ডাকাত আতঙ্কে সুন্দরবনে মধু আহরণ কমেছে ৩৫ ভাগ
Published: 12th, June 2025 GMT
দেশে প্রাকৃতিক মধুর সবচেয়ে বড় উৎস সুন্দরবন। প্রতিবছর এপ্রিল-মে দুই মাস সুন্দরবন থেকে মধু আহরণের অনুমতি পান মৌয়ালরা। ঘ্রাণ ও স্বাদে অতুলনীয় এই মধু আহরণে ‘জীবনবাজি’ রাখতে হয় মৌয়ালদের। এত দিন শুধু বনের নদীতে কুমির আর ডাঙায় বাঘের ভয় ছিল। এবার ছিল বনদস্যুদের ভয়ও। দস্যুদের ভয়ে মধু আহরণে যাননি অনেক মৌয়াল। বনে মৌয়ালদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার মধু আহরণ কমেছে ৩৫ শতাংশ।
বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে সুন্দরবন থেকে মোট ৩ হাজার ১৮৩ কুইন্টাল মধু সংগ্রহ করা হয়েছিল। এবার সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৬ কুইন্টালে, যা গতবারের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ কম। গত বছর প্রায় ৮ হাজার মৌয়াল মধু আহরণে নিয়োজিত ছিলেন। এবার নেমে এসেছে প্রায় ৫ হাজারে।
সুন্দরবন ও উপকূল সংরক্ষণ আন্দোলনের সদস্যসচিব মো.
সুন্দরবন–সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলার মৌয়াল অচিন্ত কুমার রায় বলেন, ছোটবেলা থেকে জঙ্গলে যান, কোনো দিন বাঘ-কুমিরের ভয় পাননি। গত বছরও তিনি মধু আহরণ করতে গিয়েছিলেন। জঙ্গল এখন ডাকাতে ভরা। একবার ধরা পড়লে আর রক্ষা নেই। ভয়ে এবার মধু কাটা বাদ দিয়ে এলাকায় দিনমজুরি করেছেন।
চলতি বছর সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন কয়রা গ্রামের মৌয়াল কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ডাকাতের ভয়ে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার অনেক কম মৌয়াল বনে গিয়েছিলেন। তাঁরা নৌকায় ৭ জন মৌয়াল ছিলেন। হঠাৎ ডাকাতদের হাতে ধরা পড়ায় মধুর সঙ্গে টাকাও গেছে। ৫২ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সুন্দরবন ডাকাতমুক্ত না হলে আগামী বছর এ পেশা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করছেন।
পাতিলের মধ্যে রাখা চাকসহ মধু। গত মঙ্গলবার গহিন সুন্দরবনের পন্ডিতখালী খাল এলাকায়উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন
এছাড়াও পড়ুন:
নিষেধাজ্ঞা চলাকালে নৌবাহিনীর অভিযানে ৯৯ কোটি টাকার মাছ ও জাল জব্দ
বঙ্গোপসাগরে ৫৮ দিনব্যাপী ‘মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকরণ কার্যক্রম–২০২৫’ চলাকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৬ হাজার ৩২৮ কেজি মাছ, অবৈধ জাল, বোটসহ প্রায় ৯৯ কোটি ২১ লাখ টাকার মৎস্যসম্পদ ও উপকরণ জব্দ করেছে।
বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ‘মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকরণ কার্যক্রম-২০২৫’ চলাকালে সব ধরনের মাছ ধরার নৌযানের জন্য বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ছিল। এ সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনী ২৭৫টি অভিযান চালিয়ে ৩৬ লাখ ২৮ হাজার ১১০ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল, ২ হাজার ৭৪৪টি বিভিন্ন ধরনের জাল, ৫০৫ জন জেলেসহ ৫৭টি বোট এবং ১৬ হাজার ৩২৮ কেজি মাছ জব্দ করে। জব্দ করা সরঞ্জামের বাজারমূল্য প্রায় ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।
নৌবাহিনীর এ অভিযান চলাকালে জব্দ মাছ স্থানীয় এতিমখানাগুলোতে বিতরণ করা হয় এবং অবৈধ জাল স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয়। এ ছাড়া আটক মাছ ধরার নৌকা ও জেলেদের স্থানীয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অভিযান চলাকালে নৌবাহিনীর চারটি যুদ্ধজাহাজ ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্যাট্রল বোট বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ও উপকূলীয় অঞ্চলে নিয়মিত টহলে নিয়োজিত ছিল। এ ছাড়া বেআইনিভাবে মাছ শিকার প্রতিহত করতে অত্যাধুনিক মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্র্যাফট দিয়ে বঙ্গোপসাগরে নজরদারি চালানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের সামুদ্রিক মাছের প্রজনন, উৎপাদন ও সংরক্ষণে টেকসই আহরণ নিশ্চিত করতে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে নৌবাহিনী স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করছে। এই অভিযানের ফলে দেশের জলসীমায় মৎস্যসম্পদের প্রাচুর্য বাড়বে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।