মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহুহু : ট্রেন্ডের ফাঁদে সিনেমা
Published: 28th, June 2025 GMT
“মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহুহু”— একটি সরল উচ্চারণ, যা হয়ে উঠেছে ট্রেন্ড। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাস্তাঘাট, এমনকি সিনেমার পর্দায় ঠাঁই করে নিয়েছে এই বাক্য। ঈদের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত তিনটি চলচ্চিত্র—‘তাণ্ডব’, ‘ইনসাফ’ ও ‘উৎসব’। তিনটি সিনেমাতেই এই সংলাপ ব্যবহৃত হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে— এটা কি সিনেমার ভাষা, না ভাইরালের অনুকরণ? এই সংলাপ-সর্বস্বতা কি বাংলা চলচ্চিত্রের মৌলিকতাকে সংকটে ফেলছে?
সিনেমা একটি শিল্পমাধ্যম, যেখানে গল্পের ভেতর গড়ে ওঠে চরিত্র, আবেগ, সময়ের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ শিল্পমাধ্যম যেন ক্রমশই নতজানু হয়ে পড়ছে ভাইরাল মিম ও রিল-কনটেন্টের সামনে।
এই প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন সামনে আসে— চলচ্চিত্র কি এখন গল্প বলছে, না কি শুধু ট্রেন্ড ধরার প্রতিযোগিতায় নেমেছে?
‘মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহুহু’ সংলাপ যখন তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সিনেমায় প্রায় একই রকমভাবে ব্যবহৃত হয়, তখন সেখানে দর্শক হাসলেও, চিন্তাশীল দর্শক অবচেতনে প্রশ্ন করে— আমাদের সিনেমা কি মৌলিকতা হারাচ্ছে?
ভাইরাল কনটেন্টের নিজস্ব ভাষা আছে— তা তাৎক্ষণিক, আবেগতাড়িত এবং অপ্রত্যাশিত। ঠিক যেমনটি হয়েছিল বক্তা মোস্তাক ফয়েজীর ওয়াজ মাহফিলের সেই মুহূর্তে। কিন্তু যে জিনিস নিজের জৈবিক গতিতে ভাইরাল হয়, তাকে যদি পরবর্তীতে পরিকল্পিতভাবে পুনর্ব্যবহার করা হয়, সেটি তখন আর মজার থাকে না। হয়ে ওঠে কৃত্রিম ও কমার্শিয়াল।
ফলে ‘উঁহুহু’র হাসির রেশ কাটার আগেই বিরক্তি তৈরি হচ্ছে। একই সংলাপ একাধিক সিনেমায়, একই রকম ভঙ্গিতে ব্যবহৃত হওয়ায় নির্মাতাদের সৃজনশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিনেপ্রেমী ও সমালোচকরা। কেউ কেউ বলছেন, ভাইরাল সংলাপকে সিনেমায় আনার মাঝে বাস্তবতার ছোঁয়া থাকলেও, তিন সিনেমায় একই ব্যবহার 'কমেডি' নয়, বরং 'চরিত্রহীনতা'র ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশি সিনেমার ইতিহাসে সংলাপের গুরুত্ব কখনোই কম ছিল না। সর্বশেষ ‘জিল্লু মাল দে’ সংলাপটি ব্যাপক ভাইরাল হয়। সংলাপটি শাকিব খান অভিনীত ‘তুফান’ সিনেমায় গল্পের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়েছিল বলেই ভাইরাল হয়েছে। প্রতিটি সংলাপ একেকটি সময়ের সাক্ষ্য বহন করে। এসব সংলাপের মধ্যে দিয়ে উঠে আসে সামাজিক বাস্তবতা, প্রেম-ভালোবাসা, রাগ-ঘৃণা, প্রতিবাদ ও প্রতিশোধের বহিঃপ্রকাশ।
আজকের ভাইরাল সংলাপের অতিরিক্ত ব্যবহার দেখায় যে, অনেক নির্মাতা সহজ জনপ্রিয়তার পেছনে ছুটছেন। এই প্রবণতা সিনেমার গভীরতা ও শিল্পমানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এমনকি এর প্রভাব ভবিষ্যতের সিনেমা-রুচিতেও পড়বে, যেখানে গল্প নয়, ভাইরাল উপাদান হবে প্রধান চালিকাশক্তি।
তবু এই ভাইরাল সংলাপকে পুরোপুরি খাটো করে দেখাও ঠিক নয়। ‘মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহুহু’ সংলাপটি হয়ে উঠেছে এক ধরনের সময়চিহ্ন। ভাইরাল সংলাপ সিনেমায় ঢুকতে পারে, যদি তা গল্পের দাবি থেকে আসে। সেটি হতে পারে ব্যঙ্গাত্মক, প্রাসঙ্গিক কিংবা প্রতীকী। কিন্তু তা যদি শুধু ট্রেন্ড ফলো করে, তখন সিনেমা হয়ে পড়ে ক্ষণস্থায়ী, ভাসমান এবং নিম্নমানের বিনোদনের পণ্য।
দর্শকের কাছে শুধু হাসি নয়, প্রাসঙ্গিকতা ও গভীরতা নিয়েও সিনেমা পৌঁছাক— এটাই প্রত্যাশা।
