চার মাস ১৭দিন পর আবারও খোলা হলো কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স। মসজিদের ১৩টি সিন্দুক বা দানবাক্স খুলে এবার পাওয়া গেছে ৩২ বস্তা টাকা।

শনিবার (৩০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টায় দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এসময় মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা। এসময় মসজিদটি ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। 

দানবাক্সের টাকাগুলো বস্তায় ভরে কড়া নিরাপত্তায় মসজিদের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই টাকাগুলো গণনার কাজ শুরু হয়েছে। 

এর আগে গত ১২ এপ্রিল খোলা হয়েছিল মসজিদের দানবাক্স। তখন পাওয়া যায় রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭টাকা।সিন্দুক থেকে বস্তায় ভরা হচ্ছে টাকা।

মসজিদের দোতলায় গিয়ে দেখা যায়, মেঝেতে বসা মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সামনে বস্তা থেকে টাকা ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। আর এগুলো ভাঁজ করে গুনছে তারা। গণনার কাজে সহযোগিতা করছেন মসজিদের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও ব্যাংকের লোকজন। 

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জেসমিন আক্তারের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টাকা গণনার কাজ তদারকি করছেন। গণনার কাজে দুটি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ৪৫০ জন টাকা গণনার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

গত ৪ জুলাই দূর-দূরান্তের দানকারীদের কথা চিন্তা করে পাগলা মসজিদে চালু করা হয় অনলাইন ডোনেশান পদ্ধতি। এরপর থেকে আজকে পর্যন্ত সেখানে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছে।

মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাধারণত তিন মাস পর পর দানবাক্স খোলা হয়। এবার চার মাস ১৭দিন পর দানবাক্স খোলা হয়েছে। এ কারণে টাকার পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। দেশি টাকা ছাড়াও বিদেশি মুদ্রা ও সোনা-রূপার অলঙ্কারও উল্লেখযোগ্যা পরিমাণ পাওয়া গেছে। গণনা করতে সন্ধ্যা, এমনকি রাতও হয়ে যেতে পারে।

এদিকে গত ১০ আগস্ট ধর্ম উপদেষ্টা ড.

আ ফ ম খালিদ হোসেন কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদ পরিদর্শন করেছেন। তখন তিনি বলেন, “পাগলা মসজিদ ফান্ডে বর্তমানে ৯০ কোটিরও বেশি টাকা রয়েছে। পাগলা মসজিদের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্সের কাজ দ্রুত শুরু হবে এবং নির্বাচনের আগেই সেটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।”

স্থানীয়রা জানান, মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করেন। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসেন পাগলা মসজিদে। দান করেন মোটা অঙ্কের টাকা। টাকার সঙ্গে সোনা-রুপার অলঙ্কারসহ থাকে বিদেশি মুদ্রাও। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বইও দান করেন লোকজন।

তবে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দানবাক্সে পাওয়া চিঠিপত্র। এসব চিঠিতে লোকজন তাদের জীবনে প্রাপ্তির আনন্দ, না-পাওয়ার বিরহ বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকুরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করে।

টাকার বস্তা মাথায় করে বয়ে নেওয়া হচ্ছে মসজিদের দোতলায়।

জানা গেছে, মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। আর ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে ক্যান্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে থাকে মসজিদ কমিটি। যে কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন জেলা প্রশাসক।

মসজিদের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, দানের টাকায় মসজিদের নিয়মিত খরচ চালিয়ে ব্যাংকে জমানো হচ্ছে। ব্যাংকে জমা আছে ৯১ কোটি টাকার উপরে। এ টাকা দিয়ে মসজিদের বড়সড় উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। মসজিদ ঘিরে এখানে ছয়তলাবিশিষ্ট একটি ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মিত হবে। যেখানে ৫০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবে। এরমধ্যে পাঁচ হাজার নারীর জন্য আলাদাভাবে নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ থাকবে আরো বিভিন্ন আয়োজন।

ঢাকা/রুমন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র দ নব ক স গণন র ক জ মসজ দ র দ য় মসজ দ দ ন কর ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে হাতির তাণ্ডব

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে সীতা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে বিগত এক মাস ধরে অবস্থান করছেন একদল বন্যহাতি। ১৭ (সতের) দলের এই বন্যহাতির তাণ্ডবে এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগান শ্রমিকদের ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত কাঁচা সড়ক। 

 এদের তাণ্ডবে বাগানের ২নং সেকশনে বসবাসকারী চা শ্রমিকরা এরইমধ্যে নিজ নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে কর্ণফুলি নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থান নিয়েছে। এই সেকশনে থাকা বহু ঘর হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওয়াগ্গা টি লিমিটেডের পরিচালক খোরশেদুল আলম কাদেরী বলেন, “হাতির তাণ্ডবে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগানের নিজস্ব বোট চালক সানাউল্লাহর বসতবাড়ি। এসময় তিনিসহ তার স্ত্রী-সন্তানেরা ঘর হতে বের হয়ে কোনরকমে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।”

বোট চালক সানাউল্লাহ বলেন, “সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আমি হাতির গর্জন শুনতে পাই। এসময় একটি বড় হাতি আমার ঘর ভাঙার চেষ্টা চালায়। আমি হতবিহ্বল হয়ে যাই। সেসময় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ঘরের পেছন দিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বোটে করে এপারে চলে আসি।” 

চা বাগানের টিলা বাবু চাথোয়াই অং মারমা বলেন, “বিগত এক মাস ধরে ১৭টি হাতির একটি দল বাগানে অবস্থান করছে। মাঝে মাঝে দলটি সীতা পাহাড়ে চলে গেলেও হঠাৎ বাগানে চলে এসে আসে এবং বাগানের গাছপালা, বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের চা শ্রমিকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।”

ওয়াগ্গা চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আমিনুর রশীদ কাদেরী বলেন, “বিগত এক মাস ধরে হাতির একটি দল ওয়াগ্গা চা বাগানে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দলে সদস্য সংখ্যা সতেরো ১৭টি। সম্প্রতি দুটি নতুন শিশু জন্ম নিয়েছে। শিশু হস্তী শাবককে আশীর্বাদ করার জন্য সীতা পাহাড়ের গভীর অরণ্য থেকে আরো একদল হাতি যোগদান করেছে।” 

হাতি খুবই শান্তিপ্রিয় জীব। নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করে। অনেকে বলে থাকেন, মামারা বেরসিক বাদ্য বাজনা, বাঁশির সুর, গলাফাটা গান, গোলা বারুদ, ড্রামের শব্দ পছন্দ করে না। তারা কোলাহল এড়িয়ে চলে। 

গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) স্বচক্ষে দেখা হলো। আমাদের টিলা বাবু চাই থোয়াই অং মারমা শ্রমিকদের নিয়ে পাহাড়ের উপর বাঁশির সুর তুলেছে। সুর ও বাদ্য বাজনা এড়িয়ে মামারা (হাতি) চা বাগান পেরিয়ে সদলবলে বাঁশবনের গভীর থেকে গভীরে হারিয়ে গেলো। হয়তো আবার ফিরে আসবে।

কাপ্তাই বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ অফিসার ওমর ফারুক স্বাধীন বলেন, “দিন দিন হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার ফলে হাতি খাবারের সন্ধানে প্রায়ই লোকালয়ে এসে হানা দিচ্ছে। আমাদের উচিত হাতির আবাসস্থল ধ্বংস না করা।”

ঢাকা/রাঙামাটি/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৩ ঘণ্টা পর রংপুরের রেল যোগাযোগ সচল
  • ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে হাতির তাণ্ডব
  • হেরোইন বিক্রির অভিযোগে ধামরাইয়ে গ্রেপ্তার ৩
  • টেকনাফে সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ২