ছাত্রলীগ-শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফেসবুকে জবি হল প্রাধ্যক্ষের ‘বিতর্কিত
Published: 6th, September 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রী হল নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আঞ্জুমান আরা আবারো বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।
বই চুরির ঘটনায় সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া ও ছাত্রলীগের পিটুনি সংস্কৃতিকে সমর্থন করার পর শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টায় তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টে পারিবারিক সহিংসতার উদাহরণ টেনে এনে এ মন্তব্য করেন। তবে পোস্ট দেওয়া আধাঘণ্টা পর তিনি তা মুছে দেন।
আরো পড়ুন:
ফ্রান্সে এক্সের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু
সংসার ভাঙলো কনার, ন্যান্সি ‘শিয়াল রাণী’ বললেন কাকে?
তিনি স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক সহিংসতার গল্প টেনে পোস্টে লেখেন, “এক মহিলার স্বামী খারাপ, সে তার স্ত্রীকে `ধইরা ধইরা পিটাইতো’। মহিলা স্বামীকে ছেড়ে বাপের বাড়ি গিয়ে উঠলো। স্বামীর লাগাতার বদনাম করতে লাগলো। বাপের বাড়ির সবাই মায়া দেখালো। বলল তুই এখন থেকে বাপের বাড়ি থাকবি। ঐ বেটার কাছে আর যাবি না। দুই দিন যেতেই সে মহিলা বাপের বাড়িতে ভাইয়ের সংসারে আগুন দেয়া শুরু করল। ভাই কয়েক দিন সহ্য করলো। একদিন ভাই অসহ্য হয়ে বলল, তোর জন্য ঐ স্বামীই ভালো ছিল, যে তোরে ‘ধইরা ধইরা পিটাইতো’।”
এরপর তিনি সেখানে প্রশ্নোত্তর পর্ব লেখেন। সেখানে প্রাধ্যক্ষ লেখেন, “স্বামী ভালো ছিল? না। স্ত্রী ভালো ছিল? না। তাহলে কি ছিল? যেমন কুকুর তেমন মুগুর ছিল।”
তার এই স্ট্যাটাসকে অনেকেই ছাত্রলীগকে ঘিরে চলমান বিতর্ককে আড়াল করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। শিক্ষার্থী-শিক্ষক মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, “একজন প্রাধ্যক্ষ কীভাবে সহিংসতা ও দমননীতিকে উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করান? তিনি কি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা শেখাবেন, নাকি পিটুনির সংস্কৃতিকে বৈধতা দেবেন?”
এর আগে, দেশ রূপান্তর পত্রিকায় ছাত্রী হলে বই চুরির ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সাংবাদিক ফাতেমা আলীকে উদ্দেশ্য করে আঞ্জুমান আরা বলেছিলেন, “আগে ছাত্রলীগ ছিল না? তারাই ভালো ছিল ধরে ধরে পিটাইতো, ঐটাই ঠিক ছিল।” শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার সময় ওই সাংবাদিককে শৃঙ্খলা কমিটির সভায় হাজির হওয়ার নোটিশও পাঠান তিনি।
প্রাধ্যক্ষের এসব আচরণের নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, “বই চুরির ঘটনায় যেখানে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল, সেখানে প্রাধ্যক্ষ উল্টো সাংবাদিককে হুমকি দিয়েছেন। এ ধরনের আচরণ প্রশাসনিক দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”
অন্যদিকে জবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো.
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই মনে করছেন, আঞ্জুমান আরার ধারাবাহিক বিতর্কিত বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।
এদিকে, নারী সাংবাদিক ফাতেমা আলীর সঙ্গে অশোভন আচরণ, ভীতিপ্রদর্শন ও সংগঠিত সাইবার বুলিংয়ের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জবি প্রেস ক্লাব।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক ইউসুব ওসমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী আবাসিক হলে বই চুরির ঘটনায় প্রভোস্ট অধ্যাপক আঞ্জুমান আরার কাছে বক্তব্য চাইতে গেলে সাংবাদিক ফাতেমা আলী অপেশাদার ও অশোভন আচরণের শিকার হন। পরে সংবাদ প্রকাশের পর গভীর রাতে তাকে শোকজ লেটার পাঠানো হয় এবং হল শৃঙ্খলা কমিটির সভায় হাজির হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। প্রেস ক্লাব এ ঘটনাকে ‘প্রকাশ্য ভীতিপ্রদর্শন, মানসিক নিপীড়ন ও হয়রানির জঘন্য উদাহরণ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, একজন সাংবাদিককে ভয় দেখানো, হয়রানি করা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগঠিত হামলার শিকার করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক নৈতিকতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থি। নারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য চরম হুমকি বলেও উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবাদ লিপিতে জবি প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবি জানায় সংগঠনটি। দাবিগুলো হলো- সাংবাদিক ফাতেমা আলীর প্রতি ভীতি প্রদর্শন, হয়রানি ও সাইবার বুলিংয়ের ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে অবিলম্বে শনাক্ত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; সংশ্লিষ্ট প্রাধ্যক্ষের আচরণের বিষয়ে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তা, মর্যাদা ও পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে; নারী সাংবাদিকদের প্রতি হয়রানি, হুমকি, মানহানি ও সাইবার সহিংসতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বই চ র র ঘটন ব তর ক প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
কর্মদিবসের শেষ দিনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু
চাকরি জীবনের শেষ কর্মদিবসে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ফজলুর রহমান (৬০) নামের এক প্রধান শিক্ষক।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) উপজেলার ব্রহ্মগাছা ক্লাস্টারের হামিন দামিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
আরো পড়ুন:
জাবি অধ্যাপককে হুমকি গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি: ইউট্যাব
টুঙ্গিপাড়ায় সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের সংবাদ সম্মেলন
ফজলুল করিম ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের মীরের দেউলমুরা এলাকার বাসিন্দা। মৃত্যুকালে স্ত্রী, দুই ছেলে-মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার নিহত ফজলুর করিমের শেষ কর্মদিবস ছিল। বিকেলের দিকে বিদ্যালয়ের ওয়াশরুমে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সহকর্মীরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে রাস্তার মাঝেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
রায়গঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মৃত্যুর বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “চাকরি জীবনে তিনি একজন সৎ, শান্ত ও ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমাদের জন্য গভীর শোকের।”
রায়গঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, “একজন দায়িত্বশীল ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ছিলেন। চাকরির শেষ দিনে তার এমন মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। শিক্ষা পরিবার একজন ভালো মানুষকে হারাল। তার মৃত্যুতে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একইসঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।”
ঢাকা/রাসেল/মেহেদী