মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের একমাত্র উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসাসেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এখানে অন্তত চারজন জনবল থাকার কথা, তবে বাস্তবে দায়িত্বে আছেন কেবল একজন ফার্মাসিস্ট। তাও আবার দুর্ঘটনায় আংশিক পঙ্গু হয়ে পড়েছেন তিনি। ফলে প্রতিদিনের স্বাস্থ্যসেবা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি জনগণের আস্থা হারাচ্ছে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা।

চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় সাধারণ জ্বর-সর্দি থেকে শুরু করে ডায়রিয়া, ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চরক্তচাপের রোগীরাও ঝুঁকিতে পড়ছেন। জরুরি সেবা না থাকায় অনেক রোগীকে উপজেলা বা জেলা সদরে ছুটতে হচ্ছে। এতে সময় ও অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি জীবনঝুঁকিও বাড়ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী একটি ইউনিয়ন পর্যায়ের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন এমবিবিএস চিকিৎসক, একজন মেডিকেল সহকারী (এসএসএমও), একজন ফার্মাসিস্ট এবং একজন অফিস সহায়ক থাকার কথা। কিন্তু বায়রা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে অন্যত্র প্রেষণে আছেন। মেডিকেল সহকারী ও পিয়ন দু’জনই প্রায় দুই বছর আগে অবসরে গেছেন। তাদের স্থানে এখনও কোনো নিয়োগ হয়নি।

এ অবস্থায় ফার্মাসিস্ট কমল চন্দ্র সরকারই একমাত্র অবলম্বন। কয়েক মাস আগে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে তিনি নিজেই আংশিক পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তারপরও এই অবস্থায় সকাল আটটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কোনোভাবে কেন্দ্রটি চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “আমি একা তিন-চার জনের কাজ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এটা তো সম্ভব না। মানুষের কষ্ট বুঝি বলে যতটুকু পারি করছি, নইলে এই হাসপাতাল কার্যত বন্ধ হয়ে যেত। প্রতিদিন নানা সমস্যা নিয়ে মানুষ ভিড় জমায় এই হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় অনেক সময় তাদের ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।”

বায়রা গ্রামের গৃহবধূ রুবিনা আক্তার বলেন, “বাচ্চার জ্বর হলে এখানে আসি। ওষুধ পাওয়া যায়, কিন্তু ডাক্তার নেই। একটু গুরুতর অসুখ হলে আমাদের সিংগাইর বা মানিকগঞ্জে যেতে হয়। সময় সব মিলিয়ে বড় কষ্ট।”

স্থানীয় কৃষক মতিয়ার রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এত বড় ইউনিয়নে ডাক্তার নাই, সেবিকা নাই, শুধু একজন ফার্মাসিস্ট আছেন। দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে তিনি কাজ করছেন এটা তো সরকারের লজ্জার ব্যাপার।”

সদ্য মা হওয়া হাসিনা খাতুন বলেন, “ডেলিভারির সময় হাসপাতালে কাউকে পাইনি। পরে আত্মীয়স্বজন নিয়ে সিংগাইরে নিয়ে যেতে হয়েছে। সময়মতো না নিলে বড় বিপদ হতো।”

মানিকগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম বলেন, “বায়রা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বর্তমান অবস্থা যেন দেশের গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এক প্রতিচ্ছবি। যেখানে কাঠামো আছে, ভবন আছে, কিন্তু নেই কর্মী। একজন আহত ফার্মাসিস্টের একক প্রচেষ্টায় চলছে পুরো হাসপাতাল। এ দৃশ্য প্রমাণ করে দেয়, সরকারি ব্যবস্থার উদাসীনতা কতটা গভীর।”

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ মানিকগঞ্জের সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, “সরকার গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র করেছে। কিন্তু জনবল না থাকলে এটা কেবল ভবন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। জনগণের কাছে এর কোনো মূল্য থাকে না।”

এ বিষয়ে সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.

রাফসান রেজা খান বলেন, “বায়রা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে জনবল সংকটের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই নিয়োগ দেওয়া হবে।”

ঢাকা/চন্দন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপস ব স থ য ক ন দ র ম ন কগঞ জ চ ক ৎসক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চবি ছাত্রদলের ৪২০ জনের কমিটিতে নারী মাত্র ১১

আংশিক কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রদলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ৪২০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নারী সদস্য রয়েছেন মাত্র ১১ জন। যা শতকরা হিসেবে তাদের অংশগ্রহণের হার মাত্র ২.৬২ শতাংশ।

এর মধ্যে, সহ-সভাপতি পদে একজন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে একজন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে একজন, মানবাধিকার সম্পাদক পদে একজন, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে একজন, ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক পদে একজন এবং সহ-ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক পদে দুইজন।

আরো পড়ুন:

বগুড়ায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী আটক

কুমিল্লায় প্রবাসীর স্ত্রীকে মারধর-তালাক, অন্যজনের সঙ্গে বিয়ে

বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে ৬০ জন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ৯২ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক ৬৩ জন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ৬৪ জন এবং সদস্য রয়েছেন ৬২ জন।

এর আগে, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে মো. আলাউদ্দিন মহসিনকে সভাপতি ও আবদুল্লাহ আল নোমানকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি পায় চবি ছাত্রদল। এরপর নানা জটিলতা ও সাংগঠনিক স্থবিরতায় ২ বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি সংগঠনটি। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে ৪২০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, একটি কমিটির মেয়াদ থাকে সর্বোচ্চ ২ বছর। সেখানে চবি ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস পর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করেছে কেন্দ্রীয় সংসদ।

এদিকে, গত ১২ অক্টোবর চাকসু নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চবি ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে মোহাম্মদ মামুন উর রশিদ মামুনকে সংগঠনের সদস্য পদসহ স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় সংসদ। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতির পদটি শূন্য রয়েছে।

পূর্বের আংশিক কমিটিতে সভাপতি ছিলেন মো. আলাউদ্দিন মহসিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও তারা একই পদে বহাল আছেন।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির
  • কর্মদিবসের শেষ দিনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু
  • প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে
  • চবি ছাত্রদলের ৪২০ জনের কমিটিতে নারী মাত্র ১১