১.

নিরপেক্ষ মানে সবার বিপক্ষ।

যার দানের কথা অন্যে জানে, সে দেয় না, নেয়।

আজো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংগঠনের নাম ‘ব্যক্তি’।

এদেশে কারো উপকার করতে যাওয়াই ভোগান্তি। কারো জন্যে যে কিছু করে না, সে এদেশে জনপ্রিয়। যে ক্ষতি ছাড়া কিছু করে না, সে প্রাতঃস্মরণীয়। দুর্দিনে টিকে থাকা সুদিনে বিপ্লব করার সমান।

মননের গভীরদেশ থেকে উঠে আসা তীক্ষ্ণ এসব বোধ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের। লিখেছেন এখন থেকে পঁয়ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে, পরবর্তী সময়ে যা সংকলিত হয়েছে তাঁর ‘বিস্রস্ত জর্নাল’ বইটিতে।

তত দিনে তিনি হেঁটেছেন বিস্তর সাংগঠনিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে—ছাত্রজীবনে নীরব সঙ্ঘ, অধ্যাপনাকালে জ্ঞানোৎসুক তরুণদের নিয়ে পাঠচক্র, দেশজুড়ে বইপড়া কর্মসূচি ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মতো একটি অনন্য সংস্কৃতি চর্চা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাসহ আরও বহু কিছু্। সেই সূত্রে বহু রকম মানুষের সঙ্গে ইতিমধ্যে ঘটে গেছে তাঁর বিচিত্র মিথস্ক্রিয়া।

অতএব, মোটাদাগে ব্যক্তি এবং সমষ্টির দর্শন ও চরিত্র যে তিনি ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন (এবং মোক্ষম শব্দে-বাক্যে-কথায় সেটা সর্বোপযোগী ভাষায়, এমনকি কখনো বিদ্রূপে ও সকৌতুকে তা প্রকাশ করবেন)—তা বোধ করি স্বাভাবিক। অবশ্য সে জন্য দরকারমতো একটা বিস্তৃত ও সুউচ্চ দৃষ্টিভঙ্গি যে তাঁর বরাবরই ছিল, বলা বাহুল্য।

২.

অধ্যাপক সায়ীদের ব্যক্তিচরিত্রের অভিমুখটা শুরু থেকেই সংঘমুখী—বিচিত্র শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষের অংশগ্রহণে একেকটা সংঘ কি সংগঠন তিনি গড়ে তুলেছেন। নিকটজনেরা জানেন, প্রতিটি সমবেত উদ্যোগে তিনি যেন প্রতিবার নতুন করে বেঁচে ওঠেন।

নানা পরিচয় তাঁর—শিক্ষক, সাহিত্য আন্দোলনের পুরোধা, টিভি ব্যক্তিত্ব, বইপড়া কর্মসূচির প্রণেতা, পরিবেশ রক্ষা উদ্যোগের অগ্রপথিক। গভীরে দৃষ্টি মেলে বুঝতে পারা যায়, এই সবগুলো আয়োজনের ভিত্তিটা একই—মানুষ। মানুষকে নিয়ে, মানুষের সঙ্গে। সবাইকে নিয়ে, সবার সঙ্গে।

লক্ষণীয়, অধ্যাপক সায়ীদের ব্যক্তিচরিত্রের অভিমুখটা শুরু থেকেই সংঘমুখী—বিচিত্র শ্রেণি-পেশা-বয়সের (নবীনই বেশির ভাগ) মানুষের অংশগ্রহণে একেকটা সংঘ কি সংগঠন তিনি গড়ে তুলেছেন। নিকটজনেরা জানেন, প্রতিটি সমবেত উদ্যোগে তিনি যেন প্রতিবার নতুন করে বেঁচে ওঠেন। পান নতুন প্রাণের সন্ধান। খুঁজে পান জীবনের নতুনতর অর্থ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ছাত্রত্বের দিনগুলোতে ফিরে তাকানো যাক। বিদ্যান্বেষী, চিন্তাশীল, সাহিত্যপ্রিয় একদল সমদর্শী সহপাঠী-বন্ধুদের নিয়ে তিনি গড়ে তুললেন ‘নীরব সঙ্ঘ’। তাঁদেরই দু-চারজন যে কী ভীষণ একটা কাণ্ডের সূত্রপাত ঘটিয়ে বসেছিলেন, সেই ষাটের দশকের গোড়ায়, পরবর্তী সময়ে এ দেশের সংস্কৃতি জগতে তা এক কিংবদন্তি ঘটনার মর্যাদা অর্জন করে।

জানি না বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের ছাত্র তরুণ সায়ীদ নিজেও সেদিন জানতেন কি না—আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষত দেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে কী অভূতপূর্ব একটি ঘটনাপরম্পরার সূচনা তিনি গুটিকয় বন্ধুকে নিয়ে করতে যাচ্ছেন—যা এ দেশের সব সংস্কৃতিসেবী ও সংস্কৃতিসংশ্লিষ্ট প্রত্যেক মানুষকে মাত্র বছর কয়েক পরেই শুরু হওয়া স্বাধিকার আন্দোলনে জোগাবে কিছুটা হলেও বাড়তি উদ্যম আর প্রেরণা।

