“মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহুহু”— একটি সরল উচ্চারণ, যা হয়ে উঠেছে ট্রেন্ড। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাস্তাঘাট, এমনকি সিনেমার পর্দায় ঠাঁই করে নিয়েছে এই বাক্য। ঈদের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত তিনটি চলচ্চিত্র—‘তাণ্ডব’, ‘ইনসাফ’ ও ‘উৎসব’। তিনটি সিনেমাতেই এই সংলাপ ব্যবহৃত হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে— এটা কি সিনেমার ভাষা, না ভাইরালের অনুকরণ? এই সংলাপ-সর্বস্বতা কি বাংলা চলচ্চিত্রের মৌলিকতাকে সংকটে ফেলছে?

সিনেমা একটি শিল্পমাধ্যম, যেখানে গল্পের ভেতর গড়ে ওঠে চরিত্র, আবেগ, সময়ের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ শিল্পমাধ্যম যেন ক্রমশই নতজানু হয়ে পড়ছে ভাইরাল মিম ও রিল-কনটেন্টের সামনে।

এই প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন সামনে আসে— চলচ্চিত্র কি এখন গল্প বলছে, না কি শুধু ট্রেন্ড ধরার প্রতিযোগিতায় নেমেছে?

‘মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহুহু’ সংলাপ যখন তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সিনেমায় প্রায় একই রকমভাবে ব্যবহৃত হয়, তখন সেখানে দর্শক হাসলেও, চিন্তাশীল দর্শক অবচেতনে প্রশ্ন করে— আমাদের সিনেমা কি মৌলিকতা হারাচ্ছে?

ভাইরাল কনটেন্টের নিজস্ব ভাষা আছে— তা তাৎক্ষণিক, আবেগতাড়িত এবং অপ্রত্যাশিত। ঠিক যেমনটি হয়েছিল বক্তা মোস্তাক ফয়েজীর ওয়াজ মাহফিলের সেই মুহূর্তে। কিন্তু যে জিনিস নিজের জৈবিক গতিতে ভাইরাল হয়, তাকে যদি পরবর্তীতে পরিকল্পিতভাবে পুনর্ব্যবহার করা হয়, সেটি তখন আর মজার থাকে না। হয়ে ওঠে কৃত্রিম ও কমার্শিয়াল।

ফলে ‘উঁহুহু’র হাসির রেশ কাটার আগেই বিরক্তি তৈরি হচ্ছে। একই সংলাপ একাধিক সিনেমায়, একই রকম ভঙ্গিতে ব্যবহৃত হওয়ায় নির্মাতাদের সৃজনশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিনেপ্রেমী ও সমালোচকরা। কেউ কেউ বলছেন, ভাইরাল সংলাপকে সিনেমায় আনার মাঝে বাস্তবতার ছোঁয়া থাকলেও, তিন সিনেমায় একই ব্যবহার 'কমেডি' নয়, বরং 'চরিত্রহীনতা'র ইঙ্গিত দেয়।

বাংলাদেশি সিনেমার ইতিহাসে সংলাপের গুরুত্ব কখনোই কম ছিল না। সর্বশেষ ‘জিল্লু মাল দে’ সংলাপটি ব্যাপক ভাইরাল হয়। সংলাপটি শাকিব খান অভিনীত ‘তুফান’ সিনেমায় গল্পের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়েছিল বলেই ভাইরাল হয়েছে। প্রতিটি সংলাপ একেকটি সময়ের সাক্ষ্য বহন করে। এসব সংলাপের মধ্যে দিয়ে উঠে আসে সামাজিক বাস্তবতা, প্রেম-ভালোবাসা, রাগ-ঘৃণা, প্রতিবাদ ও প্রতিশোধের বহিঃপ্রকাশ। 

আজকের ভাইরাল সংলাপের অতিরিক্ত ব্যবহার দেখায় যে, অনেক নির্মাতা সহজ জনপ্রিয়তার পেছনে ছুটছেন। এই প্রবণতা সিনেমার গভীরতা ও শিল্পমানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এমনকি এর প্রভাব ভবিষ্যতের সিনেমা-রুচিতেও পড়বে, যেখানে গল্প নয়, ভাইরাল উপাদান হবে প্রধান চালিকাশক্তি।

তবু এই ভাইরাল সংলাপকে পুরোপুরি খাটো করে দেখাও ঠিক নয়। ‘মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহুহু’ সংলাপটি হয়ে উঠেছে এক ধরনের সময়চিহ্ন। ভাইরাল সংলাপ সিনেমায় ঢুকতে পারে, যদি তা গল্পের দাবি থেকে আসে। সেটি হতে পারে ব্যঙ্গাত্মক, প্রাসঙ্গিক কিংবা প্রতীকী। কিন্তু তা যদি শুধু ট্রেন্ড ফলো করে, তখন সিনেমা হয়ে পড়ে ক্ষণস্থায়ী, ভাসমান এবং নিম্নমানের বিনোদনের পণ্য।

