গুমের শিকার ব্যক্তির স্বজন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে নেওয়া হত না। বরং জিডি করলে নিখোঁজ ব্যক্তি আর কোনোদিন ফিরে আসবে না বলে ভয় দেখানো হত। এ কারণে যত মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন, সেই তুলনায় জিডির সংখ্যা খুবই কম। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, পুলিশের জিডি না নেওয়ার সেই প্রবণতা গণঅভ্যুত্থানের পরও রয়ে গেছে। গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত গোপন বন্দিশালা পরিদর্শনের সময় তার সঙ্গে থাকা গুমের শিকার এক ব্যক্তির সঙ্গেই এমনটা ঘটেছে। পরিদর্শনের পর তাকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন করে নানারকম হুমকি দেওয়া হয়। তিনি এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। পরে কমিশনের এক সদস্যের সরাসরি হস্তক্ষেপের পর জিডি নথিভুক্ত করে পুলিশ। এর থেকেই বোঝা যায়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পুরোনো চর্চা রয়ে গেছে।

জিডি-সংক্রান্ত বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৪ সালের একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়, পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, যদি পরিবারটি র‌্যাবের সংশ্লিষ্টতার উল্লেখ না করে এবং ‘অপহরণ’ এর বদলে ‘নিখোঁজ’ শব্দটি ব্যবহার করে, তাহলে তারা অভিযোগ গ্রহণ করবে। কমিশনে জমা দেওয়া প্রায় ১ হাজার ৮০০টি অভিযোগের ক্ষেত্রে জিডি না নেওয়ার এমন ধরন ঘুরেফিরে এসেছে। এর মধ্যে মাত্র ২৫০টি অভিযোগের সমসাময়িক নথিপত্র পাওয়া গেছে। অর্থাৎ সেসব ঘটনায় জিডি, আদালতের রেকর্ড বা গণমাধ্যমের প্রতিবেদন রয়েছে। তবে বেশিরভাগ পরিবারকেই এক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত বা হুমকির মুখোমুখি হতে হয়েছে। একটি পরিবার জানিয়েছে, থানায় কর্তব্যরত কর্মকর্তার (ডিউটি অফিসার) কাছে ঘটনা জানালে তিনি জিডি নিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। পরে ওসির কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের নামে জিডি করা যাবে না।’

ওই ঘটনার ভুক্তভোগী কমিশনকে বলেন, ‘তিন–চারদিন গিয়েছিল আমার ওয়াইফ (স্ত্রী)। বলছে যে, খোঁজেন গা, থানায় যান, ডিবির কাছে যান। আমরা তো এখন জিডি নিতে পারব না। ... ডিবির আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) বলে যে, তোমার বউ প্রতিদিন আইসা চার–পাঁচ ঘণ্টা কইরা কান্নাকাটি করতো। মনে হচ্ছে ওয়াল ভাইঙা যাবে। থানায় বলেছিল- ওরা, যদি র‌্যাব–পুলিশ–ডিবিরা নিয়ে থাকে, অনেক সময় গুম করার ইচ্ছা না থাকলেও জিডি–টিডি করলে গুম কইরা ফালায়। আপনারা আপসে খুঁইজা খুঁইজা দেখেন।’

গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ: অ্যা স্ট্রাকচারাল ডায়াগনোসিস অব এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন জমা দেয় গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। প্রতিবেদনে গুমের তথ্য পেতে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করা হয়। পুরোনো ঘটনা হওয়ায় সিডিআর (কল ডিটেইলস রেকর্ড) ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত তথ্য পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ ৫ আগস্ট অনেক থানার নথিপত্র পুড়ে যাওয়ায় বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে পড়ে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪০০ -এর বেশি মানুষ। গত প্রায় ২১ মাসের ধারাবাহিক হামলায় উপত্যকাটিতে এ পর্যন্ত সাড়ে ৫৬ হাজারের কাছাকাছি মানুষের প্রাণ গেছে।

শনিবার (২৮ জুন) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গাজায় এক সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের দিনেও ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু থামেনি।

গাজার প্রত্যক্ষদর্শী ও সেখানকার আল-শিফা হাসপাতালের কর্মী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শহরের একটি স্টেডিয়ামের পাশে হামলায় শিশুসহ ১১ জনের প্রাণ গেছে। স্টেডিয়ামটিতে তাঁবু টানিয়ে বাস্তুচ্যুতরা ব্যবহার করে থাকেন। ফুটেজে সেখানকার মানুষদের খালি হাতে ও কোদাল দিয়ে মৃতদেহ খুঁজে বের করতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলি হামলায় আল-মাওয়ারি এলাকার আবাসিক ভবন ও তাবুতে বেশ কয়েকজন শিশুসহ ১৪ জন নিহত হয়েছেন। সেখানকার জাফা স্কুলের পাশে তুফাহ এলাকায় বিমান থেকে বোমা বর্ষণে অন্তত ৮ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সেখানকার উদ্ধারকাজের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অ্যাম্বুলেন্সগুলো ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীরা হামলায় ধ্বংসস্তূপের নিচে ও বিভিন্ন সড়কে আটকে পড়া মানুষদের কাছে পৌঁছাতে বেগ পাচ্ছেন, কারণ ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় যাতায়াত প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত মার্চে গাজায় ইসরায়েল নতুন দফায় হামলা চালায়। এর আগে ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে তিনটি ধাপ ঠিক করা হলেও তার প্রথম ধাপ পার করতে পারেনি।

দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলে বন্দি ফিলিস্তিনি ও গাজায় জিম্মিদের উভয়ে উভয়কে ফিরিয়ে দেওয়া এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়া।

এখন ট্রাম্পের বক্তব্যে আশা দেখছেন কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা। তারা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে এবার একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যাবে। যেভাবে সদ্যই ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাতের সমাপ্তি ঘটেছে। সূত্র: বিবিসি

সম্পর্কিত নিবন্ধ