জাতীয় বাজেট শুধু রাষ্ট্রীয় পাটিগণিত নয়; এটি সরকারের অর্থনৈতিক দর্শন, সামাজিক অগ্রাধিকার ও উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি মূর্ত করে তোলে। ২০২৪ সালের  গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের প্রথম ও সম্ভবত একমাত্র বাজেট হিসেবে এবারেরটা আরও বেশি গুরুত্ব বহন করে। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই স্বাতন্ত্র্য বা বিশেষত্ব কতখানি স্পষ্ট হলো?
আমরা দেখেছি, বিগত সময়ে সরকারি ব্যবস্থাপনাসহ ক্রয় ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্পে দৃশ্যমান দুর্নীতির বৈধতা থাকায় বাজেটে বরাদ্দের অঙ্ক অনেক বেশি ধার্য করা হতো। বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির প্রমাণও উঠে এসেছে, যার মধ্যে রয়েছে হাসপাতালের সরঞ্জাম ক্রয়, রেলওয়ে আসবাব ও সরঞ্জাম ক্রয়, শিক্ষা বিভাগের টেন্ডারে অনিয়ম, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ। সরকারি ভবন নির্মাণে একই ধরনের চিত্র দেখা যায়, যেখানে প্রদর্শিত ব্যয় প্রকৃত ব্যয়ের প্রায় দ্বিগুণ। ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতির খবর পাওয়া গেছে। নদীতে বাঁধ নির্মাণের জন্য নির্ধারিত তহবিল আত্মসাতের ঘটনাও ঘটেছে। কখনও কখনও কম সংখ্যক বালুর বস্তা ফেলে বা কখনও প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না করেই তহবিল তছরুপের ঘটনা ঘটেছে। নদীর সীমানা স্তম্ভ স্থাপনে অনিয়ম পাওয়া গেছে। বালিশ ক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনাও সামনে এসেছে। পদ্মা সেতু এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বড় বড় জাতীয় প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয়ের খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঘটনা ছাড়াও বছরের পর বছর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দুর্নীতির অসংখ্য ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে।

এত দুর্নীতির চিত্র বিবেচনায় রেখে রাষ্ট্র সংস্কারের ধারাবাহিকতায় বাজেটের আকার ছোট হওয়া দরকার ছিল। আগামী বছর এপ্রিল মাসে নির্বাচনী ঘোষণা থাকায়, নির্বাচনী ব্যয় ব্যতীত বড় ধরনের কোনো প্রকল্প ব্যয়ের পরিকল্পনা থাকা উচিত ছিল না। কিন্তু এবারের বাজেটে গত বছরের চেয়ে ৭ হাজার ১ কোটি টাকা বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে সরকারি ব্যয়ে দুর্নীতি ও লুটপাটের ব্যবস্থা কি থেকেই গেল না? 
আবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বিগত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পায়নি এবং নতুন কোনো বড় ধরনের নিয়োগও সম্পন্ন হয়নি। তারপরও বাজেটের মূল খরচ হচ্ছে বেতন-ভাতা, ক্রয়, নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায়। 

বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা রাখতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি উঠছে। মন্ত্রণালয় ও খাতভিত্তিক বাজেট থেকে অনেক কিছু ‍বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না। তাই বাজেট পেশ করার আগে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের বাজেট আলাদাভাবে পেশ করা দরকার এবং বাজেট প্রণয়নের আগেই মন্ত্রণালয়সহ কাঠামোর সমন্বয় এবং সংস্কার জরুরি ছিল। কারণ প্রায় দেড় লাখ বর্গকিলোমিটারের দেশে মন্ত্রিপরিষদের আকার কোনোভাবেই ১৫ জনের বেশি হওয়া উচিত নয়।
বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কাজের সমন্বয়; কয়েকটি অধিদপ্তর হ্রাস ও বৃদ্ধি; কাজে স্বচ্ছতা, সক্ষমতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি করা গেলে নাগরিকরা অনেক বেশি সেবা পাবে। তাতে বাজেটের আকারও অনেক ছোট হবে এবং সাধারণ মানুষের কাঁধে করের বোঝা অনেক কমবে। 
যেমন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জনস্বাস্থ্য বিভাগ একীভূত হওয়া; সব সরকারি হাসপাতালে মেডিকেল শিক্ষার্থীদর জন্য বিভিন্ন কাজে খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি; চিকিৎসাক্ষেত্রে উন্নয়ন ও বিদেশনির্ভরতা কমানোর জন্য বিভিন্ন পেশার দক্ষ লোকদের দিয়ে জেলা পর্যায়ে বিশেষ টাস্কফোর্স তৈরি; সরকারি খরচে বিদেশি চিকিৎসা বন্ধ; কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদ, পাট ও খাদ্য মন্ত্রণালয় একীভূত হওয়া; ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর বিলুপ্ত করে তাদের দক্ষ জনশক্তি ভূমি প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে পদায়ন করলে ভূমি ব্যবস্থাপনায় হয়রানি অনেকাংশে কমে আসবে এবং বাজেট হ্রাস করা সম্ভব হবে। 