ঘটনাটা জেনে নেওয়া যেতে পারে সেই ঐতিহাসিক আয়োজনের অন্যতম কুশীলব শিক্ষাবিদ অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের বয়ানে—

১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী পালনের প্রথম উদ্যোগ অবশ্য আমি গ্রহণ করি নি। তবে প্রাথমিক অবস্থা থেকেই আমি ছিলাম। দুজন তরুণ আমার কাছে এসেছিল। একজন পরে আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনে যথেষ্ট যশস্বী হয়েছে। সে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। আর একজন মোশতাক, ভারিক্কি ধরনের চেহারা, চোখে পুরু লেন্সের চশমা, ইতিহাসের মেধাবী ছাত্র ছিল। ওদের প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা, হাসি হাসি ভাব আর চোখে-মুখে মনে হয় কিছু বলতে চাইছে, একটা মতলব নিয়ে এসেছে। হাবভাবে বোঝা যায়, আমাকে সম্পূর্ণ সত্য কথা বলবে না।

ওরা আমাকে বলল, স্যার, আমরা রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছি। বিচারপতি মুর্শেদ (সৈয়দ মাহবুব মুর্শেদ) কমিটি গঠন করবেন। তিনি সভাপতি হতে রাজি হয়েছেন। আপনাকে সম্পাদক হতে হবে। পরবর্তী সময়ে জেনেছিলাম বিচারপতি মুর্শেদের সঙ্গে তখনও ওদের আলোচনা হয় নি। আমাকে রাজি করানোর জন্যে এই কৌশল নিয়েছিল। যা-ই হোক, কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর বুঝলাম ছেলেগুলো সিরিয়াস, যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে আটঘাট বেঁধে নেমেছে। ওদের কথার সুরে একটা ডেসপারেশন ছিল, বুঝলাম আমাকে রাজি হতেই হবে।...

এসব ছেলেদের সঙ্গে ছিল মনজুরে মওলা, আতাউল হক। এরা সবসময় নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করত।...এ ব্যাপারে ঢাকা শহরের তিনটি উদ্যোগের কথা আমি জানি। একটি হলো কেন্দ্রীয় উদ্যোগ, যার প্রধান ছিলেন বিচারপতি মুর্শেদ আর একটি ছিল ডাকসুর উদ্যোগ, যার প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে সভানেত্রী ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল। তৃতীয় উদ্যোগটি ছিল প্রেসক্লাবের। তারাও একটি বড় রকমের প্রোগ্রাম নিয়েছিল। আমাদের কমিটিতে কারা কারা ছিলেন তাদের সবার নাম আমার মনে নেই। যতদূর মনে করতে পারছি গোবিন্দ চন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক হাই, নীলিমা ইব্রাহীম, আনিসুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম, হাসান হাফিজুর রহমান, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, এরা ছিলেন।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, মোশতাক এমন সংকল্প করেছিল যে, প্রয়োজন হলে এই উৎসব করতে গিয়ে ওরা একটা একাডেমিক ইয়ার নষ্ট করবে। ছেলেগুলো একটা বিশেষ কঠিন সময়ে দারুণ কাজ করেছিল।...

[মনজুরে মওলা সম্পাদিত ‘শ্রাবণ’ সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের একটি সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ, যা পরবর্তী সময়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম-এ (১৭ জানুয়ারি ২০২০) এবং তারও পরে অধ্যাপক সায়ীদকে নিয়ে বিভিন্নজনের স্মৃতি-সংকলন ‘আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ: বহুমুখিতায় ও স্বপ্নচারিতায়’ (নালন্দা, ২০২১) গ্রন্থে প্রকাশিত।]

সামরিক শাসকের রোষদৃষ্টি উপেক্ষা করে মাত্র কজন বন্ধুকে নিয়ে এমন একটি আয়োজনের প্রত্যুৎপন্ন পরিকল্পনা যিনি করতে পারেন, বাকিটা জীবন যে তিনি নানা প্রকার সাংগঠনিক উদ্যোগে ব্যয় করবেন আর মানুষ এবং সংঘকেই করে তুলবেন নিজের মোক্ষ—বিচিত্র কী।

ব্যতিক্রম ঘটেনি। জীবনব্যাপী একে একে নানা রকম সংগঠন, সংঘবদ্ধ আয়োজন আর সাংগঠনিক কার্যক্রমকে যথার্থই নিজের চারণক্ষেত্র করে তুলেছেন সায়ীদ—সমষ্টির প্রয়োজনে এবং অবশ্যই জাতির মননটাকে আরেকটু উঁচুতে উত্তরণের লক্ষ্যে।

৩.

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের এই সংঘপ্রবণতারই বিকশিত রূপ আজকের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। নিছক একটি বইপড়াকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান শুধু নয়; উপরন্তু বছরজুড়ে এর নানা আয়োজন, কর্মকাণ্ড, উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ক্রমে দৃশ্যমান হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির একটি উজ্জ্বল সাংগঠনিক চরিত্র। নিজের ছাত্র, সহযাত্রী, শুভার্থী ও সমভাবনার বহু মানুষ নিয়ে এটি একটি সংঘও বটে।

প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি এর পঁয়তাল্লিশ বৎসর পূর্তি উদ্‌যাপন করল। প্রায় সাংগঠনিক-অভিজ্ঞতাশূন্য বাঙালি জীবনে এ এক উল্লেখযোগ্য অর্জন, সন্দেহ নেই। প্রতিষ্ঠানটি কতটা সফল কি আদৌ ততটা নয়, সেটা ভাবীকাল বিবেচনা করবে, কিন্তু প্রচলিত বিদ্যায়তনিক শিক্ষার বাইরে গিয়ে এমন একটি শিক্ষা-সংস্কৃতিচর্চা প্রতিষ্ঠান রচনার উদ্যোগ এবং দিনে দিনে এর ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখা শুধু নয় বরং আরও বিস্তৃত করে তোলা—এ দেশে বিরল নয় তো কী!

‘লোকে বই পড়ছে না’ বলে আজ কত রকম হুতাশন! ভেবে আশ্চর্য হতে হয়—এর প্রতিকার অধ্যাপক সায়ীদ ভেবেছিলেন কতটা আগে! ভাবেননি শুধু, নিয়েছেন কার্যকর সব অনন্য পদক্ষেপ—বই নিজেই পৌঁছে যাবে তার পাঠকের দরজায়। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এর জন্য পেয়েছেন তিনি দু-দশক আগেই, কিন্তু এ দেশের মননশীল-সৃজনশীল বইয়ের লেখক-প্রকাশক এবং নিশ্চিতভাবেই পাঠকদের কৃতজ্ঞতা তাঁর অবশ্যপ্রাপ্য।

৪.বিচিত্র সাংগঠনিক অভিজ্ঞতার নির্যাস থেকে লেখা তাঁর ‘সংগঠন ও বাঙালি’ বইটি তো বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সংগঠনকে চেনায়-বোঝায় শুধু নয়, জানতে ও বুঝতে সাহায্য করে জাতি হিসেবে বাঙালির শক্তি ও দুর্বলতার দিকগুলোকেও।

সংঘচারিতা বা সাংগঠনিক সত্তাই ব্যক্তি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের প্রধানতম চারিত্রবৈশিষ্ট্য হলেও তাঁর মধ্যে অবিরাম জেগে থাকে একটি নিভৃতচারী লেখকসত্তা।

বিস্ময় জাগে তাঁর রচিত গ্রন্থতালিকা দেখে। কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কর্তৃক সুপরিসর উপন্যাস লিখতে অনুরুদ্ধ হয়ে ইলিয়াসকে তিনি কথা দিয়েছিলেন উপন্যাস নয়, বরং নিজের জীবনী লিখবেন সবিস্তারে। আত্মজৈবনিক, প্রবন্ধ, জর্নাল, কবিতা, নাটক, অনুবাদ, বক্তৃতা-সংকলন, গল্প, কবিতা মিলিয়ে তাঁর রচনায় প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা এ-যাবৎ পঞ্চাশটিরও বেশি।

নিজের সময়, মানুষ, পারিপার্শ্বিকতার ওপর নানা দিক থেকে আলো ফেলে এদেরকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উপলব্ধির একটি সুপ্রশস্ত ক্ষেত্র তৈরি করতে সক্ষম অধ্যাপক সায়ীদের বইগুলো। বিচিত্র সাংগঠনিক অভিজ্ঞতার নির্যাস থেকে লেখা তাঁর ‘সংগঠন ও বাঙালি’ বইটি তো বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সংগঠনকে চেনায়-বোঝায় শুধু নয়, জানতে ও বুঝতে সাহায্য করে জাতি হিসেবে বাঙালির শক্তি ও দুর্বলতার দিকগুলোকেও।

ধারণা করা যেতেই পারে, জীবনব্যাপী সংগঠন-অভিজ্ঞতা ও এর দরুন বিচিত্র মানুষের সঙ্গে তাঁর পরিচয় এবং যূথবদ্ধ কাজও নিশ্চয়ই উল্লেখযোগ্য পুষ্টি জুগিয়ে থাকবে তাঁর লেখকসত্তাকে।

৫.

‘সাহিত্যের মতো মানুষও দু-রকম: সাম্প্রতিক ও চিরায়ত।’ কথাটি তাঁরই (বিস্রস্ত জর্নাল)। ব্যক্তি ও সংগঠনপর্যায়ে বহুমাত্রিক কাজ এবং উদ্যোগের জন্য ভবিষ্যতের বাংলাদেশও নিশ্চয়ই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে স্মরণ করবে একজন চিরায়ত মানুষ হিসেবে।

৮৬তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে জানাই সশ্রদ্ধ অভিবাদন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরবর ত প রক শ চর ত র র একট স গঠন অবশ য

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