও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে জড়িত ছিলেন না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মন্ত্রণালয় তাঁদের নামও আহত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর–সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। ১ জুন তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আহত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে যাঁদের নাম ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত তাঁদের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেননি। তালিকায় কীভাবে তাঁদের নাম এল, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। ফারুক হোসেন আরও বলেন, তাঁরা আসলেই জুলাই আন্দোলনে আহত হয়েছিলেন কি না, তা–ও আলাদাভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

তাঁদের মধ্যে শেষের দুজন সম্পর্কে মামি-ভাগনি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত দাবি করে গত মার্চে তাঁরা সহায়তার টাকা নিতে গিয়েছিলেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে। তবে সেখানে তাঁদের প্রতারণার চেষ্টা ধরা পড়ে যায়।

প্রতারণার নমুনা

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে যে ১৯ জনের নাম আহত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাঁরা হলেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ কবির এমরান, রাকিবুল হাসান, বুলবুল সিকদার, সুমন হোসাইন, রাশিদুল ইসলাম, মো.

আলম হাওলাদার, মো. শফিকুল ইসলাম, ফাতেমা বেগম মনোয়ারা, নয়ন সিকদার, শাহিদা বেগম, ভজন কুমার, আলম ফকির, রাকিব মুনশি, মো. ইসমাইল, শাহিল খান, বিল্লাল হোসেন, জিয়াউল মালিক, মহিউদ্দিন সরকার ও ফারহানা ইসলাম।

তাঁদের মধ্যে শেষের দুজন সম্পর্কে মামি-ভাগনি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত দাবি করে গত মার্চে তাঁরা সহায়তার টাকা নিতে গিয়েছিলেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে। তবে সেখানে তাঁদের প্রতারণার চেষ্টা ধরা পড়ে যায়।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের একটি সূত্র জানায়, ফারহানা ও মহিউদ্দিন চিকিৎসার নথিপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে যাচাই করে দেখা যায়, তাঁরা দুজন যে এক্স-রে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, তা হুবহু এক। পরে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ফারহানা ও মহিউদ্দিন স্বীকার করেন, তাঁরা আন্দোলনের সময় আহত হননি। চিকিৎসাসংক্রান্ত তাঁদের কাগজপত্র তৈরি করে দিয়েছেন ফারহানার স্বামী নাজিরুল বাশার। নাজিরুল কেরানীগঞ্জের নিউ লাইফ জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের একজন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ৬৭১ শহীদ পরিবারের বিপরীতে সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা হয়েছে। ১৬৩ পরিবারে এখনো সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা যায়নি। এর মধ্যে অন্তত ১৩৪টি শহীদ পরিবারের নামে সঞ্চয়পত্র ইস্যু নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

সঞ্চয়পত্র ইস্যু নিয়ে জটিলতা

সরকারি গেজেট অনুযায়ী, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদের সংখ্যা ৮৩৪। এই শহীদদের প্রত্যেকের পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে দেবে সরকার। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা এবং আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বাকি ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবে প্রতিটি শহীদ পরিবার।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ৬৭১ শহীদ পরিবারের বিপরীতে সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা হয়েছে। ১৬৩ পরিবারে এখনো সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা যায়নি। এর মধ্যে অন্তত ১৩৪টি শহীদ পরিবারের নামে সঞ্চয়পত্র ইস্যু নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কিছু ক্ষেত্রে শহীদ ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বনিবনা না হওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, স্ত্রী সঞ্চয়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু সেখানে শহীদের বাবা বা মায়ের (ওয়ারিশের) কোনো তথ্য নেই।

১ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শাখায় এসেছিলেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শহীদ হ‌ুমায়ূন কবিরের বড় ভাই হজরত আলী। তাঁর দাবি, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সঞ্চয়পত্রের জন্য যে আবেদন করেছেন, সেখানে ওয়ারিশের তথ্য দেননি। পরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নথি ঘেঁটে দেখেন, আসলেই আবেদনের সঙ্গে ওয়ারিশের তথ্য দেওয়া হয়নি। একই অভিযোগ নিয়ে চাঁদপুর থেকে এসেছিলেন রাবেয়া আক্তার। তাঁর বড় ভাই জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ হন। তবে ভাইয়ের স্ত্রী সঞ্চয়পত্র আবেদনের সময় ওয়ারিশের তথ্য দেননি। এ জন্য এসব পরিবারের বিপরীতে সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জন র ন ম ফ রহ ন ন ত কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শেরপুর নির্বাচন অফিসে রোহিঙ্গা আটক

শেরপুর ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করতে গিয়ে এক রোহিঙ্গা  আটক হয়েছেন। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আটকের পর তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা। 

আটক ব্যক্তির নাম মো. আমিন। তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার টাংহালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। তার বাবার নাম জাহিদ হোসেন। 

আরো পড়ুন:

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনে ‘বাস্তব পদক্ষেপ’ চায় ওআইসি

৪০ দেশের প্রতিনিধিদের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন 

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, আলম মিয়া নাম ব্যবহার করে উখিয়ার টাংহালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক ব্যক্তি এনআইডি করতে শেরপুর জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করেন। সেখানে তিনি বাবার নাম আলী হোসেন উল্লেখ করেন এবং শেরপুর পৌরসভার কসবা মোল্লাপাড়া ও শিবুত্তর এলাকার বাসিন্দা হিসেবে দাবি করেন। কথাবার্তা ও নথিপত্র যাচাইয়ের সময় সন্দেহ হলে কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় ওই ব্যক্তি নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন।

শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “তার কাগজপত্র দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তার ভাষাগত বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন।”

আটক মো. আমিন বলেন, “আমি কক্সবাজারের উখিয়ার টাংহালি ক্যাম্পে থাকি। এ দেশের নাগরিক হওয়ার আশায় ভোটার আইডি কার্ড করতে শেরপুরে এসেছিলাম। কাজের জন্য পরিচয়পত্র পেলে সুবিধা হবে ভেবেই আলম নামে আবেদন করেছি।”

শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “রোহিঙ্গা ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার সঙ্গে স্থানীয় কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা চলমান।”

ঢাকা/তারিকুল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খুবি শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দুরপাল্লার শিক্ষা সফর বাতিল ঘোষণা
  • সাজেকে চান্দের গাড়ি খাদে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিহত
  • পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনার ১০ সুবিধা
  • পাবনার স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভারতের নাগরিক, অভিযোগ শ্যালকের 
  • শেরপুর নির্বাচন অফিসে রোহিঙ্গা আটক
  • সঞ্চয়পত্র নাকি এফডিআর—কোথায় বিনিয়োগ করবেন