Prothomalo:
2025-09-18@00:43:53 GMT

ইনসাফের লড়াই আরও দীর্ঘ

Published: 26th, July 2025 GMT

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় গণতান্ত্রিক রূপান্তরের এক সন্ধিক্ষণের মুহূর্তে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। যেকোনো সংকটকালে ‘বিদেশি’দের মধ্যস্থতায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ আয়োজন ও সমাধানের রাস্তা বের করার নজির এতকাল দেখে আসছি। এই প্রথম আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে, কীভাবে তার রূপান্তর ঘটবে—সে সিদ্ধান্ত কোনো ‘বিদেশি’ হস্তক্ষেপ ছাড়াই রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ সংলাপ ও তর্কবিতর্কের মধ্য দিয়ে নিচ্ছে। নানা সীমাবদ্ধতাসহ এ অভূতপূর্ব ঘটনা গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে ঘটছে।

গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশ কেমন হওয়া উচিত, তার আইনকানুন, প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় কেমন হওয়া দরকার—তা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে। তবে চব্বিশের জুলাই মাসে আমরা যে ধরনের সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেছি, সেই আলোকে আমাদের আরও কিছু আলাপ করা দরকার ছিল বলে মনে করি, যা জনপ্রিয় পরিসরে এখনো অনুপস্থিত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে এমন অনেক বিদ্বজ্জন জড়িত আছেন, যাঁরা প্রধানত ‘নাগরিক অধিকার’ নিয়ে কাজ করার জন্যই মশহুর। ফলে তাঁদের কাছে প্রত্যাশার পারদও ছিল উঁচুতে।

চব্বিশে আমরা যে ধরনের সহিংসতা দেখেছি, সেখানে কেবল কয়েকজন ব্যক্তির সম্পৃক্ততার বিষয় নয়; বরং সমাজের একটা বড় অংশ সেখানে জড়িত থাকে। আমলাতন্ত্র, পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বহু লোক এতে জড়িত থাকেন। সবাইকে যেমন আইনের সামনে নিয়ে আসা সম্ভব হয় নয়, তেমনি সবাইকে বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানোও সম্ভব হয় নয়। আবার প্রচলিত আইন এ ধরনের হত্যাযজ্ঞের বিচার করতে সক্ষম হয় না।

অন্যদিকে কেবল আইন-আদালতকেন্দ্রিক বিচার করলে এ সহিংসতার শিকার ভুক্তভোগীরা যে ধরনের ট্রমার ভেতর দিয়ে যান, সেটা নিরাময় করতে পারেন না। আবার এ ধরনের সহিংসতায় যে ধরনের বহুমাত্রিক ভুক্তভোগী তৈরি হন, প্রচলিত ব্যবস্থায় কেবল আপাতবিজয়ী গোষ্ঠীই নিজেদের ‘ভুক্তভোগী’ হিসেবে দাবি করতে পারে। ফলে কেবল তাদের সঙ্গে সংঘটিত সহিংসতার বিচারের দিকেই ধাবিত হন।

যখন কোনো সমাজে এ ধরনের বিরাট মাত্রায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে, তখন এর প্রভাব ও ধাক্কা সমাজ থেকে ধীরে ধীরে হ্রাস করতে চাইলে আমাদের ইনসাফের একটা বিরাট ক্যানভাসের মধ্যে প্রবেশ করতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য হতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্রে সেই সহিংসতা যেন এমন কোনো ‘ক্ষত’ তৈরি করতে না পারে, যা ক্রমাগত সহিংসতার দুষ্টচক্র তৈরি করতে পারে।

মনে রাখা দরকার, সহিংসতার সঙ্গে আইডেন্টিটি বা পরিচয়ের সম্পর্ক নানামুখী হলেও প্রধানত দুই ধরনের সম্পর্ক দেখতে পাই আমরা। প্রথমত দেখি যে ‘পরিচয়’ই কখনো কখনো সহিংসতার কারণ হিসেবে উপস্থিত থাকে (আমরা যাকে নেতিবাচকভাবে আইডেন্টিটি পলিটিকস বলে নিন্দা করি)। দ্বিতীয়ত, সহিংসতা বা সহিংস অভিজ্ঞতা বা ইতিহাস খোদ সামষ্টিক ‘পরিচয়’ নির্মাণের অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে নিহত শিক্ষার্থীদের গায়েবানা জানাজা শেষে কফিন মিছিল বের করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