Samakal:
2025-09-18@00:08:29 GMT

জীবনের স্রোত

Published: 7th, July 2025 GMT

জীবনের স্রোত

রাহেলা বেগম, একজন সংগ্রামী মায়ের নাম। দুই মেয়েকে বুকে চেপে জীবনের প্রতিটি ঝড় ঠেলে সামনে এগিয়েছেন। এই গল্প কোনো কল্পনা নয়, বাস্তব জীবনের বর্ণনা। স্বামী আশরাফ আলি ছয় বছর আগে মারা যাওয়ার পর থেকে শুরু হয় তাঁর নিঃসঙ্গ লড়াই। তখন বড় মেয়ে ফারজানার বয়স দশ, আর ছোট মেয়ে অন্তু তখনও মায়ের গর্ভে। সেই মুহূর্ত থেকেই রাহেলার জীবনে নেমে আসে এক অন্ধকার অধ্যায়– থেমে যাননি তিনি। প্রতিটি দিন-রাত কাটিয়েছেন মেয়েদের সম্মানজনক ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুকে নিয়ে।
ছয় বছরে তিনি সহ্য করেছেন অনেক কুপ্রস্তাব, কটাক্ষ, অভাব আর অবহেলা। কোনো কিছুতেই টলেননি তিনি। তাঁর কাছে মেয়েরা ছিল জীবনের একমাত্র আশ্রয়। বড় মেয়ে ফারজানা এখন ১৬ বছরের কিশোরী। বিয়ের উপযুক্ত বয়সে পৌঁছালেও প্রতিটি প্রস্তাবের পেছনেই লুকিয়ে থাকে যৌতুকের দাবি। এসবের মোকাবিলা করতে গিয়ে রাহেলা নিজেই দুটি গরু কিনে পালতে শুরু করেন, মেয়ের বিয়ের খরচ জোগাড় করার আশায়। গরু দুটি ছিল তাঁর শেষ আশার প্রতীক।
প্রকৃতি কখনও কখনও মানুষের হিসাব-নিকাশ মানে না। ৮ দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টিতে চারপাশ ডুবে যায় পানিতে। তিন দিন আগে রাহেলার ঘরেও পানি ঢুকতে শুরু করে। প্রথমে না চাইলেও, প্রাণ বাঁচাতে বাধ্য হন ঘর ছেড়ে যেতে। গরুগুলোকেও সঙ্গে নিতে চাইলেও তারা পালিয়ে যায়। সেই সঙ্গে যেন রাহেলার স্বপ্নগুলোও ভেসে যায় বানের স্রোতে।
নৌকায় করে রাহেলা, ফারজানা, অন্তু ও কয়েকজন প্রতিবেশী আশ্রয়কেন্দ্রের পথে রওনা দেন। মাঝপথে স্রোতের তীব্রতায় ঘটে যায় জীবনের সবচেয়ে নির্মম ঘটনা—চার বছরের ছোট মেয়ে অন্তু পানির তোড়ে হারিয়ে যায় সবার চোখের সামনে। সেই মুহূর্তে রাহেলার বুক চিরে শূন্যতা গিলে নেয় তাঁর সমস্ত স্বপ্ন।
আশ্রয়কেন্দ্র এখন ঠিকানা। পাঁচতলা ভবনের তিন তলায় পড়ে আছেন রাহেলা বেগম। মাঝে মাঝে কেঁদে উঠছেন, আবার নিঃশব্দে অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। তাঁর পাশে বসে থাকা ফারজানার চোখে জল নেই, কিন্তু চোখে এক ধরনের নিস্তব্ধ আর্তনাদ, যা ভাষায় বলা যায় না। আশ্রয়কেন্দ্রটিতে এখন শুধু মানুষ নয়, বসে আছে শত শত হারিয়ে ফেলা গল্প। তাদের আর কোনো প্রাপ্তি নেই, কেবল অপেক্ষা। খাবারও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। চারদিকে শুধুই পানি। যেন সেই পানিতে মিশে গেছে তাদের হাসি, ভালোবাসা, স্বপ্ন। রাহেলা বেগমের মতো আরও অসংখ্য মুখ। শিশুরা চুপ, বয়স্করা কাঁপা কণ্ঠে গল্প করে, আর হঠাৎ থেমে কান্নায় ভেঙে পড়ে। 
তবুও মানুষ আশায় বাঁচে। হোক তা অন্ধকারে একটি প্রদীপের মতো ক্ষীণ, তবুও সেই আলোই মানুষের জীবনের দিশা। হয়তো একদিন, কোনো নতুন সকাল রাহেলা বেগমের কণ্ঠে এনে দেবে সেই গর্বিত উচ্চারণ—আমার মেয়ে মানুষ হয়েছে, আমি হারিনি।” v
সুহৃদ, ঝিনাইদহ

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ জ বন র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের ক্ষুদে ফুটবলার জিসানের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থানীয়রা ফুটবলে জিসানের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ বলে ডাকেন। 

তারেক রহমানের পক্ষে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জিসানের গ্রামের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। তিনি জিসানের বাবা ও এলাকাবাসীকে এ খবরটি জানিয়ে আসেন।

উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের অটোরিকশাচালক জজ মিয়ার ছেলে জিসান। মাত্র ১০ বছর বয়সী এই প্রতিভাবান ফুটবলারের অসাধারণ দক্ষতার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্থানীয় চর ঝাকালিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সে। 

কখনও এক পায়ে, কখনও দু’পায়ে, কখনও পিঠে ফুটবল রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কসরত করে জিসান। দেখে মনে হবে, ফুটবল যেনো তার কথা শুনছে। এসব কসরতের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

অনলাইনে জিসানের ফুটবল নৈপুণ্য দেখে মুগ্ধ হন তারেক রহমান। তিনি জিসানের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার পক্ষে গতকাল সোমবার বিকেলে জিসানের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। 

জিসানকে উপহার হিসেবে বুট, জার্সি ও ফুটবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তুলে দেন তিনি। এছাড়া জিসানের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়।

জিসানের ফুটবল খেলা নিজ চোখে দেখে মুগ্ধ আমিনুল হক বলেন, “জিসান ফুটবলে ন্যাচারাল ট্যালেন্ট। তারেক রহমান জিসানের প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া ও ভবিষ্যতের সকল দায়িত্ব নিয়েছেন। তাছাড়া প্রতিমাসে জিসানের লেখাপড়া, ফুটবল প্রশিক্ষণ ও পরিবারের ব্যয়ভারের জন্য টাকা পাঠানো হবে।”

জিসান জানায়, মোবাইলে ম্যারাডোনা, মেসি ও রোনালদোর খেলা দেখে নিজেই ফুটবলের নানা কৌশল শিখেছে। নিজ চেষ্টায় সে এসব রপ্ত করেছে।

জিসানের বাবা জজ মিয়া বলেন, “আমি বিশ্বাস করতাম, একদিন না একদিন কেউ না কেউ আমার ছেলের পাশে দাঁড়াবে। আজ আমার সেই বিশ্বাস পূর্ণ হয়েছে।”

ঢাকা/রুমন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর  করতে ডায়েটে যে পরিবর্তন আনতে পারেন
  • অনুষ্ঠান করে স্ত্রীকে বিয়ে দিলেন স্বামী
  • ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান