ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আবার নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে
Published: 2nd, August 2025 GMT
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অনেক দিন ধরেই একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এখানে একদিকে রয়েছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে মিল, আর অন্যদিকে রয়েছে জাতীয় স্বার্থ নিয়ে মতভেদ।
তবে সম্প্রতি এই দুই দেশের কূটনৈতিক অস্থিরতা ভারতে উদ্বেগ তৈরি করেছে। অনেকেই ভাবছেন, দুই দেশের সম্পর্ক কি নতুন দিকে মোড় নিয়েছে?
ভারতীয় কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক অস্বস্তিকর ভূরাজনৈতিক কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ থামাতে তিনি হস্তক্ষেপ করেছেন এবং ভারতকে বাণিজ্য সম্পর্ক বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েই তিনি মূলত দুই দেশের সংঘাত থামিয়েছেন।
ভারত এই দাবি শুনে চটেছে। একদিকে দেশটির সার্বভৌমত্বের বিষয়ে তারা খুবই সংবেদনশীল, অন্যদিকে ট্রাম্পের এই দাবি বাস্তবতার সঙ্গে মিল খায় না।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-ভারত: সামরিক জোট না করেও তারা সামরিক মিত্র১০ জুলাই ২০২৩ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দুজনেই জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত চলাকালে ট্রাম্প তাঁদের ফোন পর্যন্ত করেননি। এমনকি তখন কোনো মার্কিন কর্মকর্তা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিয়েও কোনো মন্তব্য করেননি।
ট্রাম্প হয়তো পাকিস্তানের ওপর চাপ দিয়েছিলেন সংঘাত বন্ধ করার জন্য। এর ফলে ভারতকে রাজি করানোর দরকার ছিল না। কারণ, ভারত এমন একটি দেশ, যারা স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায় এবং নিজের অর্থনৈতিক উন্নয়নেই মনোযোগী।
দীর্ঘমেয়াদি কোনো সংঘাতে জড়ানো ভারতের একেবারেই পছন্দ নয়। তাই গত এপ্রিল মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে পাকিস্তানি জঙ্গিরা ভারতীয় পর্যটকদের ওপর নৃশংস হামলা চালানোর পর ভারত দ্রুত ও পরিমিত প্রতিক্রিয়া দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
এই প্রতিক্রিয়ার নাম ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। এই অভিযানের আওতায় পাকিস্তানের ভেতরে ৯টি পরিচিত জঙ্গি ঘাঁটি এবং অন্যান্য স্থাপনায় বিমান হামলা চালানো হয়।
শুরু থেকেই ভারত স্পষ্ট করেছে, এটি কোনো যুদ্ধ শুরু করার পদক্ষেপ নয়, বরং যারা নিরীহ ভারতীয় নাগরিকদের টার্গেট করেছিল, এটি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক অভিযান।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-চীন বিরোধ এড়িয়ে যেখানে সফল ভারত২৯ মার্চ ২০২৩পাকিস্তান পরে পাল্টা আক্রমণে নামে। সেই আক্রমণে তারা নির্বিচারে ভারতীয় ভূখণ্ডে হামলা চালায়। এর জবাবে ভারত আবারও নির্ভুল ও নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। এবার তারা পাকিস্তানের ১১টি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়। ভারতের এই কড়া জবাব এবং এর সঙ্গে সম্ভবত পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপ—এই দুইয়ে মিলে পাকিস্তানকে সংঘর্ষ বন্ধের প্রস্তাব দিতে বাধ্য করে।
এ কারণে এই সংঘাত বন্ধের জন্য ট্রাম্প কোনোভাবেই একক কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন না। অথচ তিনি ঠিক সেটাই করছেন। কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা স্পষ্ট ভাষায় ট্রাম্পের বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়েছেন। ভারত তাঁর স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা নিয়ে গর্বিত এবং তারা কখনোই মেনে নেবে না, তারা ট্রাম্পের হুমকি বা প্রলোভনে নতি স্বীকার করেছে।
ট্রাম্পের এমন আচরণ এটিই প্রথম নয়। গত জুন মাসে তিনি হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আসিম মুনিরকে ভারতের সরকার ও বিরোধী দল—দুই পক্ষই একজন কট্টর ইসলামপন্থী মতাদর্শী বলে মনে করে। ওই বৈঠকে পাকিস্তানের বেসামরিক নেতৃত্বকে রাখা হয়নি।
ভারতের কর্মকর্তারা ও ব্যবসায়ী মহল চীনকে এখন এক হুমকি হিসেবে দেখছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ঠিক কোথায়, তা বোঝা কঠিন। বিশেষ করে ট্রাম্প যখন পাকিস্তানকে চীনের দেওয়া সহায়তার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো নিন্দা করেননি, তখন চীন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান রহস্যজনক মনে হচ্ছে।চীনের বিষয়ে ট্রাম্পের মনোভঙ্গিও ভারতকে উদ্বিগ্ন করছে। তাঁর প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প চীনের প্রতি কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর আচরণ অস্থির ও দোদুল্যমান। কখনো তিনি চীনের ওপর বড় রকমের শুল্ক আরোপ করছেন। আবার কখনো বলছেন, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আমন্ত্রণে বেইজিং সফরে যেতে পারেন এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা করতে চান।
এসব হিসাব-নিকাশে ভারতের স্থান আসলে কোথায় বা আদৌ কোনো স্থান আছে কি না, তা এক রহস্য। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এবং পরে জো বাইডেনের প্রেসিডেন্সির সময় যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ভারতীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং চীনের বিরুদ্ধে এক গণতান্ত্রিক প্রতিরোধশক্তি হিসেবে দেখত।
যদিও ভারত তার পররাষ্ট্রনীতির ‘কৌশলগত স্বাধীনতা’র নীতি মেনে চলে এবং চীনের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না জড়ানোর কৌশল নেয়, তবুও ভারত এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েছিল। সে বিবেচনায় ভারত ২০১৭ সালে ‘কোয়াড’ (অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত নিয়ে গঠিত জোট) পুনরুজ্জীবনের পক্ষে ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পতাকা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র কর মকর ত র ওপর ভ রতক
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’