বাংলাদেশে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত প্রায় ৭ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার ব্যক্তি এবং বেকার মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ ৩০ হাজার। তাদের মধ্যে প্রায় ১৪ লাখ ৪০ হাজার ব্যক্তি সরকারি বিভিন্ন পদে নিয়োজিত; যদিও বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ আছে প্রায় ১৯ লাখ ১৫ হাজার। এখনও ৪ লাখ ৭৫ হাজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বিগত সময়ে যারা সরকারি বিভিন্ন পদে থেকে বৈধ বা অবৈধ সুযোগ-­সুবিধা পেয়েছে, তাদের জন্য সরকার এবারের বাজেটে মহার্ঘ ভাতার ব্যবস্থা রেখেছে, যা বাজেট প্রণয়নের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
যখন দেশের মানুষ মাথাপিছু লক্ষাধিক টাকা ঋণের বোঝা টানছে এবং প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ হতদরিদ্র, সে পরিস্থিতিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানে লোকবল ঘাটতি রেখে এবং দৃশ্যমান কোনো কর্মসংস্থানের উদ্যোগ না নিয়ে কিছু মানুষের বেতন বৃদ্ধি খুবই অমানবিক। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের বেতন বা ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণার পরই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ে। এর দুর্ভোগ পোহায় নিম্ন আয়ের মানুষ ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত। 

বিরোধী দলবিহীন একটি সরকারের প্রায় ১০ মাস ক্ষমতায় থেকে কাজ করা নেহায়েত কম সময় নয়। প্রত্যাশার যথাযথ প্রতিফলনের অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ অনেক আশাবাদী এবং সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এই সময়ের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে সাময়িক অসুবিধা ও কিছু অনিয়ম দৃশ্যমান হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। আমার অভিজ্ঞতা অনুসারে দেশের সৎ ও সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কোনো সমাজ ও দেশ পরিচালিত হলে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ কম থাকে। এই বাজেট প্রণয়নসহ দেশ পরিচালনা পদ্ধতির দৃশ্যমান কিছু ইতিবাচক প্রক্রিয়া দেখার বিষয়ে আশাবাদী। 

শমশের আলী: গবেষক ও লেখক

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প মন ত র র জন য ধরন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা কি কখনও আর পাল্টাবে না

অন্তর্বর্তী সরকার চাইলেই যে খাতটিতে সংস্কার আনতে পারত, তার মধ্যে এগিয়ে থাকবে সড়ক পরিবহন। জুলাই অভ্যুত্থান যে ছাত্রদের হাত ধরে সূচনা হয়েছিল এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকে যাঁরা ধাপে ধাপে গণ–অভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের বড় একটা অংশ ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে মার খাওয়া প্রজন্ম। ঢাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে একাদশ শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা দেশজুড়ে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, সেটা ছিল নজিরবিহীন। ২০১৮ সালে সত্যি সত্যি এ দেশের বুকে আঠারো নেমে এসেছিল।

