গত ২১ জুলাই দুপুরে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। সময়ের সঙ্গে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এই ভূখণ্ডের বাতাস।

প্রতি বছরই বিশ্বের নানা দেশে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে থাকে। সেসব ঘটনা অবলম্বনে হলিউডে অনেক সিনেমা নির্মিত হয়েছে। এর আগে ভারতেও ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে, রয়েছে সাহসী কিছু বিমান যাত্রা। এসব বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে পরবর্তীতে বলিউডে নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু সিনেমা। এমন কয়েকটি সিনেমা নিয়ে এই প্রতিবেদন।

এয়ারলিফট
১৯৯০ সালে কুয়েত আক্রমণ করে ইরাক। ফলে কুয়েতে বসবাসরত প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার ভারতীয় নাগরিক সেখানে আটকা পড়েন। এ পরিস্থিতিতে রঞ্জিত কাটিয়াল নামে এক ব্যবসায়ী ভারতে তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চান। কিন্তু কুয়েতে আটকে পড়া অন্যান্য ভারতীয়দের দুর্দশা দেখে তাদের উদ্ধারের একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নেন তিনি। সর্বশেষ বিমান যোগে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন রঞ্জিত। এই গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে হিন্দি সিনেমা ‘এয়ারলিফট’। রঞ্জিত চরিত্রে অভিনয় করেন অক্ষয় কুমার। রাজা কৃষ্ণা মেনন নির্মিত সিনেমাটি ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি মুক্তি পায়। ৩০ কোটি রুপি বাজেটের সিনেমা আয় করেছিল ২২১ কোটি রুপির বেশি।    

আরো পড়ুন:

সংসার ভাঙছে ‘কোই মিল গ্যায়া’ সিনেমার সেই টিনার?

স্ত্রীকে সঞ্জয়ের ‘মা’ সম্বোধন, নেপথ্যে কী?

নীরজা
রাম মাধবানি নির্মিত আলোচিত বলিউড সিনেমা ‘নীরজা’। সিনেমাটি তৈরি হয়েছে বিমানবালা নীরজা ভানটের জীবনের গল্প নিয়ে। ১৯৮৬ সাালের ৫ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিল ‘প্যান অ্যাম ফ্লাইট ৭৩’ বিমান। পরবর্তীতে পাকিস্তানের করাচিতে যাত্রা বিরতির সময় বিমানটি সন্ত্রাসীদের হাতে জিন্মি হয় এবং এ ঘটনায় প্রাণ হারান নীরজা ভানট। সেই ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে সিনেমাটিতে। বিমান ছিনতাইয়ের সেই ঘটনায় ২০ জন যাত্রী মারা গিয়েছিলেন এবং ১০০ জন আহত হয়েছিলেন। বাকি মানুষের জীবন বেঁচে গিয়েছিল নীরজার উপস্থিত বুদ্ধি ও সাহসিকতার জন্যই। সিনেমাটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন সোনম কাপুর। ২০১৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় এটি। ২০ কোটি রুপি বাজেটের এ সিনেমা আয় করেছিল ১২১ কোটি রুপি। 

রং দে বাসন্তী
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পাঁচ শহীদের সংগ্রামের কাহিনি পড়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন নিয়ে ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরির উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড থেকে ভারতে যায় সু (এলিস)। সু’র ভারতীয় বন্ধু সোনিয়ার (সোহা আলী খান) মাধ্যমে পাঁচ তরুণের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার। এই পাঁচ তরুণ হলেন—ডিজে (আমির খান), করন (সিদ্ধার্থ), সুখি (সারমান জোসি), আসলাম (কুনাল কাপুর), পান্ডে (অতুল কুলকার্নি)। পরে সু এদেরকে দিয়েই ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন।  

তবে সিনেমাটির গল্প মোড় নেয় যখন বিমান বাহিনীর মিগ-২১ ক্র্যাশে সোনিয়ার বয়ফ্রেন্ড ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট অজয় (আর.

মাধবান) মৃত্যুবরণ করেন। অজয়ের মৃত্যু মোড় ঘুরিয়ে দেয় ডিজেদের জীবনেও। অজয়ের মৃত্যুর পর সরকার ঘোষণা করে, পাইলটের ভুলের কারণে মিগ-২১ ক্র্যাশ হয়। কিন্তু দক্ষ পাইলট অজয় শহরের অসংখ্য লোকের প্রাণ বাঁচানোর জন্য তার জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী ও আমলাদের দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশ থেকে কেনা সস্তা ও ত্রুটিযুক্ত মিগ-২১ এর কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এমন গল্প নিয়ে নির্মিত হয় ‘রং দে বাসন্তী’ সিনেমা। রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা নির্মিত সিনেমাটি ২০০৬ সালের ২৬ জানুয়ারি মুক্তি পায়। 

রানওয়ে ৩৪
২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট দোহা থেকে জেট এয়ারওয়েজের ফ্লাইট ৯ ডব্লিউ ৫৫৫ কোচি বিমানবন্দরের আকাশে পৌঁছায়। কিন্তু সদ্য বৃষ্টি হওয়ার কারণে বিমানটি নামতে পারেনি। তাছাড়া ভোরের কুয়াশায় চারদিক আচ্ছাদিত ছিল। ওই সময়ে বিমানে ১৪১ জন যাত্রী আর ৮ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। বিমানে তেল জ্বালানি মজুত ছিল ৪ হাজার ৮৪৪ কেজি। কোচি বিমানবন্দরে তিনবার ল্যান্ডিং করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। কমতে থাকে বিমানের জ্বালানির পরিমাণ। ২ হাজার কেজিতে জ্বালানি নামার পর বিমানটি তিরুবনন্তপুরম এয়ারপোর্টে ঘুরিয়ে নেন পাইলট। কিন্তু সেখানেও প্রচন্ড কুয়াশার কারণে ৬ বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। বিমানবন্দর থেকেও ল্যান্ড করতে বাধা দেওয়া হয়। সপ্তমবার ‘ব্লাইন্ড ল্যান্ডিং’ করেন পাইলট এবং সফল হন। আর একবারও যদি ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা বিফলে যেত, তবে জ্বালানি ফুরিয়ে আকাশেই ক্র্যাশ করত বিমানটি। এই বাস্তব ঘটনা অবলম্বেন নির্মিত হয় ‘রানওয়ে ৩৪’ সিনেমা। অভিনয়ের পাশাপাশি এটি পরিচালনাও করেন অজয় দেবগন। ২০২২ সালের ২৯ এপ্রিল মুক্তি পায় সিনেমাটি।

ঢাকা/শান্ত

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র ম ত হয় গল প ন য় ত হয় ছ ব ম নট কর ছ ল র জ বন প ইলট

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