ডিজিটাল মেশিনে ওজন মেপেছেন? মাত্র দু টাকা।
আমিও মেপেছি, এ মাসের প্রথম দিন ছিল সাড়ে ৬৭ কেজি।
৫ ফুট ৩ ইঞ্চি এই সিঁথির ওজন ৬৭ কেজি ৫০০ গ্রাম! ওজন একটু বেশি। আমার বয়স সাড়ে ২১ বছর। বয়স ও সাইজের অনুপাতে ওজন একটু বেশিই, আরও বেশি ছিল, শর্করা–জাতীয় খাবার মেনু থেকে ছাঁটাই করে ওজন কমিয়েছি পুরো সাড়ে ৯ কেজি। নো রাইস, নো হোয়াইট ব্রেড, নো পটেটো—এসব চলবে না। আলুও না? একদম না। পটেটো চিপস, আলুপুরি, কাচ্চি বিরিয়ানির সুস্বাদু আলু? তা–ও বাদ। আমাদের কলেজের সেই আলুবাজ রায়হান চিশতি স্যার! সে তো ভিন্ন আলু। কাপড়চোপড় ঢিলেঢালা হতে শুরু করেছে। খিদেয় মাথা ঘুরতে থাকে, তবু চেষ্টা করে যাচ্ছি, আমার হবে।
ক্লাসমেটরা আমাকে ডাকত শুধু মটকু, সিনিয়র আপারা মটকু সিঁথি (একজন বলেছিল বোতল সিঁথি, একদিন আমি তাকে দেখে নেব।) এবং জুনিয়ররা বেশ সমীহ করেই বলত, মটকু আপু। ওজন কিছুটা কমলেও তা আমার মটকু খেতাবের ভিত এখনো নড়াতে পারেনি। তবে নড়বে, কেউ কেউ বলতে শুরু করেছে।
ডিজিটাল মেশিনটা কিন্তু দারুণ; আয়তাকার যন্ত্রের ওপরের প্ল্যাটফর্মটা স্বচ্ছ কাচের। কাচের ওপর চোখ রাখলে মেশিনের নাড়িভুড়ি সব দেখা যায়। প্ল্যাটফর্মে পা রাখলে ওজনের কাঁটাটা কেমন করে নড়েচড়ে উঠে ডান থেকে বাঁয়ে ঘুরে এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়ায়। এটাও স্পষ্ট দেখা যায়।
একবার মনে হয়, যন্ত্রটা রঙিন মাছের অ্যাকুয়ারিয়ামের মতো; একবার মনে হয়, সি-থ্রু পোশাক পরা হলিউডের গরম নায়িকা কিম কার্ডাশিয়ানের মতো। শ্রীদেবীরও এমন একটা সি-থ্রু ছবি আমি কেটে রেখেছি। তেমন সি-থ্রু না হলেও কাছাকাছি একটা শেমিজ আমারও আছে। এটা পরে দরজার বাইরে বের হলে আমার খবর হয়ে যাবে।
একসময় নিউমার্কেটের উত্তর ও দক্ষিণ—দুই গেটেই ওজন মাপার এবং ভাগ্যগণনার দুটি মেশিন ছিল।
ম্যান সাইজ মেশিন।
ওম্যান সাইজ নয় কেন?
মেশিনটার প্ল্যাটফর্মের ওপর দাঁড়ালে ক্লিক করে শব্দ হতেই শক্ত একটুকরা কাগজ বেরিয়ে আসত, এক পিঠে ওজন, সেই পিঠেই লেখা থাকত, ‘চিন্তা করবেন না, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’ আর উল্টো পিঠে থাকত কবরী, শাবানা কিংবা ববিতার ছবি।
আর ডিজিটাল মেশিনটার ওজন দেড় কেজিরও কম। ল্যাপটপের চেয়ে সাইজে ছোট। যেকোনো একটা ব্যাগে ভরে ফেললেই হলো। অ্যাডভান্স লার্নার্স ডিকশনারির ওজনও তো দেড় কেজি আর মেডিকেলের গ্রে’স অ্যানাটমির ওজন সাড়ে চার কেজির কম নয়।
মেশিনটা ফার্মগেট ফুটওভারব্রিজের ওপর হকারদের জটলার ভেতরেই। এক পাশে বিক্রি হচ্ছে গেঞ্জি, মোজা আন্ডারওয়ার; অন্য পাশে ব্র্যাসিয়ার আর প্যান্টি, মাঝখানে একচিলতে জায়গায় স্বচ্ছ ওয়েয়িং স্কেল, কাচের ওপর লাল হরফে লেখা, ‘ডিজিটাল মেশিনে ওজন নিন’।
আজকাল উলট কম্বলের শরবতও ডিজিটাল। কারওয়ান বাজারে একজন চেঁচিয়ে বিক্রি করছে, ‘বরিশালের ডিজিটাল আমড়া’, ধানমন্ডি লেকের পাড়ে পাগলাটে এক বুড়ো বিক্রি করে ‘ঘটিগরম ডিজিটাল চানাচুর’। আমরা খেয়েছি। দেশের নামও নাকি ডিজিটাল বাংলাদেশ।
হলি ক্রস কলেজ ছুটির পর আমাদের ছয়–সাতজনের একটি দল ফার্মগেট ফুটওভারব্রিজ পেরিয়ে ইন্দিরা রোড প্রান্তে চলে আসি। অধিকাংশই নিজেদের গাড়িতে যাওয়া–আসা করে। এটা তো স্পষ্ট, আমাদের গাড়ি নেই, হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই।
স্বচ্ছ ডিজিটাল মেশিন দেখে লুবনা প্রথম চেঁচিয়ে ওঠে, ‘আমি ওজন মাপব।’ তারপর আমরা সবাই, প্যাট্রিশিয়া, মাহবুবা, চয়নিকা, অথৈ, কথা এবং আমি সিঁথি। আমরাও মাপব। নিজের চোখেই দেখা যায় ওজন কত। আমাদের হাতে দু টাকার নোট।
লুবনা মরিয়ম ৫৫ কেজি, প্যাট্রিশিয়া আলেকজান্দ্রা (খাঁটি বাংলায় কথা বলে, নিতান্ত দরিদ্র অ্যাংলো–ইন্ডিয়ান পরিবারের মেয়ে) ৬৪ কেজি, মাহবুবা জান্নাতি খানম ৫৯ কেজি.
আমি টাকা দেব কাকে?
পাশের ব্র্যাসিয়ার-প্যান্টিওয়ালা ফিসফিস করে বলে যাচ্ছে, ‘লাগবে ম্যাডাম, শ্রীদেবী ব্র্যাসিয়ার অর্ধেক দাম।’
আমি টাকা হাতে স্বচ্ছ মেশিনের ওপর দাঁড়িয়ে আছি।
প্যান্টিওয়ালা বলল, ‘কেটে পড়েন ম্যাডাম, টাকা লাগবে না। ডিজিটাল বুজরুকি করে শালার বাচ্চা সবাইকে ধোঁকা দিচ্ছে। এসব বোগাস মেশিন। ওজন মাপে পাল্লায়।’
ধোঁকার কী হলো? ওজন যত কেজি মাপের কাঁটা গিয়ে সেখানেই থামবে। ওজন জেনে গেছি, আমার টাকা দেওয়া হয়নি।
লুবনা বলল, না হয় ডিজিটাল মামার দুটো টাকা মেরেই দিলি। অবশ্য যাদের ওজন ৬০ কেজি ছাড়িয়ে, তাদের কাছ থেকে চার টাকা করে রাখা উচিত।
ডিজিটাল মামা! দারুণ বলেছিস তো, লুবনা, তুই একটা জিনিয়াস।
কথাটা মাথায় এমনভাবে ঢুকে গেল যে কোনো ধরনের ওজনের কথা শুনলেই জিজ্ঞেস করি, ডিজিটাল মেশিনে মাপা, না অর্ডিনারি মেশিনে?
আমার বড় দুই বোনও ডিজিটাল মেশিনে ওজন মাপিয়ে এসেছে, সেই মেশিন নিউমার্কেট ফুটওভারব্রিজে। দুজন চার টাকা। পাঁচ টাকার নোট নিয়েছিল। এখানকার ডিজিটাল মামা বলেছে, ভাঙতি নেই। সুতরাং পাঁচ টাকা দিয়েই তাদের চলে আসতে হয়েছে। বাসায় ফেরার পর তাদের ওজনের সাথে আমারটা যোগ করে দেখি, তিনজনের গড় ওজন প্রায় সাড়ে ৬৯ কেজি। ওজন সবচেয়ে বেশি বড় আপুর, কিন্তু লম্বায় ৫ ফুট সাড়ে ৬ ইঞ্চি হওয়ায় মোটা মনে হয় না। কেউ তাকে মটকু প্রীতি ডাকে না।
২.আমাদের যে টানাটানির সংসার, শনি থেকে বৃহস্পতি—সপ্তাহে ছয় দিনই যে আমাদের একই ধরনের এবং একঘেয়ে স্বাদের খাবার খেয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। সুস্বাস্থের অধিকারী আমাদের তিন বোন এবং দুই ভাইকে দেখলে কারও এটা বিশ্বাস হওয়ার কথা নয়। প্রতিদিন নাশতায় ঘিয়ে ভাজা পরোটা, লাঞ্চে ফুল কাচ্চি আর ডিনারে ভাত-কালাভুনা না মারলে শরীর এমন পুষ্ট হয় নাকি?
আমাদের নাশতা মানে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন আটার রুটির সাথে মিহিন কাটা আলুভাজি, বাকি কটা দিন রুটির সাথে সুজির হালুয়া। শুক্রবারটা কেবল উৎসবের—এক কেজি গরুর মাংসে দুপুর ও রাতের ভোজ, এমনকি কখনো শনিবার সকালে রুটির সাথে উচ্ছিষ্ট মাংসের ঝোল। শুক্রবারের সুস্বাদু খাবার আগের ছয় দিনের কষ্ট ভুলিয়ে দেয় এবং ছয় দিন পর আবার এমন খাবার পাওয়ার প্রত্যাশাকে উজ্জীবিত করে।
এ নিয়ে আমাদের তেমন আফসোস নেই। বাবা আমাদের শিখিয়েছেন, ‘কাট ইয়োর কোট অ্যাকর্ডিং টু ইয়োর ক্লথ’, কাপড়ের মাপ বুঝে কোটের জন্য কাঁচি চালাও। তার মানে, সামর্থ্যের বাইরে কিছু কোরো না। বাবা নিজেই একই তরিকা অনুসরণ করে বলে আমাদের খাবারের এই দশা।
আমরা তিন বোন, তিনজনই আপন; এর মধ্যে কাজিন-টাজিনের ব্যাপার নেই। দুই বোনের পর এক ভাই, তারপর আমি, তারপর আরেকটি ভাই। দারিদ্র্য যত অপ্রীতিকরই হোক, আমার বাবা সহজে ক্ষান্ত দেওয়ার লোক নয়, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের যদি এক স্ত্রীর গর্ভে এক ডজন তিনটি সন্তান জন্মে থাকে, কাজী দীদার বখত কেন তার কাছাকাছি পৌঁছতে পারবে না।
বাদ সাধল মায়ের জরায়ু, দ্বিতীয় পুত্রের জন্মের সময়ই আবিষ্কৃত হলো, জরায়ুতে টিউমার, ম্যালিগন্যান্ট, মেষ পর্যন্ত ক্যানসার। পুরোটাই অপসারণ করে ফেলতে হবে। তা–ই করা হলো, সন্তান-থলেহীন লুবনা মরিয়ম তার স্বামী কাজী দীদার বখতের দেবেন্দ্র-প্রত্যাশা পূরণ করতে পারল না। মাত্র পাঁচজন, দেবেন ঠাকুরের এক–তৃতীয়াংশ।
প্রীতিকে দিয়ে আমাদের শুরু। বয়স ২৫ বছর ৯ মাস, শাস্ত্রসম্মতভাবে বিবাহিত। কাবিনে দেনমোহরের অঙ্কও বড়, পাত্রপক্ষ যথেষ্ট ধুমধাম করে ঘোড়াটানা গাড়িতে চড়িয়ে প্রীতিকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে গেছে। বাসরঘরে তাজা ফুলের বিপুল সমারোহে তার মূর্ছা যাওয়ার দশা। ফুলের রেণু কারও অ্যালার্জি বাড়ায়, কাউকে মূর্ছাও ধরায়।
আমাদের দুলাভাই চৌধুরী গোলাম রসুল বাসরঘরে ঢুকে প্রীতির চিবুক আলতো করে টেনে বলল, ‘কী খুকি, বিয়ে খুব মজার, তাই না?’
প্রীতি কিছু বলার আগেই গোলাম রসুল প্রায় নির্বসন হয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে স্লিপার ওঠানো পুরোনো মিটার–গজ লাইনের ওপর দিয়ে ছোটা মালগাড়ির মতো শব্দ করে নাক ডাকতে শুরু করল। কিসের নারী, ঘুমের চেয়ে শান্তিদায়ক আর কিছু আছে নাকি?
প্রীতি সে রাতে ঘুমায়নি। দ্বিতীয় রাতে প্রীতি ঘুমিয়েছে, গোলাম রসুলও। তৃতীয় রাতে গোলাম রসুল প্রীতির ঘরে আসেনি, আধো ঘুমে আধো জাগরণে প্রীতির রাত কেটেছে। বিয়ের প্রথম সপ্তাহেই এটা প্রীতির কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, নারীর শরীরের প্রতি গোলাম রসুলের এতটুকুও আগ্রহ নেই। ব্যাপারটা এ রকম যে কারও কাছে নালিশ করবে, তারও উপায় নেই। কী বলবে? যদি এমন জবাব আসে, ছি, এখনই ওসবের জন্য পাগল হয়ে গেছে, অসভ্য মেয়েমানুষ!
বিয়ে ব্যাপারটা কী, এটা তো প্রীতি জানে। বইপত্র তো পড়েছে, অভিজ্ঞজনের কথাও শুনেছে: প্রেম-কাম-সন্তান কিংবা কাম-সন্তান-প্রেম কিংবা প্রেম ও কাম কিংবা কেবলই কাম।
কিন্তু গোলাম রসুল এ কী করছে? সে কি খুব লাজুক? এত ভারী পোশাক পরে বিছানায় আসছে কেন? একসময় প্রীতি নিজেই এগোয়, গোলাম রসুল চোখ খুলে। বলে, ধ্যাৎ! উত্থিত হওয়া দূরে থাক, প্রীতির স্পর্শে মানুষটির পৌরুষ কুঁচকে যায়—আতঙ্কে? স্ত্রীসঙ্গভীতি নামের একটা রোগ আছে, কী যেন নাম। না অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা?
বিয়ের ২১তম দিনে প্রীতি প্রায় খালি হাতে ফিরে আসে।
তত দিনে প্রীতির রুম দখল করে নিয়েছে তৌহিদ মুরাদ, আমাদের দুই ভাইয়ের একজন। তার আলাদা রুম চাই, তার প্রাইভেসি চাই, যেকোনো দিন একটা মোটাসোটা মেয়েকে তুলে এনে বলবে, এই যে মা, এটা আমার বউ, পেটে বাচ্চা আছে।
মা চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করবে, খাওয়াবি কী? বাচ্চার বাবা তুই? হারামজাদা বিয়ের আগেই বাচ্চা? অন্য কারও নয়তো? মেয়ের মা-বাবা অন্ধ নাকি?
তৌহিদ বলে, ফালতু আলাপ রাখো, আমার ভাগেরটা দুভাগ করে দিয়ো।
আর বাচ্চা হলে!
তখন তিন ভাগ।
তৌহিদ মুরাদ তবু চাকরি করবে না। চাকরি হচ্ছে চাকরের কাজ।
বলে, আমি তৌহিদ চাকরের কাজ করার জন্য পৃথিবীতে আসিনি।
বাবাকে বলতে হবে, না, না সে কাজ করবে কেন? আমার ছেলে নবাবজাদা খান বাহাদুর নসরুল্লাহ খান। ছেলে যখন জন্ম দিয়েছি, পাপের প্রায়শ্চিত্ত আমিই করব। বলেই বাবা তার ছাল ওঠা ব্রিফকেসটা নিয়ে বেরিয়ে যায়।
তৌহিদ বলে, ঠিকই তো, আমি কি আমাকে জন্ম দেওয়ার জন্য তোমাদের হাতে–পায়ে ধরেছিলাম?
তৌহিদ এরপর আরও নোংরা কথা বলবে, তার মুখ বন্ধ করার জন্যই মা বলে উঠবে, ভাতটা গরম থাকতে খেয়ে নে।
মা বলতে পারত, যে মেয়েটাকে টেনে নিয়ে আসছিস, তার পেটে যে বাচ্চা, সে কি তোকে বলেছে, আমাকে জন্ম দাও?
তৌহিদ সদ্য দখল করা রুমের দরজা তালা লাগানোর আগে যত্ন করে গালে রেজর চালায়, মুখে জিলেট আফটার শেভ লোশন ঘষে, শরীরে ফগ বডি স্প্রে ছড়ায়, আয়নায় চেহারাটা দেখে চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করে এক পা–দু পা করে নবাবি চালে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। পোশাকে সামান্য হেরফের হতে পারে, পাঞ্জাবি কোনো দিন গেরুয়া, কোনো দিন নীল, কোনো দিন কলাপাতা রঙের। তবে এটিই নিত্যকার দৃশ্য!
রুম হারিয়ে প্রীতি আমার বিছানার অর্ধেকটা দখল করে নেয়।
মা জিজ্ঞেস করে, জামাই কবে নিতে আসবে?
প্রীতি বলে, সেটা একমাত্র জামাই-ই জানে।
বিয়ের ২৭তম দিনে গোলাম রসুলের বড় দুলাভাই আবক্ষ শ্মশ্রুমণ্ডিত সুফি মহিউদ্দিন হলুদ রঙের ভাড়ার ট্যাক্সি নিয়ে হাজির, প্রীতিকে এখনই তার সাথে শ্বশুরবাড়ি যেতে হবে। তার শাশুড়ির অবস্থা খারাপ। খারাপ মানে, এই যায়–সেই যায় অবস্থা।
কী হয়েছে? কে জানে।
প্রীতি যেতেই চাচ্ছিল। উপলক্ষটিকে কাজে লাগিয়ে বলল, বাবাকে বলিস, আমি চললাম। মা এসে দুটি হাজার টাকার নোট প্রীতির হাতে গুঁজে দিয়ে বলছে, তোর বাবা দিতে গেলে তো বেশি খরচ পড়ে যাবে; বরং তুই তোর শ্বশুর–শাশুড়িকে আমাদের নাম করে কিছু কিনেটিনে দিস।
৩.প্রীতি পৌঁছে দেখল, উঠানে চারজন পুলিশ।
প্রীতির চাচাশ্বশুর বলছেন, পুলিশ এসে গেছে, এখন লাশ নামাও।
কিসের লাশ? কোত্থেকে নামাবে? শাশুড়ি তাহলে এর মধ্যেই মরে গেছে? কিন্তু পুলিশ কেন? লাশ কোথায়?
প্রীতি চোখ তুলে দেখে, তার ঘরের দিকেই সবার নজর। প্রীতি এগিয়ে যায়। ভেজানো দরজা ঠেলে চিৎকার করে ওঠে, আমি এটা কী দেখছি!
প্রীতি দেখল, যে মানুষটি নগ্ন হয়ে বিছানায় গুটিসুটি মেরে কেবল ঘুমিয়ে থাকত, যার গোপন অঙ্গটি মূত্রপাত ছাড়া অন্য কোনো কাজে সম্ভবত লাগেনি, সে মানুষটি সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় একেবারে সোজা হয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। তার অঙ্গটি অধোমুখী কুঁচকানো শুঁয়াপোকার মতো নিথর হয়ে আছে।
প্রীতি শুনতে পায়, কেউ একজন বলছে, নতুন বউ গোলাম রসুলকে শেষবারের মতো দেখেছে, আর কিছু বাকি নেই। পুলিশের সামনে এবার লাশ নামাও।
নগ্ন গোলাম রসুলের সাথে আঠারো কি উনিশ দিন এক বিছানায় রাত কাটানো ছাড়া তার সাথে প্রীতির এমন কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি যে সে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে গড়িয়ে পড়বে।
প্রীতি দেখল, কেবল গোলাম রসুলের মা-ই বিলাপ করে কাঁদছে আর সবাই ব্যাপারটাকে রঙ্গ-তামাশা মনে করছে এবং হাঁ করে নতুন বউয়ের অভিব্যক্তি পরীক্ষা করছে।
একদিকে লাশ নামাচ্ছে, অন্যদিকে পুলিশের সাবইন্সপেক্টর বহুদিন পর যেন একজন পলাতক আসামি ধরতে পেরেছেন, এ রকমের সাফল্যের গাম্ভীর্য চেহারায় ফুটিয়ে প্রীতিকে বলে উঠলেন, ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট।
যে সুফি মহিউদ্দিন ট্যাক্সিক্যাব চড়িয়ে প্রীতিকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে এসেছেন, তিনি তারও আগে থানায় গিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনা প্রদানকারী হিসেবে প্রীতির বিরুদ্ধে একটি মামলা দিয়েছেন।
আরজিতে তিনি আরও লিখেছেন, সাত দিন আগে এই দুশ্চরিত্র নারী গোলাম রসুলের ঘর থেকে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা মূল্যের অলংকার ও ইলেকট্রনিকসামগ্রী এবং নগদ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে রাতের অন্ধকারে পলায়ন করে।
প্রীতির চোখের সামনে গোলাম রসুলকে সস্তা দামের চাঁটাইয়ে পেঁচিয়ে মানুষটানা ভ্যানে ওঠানো হয়। তাকে প্রথমে থানায় এবং সেখান থেকে পোস্টমর্টেমের জন্য সদর হাসপাতালে নেওয়া হবে।
প্রীতির হাতে যখন হাতকড়া পরানো হয়, সুফি মহিউদ্দিন তার হাত থেকে ভ্যানিটি ছিনিয়ে নিয়ে ব্যাগের ভেতর হাতড়ে হাজার টাকার দুটি নোট বের করে আনন্দে চেঁচিয়ে ওঠেন, পেয়েছি। এই নোট লাখ টাকার বান্ডিলের, এসআই স্যার, এই নিন দুটি আলামত, তার কাছে আরও ১ লাখ ৭৩ হাজার পাবেন। মেয়েমানুষের লুকানোর জায়গার কোনো অভাব নেই, থানায় নিয়ে ভালো করে বডি সার্চ করবেন। শোনেননি, নূরজাহান বিবি পলিথিনের এয়ার-টাইট ব্যাগে রাখা ৩৫০টি ইয়াবা ট্যাবলেট কেমন করে গোপনাঙ্গে ঢুকিয়ে ওপার থেকে বেনাপোল হয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত চলে এসেছে। ভালো করে দেখলে হাজার টাকার কিছু নোট তো পাবেনই। ভালো করে ডলা দিলে আরও অনেক কিছু বলে দেবে।
প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর গোলাম রসুলের মা, প্রীতির শাশুড়ি নিজে থানায় এসে বড় মেয়ের স্বামী সুফি মহিউদ্দিন মুহুরির নামে মামলা দেন। সুফি সাহেব মৃত গোলাম রসুলের বুড়ো আঙুলে কালি লাগিয়ে খালি স্ট্যাম্পের ওপর ছাপ নেন, এ ঘটনার সাক্ষী আছে।
তিনি ওসি বরাবর লিখিত দেন যে তার ছেলের মৃত্যুর সাথে প্রীতির কোনো রকম সম্পর্ক নেই। তিনি নিজ জিম্মায় প্রীতিকে ছাড়িয়ে আনেন। হাজত থেকে বেরিয়ে প্রীতি তার শাশুড়িকে মা বলে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় বিশেষ করে গোলাম রসুলের সাথে তার যৌন সম্পর্কের প্রকৃতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন করা হয়। প্রীতি এই প্রয়াত মানুষটিকে আর হেয় করার সুযোগ না দিয়ে জোর গলায় বলল, স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্ক যেমন, আমাদেরও তেমনই ছিল। গোলাম রসুলের সাথে সহবাসের কারণে প্রীতি গর্ভধারণ করেছে কি না, তা যথাসময়ে থানায় রিপোর্ট করার নির্দেশ দিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।
শাশুড়ির মামলার কথা শুনে সুফি মহিউদ্দিন সাময়িকভাবে গা–ঢাকা দেওয়ার আগে জনে জনে বলে যান, ওরস মোবারকে যোগ দিতে আজমির শরিফ যাচ্ছেন।
আলামতের দুই হাজার টাকা হাতছাড়া হয়ে যায়। বাবার কষ্টের টাকা। বাবা ছাড়া সংসারে টাকা দেওয়ার মতো কেউ নেই।
সাড়ে ১২ হাজার টাকা দামের নকিয়া ফোনে মা জিজ্ঞেস করেছে, শাশুড়ির শরীর এখন কেমন? টাকাটা দিয়ে কিছু কিনে দিয়েছিস?
শাশুড়ির সামনেই ফোনটা ধরে বলেছে, এখন ভালো মা। শিগগির কিনে দেব।
মা মনে করিয়ে দেয়, মেয়েদের আসল বাড়ি তার শ্বশুরবাড়ি, কাজেই তাড়াহুড়ো করে আসার দরকার নেই। শ্বশুরকে সব সময় হাতে রাখবি।
মা স্বামী সম্পর্কে কিছু বলেনি।
সেদিনই প্রীতির শ্বশুর তাকে খানিকটা আড়ালে ডেকে নিয়ে বলেছেন, গোলাম রসুলের নিজের দু টাকারও কোনো সম্পত্তি নেই। তিনি মারা যাওয়ার পর এই ছেলের যেটুকু পাওয়ার কথা, তার দখল নিয়ে গোলাম রসুলের জীবিত দুই ভাইয়ের মধ্যে শিগগিরই খুনোখুনি শুরু হয়ে যাবে। তুমি বরং বাড়ি ফিরে যাও। বচ্চাকাচ্চা যদি তোমার পেটে লেগে থাকে, তাহলে এ বাড়িতে পা রাখার জায়গা পাবে, নতুবা সম্ভাবনা নেই। ইদ্দতকালটা দেখো কী হয়।
সম্ভাবনা নেই।
প্রীতি অনেকটা বেহায়ার মতো বলে ফেলল, জি না আব্বা, কোনো সম্ভাবনা নেই। আপনার ছেলে ওই কাজ কখনো আমার সাথে করেনি।
করেনি মানে?
মানে কখনো করেনি। হয়তো তিনি তা করতে চাইতেন না, কিংবা পারতেন না। যা–ই হোক, এসব শুনে কেউ আপনার ছেলেকে ছোট করুক, আমি তা চাই না।
তিনি বললেন, তাহলে কি তোমার কোনো কথায় কষ্ট পেয়ে গোলাম রসুল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
এ ব্যাপারে আমি কিছু বলিনি, এটা তো আমার জন্যও লজ্জার।
তিনি বললেন, সে কি কখনো চেষ্টাও করেনি?
প্রীতি খুব বিব্রত বোধ করছিল। তার শাশুড়ি হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে, কী ব্যাপার, ছেলের বউয়ের সাথে লটরপটর শুরু করলে নাকি?
বিব্রত বুড়ো শুধু বলেন, তাড়াতাড়ি একটা বিয়ের ব্যবস্থা করো। আমি যতটা পারি বিয়ের খরচ দেব।
সেদিনই সন্ধ্যার পরপর প্রীতি বিয়ের স্যুটকেস ও একটি হাতব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফেরে।
বলল, ও বাড়ির কাজ শেষ।
আমরা তখনই গোলাম রসুলের মৃত্যুর কথা জানতে পারি, প্রীতির হাজতবাসের কথাও।
৪.রুমহারা প্রীতি আমার সাথে ঘুমায়। বলে, পড়াশোনাটা ভালো করে করিনি যে কোথাও একটা চাকরি পাব। কোথাও আয়ার কাজ পেলেও হতো।
গোলাম রসুলের মৃত্যু এবং প্রীতির প্রত্যাবর্তন মা নিজেও সহজভাবে নিচ্ছে না, বরং বলেই ফেলেছে, তোর কারণেই ছেলেটা মরল।
প্রীতি নির্বাক হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে আমাকে জিজ্ঞেস করে, তোর ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে? আর কটা দিন। দেখবি, গোলাম রসুলের মতো আমিও রুম খালি করে দেব।
আমি বলি, ধ্যাৎ, ঘুমোও তো।
প্রীতির বিয়ে পারিবারিকভাবে এবং ঘটা করেই হয়েছে। বাবা প্রভিডেন্ড ফান্ড থেকে টাকা তুলেছে, আরও কোত্থেকে লাখখানেক টাকা জোগাড় করেছে।
স্মৃতির বিয়ে নিজেই করেছে, এক টাকাও খরচ হয়নি। কিন্তু হবে, স্মৃতি বাবাকে চাপের মধ্যে রেখেছে। আমেরিকান ভিসা, নিউইয়র্কের টিকিট, সঙ্গে কিছু ডলার, নিজের জন্য কিছু কাপড়চোপড়, অন্তত দুই পদ গয়না, ডেভিডের জন্য কিছু উপহার।
স্মৃতি আমাদের বোনদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী, গলায় গান আছে, কথাবার্তায় চোস্ত, স্কুলে নাটক করেছে, কলেজেও; প্রেসিডেন্ট এরশাদ তার নাটক দেখে মুগ্ধ হয়ে মাথায় হাত রেখে বলেছেন, এই মেয়ে একদিন বড় হবে। মামুনুর রশীদ তাঁর নাটকের গ্রুপে সুযোগ দিয়েছেন।
স্মৃতি বিদেশিদের সাথে মেলামেশার সুযোগ পেয়েছে, সুন্দর ইংরেজি বলে। একটি প্রাইভেট এয়ারলাইনসে কেবিন ক্রুর নির্বাচনী পরীক্ষায় পাস করেছে। এর মধ্যে ডেভিড কার্স্টনার নামের মধ্য চল্লিশের এক আমেরিকান পরিব্রাজকের সাথে দেখা হয়। চার–পাঁচ দিন বাংলাদেশে কাটিয়ে ভারত যাবে, সেখানে এক মাস। প্রীতি তার প্রেমে পড়ে অথবা তার নাটকীয় অভিব্যক্তি দিয়ে ডেভিডকে মুগ্ধ করে এবং তার সফরসঙ্গী হতে রাজি হয়ে যায়।
যেসব পরিবার আর্থিকভাবে নড়বড়ে, একটু বড় হয়ে ওঠা মেয়েদের ওপর বাবা–মায়ের আসলে তেমন নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
প্রীতি পরপর দুই রাত বাড়ি ফেরেনি। বাবা শুধু বলে, এটা ঠিক না।
মা বলেছে, হারামজাদি বেশ্যা হয়ে গেছে।
ডেভিড আমেরিকান দূতাবাসের একজন বাঙালি কর্মকর্তার সাহায্য নিয়ে চার দিনের মধ্যে স্মৃতির পাসপোর্ট বের করে ভারতীয় ভিসাও লাগিয়ে দিয়েছে।
মাকে বলেছে, চিন্তা করো না, বিকেলে জেট এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে কলকাতা যাচ্ছি, ইন্ডিয়া ঘুরে তবে ফিরব।
মা বলল, হারামজাদি, তুই জাহান্নামে যা। তুই হাবিয়া দোজখের আগুনে জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাবি।
২৬ দিন পর তার দেখা মেলে। লেহেঙ্গা পরা স্মৃতি, লাবণ্য ঝরছে শরীর থেকে, ট্যাক্সি ক্যাব থেকে নেমে বলল, মুম্বাই থেকে তোর জন্য একটা থ্রি-পিস এনেছি। শোন, ইন্ডিয়া ইজ আ ওয়ান্ডারফুল কান্ট্রি। ওহ্ মাই গড, না দেখলে বিশ্বাস করবি না।
আমি বলি, তুই এক মাসে অনেক ফরসা আর সুন্দর হয়ে গেছিস।
হব না? একশবার হব। কালো মানুষের সাথে শরীর ঘষাঘষি করলে শরীর কালোই হবে, ছবিতে দেখিসনি, বিয়ের আগে মা কত ফরসা ছিল, বাবার মতো একটা বিচ্ছিরি কালো মানুষের সাথে রাত কাটাতে কাটাতে মা–ও কেমন কালচে হয়ে গেছে। ডেভিডের শরীরটা পা থেকে মাথা পর্যন্ত ধবধবে ফরসা।
ডেভিড?
ধ্যাৎ, তোর দুলাভাই ডেভিড কার্স্টনার। আমি বলে দিয়েছি, সাবধান, আমার বোন সিঁথির দিকে নজর দিয়েছ তো তোমার চোখে আঙুল ঢুকিয়ে দেব।
দুলাভাই?
ততক্ষণে ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়া মিটিয়ে স্মৃতি ঘরে এসে স্যুটকেস খুলছে।
দুলাভাই-ই তো। আমাকে কি কাঁচা ভেবেছিস? আমার সাথে যখন ওসব করতে চাইল আমি বললাম, আই ক্যান ডু ইট উইথ মাই হাজব্যান্ড অনলি।
বুঝলি না, তখন তো সেক্স মাথায় উঠেছিল। ওটা যখন মাথায় উঠবে, যা বলবি, তাতেই রাজি হয়ে যাবে। ডেভিডও সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল।
বলল, তোমার স্বামী হতে পারাটা তো ভাগ্যের ব্যাপার।
আর আমি বললাম, শুনেই তুই সালোয়ারের ফিতা খুলে বিছানায় শুয়ে পড়লি?
আমি অত কাঁচা মেয়ে না রে। বললাম, তোমাকে মুসলমান হতে হবে।
তখন কি বলল জানিস, বলল, সুইটি, তোমার জন্য আমি হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-ইহুদি-শিখ- জরথুস্ট্রিয়ান-রাস্তাফারিয়ান—যা বলো, তা–ই হতে পারি। আই লাভ ইউ সুইটি।
শোন, তোর দুলাভাই কিন্তু আমাকে সুইটি ডাকে।
আমি বললাম, যাদের গায়ের রং ফরসা হয় না, তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য বলতে হয় চেহারাটা কি সুইট।
স্মৃতি বলতে থাকে, দ্রুত ডেভিডের হাতের টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছিল। কথা ছিল নেপাল ও ভুটান যাবে, কিন্তু নিউইয়র্ক থেকে জরুরি ফোন আসে, আমার শাশুড়ি বাথরুমে পিছলা খেয়ে হিপবোন ভেঙে ফেলেছে। এমনিতেই ১০০ কেজি ওজন, বুঝিস তো, টেনে তুলতে গেলে আমার জিব বেরিয়ে যাবে। বুঝলি, ডেভিড নিজের জন্য ২০০ ডলার হাতে রেখে ৩৫০ ডলার আমাকে দিয়ে বলল, যা কেনাকাটা করার আজই সেরে নাও, কাল সকালের ফ্লাইটে তুমি ঢাকা ফিরবে আর তোমার ফ্লাইট ছাড়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আমি দুবাইয়ের ফ্লাইট নেব, ওখান থেকে কানেক্টিং ফ্লাইটে নিউইয়র্ক। ডেভিড ইজ সো সুইট, না দেখলে বুঝবি না। অবশ্য তোকে ছবি দেখাতে পারব, আমাদের দুজনের ১২১ ছবি আছে। ওসবের একটা ভিডিও করেছি। ভেরি স্পেশাল।
স্মৃতি সবার জন্যই টুকটাক কিছু না কিছু এনেছে। বাবার জন্য দুলালের তালমিছরি, খুক খুক কাশিতে খুব কাজে দেয়; মায়ের জন্য অস্থির যুবক, হাঁটুর ব্যথার ঔষধ, এক মাস মালিশ করলেই মা অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
প্রীতির জন্য বোম্বে ডায়িংয়ের মিষ্টি রঙের একটি চাদর, তৌহিদ আর তৌকিরের জন্য বহুবর্ণ পাঞ্জাবি, সাথে ওড়না। কী যে দিন এল, ছেলেরাও আজকাল ওড়না পরে! ফ্ল্যাট ব্র্যাসিয়ারও পরে নাকি?
আমাদের ছুটা কাজের বুয়া হেদায়েতুল্লাহ বকশীর মা হাফসা বেগম বলেছে, আফা, এইডাই হইল কিয়ামতের আসল আলামত। পুরুষ মানুষ মাইয়া মাইনষের বেশ ধরব আর মাইয়ারা ধরব পুরুষের বেশ।
৫.স্মৃতি একটি ছবি বের করে দেখাল, সুদর্শন একজন সাদা মানুষ, মাথায় ফেজ টুপি, হাতে তজবিহ, ছবির নিচে লেখা, এস এম শাহরুখ খান।
এটাই ডেভিডের ইসলামি নাম। সৈয়দ মুহাম্মদ শাহরুখ খান। খুব চমৎকার হয়েছে, তাই না? ও শাহরুখের মতোই চঞ্চল।
শাহরুখ স্মৃতির প্রিয় নায়ক। ডেভিডের ইসলামি নামের চেয়ে আমার জানতে ইচ্ছা করছে, মুসলমান হওয়ার পর ডেভিডের ওই জিনিসটা কাটা হয়েছে কি না। মানে সারকামসেশন করিয়েছে কি না। কিন্তু স্মৃতি কিছু মনে করতে পারে ভেবে আর জিজ্ঞেস করিনি।
স্মৃতি বলল, তোর দুলাভাই এখন প্লেনে, আরব সাগরের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। জানিস, আগে আমার ধারণা ছিল, সাদা মানুষ খুব কম গোসল করে। কিন্তু ডেভিড করে দুইবার, সকালে আর রাতে ঘুমানোর আগে।
ডেভিডকে নিয়ে কথা আর ফুরায় না।
প্রীতি চা খেতে খেতে বলে, আমি প্রথম দিনই বলেছি, আগে বেবি চাই।
নো পিল, নো কনডম, নো কন্ট্রাসেপটিভ। আগে দুটো বাচ্চা, তারপর দরকার হয় ওসব ব্যবহার করা যাবে।
আমি জিজ্ঞেস করি, তোর দুটো বাচ্চাই কি সাদা হবে?
আমার মনে হয়, প্রথমটা মেয়ে হবে, সাদা আর পরেরটা ছেলে, দেখতে হবে বাবার মতো, বিচ্ছিরি কালো। অবশ্য আমেরিকান সাদা মেয়েরা কালো ছেলেদের বেশি পছন্দ করে। কালো ছেলেরা বেশি ইয়ে আরকি, মানে সেক্সি।
প্রীতি প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর ডেভিডকে ফোনে পেল, বলল, ঠিক আছে ঘুমোও। কাল কল দিয়ো।
বুঝলি সিঁথি, ডেভিড মনে হচ্ছে বাচ্চার বীজ ঢুকিয়ে গেছে।
ডেভিড কাজগপত্র পাঠিয়ে দেবে। ভিসা ফরম পূরণ করে ডেভিডের পাঠানো কাগজসহ স্মৃতি সায়মন ওভারসিজে জমা দেবে, ওরা পাঠাবে আমেরিকান এম্বাসিতে। ভিসা অফিসার কাগজপত্র পরীক্ষা করে তাকে ইন্টারভিউতে ডাকবে। স্মৃতিকে দেখে বলবে, ইউ লুক গর্জিয়াস। তারপর পাসপোর্টে ভিসা স্টিকার বসিয়ে দিয়ে বলবে, গুডলাক, ডেভিডের সাথে তোমার আমেরিকাজীবন ভালো কাটুক।
বাবার ওপর চাপ পড়ল, তাড়াতাড়ি ঢাকা-নিউইয়র্ক টিকিট দাও, ডলার দাও। বাবাও মেয়ের জন্য জীবন বাজি রেখে টাকা জোগাড় করতে নেমে গেল।
আমাদের রক্তের আত্মীয়দের মধ্যে প্রথম বিদেশ গেছে স্মৃতি, ইন্ডিয়াতে। এখন যাচ্ছে আমেরিকা।
স্মৃতির কথার শেষ নেই। বুঝলি, আগে বিয়ে, তারপর হানিমুন। আমি আর ডেভিড আগে হানিমুনে বেরিয়ে তারপর বিয়ে করি। তারপরও আমি কিন্তু খুব কড়া। আগে বিয়ে, তারপর ওসব। ছেলেরা এমনই, যখন ওটা মাথায় উঠে পড়ে, তখন যা বলবি, তা–ই করবে। শোন, আমি চাই তুইও একটা আমেরিকান ছেলেকে বিয়ে কর। আমেরিকান হোয়াইট।
ডেভিডের ছোট ভাই নেই? আমি জিজ্ঞেস করি।
বড় ভাই আছে, বিয়ে করেনি। তুই পাত্রের জন্য চিন্তা করিস না। ইংরেজিটা একটু ভালো করে শিখে নে। আমি আর ডেভিড তো আছিই।
কিন্তু আমি যে পড়াশোনা করতে চাই। আমি পিএইচডি করব।
পিএইচডি করলে কি তোর মাথায় শিং গজাবে?
তবু ভালো স্মৃতি শিং গজানোর কথা বলেছে। অন্য একদিন তাদের কলেজের একমাত্র পিএইচডি শিক্ষক রেহনুমা আফতাবকে নিয়ে বলেছে, ম্যাডামের এত অহংকার কিসের, পিএইচডি করায় কি তার ৩ নম্বর ব্রেস্ট গজিয়েছে নাকি?
বাবা স্মৃতিকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বলেছে, ইনশা আল্লাহ, আরও দেব।
ডেভিড নিউইয়র্ক ফিরে যাওয়ার পর কমবেশি এক মাস স্মৃতির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছে। দ্বিতীয় মাসে ফোন বেজেছে; কিন্তু ডেভিড ফোন ধরেনি। এই একটি নম্বর ছাড়া স্মৃতির হাতে আর কিছুই নেই।
দ্বিতীয় মাসের তৃতীয় সপ্তাহে স্মৃতি এক নারীকণ্ঠের যাচ্ছেতাই গালি খায়। বলে, কুত্তির বাচ্চা। ইন্ডিয়ান হৌর। ভারতীয় বেশ্যা, ডন্ট কল মাই হাজব্যান্ড এগেইন।
গাল খেয়েও স্মৃতি জিজ্ঞেস করে, হু ইজ ইয়োর হাজব্যান্ড?
জবাব দেয়, ডেভিড কার্স্টনার ইজ মাই হাজব্যান্ড। আমাদের দুটি মেয়ে বাচ্চা আছে। বুঝতে পেরেছিস ফাকিং হৌর?
৬.২১ জুলাই আমাদের বাড়িতে বেশ কটি ঘটনা ঘটে।
সকালে স্মৃতি একটি ফোন পেয়ে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। ডেভিডের ফোন। ডেভিড বারবার ক্ষমা চায়।
ডেভিড বলে, মার্থা ড্রিংকওয়াটার ইজ আ উইচ। গতকাল তাকে ডিভোর্স করেছি। বাচ্চা দুটো আমার নয়, মার্থার আগের বয়ফ্রেন্ড শন ম্যাককাম্বারের। সবকিছু ঠিকঠাক আছে।
স্মৃতি থ হয়ে থাকে।
ডেভিড বলতে থাকে, আমি কাল সন্ধ্যায় ডিএইচএলে সব কাগজপত্র তোমার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েছি, ফটোকপি পাঠিয়েছি এম্বাসিতে। ভেতরে ই-টিকেটও আছে, কাতার এয়ারওয়েজের টিকেট। ডিএইচএল খাম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে না পৌঁছালে আমাকে রিং করবে। ফোন আমি ধরব। দ্যাট উইচ ইজ গন। আমি মেইল ট্র্যাকিং নম্বরটা তোমাকে টেক্সট করে দিচ্ছি, ঢাকা ডিএইচএলে ফোন করে তুমিও জানতে পারবে।
অবিশ্বাস্য আনন্দ নিয়ে অবাক করা স্মৃতি আমাকে জিজ্ঞেস করছে, এটা কি সত্যি?
প্রীতির চাকরি হয়েছে গাজীপুরের সবচেয়ে বড় বৃদ্ধনিবাসে। তার পদের নাম সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট, আবাসিক পদ। থাকা–খাওয়া ফ্রি, বেতন ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। প্রীতি ১ আগস্ট থেকে আমার সাথে আর বেড শেয়ার করছে না।
প্রায় আড়াই মাস ধরে নিখোঁজ আমাদের আদরের ছোট ভাই তৌকিরের সন্ধান পাওয়া গেছে। মুম্বাই থেকে দামেস্ক যাওয়ার পথে তৌকির ও তার তিন তরুণ বন্ধু গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশ মনে করছে, গুলশানে আর্টিজান বেকারির হত্যাযজ্ঞে প্রত্যক্ষ না হলেও তৌকির আরমান ও অপর তিনজনের পরোক্ষ অবদান রয়েছে।
শুনে আমার মা থ হয়ে গেছে, তার মুখ থেকে কোনো কথা সরছে না। তৌকিরের মতো স্মার্ট ছেলে কবে কোথায় আইএসে যোগ দিল, আমরা তার কূল–কিনারা করতে পারছি না।
বদমেজাজি তৌহিদ বলল, ঢাকায় এনে ক্রসফায়ারে শেষ করে দেবে।
সেদিন রাত ১১টায়ও বাবা বাসায় ফেরেনি।
মা শুধু বলছে, মানুষটা এমন বে–আক্কেল। আমরা যে দুশ্চিন্তায় আছি, একবারও ভাবছে না। এ রকম একটা দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষের সাথে আমাকে ৩০টা বছর কাটাতে হলো। আর না, আমি প্রীতির সাথে বৃদ্ধনিবাসে চলে যাব।
৭.ভোরের দিকে ফোন আসে হোসেন আলী নামের একজন ফোন করেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে, রক্ত লাগবে।
তৌহিদ ও আমি সবার আগে পৌঁছাই। বাবা ওটিতে।
প্রায় ৪০ বছর বয়সী একজন বললেন, ফার্মগেটের কাছাকাছি বাসে ওঠার সময় সম্ভবত ছিটকে পড়েন। পেছনেই আমার গাড়ি। সাড়ে আটটার দিকে তুলে হাসপাতালে রেখে আসি। বাড়ি ফিরে দেখি, তার ব্যাগটি রেখে আসিনি। ব্যাগেই নোটবইতে কয়েকটি ফোন নম্বর পাই। হাসপাতালে এসে জিজ্ঞেস করে শুনি, আটটায় আপারেশন।
ততক্ষণে স্মৃতি ও প্রীতি এসে হাজির।
আমি বলি, বাবার ব্লাড গ্রুপ বি পজেটিভ। আমি আর আমার বড় আপুও বি পজেটিভ।
বাবার ভারী ব্রিফকেসটা আমার হাতে দেন, আর এগিয়ে দেন তার বিজনেস কার্ড। নাম কে এম হোসেন আলী, প্রপাইটার এমারেল্ড এন্টারপ্রাইজ, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড। টাইলস আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতা।
প্রীতির চোখেমুখে কৃতজ্ঞতা। আপনি না থাকলে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যেত।
বাবার ব্রিফকেস খুলে ভেতরে চকচক করা জিনিসটা টান দিতেই বেরিয়ে আসে স্বচ্ছ একটি ওজন মাপার মেশিন। আমার মনে হলো খুবই চেনা। স্বচ্ছ কাচের ওপর লাল হরফে লেখা ডিজিটাল মেশিনে ওজন নিন। আমি ব্যাগের ভেতরে হাত দিই, বেরিয়ে আসে কালো চশমা, সৌদি পাগড়ির নাম কিফিয়া।
স্মৃতি ও প্রীতি অপারেশন থিয়েটারের দরজায় উঁকি দিয়ে ফিরে এসেছে।
আমি আর তৌহিদ ওটির দিকে যাচ্ছি। বাবা বেঁচে আছে।
বাবারা মরে না, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য বেঁচে থাকতেই হয় বাবাদের।
বাবার ডিজিটাল মেশিনটা দিয়ে এবার সবার ওজন নেব। একদম ফ্রি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ল ম রস ল র ম জ জ ঞ স কর ন উইয়র ক র র জন য র জন য ব র ফ ল ইট আম র স থ আম র ক ন আম দ র দ ওজন ম প র ওপর দ প এইচড একজন ব এক ম স আম র ম ইন ড য় আম র ব ম শ নট পর ক ষ ন একট ত রপর র একট ওজন ন বলল ম প রথম র ওজন
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
আগামী জাতীয় নির্বাচন দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘দেশে যাতে আর কখনো ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে বিষয়ে নারীসমাজকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। আমি বাংলাদেশের মা-বোনদের আহ্বান জানাই, আপনারা সচেতন ও সজাগ থাকুন।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীদের অবদান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পটভূমিতে নারীসমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে উল্লেখ করে সভায় তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা চাই, একজন মায়ের চোখে যেমন বাংলাদেশ হওয়া উচিত, তেমনই একটি ইনসাফভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।’
তারেক রহমান বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে যেসব পরিবার আপনজন হারিয়েছে, তাদের আত্মত্যাগের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। এসব পরিবারে একজন পুরুষ সদস্যের মৃত্যুর পর একজন নারী যেভাবে প্রতিদিন সংসার টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, তা এক অনবদ্য সংগ্রাম।
নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির মূলধারার বাইরে রেখে কখনোই নিরাপদ বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়। নারীশক্তিকে কর্মপরিকল্পনার বাইরে রেখে কোনো রাষ্ট্রই এগিয়ে যেতে পারে না। তিনি বলেন, নারী-পুরুষ ভেদাভেদ না করে সবাইকে শিক্ষা ও দক্ষতার মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে।
নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তারেক রহমান বলেন, নারীদের স্বাবলম্বী করা গেলে বৈষম্য কমবে, পারিবারিক সহিংসতাও রোধ হবে। তাই বিএনপির স্লোগান হচ্ছে—‘ক্ষমতায়িত নারীশক্তি, পরিবারের মুক্তি।’
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি আগামী দিনে ক্ষমতায় এলে প্রান্তিক ৫০ লাখ পরিবারের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করবে। এই কার্ড নারীদের নামে ইস্যু করা হবে। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে প্রান্তিক পরিবারগুলোকে প্রতি মাসে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আর্থিক বা খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটবে এবং পরিবারগুলো ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হবে।
তারেক রহমানের বক্তব্যের আগে সভায় একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এই তথ্যচিত্রে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীদের অবদান তুলে ধরা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আফরোজা খানম বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। এই লড়াইয়ে সবচেয়ে সাহসী ভূমিকা রেখেছে নারীসমাজ।
যাঁরা রক্ত-অশ্রু ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, সেই নারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তাজমেরি এস এ ইসলাম ও তাহসীনা রুশদির, বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব প্রমুখ।
এ ছাড়া বক্তব্য দেন মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম, টক শো উপস্থাপক হাসিনা আখতারের ধারণ করা বক্তব্য সভায় প্রচার করা হয়। সভার সঞ্চালক ছিলেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান। সভায় শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা জানানো হয়।