অনুদানের অর্থের ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে বেরিয়ে এল শহীদের তালিকায় ভুয়া নাম
Published: 25th, July 2025 GMT
পটুয়াখালীতে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে অংশ না নিলেও বশির সরদার (৪০) নামের এক মৃত ব্যক্তির নাম শহীদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বড় ভাই নাসির উদ্দিন গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে বশিরের মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, সরকার থেকে পাওয়া অনুদানের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বে মূল ঘটনাটি সামনে এসেছে।
বশির সরদার পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের খলিশাখালী গ্রামের সেকান্দার সরদারের ছেলে। গত বছর ১৫ নভেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার পটুয়াখালীতে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের তালিকা থেকে বশিরের নাম বাতিল ও সরকার থেকে দেওয়া সঞ্চয়পত্র স্থগিত করার সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন। ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, গত বছরের জুলাইয়ের প্রথম দিকে পায়ে লোহা বিদ্ধ হয়ে আহত হন বশির সরদার। পরে আগস্টের শুরুর দিকে চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ নভেম্বর তিনি মারা যান। কিন্তু সরকারের অনুদান পেতে গণ-অভ্যুত্থানে আহত দেখিয়ে শহীদের তালিকার তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করায় পরিবার।
পটুয়াখালীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ছাত্র প্রতিনিধি সজীবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বশিরকে ঢাকায় চিকিৎসা করানোর সময় জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণের তথ্য লিপিবদ্ধ করার পরিবার। পরে পরিবারটিকে জেলা প্রশাসন থেকে ২ লাখ এবং সরকার থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়। একপর্যায়ে এই অনুদানের অর্থ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ওই দ্বন্দ্বের জেরে ২২ জুলাই মূল ঘটনা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন বশিরের ভাই নাসির। এরপর বুধবার জেলা প্রশাসক একটি সভা করে শহীদের তালিকা থেকে বশিরের নাম বাতিল চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চিঠি পাঠান।
বশিরের স্ত্রী রেবা আক্তার বলেন, গত বছরের ৩ জুলাই জেলা শহরের চৌরাস্তা থেকে বাসায় ফেরার পথে পায়ে লোহা ঢুকে তাঁর স্বামী মারাত্মকভাবে আহত হন। একপর্যায়ে ক্ষতস্থানে পচন দেখা দিলে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁর চিকিৎসা করাতে অনেক ধারদেনা ও ঋণ করতে হয়েছে। বশিরের মৃত্যুর পর দুই সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েন। পরে নাসিরের প্ররোচনায় সরকারি অনুদান পেতে ভুল তথ্য দিয়ে শহীদের তালিকায় বশিরের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু একপর্যায়ে অনুদানের একটি বড় অংশ দাবি করেন বশিরের মা–বাবা ও ভাই। তাঁদের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষুব্ধ হয়ে ডিসির কাছে অভিযোগ দেন।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বশিরের বাবা সেকান্দার সরদার। তিনি বলেন, বশিরের চিকিৎসা করাতে তিনি পাঁচ লাখ খরচ করেছেন। কিন্তু সরকারের দেওয়া অনুদানের ১২ লাখ টাকা রেবা আক্তার একাই ভোগ করছেন। এ কারণে তাঁর বড় ছেলে নাসির প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে ডিসির কাছে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, নিজের ভুল বুঝতে পেরে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেন।
জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, নিহত পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য নিয়ে জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক রেজল্যুশন করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে পরবর্তী নির্দেশনা এলে বিষয়টি কার্যকর হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন দ ন র দ বন দ ব র সরদ র কর ছ ন পর ব র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শেরপুর নির্বাচন অফিসে রোহিঙ্গা আটক
শেরপুর ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করতে গিয়ে এক রোহিঙ্গা আটক হয়েছেন। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আটকের পর তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা।
আটক ব্যক্তির নাম মো. আমিন। তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার টাংহালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। তার বাবার নাম জাহিদ হোসেন।
আরো পড়ুন:
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনে ‘বাস্তব পদক্ষেপ’ চায় ওআইসি
৪০ দেশের প্রতিনিধিদের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, আলম মিয়া নাম ব্যবহার করে উখিয়ার টাংহালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক ব্যক্তি এনআইডি করতে শেরপুর জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করেন। সেখানে তিনি বাবার নাম আলী হোসেন উল্লেখ করেন এবং শেরপুর পৌরসভার কসবা মোল্লাপাড়া ও শিবুত্তর এলাকার বাসিন্দা হিসেবে দাবি করেন। কথাবার্তা ও নথিপত্র যাচাইয়ের সময় সন্দেহ হলে কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় ওই ব্যক্তি নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন।
শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “তার কাগজপত্র দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তার ভাষাগত বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নিজেকে রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন।”
আটক মো. আমিন বলেন, “আমি কক্সবাজারের উখিয়ার টাংহালি ক্যাম্পে থাকি। এ দেশের নাগরিক হওয়ার আশায় ভোটার আইডি কার্ড করতে শেরপুরে এসেছিলাম। কাজের জন্য পরিচয়পত্র পেলে সুবিধা হবে ভেবেই আলম নামে আবেদন করেছি।”
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “রোহিঙ্গা ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার সঙ্গে স্থানীয় কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা চলমান।”
ঢাকা/তারিকুল/মাসুদ