কিন্তু শিশু-কিশোরদের সেই আন্দোলনকে ছাত্রলীগ, যুবলীগের পেটোয়া হেলমেট বাহিনী আর পুলিশ দিয়ে যেভাবে নির্মমভাবে পিটিয়ে দমন করেছিল হাসিনা সরকার, সেটাও ছিল নজিরবিহীন। সেটা ছিল নিজ দেশের শিশু–কিশোরদের বিরুদ্ধে দমনে শক্তিশালী হয়ে ওঠা একটি রাষ্ট্রের যথেচ্ছ বলপ্রয়োগের দৃষ্টান্ত। ঠিক ছয় বছর পর ২০২৪ সালে এসে সব শ্রেণির জনতার অংশগ্রহণে রাষ্ট্রের সেই শক্তিশালী দামনযন্ত্রটিকে রুখে দিয়ে ইতিহাসের চাকাটি পাল্টে দিয়েছিল সেদিনের সেই কিশোর থেকে সদ্য তরুণ হয়ে ওঠা প্রজন্মটি।

আওয়ামী লীগ সরকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোনো কাজ করেনি। তার কারণ পুরোপুরি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক। কর্তৃত্ববাদী শাসনের সঙ্গে যে স্বজনতোষী অর্থনীতি তারা গড়ে তুলেছিল, তার প্রধান একটা জায়গা ছিল যোগাযোগ অবকাঠামো খাত। বাজেটে এ খাতেই সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে, একের পর এক মেগা প্রকল্প হয়েছে। তাতে ক্ষমতার একেবারে প্রথম বৃত্তে থাকা লোকদের সম্পদ বেড়েছে আলাদিনের চেরাগের মতো। সেই সম্পদের একটা বড় অংশই পাচার হয়ে গেছে।

এ বাস্তবতার বিপরীতে চরম দুর্নীতিনির্ভর পরিবহন খাত বর্গা দেওয়া হয়েছে দলীয় মাফিয়া ও মাস্তানদের হাতে। বলা চলে, সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তকে পুনর্বাসন করা হয়েছিল এ খাতেই। ফলে সড়কে নৈরাজ্য আর অরাজকতার যে বিষচক্র তৈরি হয়েছে, তার নিষ্ঠুর বলি হতে হয়েছে নাগরিকদের।

ফলে সবাই আশা করেছিলেন, অভ্যুত্থানের পর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। ঢাকার মানুষেরা একটা সুশৃঙ্খল বাসব্যবস্থা পাবে। অভ্যুত্থানের পর প্রথম কয়েক দিন যখন পুলিশ ছিল না, তখন ছাত্ররাই ঢাকার সড়কগুলোতে শৃঙ্খলার নজির তৈরি করেছিলেন। বাসসহ অন্য যানবাহগুলো লেন মেনে চলাচল করতে শুরু করেছিল। সবার মধ্যেই আইন মানার একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কেন জানি শিক্ষার মতো পরিবহন খাত সংস্কারে সরকারের উদ্যোগ নিতে অনীহা দেখা গেল।

অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের আওতায় ঢাকায় বৈদ্যুতিক বাস সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঢাকার বায়ুদূষণ ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। সুইডেন থেকে চড়া দামে নিয়ে আসা বিআরটিসির ভলভো বাস পরিণতি কি হয়েছিল সেটা আমরা সবাই জানি। ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থার গোষ্ঠীস্বার্থের তৈরি করা রাজনৈতিক–অর্থনীতির জাল কাটতে না পারলে যত আধুনিক বাস আনা যাক না কেন, সেটা টেকসই হবে কি?

এ সুযোগে ঢাকার পরিবহনব্যবস্থায় সুনামির মতো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যুক্ত হলো। গত কয়েক বছরে বিশেষ করে গত এক বছরে কর্মসংস্থানে যে ভাটার টান, নিঃসন্দেহে সেই বাস্তবতা পরিস্থিতিকে উসকে দিয়েছে। কিন্তু সড়ক পরিবহনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা যায়, এমন কোনো পরিকল্পনা না থাকার কারণে এমন বিশৃঙ্খলার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ।

সব মিলিয়ে ঢাকার সড়ক গত এক বছরে আরও বেশি নৈরাজ্যিক আর বিশৃঙ্খল হয়ে উঠেছে। সারা দেশে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা গণপরিবহনের বিকল্প হয়ে ওঠায় হতাহতের সংখ্যা কমানো যাচ্ছে না। ঢাকার সড়কগুলো দাবড়ে বেড়াচ্ছে, সেই একই রংচটা ও লক্কড়ঝক্কড় বাস, নোংরা সিট ও শ্বাস বন্ধ করে দেওয় কালো ধোঁয়া আর কানে তালা লাগা হাইড্রোলিক হর্ন। রেষারেষি, দুর্ঘটনা, যাত্রীদের সঙ্গে বচসা, মারামারি—পুরোনো সেই সবই চলছে দিব্যি।

ট্রাফিক পুলিশের অবর্তমানে শিক্ষার্থীরা যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে সড়কে শৃঙ্খলার কাজে নেমেছিলেন, তখন ঢাকার সড়কে শৃঙ্খলা ও আইন মেনে চলার একটা চিত্র আমরা দেখতে পেয়েছিলাম। ২০১৮ সালের সড়ক আন্দোলনের সময়ও শিশু-কিশোরেরা সৃজনশীল সব পথ বের করে দেখিয়ে দিয়েছিল, সড়কে কীভাবে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যায়, আর আইন যিনিই ভঙ্গ করেন, তাঁকে কীভাবে জবাবদিহি করা যায়। কিন্তু ছাত্রদের আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাফিক সহায়তাকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর সেই স্বতঃস্ফূর্ততা আর বেশি দিন চোখে পড়েনি। বরং তাঁদের পুরোনো ট্রাফিক ব্যবস্থার অংশ করে তোলা হয়েছে।

সবচেয়ে বড় কথা, গোটা পরিবহন খাতে রাজনৈতিক আঁচড় এক বড় গণ–অভ্যুত্থানের পরও এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। শুধু পুরোনো মুখের জায়গায় নতুন মুখ এসেছে। আওয়ামী লীগের জায়গায় এসেছে বিএনপি। আমাদের প্রথাগত ও বড় রাজনৈতিক দলগুলোর বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মীর পুনর্বাসন ও আয়ের জায়গা এটি। সেই কায়েমি স্বার্থের কারণে রাজনৈতিক সরকারের আমলে এ খাতে কাঠামোগত সংস্কার করা খুবই কঠিন।

অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সেই সুযোগ ছিল। বাসকে কেন্দ্রে রেখে একটা সুশৃঙ্খল গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলা এমন কী কঠিন কোনো কাজ ছিল! চাইলে যে করা যায়, সেটা আমরা গত কয়েক মাসে ঢাকার ভাঙাচোরা ও হাঁটার জন্য অযোগ্য অনেকগুলো ফুটপাতের চিরচেনা চেহারা যেভাবে বদলে যাচ্ছে, সেই উদাহরণ দিতে পারি। যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল গত ১৫ মে দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত এক কলামে দেখিয়েছেন, একটি ডেডিকেটেড সিটি বাস সার্ভিস কীভাবে ঢাকার চেহারা বদলে দিতে পারে। তিনি মনে করেন, ঢাকায় দুই হাজার নতুন বাস নামানো গেলেই সেটা সম্ভব।

বুয়েটের বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান গত বছরের অক্টোবরে বলেছিলেন, মাত্র ছয় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা গেলেই ঢাকার গণপরিবহনব্যবস্থার খোলনলচে বদলে দেওয়া সম্ভব। একই ছাতার নিচে একটা সিটি বাস সার্ভিস চালু করতে হবে, যেখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের আওতায় ঢাকায় বৈদ্যুতিক বাস সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঢাকার বায়ুদূষণ ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। সুইডেন থেকে চড়া দামে নিয়ে আসা বিআরটিসির ভলভো বাস পরিণতি কি হয়েছিল সেটা আমরা সবাই জানি। ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থার গোষ্ঠীস্বার্থের তৈরি করা রাজনৈতিক–অর্থনীতির জাল কাটতে না পারলে যত আধুনিক বাস আনা যাক না কেন, সেটা টেকসই হবে কি?

মনোজ দে, প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা কি কখনও আর পাল্টাবে না