আমাদের জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন আমাদের মস্তিষ্ক হাল ছেড়ে দিতে চায়— এবং ক্লান্ত বোধ করে। ধীরে ধীরে, আমরা এই পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করতে শিখি, কিন্তু যে কারও জন্য, প্রথম কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চলাফেরা করা কঠিন।এখানে ৫টি উপায় দেওয়া হলো, যার মাধ্যমে আপনি নিজেই নিজের মেজাজ পরিবর্তন করতে পারবেন।

সুগন্ধি পরিবর্তন
আমাদের অনুভূতির ওপর সুগন্ধির এক অনস্বীকার্য প্রভাব রয়েছে। এগুলো আমাদের ভালো স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যে ভালো সময় আমরা আগে কাটিয়েছি এবং আবার যে সময় ফিরে পেতে চাইছি। আর ঘ্রাণতন্ত্র হল আমাদের ঘ্রাণশক্তির জন্য দায়ী সংবেদনশীল ব্যবস্থা।যখন আমরা কোনও ঘ্রাণ শ্বাস নিই, তখন গন্ধের অণুগুলি আমাদের নাকের ঘ্রাণশক্তি রিসেপ্টরের সংস্পর্শে আসে, যা প্রক্রিয়াকরণের জন্য আমাদের মস্তিষ্কে সংকেত বহন করে। যদি এটি আপনার প্রিয় স্মৃতিগুলির সাথে সম্পর্কিত একটি পরিচিত ঘ্রাণ হয়, তাহলে মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি সনাক্ত করবে এবং আপনার মেজাজ পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে। সুগন্ধি আমাদের যুক্তিবাদী মনকে এড়িয়ে যায় এবং দ্রুত আবেগগত অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে।

বরফ ছুঁয়ে থাকুন
থেরাপিস্টরা পরামর্শ দেন, বরফ ছুঁয়ে থাকতে। যখন কেউ বরফ ধরে রাখে, তখন মনোযোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠান্ডা অনুভূতিতে চলে যায়। অসাড় অনুভূতি চাপ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয় এবং বরফের শীতলতা এবং শরীরের উষ্ণতার মধ্যে পার্থক্য আপনার মনকে বর্তমানের দিকে টেনে আনতে পারে, নেতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলোকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

আশপাশের পরিবেশে পরিবর্তন আনুন
কখনও কখনও একই জিনিস এবং মানুষ দ্বারা বেষ্টিত থাকার ফলে আমাদের মন অবচেতনভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আটকে থাকার অনুভূতি তৈরি হতে শুরু করে। অন্য জায়গায় চলে যান—এমনকি যদি তা ঘরের ঠিক ওপারে বা বাইরে এক পাওয়া যায়। আশেপাশের পরিবেশের দ্রুত পরিবর্তন আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে সতেজ করে তুলতে পারে। হয়তো এই কারণেই বেশিরভাগ ছবিতে, নায়কদের সমুদ্রের ধারে বা খোলা জায়গায় বসে জীবন সম্পর্কে ভাবতে দেখানো হয়।

গভীর শ্বাস নিন
আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন কেন, যখনই কেউ চাপে থাকে, তখন আশেপাশের অন্তত একজন ব্যক্তি কেন বলে, "একটি গভীর শ্বাস নাও"? এটি কি আসলেই কাজ করে, নাকি এটি কেবল একটি মিথ?

স্নায়ুবিজ্ঞান পরামর্শ দেয় যে এটি সত্যিই মানসিক চাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। কীভাবে? দ্রুত ‘‘শারীরিক দীর্ঘশ্বাস’’ চেষ্টা করুন - নাক দিয়ে দুটি দ্রুত শ্বাস নিন, তারপরে মুখ দিয়ে একটি দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ুন। এটি আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে দ্রুত শান্ত করে। এই কৌশলটি কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমাতে সাহায্য করে এবং শারীরিক উত্তেজনা কমায়।

ইলিজম পদ্ধতিতে নিজের সঙ্গে কথা বলুন
এটা সবসময়ই ঘটে—যখন কোন বন্ধুর পরামর্শের প্রয়োজন হয়, তখন আমরা পেশাদার হয়ে উঠি, অনানুষ্ঠানিকভাবে 'অনপেইড থেরাপিস্ট' উপাধি অর্জন করি। কিন্তু যখন আমাদের সাথেও একই ঘটনা ঘটে, তখন সেই ভেতরের থেরাপিস্ট কোথায় যায়?
এটি ঘটে কারণ তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে বস্তুনিষ্ঠভাবে কথা বলা সহজ। যখন আপনি কোনও চাপের পরিস্থিতিতে থাকেন বা উদ্বিগ্ন থাকেন, তখন 'আমি'-এর পরিবর্তে আপনার নাম বা 'সে/সে' ব্যবহার করে নিজের সাথে কথা বলার চেষ্টা করুন। এটি আপনার আবেগ এবং চিন্তাভাবনা থেকে একটি মানসিক দূরত্ব তৈরি করে, যার ফলে অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং আরও ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। এই পদ্ধতিটি 'দূরবর্তী স্ব-কথা' বা 'ইলিজম' নামে পরিচিত।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র অন ভ ত আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত