Samakal:
2025-11-02@00:41:38 GMT

জীবনের স্রোত

Published: 7th, July 2025 GMT

জীবনের স্রোত

রাহেলা বেগম, একজন সংগ্রামী মায়ের নাম। দুই মেয়েকে বুকে চেপে জীবনের প্রতিটি ঝড় ঠেলে সামনে এগিয়েছেন। এই গল্প কোনো কল্পনা নয়, বাস্তব জীবনের বর্ণনা। স্বামী আশরাফ আলি ছয় বছর আগে মারা যাওয়ার পর থেকে শুরু হয় তাঁর নিঃসঙ্গ লড়াই। তখন বড় মেয়ে ফারজানার বয়স দশ, আর ছোট মেয়ে অন্তু তখনও মায়ের গর্ভে। সেই মুহূর্ত থেকেই রাহেলার জীবনে নেমে আসে এক অন্ধকার অধ্যায়– থেমে যাননি তিনি। প্রতিটি দিন-রাত কাটিয়েছেন মেয়েদের সম্মানজনক ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুকে নিয়ে।
ছয় বছরে তিনি সহ্য করেছেন অনেক কুপ্রস্তাব, কটাক্ষ, অভাব আর অবহেলা। কোনো কিছুতেই টলেননি তিনি। তাঁর কাছে মেয়েরা ছিল জীবনের একমাত্র আশ্রয়। বড় মেয়ে ফারজানা এখন ১৬ বছরের কিশোরী। বিয়ের উপযুক্ত বয়সে পৌঁছালেও প্রতিটি প্রস্তাবের পেছনেই লুকিয়ে থাকে যৌতুকের দাবি। এসবের মোকাবিলা করতে গিয়ে রাহেলা নিজেই দুটি গরু কিনে পালতে শুরু করেন, মেয়ের বিয়ের খরচ জোগাড় করার আশায়। গরু দুটি ছিল তাঁর শেষ আশার প্রতীক।
প্রকৃতি কখনও কখনও মানুষের হিসাব-নিকাশ মানে না। ৮ দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টিতে চারপাশ ডুবে যায় পানিতে। তিন দিন আগে রাহেলার ঘরেও পানি ঢুকতে শুরু করে। প্রথমে না চাইলেও, প্রাণ বাঁচাতে বাধ্য হন ঘর ছেড়ে যেতে। গরুগুলোকেও সঙ্গে নিতে চাইলেও তারা পালিয়ে যায়। সেই সঙ্গে যেন রাহেলার স্বপ্নগুলোও ভেসে যায় বানের স্রোতে।
নৌকায় করে রাহেলা, ফারজানা, অন্তু ও কয়েকজন প্রতিবেশী আশ্রয়কেন্দ্রের পথে রওনা দেন। মাঝপথে স্রোতের তীব্রতায় ঘটে যায় জীবনের সবচেয়ে নির্মম ঘটনা—চার বছরের ছোট মেয়ে অন্তু পানির তোড়ে হারিয়ে যায় সবার চোখের সামনে। সেই মুহূর্তে রাহেলার বুক চিরে শূন্যতা গিলে নেয় তাঁর সমস্ত স্বপ্ন।
আশ্রয়কেন্দ্র এখন ঠিকানা। পাঁচতলা ভবনের তিন তলায় পড়ে আছেন রাহেলা বেগম। মাঝে মাঝে কেঁদে উঠছেন, আবার নিঃশব্দে অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। তাঁর পাশে বসে থাকা ফারজানার চোখে জল নেই, কিন্তু চোখে এক ধরনের নিস্তব্ধ আর্তনাদ, যা ভাষায় বলা যায় না। আশ্রয়কেন্দ্রটিতে এখন শুধু মানুষ নয়, বসে আছে শত শত হারিয়ে ফেলা গল্প। তাদের আর কোনো প্রাপ্তি নেই, কেবল অপেক্ষা। খাবারও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। চারদিকে শুধুই পানি। যেন সেই পানিতে মিশে গেছে তাদের হাসি, ভালোবাসা, স্বপ্ন। রাহেলা বেগমের মতো আরও অসংখ্য মুখ। শিশুরা চুপ, বয়স্করা কাঁপা কণ্ঠে গল্প করে, আর হঠাৎ থেমে কান্নায় ভেঙে পড়ে। 
তবুও মানুষ আশায় বাঁচে। হোক তা অন্ধকারে একটি প্রদীপের মতো ক্ষীণ, তবুও সেই আলোই মানুষের জীবনের দিশা। হয়তো একদিন, কোনো নতুন সকাল রাহেলা বেগমের কণ্ঠে এনে দেবে সেই গর্বিত উচ্চারণ—আমার মেয়ে মানুষ হয়েছে, আমি হারিনি।” v
সুহৃদ, ঝিনাইদহ

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ জ বন র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত