শিক্ষার্থীদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত এবং র‍্যাগিংয়ের অপরাধে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ১৯ জন শিক্ষার্থীকে আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে দু’জনের ছাত্রত্ব বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

সিভাসু’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত স্টেডেন্টস ডিসিপ্লিন কমিটির ১৩তম সভায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের মাত্রা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। 

সিভাসুর জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের সিনিয়র উপপরিচালক খলিলুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড সাইন্স ও টেকনোলজি অনুষদের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় একই অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মির্জা মাহফুজ হাসান আকাশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, মো.

জাবেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও মো. রশিদ শাবাব শুভ, তানজিম মো. সিয়াম ইকবাল ও মো. মেহেদী হাসানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার এবং প্রত্যেককে তিন হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। 

সভায় ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের নতুন ভর্তিকৃত আটজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে শৃঙ্খলাবিরোধী র‍্যাগিং এবং তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ফিশারিজ অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল ইসলাম শিহাবকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, মো. সাজেদ-উল-ইসলাম সিফাতকে হল থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার ও পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা এবং মো. শাহেদুল ইসলামকে ছয় মাসের জন্য হল থেকে বহিষ্কার ও তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই ঘটনায় ফিশারিজ অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিফাত উল্ল্যাহ জিলান, মো. মোস্তাকিম হোসেন রিয়াদ, আসিফ আল হাসান, মো. ইলিয়াস আল জাবের, তাইদুল ইসলাম তপু, মো. আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ, নাজমুস সাদাত তৌহিদ, আবুল হাসান ফাহাত, মো. শাহরুখ খান ও মো. বেলাল হোসেনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার ও সতর্কীকরণ নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ফিশারিজ অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রিয়াজুল জান্নাহ ওয়াসীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আজীবনের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান হলের ৪১৮ নং কক্ষে ২০২৩ সালের পহেলা আগস্ট রাতে এক শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় এবং একই বছরের ১৯ নভেম্বর রাতে টিভি রুমে আরেক শিক্ষার্থীকে আক্রমণ ও আহত করার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায়। এছাড়া কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব প্রদান না করায় অসদাচরণের দায়ে এমএস বর্ষের শিক্ষার্থী অভিষেক নন্দী (এপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল টেকনোলজি বিভাগ) এবং মো. আশিকুল ইসলাম রানার (এনিম্যাল সাইন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগ) ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত কর র ঘটন য় ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় রাজি ইসরায়েল

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা করতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত জানানোর পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি প্রতিনিধিদলকে কাতারে পাঠাচ্ছেন।

গাজা থেকে এএফপি জানিয়েছে, এই দল যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে রোববার রওনা দিবে। তবে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির খসড়া নিয়ে হামাস যে সংশোধনী দিয়েছে, তা ইসরায়েলের কাছে ‘অগ্রহণযোগ্য’।

আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রায় ২১ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধ থামাতে নতুন করে চেষ্টা শুরু করেছেন।

এদিকে এমন প্রচেষ্টা চলার সময়ে গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার ইসরাইলি হামলায় সেখানে অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন।

হামাস শুক্রবার জানিয়েছিল, তারা ‘অবিলম্বে ও আন্তরিকভাবে’ আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত এবং প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তাদের জবাব পাঠানো হচ্ছে।

নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হামাস কাতারি প্রস্তাবে যে পরিবর্তন চাচ্ছে, তা গতরাতে আমাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু এসব পরিবর্তন ইসরায়েলের কাছে মেনে নেওয়ার মতো নয়।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রস্তাবিত আলোচনায় অংশ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে কাতারি প্রস্তাবের ভিত্তিতে জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে সংলাপ চালিয়ে যেতে বলেছেন, যেটিতে ইসরায়েল ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে।’

হামাস এখনো যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে তাদের জবাব প্রকাশ্যে জানায়নি। তবে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবটি হামাসের কাছে পৌঁছেছে।

আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফিলিস্তিনি দু’টি সূত্র এএফপি’কে জানিয়েছে, প্রস্তাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। এ সময় হামাস ১০ জন জীবিত জিম্মি মুক্তি দেবে এবং কয়েকটি মৃতদেহ ফেরত পাঠাবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলের কাছে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি চাওয়া হয়েছে।

তবে তারা জানিয়েছে, হামাসের পক্ষ থেকে আরও কিছু শর্ত তোলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের রূপরেখা, আলোচনার সময় পুনরায় যুদ্ধ শুরু না হওয়ার নিশ্চয়তা ও জাতিসংঘের নেতৃত্বে ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি।

হামাস ২০০৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। এরপরই ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করতে এবং  সব জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক অভিযান শুরু করে।

এর আগে কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দফা সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। তখন ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের ফেরত আনা হয়েছিল।

২০২৩ সালের হামলায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ২৫১ জনকে জিম্মি করেছিল। এদের মধ্যে এখনো ৪৯ জন গাজায় রয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মতে, এদের মধ্যে ২৭ জন মারা গেছেন।

মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক বদর আবদেল আতি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি আলোচনায় প্রধান প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। 

আলোচনায় সাম্প্রতিক অগ্রগতি এবং ‘চুক্তিতে পৌঁছাতে সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষের মধ্যে পরোক্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তবে নতুন করে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। মূল কারণ হলো, হামাস চায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। তবে তা মানতে নারাজ ইসরায়েল। এই যুদ্ধ গাজার ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে।

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দা কারিমা আল-রাস বলেছেন, ‘হামাস ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে শুনে মানুষ খুশি। আমরা আশা করছি, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসবে এবং ত্রাণ ঢুকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ ময়দার (খাবার) অভাবে মারা যাচ্ছে; আর যুবকরা নিজেদের সন্তানদের জন্য ময়দা জোগাড় করতে গিয়ে মারা যাচ্ছে।’

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, শনিবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ৪২ জন নিহত হয়েছেন।

গাজায় গণমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও অনেক এলাকায় প্রবেশে বাধার কারণে বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার দেওয়া নিহতের সংখ্যা ও বিস্তারিত তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি এএফপি।

এএফপি’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নির্দিষ্ট স্থানের তথ্য ছাড়া তারা হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবে না।

ইসরায়েলের সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এএফপি জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন সাধারণ নাগরিক।

এদিকে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৭ হাজার ৩৮৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ। জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিটিজেনস ব্যাংকের এমডি হলেন আলমগীর হোসেন
  • অনিয়ম করে শ্রমিক থেকে প্রকৌশলী হওয়ার সত্যতা পেল দুদক
  • ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কী আছে, এটা কি গাজায় যুদ্ধ থামাতে পারবে
  • ইয়েমেনের ৩ বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • ইয়েমেনের তিনটি বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • দ্বন্দ্বের অবসান, শুটিংয়ে গড়াচ্ছে শুভ-সোহিনীর ‘লহু’
  • ২৬ মাসে কাটা হয়েছে ১৩ লাখ গাছ, সবচে বেশি কোথায়, ঢাকায় কত
  • গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় রাজি ইসরায়েল
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ১৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত