ক্রিকেট কেবল খেলার নাম নয়, এটি কখনও কখনও হয়ে ওঠে আত্মত্যাগের প্রতীক। ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ভারতের টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক ঋষভ পন্ত যেন নতুন করে সেই কথাটাই প্রমাণ করলেন। ডান পায়ের পাতায় চিড় নিয়েও মাঠে নেমে ব্যাটিং করলেন তিনি। এমন একটি দৃশ্য দেশের প্রতি এক ক্রিকেটারের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি হয়ে রইল।

প্রথম দিন ক্রিস ওকসের বাউন্সারে বলের আঘাতে থেমে গিয়েছিল তার ইনিংস। ৩৭ রানে আহত হয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন পন্ত। চোট এতটাই গুরুতর ছিল যে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) জানায়, পুরো ম্যাচে আর উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না তিনি। সেই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় তরুণ ধ্রুব জুরেলের কাঁধে।

কিন্তু ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে পরিস্থিতি যখন দলের বিপক্ষে, তখন কোনো দ্বিধা না করে ব্যথাতুর শরীর নিয়েই মাঠে নামেন পন্ত। ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর ক্রিজে আসার সময় তার হাঁটা দেখে বোঝা যাচ্ছিল যন্ত্রণা কতটা তীব্র। কিন্তু সে যন্ত্রণা ছাপিয়ে উঠেছিল তার দায়িত্ববোধ। দেশের প্রয়োজনে নিজের শরীরের সীমাবদ্ধতাকে অগ্রাহ্য করেছেন তিনি।

আরো পড়ুন:

পন্তের চোটে অস্বস্তি, প্রথম দিনে ২৬৪ রানে থামল ভারত

টস হেরে ব্যাট করছে ভারত

দ্বিতীয় দিনের সকালের শুরুটা ভারতের জন্য ভালো ছিল না। রবীন্দ্র জাদেজা ব্যক্তিগত সংগ্রহে মাত্র এক রান যোগ করেই ফিরে যান। অন্যদিকে শার্দুল ঠাকুর কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও বেন স্টোকসের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে থামেন ৪১ রানে। তবে পন্ত ও ওয়াশিংটন সুন্দরের ব্যাটে ভারত আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। পন্ত তখন পর্যন্ত ৫৫ বল খেলে ৩৯ রানে অপরাজিত, আর সুন্দর অপরাজিত ২০ রানে।

বৃষ্টির কারণে দুপুরের বিরতি এগিয়ে আনা হলেও, তার আগেই ভারতের সংগ্রহ ছুঁয়ে ফেলে ৩২১ রান, ৬ উইকেট হারিয়ে। মাঠে ফেরার সময় কেউ হয়তো আশা করেনি যে পন্ত এতটা লড়াই দেখাবেন। কিন্তু যে ঋষভ পন্তকে আমরা চিনি, তিনি বরাবরই ফ্রেম ভাঙা চরিত্র—যিনি নিয়ম ভাঙেন, ভয়কে হাস্যকর করে তোলেন।

এটি শুধুই একটি ইনিংস নয়, এটি সাহস, দায়িত্ব এবং ভালোবাসার গল্প। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে হয়তো বারবার ফিরে দেখা হবে ম্যানচেস্টারে পায়ের চিড়ে বাঁধা ব্যান্ডেজসহ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটা এক ব্যাটসম্যানের সেই দৃশ্য। যার হাতে ধরা ছিল কেবল ব্যাট নয়, ছিল দেশের সম্মান।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত