ক্যাম্পাস ও হল খোলার আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার বাকৃবি শিক্ষার্থীদের
Published: 3rd, September 2025 GMT
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। ক্যাম্পাস ও হল খোলার আশ্বাস পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা আপাতত তাদের কর্মসূচি বিরত রেখেছেন।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাস ও হল খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদীয় সম্মেলন কক্ষে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিবৃন্দ। এ সময় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড.
সাড়ে চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা আলোচনা শেষে বাকৃবির ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, “আমরা দীর্ঘসময় ধরে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করেছি। তাদের প্রথম দাবি ছিল হল বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার এবং আরেকটি দাবি ছিল— আন্দোলনে জড়িত থাকায় তারা যেন হয়রানির শিকার না হয়।। আমরা তাদেরকে এই দুইটি বিষয়েই আশ্বস্ত করেছি। বুধবার সিন্ডিকেট সভায় হল খোলা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং আগামী সপ্তাহের মধ্যে ক্লাস পরীক্ষার শুরুর সিদ্ধান্ত আসবে। পাশাপাশি একাডেমিক কাউন্সিল থেকে যে সিদ্ধান্ত ছিল তিনটি ডিগ্রির প্রস্তাবনা করা হয়েছিল, সেটি নিয়েও শিক্ষার্থীদের সাথে স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনা হয়েছে।”
এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এহসানুল হক হিমেল বলেন, “স্যারদের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছি। বুধবার সিন্ডিকেট মিটিংয়ের মাধ্যমে হল বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার করা হবে এবং আগামী সাতদিনের মধ্যে ক্লাস পরীক্ষা শুরু হওয়ার ব্যাপারে স্যাররা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। সেজন্য আমরা বুধবার আমাদের আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি রাখছি না। তবে একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়ে পরবর্তীতে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে আমরা আবার আন্দোলনে ফিরে যাব।”
আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী মো. শিবলী সাদী বলেন, “একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, এ বিষয়ে সামনে আরো আলোচনা হবে। পরবর্তীতে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পাশাপাশি আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত কোনো শিক্ষার্থীকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোন হয়রানির সম্মুখীন হতে হবে না বলে স্যাররা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এই মর্মে আমরা প্রশানের একটি কাছে লিখিত বিবৃতি চেয়েছি।”
ঢাকা/লিখন/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বব দ য ও হল খ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।
জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।
দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।