রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’–এর ম্যুরাল–সংবলিত সাতটি দেয়াল ভেঙে ফেলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি–সংবলিত সব স্মারক যথাযথ যোগ্যতায় সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) আজ সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের অন্যতম ভিত্তি ও অহংকার। এটা এক দিনে সংঘটিত হয়নি। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম থেকে শুরু করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অসংখ্য সংগ্রামের শেষ পর্বে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের স্মারক মুছে ফেলে সেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের স্মারক নির্মাণের যে কথা শোনা যাচ্ছে, তা অত্যন্ত বিব্রতকর।

বিবৃতিতে সিপিবি নেতারা বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থান ১৯৭১ সালের চেতনারই ধারাবাহিকতা। কিন্তু আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নানা কর্মসূচি এবং অনেকের অনেক বক্তব্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।’

সিপিবির নেতারা বলেন, জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের স্মৃতিস্মারক নির্মাণ করা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জরুরি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্মারক মুছে ফেলে সেখানে স্মৃতির মিনার নির্মাণ করা ভুল সিদ্ধান্ত হবে। অন্য জায়গা নির্ধারণ করে জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের স্মারক নির্মাণের আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

আরও পড়ুনবিজয় সরণিতে হবে জুলাই শহীদদের ভাস্কর্য২৮ জুন ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স ম রক

এছাড়াও পড়ুন:

শমসের মুবিন চৌধুরী: বীর বিক্রম কূটনীতিকের ‘দলছুট’ রাজনীতি

শমসের মুবিন চৌধুরী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদে ছিলেন। যুদ্ধের পর মেজর পদে থাকা অবস্থায় তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। শুরু হয় তার কূটনৈতিক ক্যারিয়ার। চাকরি থেকে অবসরের পর যোগ দেন রাজনীতিতে, তবে এখানে এসে নামের চেয়ে বদনাম বেশি কুড়িয়েছেন।

রাজনীতিক হিসেবে কোনো আলোচনায় না থাকা শমসের মুবিন হঠাৎ রবিবার (১৬ নভেম্বর) মধ্যরাতে গণমাধ্যমের বড় খবর হয়ে এলেন। তবে এই আসা রাজনীতি থেকে চলে যাওয়ার ঘোষণা দিতেই আসা। তিনি আর রাজনীতি করবেন না বলে তার দল তৃণমূল বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছেন, যা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন তিনি নিজে এবং তার দলের মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার।

আরো পড়ুন:

নীরবতা ভেঙে হঠাৎ রাজনীতিকে ‘না’ বলে দিলেন শমসের মুবিন চৌধুরী

‘আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’  

মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় বীর বিক্রম খেতাব অর্জন করে শমসের মুবিন চৌধুরী। খেতাব, সম্মান ও সফল কূটনীতিকের তকমা পেলেও রাজনীতিতে তিনি ধরাশয়ী। তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নানামাত্রা পাওয়া যায়। 

১৯৭১ সালে শমসের মবিন চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রতিরোধ যুদ্ধকালে চট্টগ্রামের কালুরঘাটের যুদ্ধে তিনি আহত হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে বন্দি করে। তার কোর্ট মার্শাল হওয়ার কথা ছিল। তবে দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় তিনিও মুক্ত হয়ে যান। রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীর বিক্রম খেতাব অর্জন করেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি ন্যস্ত হওয়ায় কূটনীতিক হিসেবে দীর্ঘদিন চাকরি করেন শমসের মুবিন চৌধুরী। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে শমসের মবিন পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। দুই বছর সেই দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৭ সালে চাকরি থেকে অবসরে যান তিনি।

২০০৮ সালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিএনপিতে যোগ দেন সমশের মবিন চৌধুরী। ওই সময় চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পান তিনি। সেই সময় রাজনীতিক হিসেবে তার পরিচিত ছড়িয়ে পড়ে। ওয়ান-ইলেভেনের সরকার এবং তখন বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগে বিএনপির পক্ষে গণমাধ্যমে ঘন ঘন দেখা যেত তার মুখ।

২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয় এই শমসের মুবিনকে।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে বিএনপি ও শরিকদের টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হন শমসের মবিন। ওই বছরের মে মাসে জামিনে মুক্তি পেলেও এরপর আর রাজনীতিতে সক্রিয় হননি তিনি।

অবসর ভেঙে ২০১৮ সালে একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা বাংলাদেশে যোগ দেন শমসের মুবিন। ওই বছর তিনি সিলেট-৬ আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন।

বিকল্পধারায় সুবিধা করতে পারেনি শমসের মুবিন। ওই দল থেকে পদত্যাগ করে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার গড়া দল তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব নেন শমসের মুবিন।

২০২৪ সালের সালের একতরফা নির্বাচনে তার নেতৃত্বে তৃণমূল বিএনপি অংশ নিয়েছিল। তবে কেউ জয়ী হতে পারেনি। 

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপবির্তনের পর ওই বছরের ১৭ অক্টোবর রাজধানীর বনানীর ডিওএইচএসের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন শমসের মুবিন চৌধুরী। দুটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে ৫ মাস কারাগারে ছিলেন তিনি। 

২০২৫ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। তার আট মাস পর এসে ঘোষণা দিলেন আর রাজনীতি করবেন না; যখন মাত্র তিন মাসের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো।

ঢাকা/রায়হান/রাসেল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শমসের মুবিন চৌধুরী: বীর বিক্রম কূটনীতিকের ‘দলছুট’ রাজনীতি