তারা//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চ্যাটজিপিটির স্বাস্থ্য পরামর্শ মানতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে
ওপেনএআইয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি এখন দৈনন্দিন নানা কাজে ব্যবহার করছেন অনেকেই। কেউ আবার চ্যাটজিপিটির কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকেন। তবে সম্প্রতি চ্যাটজিপিটির পরামর্শে দৈনন্দিন খাবার থেকে লবণ প্রায় পুরোপুরি বাদ দিয়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাসিন্দা ৬০ বছরের এক ব্যক্তি। এরপর বাধ্য হয়ে হাসপাতালে তিন সপ্তাহ চিকিৎসা নেন তিনি। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, রোগী কয়েক সপ্তাহ দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে সোডিয়ামের মাত্রা প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনেন। এতে তাঁর শরীরে ‘হাইপোনাট্রেমিয়া’ নামের বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়। এর ফলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়।
ওই ব্যক্তির পরিবারের দাবি, চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই তিনি সম্পূর্ণভাবে এআইভিত্তিক হেলথ প্ল্যানের ওপর নির্ভর করেছিলেন। তিন সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর তিনি সুস্থ হন । ঘটনাটি সম্প্রতি আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ানসের সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, সোডিয়ামের মতো অপরিহার্য খনিজ এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়া এআইয়ের পরামর্শ অনুসরণ করা গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কীভাবে খাবার থেকে সম্পূর্ণভাবে সোডিয়াম ক্লোরাইড বা সাধারণত খাবার লবণ বাদ দেওয়া যায়, তা ওই ব্যক্তি চ্যাটজিপিটিকে জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে চ্যাটজিপিটি তাঁকে বিকল্প হিসেবে সোডিয়াম ব্রোমাইড ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। চ্যাটজিপিটির পরামর্শ মেনে তিনি অনলাইনে সোডিয়াম ব্রোমাইড কিনে প্রায় তিন মাস রান্নায় ব্যবহার করেন। এর ফলে ধীরে ধীরে বিভ্রম, সন্দেহপ্রবণতা, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, এমনকি পানি পান করতে অনীহার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় তিনি বিভ্রান্ত ছিলেন এবং পানিকে দূষিত মনে করতেন।
চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর শরীরে ‘ব্রোমাইড টক্সিসিটি’ বা ব্রোমিজম ধরা পড়েছে, যা এখন অত্যন্ত বিরল হলেও একসময় উদ্বেগ, অনিদ্রা ও নানা স্নায়বিক সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হতো। তাঁর শরীরে ব্রোমিজমের অন্যান্য উপসর্গও দেখা যায়। এর ফলে ত্বকে ব্রণের মতো ফুসকুড়ি এবং ‘চেরি অ্যাঞ্জিওমা’ নামে পরিচিত লাল দাগ দেখা যায়। চিকিৎসায় গুরুত্ব দেওয়া হয় শরীরে পর্যাপ্ত পানি ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার ওপর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ তথ্য জানার ক্ষেত্রে এআই কার্যকর হলেও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সিদ্ধান্তে চিকিৎসকের পরামর্শ অপরিহার্য। চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই তাদের শর্তাবলিতে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছে, ‘আমাদের সেবার আউটপুটকে একমাত্র সত্য বা নির্ভরযোগ্য তথ্য হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয় এবং এটি কখনোই পেশাদার পরামর্শের বিকল্প হতে পারে না। এই সেবা রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তৈরি করা নয়।’
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া