শমসের মুবিন চৌধুরী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদে ছিলেন। যুদ্ধের পর মেজর পদে থাকা অবস্থায় তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। শুরু হয় তার কূটনৈতিক ক্যারিয়ার। চাকরি থেকে অবসরের পর যোগ দেন রাজনীতিতে, তবে এখানে এসে নামের চেয়ে বদনাম বেশি কুড়িয়েছেন।

রাজনীতিক হিসেবে কোনো আলোচনায় না থাকা শমসের মুবিন হঠাৎ রবিবার (১৬ নভেম্বর) মধ্যরাতে গণমাধ্যমের বড় খবর হয়ে এলেন। তবে এই আসা রাজনীতি থেকে চলে যাওয়ার ঘোষণা দিতেই আসা। তিনি আর রাজনীতি করবেন না বলে তার দল তৃণমূল বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছেন, যা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন তিনি নিজে এবং তার দলের মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার।

আরো পড়ুন:

নীরবতা ভেঙে হঠাৎ রাজনীতিকে ‘না’ বলে দিলেন শমসের মুবিন চৌধুরী

‘আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’  

মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় বীর বিক্রম খেতাব অর্জন করে শমসের মুবিন চৌধুরী। খেতাব, সম্মান ও সফল কূটনীতিকের তকমা পেলেও রাজনীতিতে তিনি ধরাশয়ী। তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নানামাত্রা পাওয়া যায়। 

১৯৭১ সালে শমসের মবিন চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রতিরোধ যুদ্ধকালে চট্টগ্রামের কালুরঘাটের যুদ্ধে তিনি আহত হন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে বন্দি করে। তার কোর্ট মার্শাল হওয়ার কথা ছিল। তবে দেশ স্বাধীন হয়ে যাওয়ায় তিনিও মুক্ত হয়ে যান। রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীর বিক্রম খেতাব অর্জন করেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি ন্যস্ত হওয়ায় কূটনীতিক হিসেবে দীর্ঘদিন চাকরি করেন শমসের মুবিন চৌধুরী। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে শমসের মবিন পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। দুই বছর সেই দায়িত্ব পালন শেষে ২০০৭ সালে চাকরি থেকে অবসরে যান তিনি।

২০০৮ সালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিএনপিতে যোগ দেন সমশের মবিন চৌধুরী। ওই সময় চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পান তিনি। সেই সময় রাজনীতিক হিসেবে তার পরিচিত ছড়িয়ে পড়ে। ওয়ান-ইলেভেনের সরকার এবং তখন বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগে বিএনপির পক্ষে গণমাধ্যমে ঘন ঘন দেখা যেত তার মুখ।

২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয় এই শমসের মুবিনকে।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে বিএনপি ও শরিকদের টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হন শমসের মবিন। ওই বছরের মে মাসে জামিনে মুক্তি পেলেও এরপর আর রাজনীতিতে সক্রিয় হননি তিনি।

অবসর ভেঙে ২০১৮ সালে একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা বাংলাদেশে যোগ দেন শমসের মুবিন। ওই বছর তিনি সিলেট-৬ আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন।

বিকল্পধারায় সুবিধা করতে পারেনি শমসের মুবিন। ওই দল থেকে পদত্যাগ করে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার গড়া দল তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব নেন শমসের মুবিন।

২০২৪ সালের সালের একতরফা নির্বাচনে তার নেতৃত্বে তৃণমূল বিএনপি অংশ নিয়েছিল। তবে কেউ জয়ী হতে পারেনি। 

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপবির্তনের পর ওই বছরের ১৭ অক্টোবর রাজধানীর বনানীর ডিওএইচএসের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন শমসের মুবিন চৌধুরী। দুটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে ৫ মাস কারাগারে ছিলেন তিনি। 

২০২৫ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। তার আট মাস পর এসে ঘোষণা দিলেন আর রাজনীতি করবেন না; যখন মাত্র তিন মাসের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো।

ঢাকা/রায়হান/রাসেল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ শমস র ম ব ন চ ধ র ন শমস র ম ব ন পরর ষ ট র র জন ত ক ক টন ত ক র মব ন ব এনপ ই বছর

এছাড়াও পড়ুন:

নীরবতা ভেঙে হঠাৎ রাজনীতিকে ‘না’ বলে দিলেন শমসের মুবিন চৌধুরী

বছর দুয়েক আগেও দেশে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত ও ‘দলছুট’ হিসেবে পরিচিত সাবেক কূটনীতিক শমসের মুবিন চৌধুরীর রাজনৈতিক অবসরের হঠাৎ ঘোষণা ছড়িয়ে পড়েছে রবিবার রাতে। 

২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশ যখন টালমাটাল তার কয়েক মাস আগে নামকাওয়াস্তে দল ‘তৃণমূল বিএনপি’র নেতৃত্বে আসেন শমসের মুবিন, যার পদ ছিল চেয়ারপার্সন। 

আরো পড়ুন:

‘আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’  

একটি দল বেহেস্তের টিকিট দেখিয়ে ভোট চাচ্ছে: আমান উল্লাহ

এই দলের মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন বিএনপির নারায়ণগঞ্জের আরেকজন আলোচিত নেতা তৈমূর আলম খন্দকার। রবিবার (১৬ নভেম্বর) রাতে তৈমূর আলমের কাছে চিঠি দিয়ে রাজনীতিকে বিদায় বলে দিয়েছেন শমসের মুবিন।

শমসের মুবিন ও তৈমূর খন্দকারের নেতৃত্বাধীন ‘তৃণমূল বিএনপি’ ডামি দল হিসেবে আখ্যা পায়। তখন অনেকে বলেছিলেন, বিএনপি ভাঙার অপচেষ্টা হিসেবে দলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাম ও পদ ব্যবহার করে তৃণমূল বিএনপি তৈরি করা হয়েছে। একে অনেকে ‘কিংস পার্টি’ নামে অভিহিত করেছিলেন। বিএনপি-জামায়াতসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জনে ঘোষণার পরও তখন বেশ কয়েকটি দল রাতারাতি গজিয়ে ওঠে, যার একটি এই তৃণমূল বিএনপি। এসব দল অভিনব কায়দায় নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আসার চেষ্টা করেছিল।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, বদলে গেছে রাজনীতির হাওয়া; নিষিদ্ধ হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। এখন আর তৃণমূল বিএনপি বলে কোনো দলের কার্যক্রম মাঠে দেখা যায় না; শোনা যায় না তাদের দলের নেতাদের নাম। গণমাধ্যমেও তাদের কোনো উপস্থিতি নেই।

এখন নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। অথচ কোথাও শমসের মুবিন চৌধুরীর নাম উচ্চারিত হয় না। রাজনীতির আড়ালেই পড়ে ছিলেন তিনি। হঠাৎ সরব হলেন; তবে রাজনৈতিক বিদায়ের ঘণ্টা ধ্বনি শোনাতেই যেন অচমকা গভীর রাতে গণমাধ্যমে হাজির হলেন তিনি।

তৈমূর খন্দকার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শমসের মুবিন চৌধুরী অনেক দিন ধরেই দলে নিষ্ক্রিয়। তাদের দলও অনেক দিন ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। তিনি (শমসের মুবিন) ফোন করে অবসরের কথা জানিয়েছেন এবং তার কাছে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন।

তৈমূর খন্দকার বরাবর চিঠিতে শমসের মুবিন লিখেছেন, “এই মর্মে আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে সকলকে অবগত করছি যে, শারীরিক কারণে আমি শমসের এম চৌধুরী রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই সঙ্গে তৃণমূল বিএনপির সকল পদ থেকে আমি পদত্যাগ করিলাম। আমার এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ইং থেকে কার্যকর হইল।”

“আমার উপরে উল্লেখিত সিদ্ধান্ত দলের সংশ্লিষ্ট এবং গণমাধ্যমে অবগত করার জন্য আপনাকে সবিনয় অনুরোধ করিলাম”, লেখেন তিনি।

সাবেক কূটনীতিক শমসের মুবিন চৌধুরী একসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। পরে তিনি বিএনপি ছেড়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ নামে দলেও যোগ দিয়েছিলেন।

বিকল্পধারা ছেড়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তৃণমূল বিএনপি নামে দলটির চেয়ারপারসন হন শমসের মুবিন।

ঢাকা/রায়হান/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নীরবতা ভেঙে হঠাৎ রাজনীতিকে ‘না’ বলে দিলেন শমসের মুবিন চৌধুরী