সান্তোসে ফিরে আসার গল্পটা কি তবে শেষ পর্যন্ত হতাশার কালিতে লেখা হবে? নিজের শৈশবের ক্লাবকে পুনরায় গৌরবের পথে ফেরানোর প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন নেইমার জুনিয়র। কিন্তু বর্তমানে তার ফেরা যেন রূপ নিয়েছে এক বিভ্রান্তিকর অধ্যায়ে। যেখানে ইনজুরি, নিষেধাজ্ঞা, ফর্মহীনতা আর বিতর্ক ঘুরেফিরে হাজির।

২৩ জুলাই রাতে ব্রাজিলিয়ান সিরি’আ লিগে ইন্টারনাসিওনালের বিপক্ষে ২–১ গোলে হারে সান্তোস। কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন নেইমার, ম্যাচ শেষে এক দর্শকের সঙ্গে মুখোমুখি বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে।

ম্যাচের শেষদিকে সান্তোস যখন ২–০ গোলে পিছিয়ে, তখন যোগ করা সময়ে আলভারো মার্টিন বাররিয়ালের একটি গোল কিছুটা আশার আলো জাগায়। এরপর ৯৩তম মিনিটে বাঁ পায়ে দুর্দান্ত এক শট নেন নেইমার, যা সরাসরি জালে প্রবেশ করে বলে উদযাপন শুরু করেন তিনি। গ্যালারির সামনে দাঁড়িয়ে হাত উঁচিয়ে উল্লাস করেন, যেন নিজের ফিরে আসার ঘোষণা দিচ্ছিলেন।

আরো পড়ুন:

বার্সায় রাশফোর্ড খেলবেন ১৪ নম্বর জার্সিতে

অল-স্টার ম্যাচে না খেলে বিতর্কে মেসি, এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি

কিন্তু বাস্তব ছিল ভিন্ন। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) হস্তক্ষেপে গোল বাতিল হয়ে যায়। কারণ, বলটি সম্পূর্ণরূপে গোললাইন অতিক্রম করেনি। মুহূর্তেই বদলে যায় আবহ। গ্যালারিতে ধেয়ে আসে দুয়ো আর চিৎকার। উত্তেজনার পারদ চড়ায় নেইমারও। ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজতেই এক দর্শকের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হাত নেড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নেইমার। সতীর্থরা এসে তাকে থামান। পরে অবশ্য হাসিমুখে আঙুল তুলে শান্তির ভঙ্গিও করতে দেখা যায় তাকে।

এই ঘটনাটি কেবল একটি সন্ধ্যার ঝড় নয়, বরং চলমান এক হতাশার প্রতীক। চলতি মৌসুমে চোটে ভোগা, মাংসপেশির ইনজুরি, লাল কার্ড, এমনকি করোনা সংক্রমণও যেন নেইমারের পথে বিছিয়ে দিয়েছে কাঁটা। তিনি মাঠে থেকেছেন কম, আলোচনায় থেকেছেন বেশি। তাও বিতর্কে।

আর সান্তোস? ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি এখন রয়েছে ব্রাজিলিয়ান লিগের অবনমন অঞ্চলের কিনারায়। টেবিলের ১৭তম স্থানে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় বিভাগে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা ঘিরে ধরেছে ক্লাবটিকে। সমর্থকরা নেইমারের ফেরা নিয়ে যে স্বপ্ন বুনেছিল, তা দিনে দিনে যেন ভেঙে পড়ছে বাস্তবতার ধাক্কায়।

একটি গোল বাতিল শুধু স্কোরলাইন বদলায় না, কখনও কখনও তা ফুটবলারের আত্মবিশ্বাস আর ক্লাবের ভবিষ্যতের দিকও ঘুরিয়ে দেয়। নেইমার সেই মোড়েই দাঁড়িয়ে। যেখানে প্রতিভা আর প্রত্যাশার মাঝখানে প্রশ্নচিহ্ন জ্বলজ্বল করছে।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত