ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অনেক দিন ধরেই একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এখানে একদিকে রয়েছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে মিল, আর অন্যদিকে রয়েছে জাতীয় স্বার্থ নিয়ে মতভেদ।

তবে সম্প্রতি এই দুই দেশের কূটনৈতিক অস্থিরতা ভারতে উদ্বেগ তৈরি করেছে। অনেকেই ভাবছেন, দুই দেশের সম্পর্ক কি নতুন দিকে মোড় নিয়েছে?

ভারতীয় কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক অস্বস্তিকর ভূরাজনৈতিক কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ থামাতে তিনি হস্তক্ষেপ করেছেন এবং ভারতকে বাণিজ্য সম্পর্ক বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েই তিনি মূলত দুই দেশের সংঘাত থামিয়েছেন।

ভারত এই দাবি শুনে চটেছে। একদিকে দেশটির সার্বভৌমত্বের বিষয়ে তারা খুবই সংবেদনশীল, অন্যদিকে ট্রাম্পের এই দাবি বাস্তবতার সঙ্গে মিল খায় না।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-ভারত: সামরিক জোট না করেও তারা সামরিক মিত্র১০ জুলাই ২০২৩

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দুজনেই জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত চলাকালে ট্রাম্প তাঁদের ফোন পর্যন্ত করেননি। এমনকি তখন কোনো মার্কিন কর্মকর্তা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিয়েও কোনো মন্তব্য করেননি।

ট্রাম্প হয়তো পাকিস্তানের ওপর চাপ দিয়েছিলেন সংঘাত বন্ধ করার জন্য। এর ফলে ভারতকে রাজি করানোর দরকার ছিল না। কারণ, ভারত এমন একটি দেশ, যারা স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায় এবং নিজের অর্থনৈতিক উন্নয়নেই মনোযোগী।

দীর্ঘমেয়াদি কোনো সংঘাতে জড়ানো ভারতের একেবারেই পছন্দ নয়। তাই গত এপ্রিল মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে পাকিস্তানি জঙ্গিরা ভারতীয় পর্যটকদের ওপর নৃশংস হামলা চালানোর পর ভারত দ্রুত ও পরিমিত প্রতিক্রিয়া দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

এই প্রতিক্রিয়ার নাম ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। এই অভিযানের আওতায় পাকিস্তানের ভেতরে ৯টি পরিচিত জঙ্গি ঘাঁটি এবং অন্যান্য স্থাপনায় বিমান হামলা চালানো হয়।

শুরু থেকেই ভারত স্পষ্ট করেছে, এটি কোনো যুদ্ধ শুরু করার পদক্ষেপ নয়, বরং যারা নিরীহ ভারতীয় নাগরিকদের টার্গেট করেছিল, এটি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক অভিযান।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-চীন বিরোধ এড়িয়ে যেখানে সফল ভারত২৯ মার্চ ২০২৩

পাকিস্তান পরে পাল্টা আক্রমণে নামে। সেই আক্রমণে তারা নির্বিচারে ভারতীয় ভূখণ্ডে হামলা চালায়। এর জবাবে ভারত আবারও নির্ভুল ও নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। এবার তারা পাকিস্তানের ১১টি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়। ভারতের এই কড়া জবাব এবং এর সঙ্গে সম্ভবত পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপ—এই দুইয়ে মিলে পাকিস্তানকে সংঘর্ষ বন্ধের প্রস্তাব দিতে বাধ্য করে।

এ কারণে এই সংঘাত বন্ধের জন্য ট্রাম্প কোনোভাবেই একক কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন না। অথচ তিনি ঠিক সেটাই করছেন। কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা স্পষ্ট ভাষায় ট্রাম্পের বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়েছেন। ভারত তাঁর স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা নিয়ে গর্বিত এবং তারা কখনোই মেনে নেবে না, তারা ট্রাম্পের হুমকি বা প্রলোভনে নতি স্বীকার করেছে।

ট্রাম্পের এমন আচরণ এটিই প্রথম নয়। গত জুন মাসে তিনি হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আসিম মুনিরকে ভারতের সরকার ও বিরোধী দল—দুই পক্ষই একজন কট্টর ইসলামপন্থী মতাদর্শী বলে মনে করে। ওই বৈঠকে পাকিস্তানের বেসামরিক নেতৃত্বকে রাখা হয়নি।

ভারতের কর্মকর্তারা ও ব্যবসায়ী মহল চীনকে এখন এক হুমকি হিসেবে দেখছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ঠিক কোথায়, তা বোঝা কঠিন। বিশেষ করে ট্রাম্প যখন পাকিস্তানকে চীনের দেওয়া সহায়তার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো নিন্দা করেননি, তখন চীন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান রহস্যজনক মনে হচ্ছে।

চীনের বিষয়ে ট্রাম্পের মনোভঙ্গিও ভারতকে উদ্বিগ্ন করছে। তাঁর প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প চীনের প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর আচরণ অস্থির ও দোদুল্যমান। কখনো তিনি চীনের ওপর বড় রকমের শুল্ক আরোপ করছেন। আবার কখনো বলছেন, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আমন্ত্রণে বেইজিং সফরে যেতে পারেন এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা করতে চান।

এসব হিসাব-নিকাশে ভারতের স্থান আসলে কোথায় বা আদৌ কোনো স্থান আছে কি না, তা এক রহস্য। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এবং পরে জো বাইডেনের প্রেসিডেন্সির সময় যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ভারতীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং চীনের বিরুদ্ধে এক গণতান্ত্রিক প্রতিরোধশক্তি হিসেবে দেখত।

যদিও ভারত তার পররাষ্ট্রনীতির ‘কৌশলগত স্বাধীনতা’র নীতি মেনে চলে এবং চীনের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না জড়ানোর কৌশল নেয়, তবুও ভারত এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েছিল। সে বিবেচনায় ভারত ২০১৭ সালে ‘কোয়াড’ (অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত নিয়ে গঠিত জোট) পুনরুজ্জীবনের পক্ষে ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পতাকা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র কর মকর ত র ওপর ভ রতক

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।

ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র‍্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র‍্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।

আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র‍্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেউ কটুক্তি করলে কী করবেন?
  • বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ‌্যে ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান পছন্দ হয়নি স‌্যামির
  • মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার