আশঙ্কার মেঘ অনেক দিন ধরেই জমছিল আকাশে। এবার নিশ্চিত হলো সেই শঙ্কাই। আগস্টে বাংলাদেশ সফরে আসছে না ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দল। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। তবে দেশটির গণমাধ্যমে ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেছে বোর্ডের মনোভাব।
সূত্র বলছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে ভারত আপাতত বাংলাদেশ সফর থেকে সরে এসেছে। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুদেশের সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই পটভূমিতে ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয় বিসিসিআইয়ের অভ্যন্তরে। যার ফলে তারা এই সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সফরে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা ছিল ১৭ থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য বিশেষ করে হতাশার খবর। কারণ, এই সিরিজে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার কথা ছিল। বিশ্বকাপের পর দীর্ঘ বিরতি শেষে এটাই হতে পারত তাদের প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ।
আরো পড়ুন:
৬৭ ওভারেই অলআউট অস্ট্রেলিয়া
গিলের ডাবল সেঞ্চুরিতে ভারতের রান পাহাড়, শুরুতেই চাপে ইংল্যান্ড
কিন্তু এখন তাদের মাঠে ফেরার জন্য অপেক্ষা বাড়ছে আরও। সম্ভাব্য পরবর্তী মঞ্চ হতে পারে অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম সিরিজ। যা শুরু হওয়ার কথা ১৯ অক্টোবর। অর্থাৎ, ভক্তদের জন্য বিরাট-রোহিতকে আবার জাতীয় দলে দেখার সময় গুনতে হবে আরও প্রায় সাড়ে তিন মাস।
তবে আশা আছে অন্যত্র। সেপ্টেম্বরের এশিয়া কাপে আবার মুখোমুখি হতে পারে বাংলাদেশ ও ভারত। যদিও সেটি হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। যেখানে রোহিত-কোহলির না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
সফর পিছিয়ে গেলেও আলোচনা চলছে ভবিষ্যতে নতুন করে সূচি নির্ধারণের বিষয়ে। দুই দেশের বোর্ড হয়তো শিগগিরই যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে জানাবে পরবর্তী করণীয়। আপাতত ক্রিকেটার নয়, কূটনীতি খেলছে বড় ম্যাচ।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।