দর্শকের কাছে শুধু হাসি নয়, প্রাসঙ্গিকতা ও গভীরতা নিয়েও সিনেমা পৌঁছাক— এটাই প্রত্যাশা।
 

তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

আধুনিক টিভির যত আধুনিক সুবিধা

টেলিভিশনকে বাংলায় বলা হয় ‘দূরদর্শন’। মাত্র কয়েক বছর আগেও এটি সত্যিই ছিল দূরদর্শনের মাধ্যম—দূরের কোনো ঘটনা চোখের সামনে এনে দেওয়ার একটি যন্ত্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে টিভির সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে আজকাল টিভি হয়ে উঠেছে একটি ‘স্মার্ট হাব’, যেখানে সিনেমা দেখা, গেম খেলা, ভিডিও কল করা, এমনকি বাড়ির অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আধুনিক টিভিগুলোর সুবিধা কেবল ছবি বা সাউন্ডে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো এখন ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স।

স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেম

বর্তমান প্রজন্মের টিভিগুলো শুধু নাটক কিংবা সিনেমা দেখার একটি স্ক্রিন নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ স্মার্ট ডিভাইস। স্মার্ট টিভিতে অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) হিসেবে টাইজেন, অ্যান্ড্রয়েড টিভি, রোকু টিভি এবং ওয়েবওএস ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই সিস্টেমগুলোর মাধ্যমেই বর্তমান যুগের টিভিগুলো হয়ে উঠছে আধুনিক থেকে আধুনিকতর। ব্যবহারকারীরা এখন চাইলেই স্মার্ট টিভিগুলোতে নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, স্পটিফাই, অ্যামাজন প্রাইম কিংবা যেকোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মও সরাসরি উপভোগ করতে পারেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘অ্যাপ স্টোর ইন্টিগ্রেশন’। টিভিতেই এখন মোবাইলের মতো অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়। ওয়েদার অ্যাপ, গেমস, নিউজ—এমনকি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপও ব্যবহার করা যায় টিভির বড় স্ক্রিনে।

ভয়েস কন্ট্রোল: কথা বলেই নিয়ন্ত্রণ

রিমোট খোঁজার ঝামেলা এখন যেন অতীত। আগে টিভির সবকিছু রিমোট দ্বারা পরিচালিত হলেও এখনকার আধুনিক টিভিগুলোতে আছে ভয়েস কন্ট্রোল—যেখানে ব্যবহারকারীর ভয়েস দ্বারাই টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই প্রযুক্তি বিক্সবি, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যালেক্সার মতো ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে কাজ করে। এর পাশাপাশি কিছু হাই-এন্ড মডেলে রয়েছে জেসচার কন্ট্রোল—যেখানে হাত নাড়লেই টিভি রেসপন্স করে। টিভি চালু-বন্ধ করা, চ্যানেল পরিবর্তন—এমনকি ভলিউম বাড়ানো-কমানোর মতো কাজও করা যায় হাতের ইশারায়। এ ক্ষেত্রে গ্যালাক্সি ওয়াচের কথা বলা যায়। এটি হাতের নড়াচড়াকে শনাক্ত করে এসব কমান্ড কার্যকর করে।

মাল্টি-ডিভাইস কানেকটিভিটি: এক স্ক্রিনে সব সংযোগ

বর্তমানে টিভি শুধু সম্প্রচার মাধ্যম নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিট। মোবাইল ফোন, স্পিকার, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল—সব ডিভাইস এখন টিভির সঙ্গে সহজেই সংযুক্ত করা যায়।

বেশির ভাগ স্মার্ট টিভিতে রয়েছে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, এইচডিএমআই এআরসি, এয়ার প্লে, মিরাকাস্টসহ বিভিন্ন সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের ফোনের ছবি, ভিডিও বা প্রেজেন্টেশন মুহূর্তেই বড় স্ক্রিনে শেয়ার করতে পারেন। সেই সঙ্গে আধুনিক টিভিগুলোতে রয়েছে গেমারদের জন্য এইচডিএমআই ২.১ পোর্ট এবং কম ইনপুট ল্যাগযুক্ত ডিসপ্লে, যা গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে করে তোলে আরও স্মুথ।

আধুনিক টিভিগুলো ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জামিনের পর মামলা নিয়ে মেহজাবীনের বিবৃতি
  • আধুনিক টিভির যত আধুনিক সুবিধা
  • যুক্তরাষ্ট্রে দুই কিশোরের মৃত্যু: পেশি ক্ষয়রোগে থেরাপি ব্যবহারে গুরুতর সতর্কতা