জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রী হল নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আঞ্জুমান আরা আবারো বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।

বই চুরির ঘটনায় সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া ও ছাত্রলীগের পিটুনি সংস্কৃতিকে সমর্থন করার পর শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টায় তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টে পারিবারিক সহিংসতার উদাহরণ টেনে এনে এ মন্তব্য করেন। তবে পোস্ট দেওয়া আধাঘণ্টা পর তিনি তা মুছে দেন।

আরো পড়ুন:

ফ্রান্সে এক্সের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

সংসার ভাঙলো কনার, ন্যান্সি ‘শিয়াল রাণী’ বললেন কাকে?

তিনি স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক সহিংসতার গল্প টেনে পোস্টে লেখেন, “এক মহিলার স্বামী খারাপ, সে তার স্ত্রীকে `ধইরা ধইরা পিটাইতো’। মহিলা স্বামীকে ছেড়ে বাপের বাড়ি গিয়ে উঠলো। স্বামীর লাগাতার বদনাম করতে লাগলো। বাপের বাড়ির সবাই মায়া দেখালো। বলল তুই এখন থেকে বাপের বাড়ি থাকবি। ঐ বেটার কাছে আর যাবি না। দুই দিন যেতেই সে মহিলা বাপের বাড়িতে ভাইয়ের সংসারে আগুন দেয়া শুরু করল। ভাই কয়েক দিন সহ্য করলো। একদিন ভাই অসহ্য হয়ে বলল, তোর জন্য ঐ স্বামীই ভালো ছিল, যে তোরে ‘ধইরা ধইরা পিটাইতো’।”

এরপর তিনি সেখানে প্রশ্নোত্তর পর্ব লেখেন। সেখানে প্রাধ্যক্ষ লেখেন, “স্বামী ভালো ছিল? না। স্ত্রী ভালো ছিল? না। তাহলে কি ছিল? যেমন কুকুর তেমন মুগুর ছিল।”

তার এই স্ট্যাটাসকে অনেকেই ছাত্রলীগকে ঘিরে চলমান বিতর্ককে আড়াল করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। শিক্ষার্থী-শিক্ষক মহলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, “একজন প্রাধ্যক্ষ কীভাবে সহিংসতা ও দমননীতিকে উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করান? তিনি কি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা শেখাবেন, নাকি পিটুনির সংস্কৃতিকে বৈধতা দেবেন?”

এর আগে, দেশ রূপান্তর পত্রিকায় ছাত্রী হলে বই চুরির ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সাংবাদিক ফাতেমা আলীকে উদ্দেশ্য করে আঞ্জুমান আরা বলেছিলেন, “আগে ছাত্রলীগ ছিল না? তারাই ভালো ছিল ধরে ধরে পিটাইতো, ঐটাই ঠিক ছিল।” শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার সময় ওই সাংবাদিককে শৃঙ্খলা কমিটির সভায় হাজির হওয়ার নোটিশও পাঠান তিনি।

প্রাধ্যক্ষের এসব আচরণের নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, “বই চুরির ঘটনায় যেখানে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল, সেখানে প্রাধ্যক্ষ উল্টো সাংবাদিককে হুমকি দিয়েছেন। এ ধরনের আচরণ প্রশাসনিক দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”

অন্যদিকে জবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো.

আসাদুজ্জামান আসলাম বলেন, “একজন প্রাধ্যক্ষের মুখে এমন হুমকি ও সহিংসতার প্রশংসা নিন্দনীয়। এতে বোঝা যায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপদ রাখার পরিবর্তে রাজনৈতিক দমননীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। আমরা এর বিচার দাবি করছি।”

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই মনে করছেন, আঞ্জুমান আরার ধারাবাহিক বিতর্কিত বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।

এদিকে, নারী সাংবাদিক ফাতেমা আলীর সঙ্গে অশোভন আচরণ, ভীতিপ্রদর্শন ও সংগঠিত সাইবার বুলিংয়ের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জবি প্রেস ক্লাব। 

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক ইউসুব ওসমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী আবাসিক হলে বই চুরির ঘটনায় প্রভোস্ট অধ্যাপক আঞ্জুমান আরার কাছে বক্তব্য চাইতে গেলে সাংবাদিক ফাতেমা আলী অপেশাদার ও অশোভন আচরণের শিকার হন। পরে সংবাদ প্রকাশের পর গভীর রাতে তাকে শোকজ লেটার পাঠানো হয় এবং হল শৃঙ্খলা কমিটির সভায় হাজির হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। প্রেস ক্লাব এ ঘটনাকে ‘প্রকাশ্য ভীতিপ্রদর্শন, মানসিক নিপীড়ন ও হয়রানির জঘন্য উদাহরণ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, একজন সাংবাদিককে ভয় দেখানো, হয়রানি করা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগঠিত হামলার শিকার করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক নৈতিকতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থি। নারী সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য চরম হুমকি বলেও উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবাদ লিপিতে জবি প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবি জানায় সংগঠনটি। দাবিগুলো হলো- সাংবাদিক ফাতেমা আলীর প্রতি ভীতি প্রদর্শন, হয়রানি ও সাইবার বুলিংয়ের ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে অবিলম্বে শনাক্ত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;  সংশ্লিষ্ট প্রাধ্যক্ষের আচরণের বিষয়ে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;  বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তা, মর্যাদা ও পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে; নারী সাংবাদিকদের প্রতি হয়রানি, হুমকি, মানহানি ও সাইবার সহিংসতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বই চ র র ঘটন ব তর ক প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের সবচেয়ে চাকচিক্যপূর্ণ এলাকায় একটি যৌন ব্যবসা এবং অসহায় নারীদের শোষণ–নির্যাতনের মূল হোতাকে চিহ্নিত করেছে বিবিসির অনুসন্ধানী দল।

চার্লস মোসিগা নামের ওই ব্যক্তি পরিচয়-গোপনকারী বিবিসি প্রতিবেদককে বলেন, এক সেক্স পার্টির জন্য তিনি ন্যূনতম এক হাজার ডলার দরে নারী সরবরাহ করতে পারবেন। তাঁরা অনেকেই গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে ‘প্রায় সবকিছুই’ করতে পারবে। মোসিগা লন্ডন শহরের সবেক একজন বাসচালক হিসেবে নিজের পরিচয় দেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের উন্মত্ত ‘সেক্স পার্টি’ নিয়ে বহু বছর ধরেই নানা কথা চালু আছে। টিকটকে এ-সংক্রান্ত একটি হ্যাশট্যাগ ৪৫ কোটি বারেরও বেশি দেখা হয়েছে। এটা ধরে অনেক ব্যঙ্গাত্মক ও জল্পনামূলক তথাকথিত অনুসন্ধানী কনটেন্ট ছড়িয়েছে। সেগুলোতে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে অর্থলোভী কিছু নারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারের ভূমিকা নেন এবং তাঁরা গোপনে মানুষের যথেচ্ছ যৌন চাহিদা মিটিয়ে বিলাসী জীবনযাপনের খরচ জোগান।

বিবিসির অনুসন্ধানী দলকে বলা হয়েছে, বাস্তবতা আরও ভয়াবহ।

উগান্ডার কয়েকজন তরুণী বিবিসিকে বলেছেন, তাঁরা কখনো ভাবেননি, মোসিগার অধীনে তাঁদের যৌনকর্ম করতে হবে। কেউ কেউ ভেবেছিলেন, তাঁরা সুপার মার্কেট বা হোটেলের মতো কোনো জায়গায় কাজ করার জন্য আরব আমিরাতে যাচ্ছেন।

‘মিয়া’ (ছদ্মনাম) বলেন, মোসিগার আনা গ্রাহকদের অন্তত একজন নিয়মিত মেয়েদের গায়ে মলত্যাগ করতে চান। তিনি বলেন, মোসিগার চক্র তাঁকে ফাঁদে ফেলে এ কাজে জড়িয়েছে।

মোসিগা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি শুধু বাড়িওয়ালাদের মাধ্যমে নারীদের বাসা পেতে সহায়তা করেন। আর তাঁরা মোসিগার সঙ্গে বিভিন্ন পার্টিতে যান, কারণ তাঁর সঙ্গে দুবাইয়ের অনেক ধনাঢ্য মানুষের যোগাযোগ আছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে উন্মত্ত ‘সেক্স পার্টি’ নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে। অভিযোগ আছে, অনেক অর্থলিপ্সু নারী ইনফ্লুয়েন্সার তাঁদের বিলাসী জীবনযাপনের জন্য গোপনে অর্থের জোগান মেটাতে অস্বাভাবিক ও বিকৃত যৌন চাহিদা মেটানোর কাজও করছেন।

অনুসন্ধানে বিবিসি আরও জানতে পেরেছে, মোসিগার সঙ্গে যোগসূত্র থাকা দুই নারী দুবাইয়ের সুউচ্চ ভবন থেকে পড়ে মারা গেছেন। যদিও তাঁদের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের স্বজন ও বন্ধুরা মনে করেন, পুলিশের আরও তদন্ত করা উচিত ছিল।

মোসিগা বলেন, ঘটনা দুটি দুবাই পুলিশ তদন্ত করেছে। এ–সংক্রান্ত তথ্যের জন্য তিনি বিবিসিকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু পুলিশ বিবিসির অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

মারা যাওয়া দুই নারীর একজন মোনিক কারুঙ্গি। তিনি পশ্চিম উগান্ডা থেকে দুবাইয়ে আসেন। মোসিগার জন্য কাজ করা আরও অনেক মেয়ের সঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে মোনিকের ঠাঁই হয়।

একজন নারী বলেন, তিনি ২০২২ সালে মোনিকের সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটে থেকেছেন। বিবিসি এই নারীর নাম দিয়েছে কেইরা।

কেইরা বলেন, ‘(মোসিগার) ওই ফ্ল্যাটটি ছিল বাজারের মতো। সেখানে প্রায় ৫০টি মেয়ে একসঙ্গে থাকত। সে (মোনিক) খুশি ছিল না। কারণ, সে যা চেয়েছিল, তা পায়নি।’

মোনিকের বোন রিতা বলেন, একটি সুপার মার্কেটে কাজ করবেন ভেবে তাঁর বোন দুবাই গিয়েছিলেন।

মোনিকের সঙ্গে মিয়ারও পরিচয় ছিল। বিবিসিকে মিয়া বলেন, ‘আমি বাড়ি ফিরেতে চাইলে তিনি (মোসিগা) সহিংস হয়ে ওঠেন। তিনি জানান, দুবাই আসার পর মোসিগা তাঁকে বলেছিলেন—তিনি ইতিমধ্যে মিয়ার কাছে ২ হাজার ৭১১ ডলার পান। ঠিক সময়ে পরিশোধ না করলে দুই সপ্তাহের মধ্যে এটা দ্বিগুণ হবে।

মিয়া বলেন, ‘বিমান টিকিট, ভিসা খরচ, বাসা ভাড়া, খাবার খরচ মেটাতে তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। পুরুষদের কাছে অনুনয় করতে হবে, যাতে তারা কাছে আসে ও শয্যাসঙ্গী হয়।’

ট্রয়ের দাবি, মোসিগা এত দিন এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে পেরেছেন কারণ, তিনি আনুষ্ঠানিক কাগজপত্রে কখনো নিজের নাম ব্যবহার করতেন না। গাড়িচালক, গাড়ি ও বাড়ি ভাড়াসহ সব কাজে ট্রয় এবং তাঁর মতো অন্যদের নাম ব্যবহার করা হতো।

মাইকেল (ছদ্মনাম) নামে মোনিকের এক আত্মীয় বিবিসিকে বলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মোসিগার কাছে মোনিকের প্রায় ২৭ হাজার ডলার ঋণ জমে গিয়েছিল। মোনিকে প্রায়ই মাইকেলকে কাঁদতে কাঁদতে ভয়েস নোট পাঠিয়ে এ কথাগুলো বলত।

মিয়া বলেন, তাঁদের গ্রাহকদের বেশির ভাগই ছিলেন ইউরোপের শ্বেতাঙ্গ মানুষ। এদের অনেকের চরম বিকৃত যৌন চাহিদা ছিল। নিচু গলায় তিনি বলেন, একজন গ্রাহক মেয়েদের ওপর মলত্যাগ করে সেটা খেতে বলতেন।

লেক্সি নামের (ছদ্মনাম) আরেক নারী বলেন, অন্য একটি চক্রের ফাঁদে পড়ে তিনি এই কাজে জড়িয়েছেন। তিনিও বলেন, গ্রাহকেরা প্রায়ই এমনটা করতে চাইতেন। একজন গ্রাহকের অমানুষিক ঘৃণাপূর্ণ বিকৃত চাহিদা বর্ণনা করেন তিনি। বলেন, এমন অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর বিশ্বাস জন্মেছে যে, এসব চরম বিকৃত আকাঙ্ক্ষার মধ্যে জাতিবিদ্বেষ বা বর্ণবিদ্বেষের ব্যাপার থাকতে পারে।

লেক্সি বলেন, ‘প্রতিবার যখন আমি বলতাম, এগুলো করতে চাই না, তাঁরা আরও মজা পেত। তাঁরা এমন কাউকে চাইত, যে কিনা কাঁদবে, চিৎকার করবে ও পালাতে চাইবে। এমন কেউ, যে হবে কৃষ্ণাঙ্গ।’

লেক্সি বলেন, তিনি পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে বলেছিল, ‘তোমরা আফ্রিকানরা একে অপরের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছ। আমরা এতে জড়াতে চাই না। তারপর তাঁরা ফোন কেটে দেয়।

মোনিকের পরিবার তাঁর লাশ পায়নি। বিবিসির অনুসন্ধান বলছে, তাঁকে দুবাইয়ে আলকুসাইস কবরস্থানের ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ অংশে দাফন করা হয়েছে।

দুবাই পুলিশের কাছে বিবিসি এই অভিযোগ তুলে ধরলেও তারা কোনো উত্তর দেয়নি।

পরবর্তী সময়ে অবশ্য লেক্সি উগান্ডায় ফিরতে সক্ষম হন। বর্তমানে তিনি এ ধরনের চক্রের ফাঁদে পড়া নারীদের উদ্ধার ও সহায়তায় কাজ করছেন।

চার্লস মোসিগাকে খুঁজে পাওয়ার কাজটি সহজ ছিল না। বিবিসির অনুসন্ধানকারী দলটি শুধু অনলাইনে তাঁর একটি ছবি পেয়েছিল। সেটিও ছিল পেছন থেকে তোলা, তা ছাড়া, নানা নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন মোসিগা।

উন্মুক্ত উৎস থেকে নেওয়া তথ্য, ছদ্মবেশে অনুসন্ধান এবং মোসিগা চক্রের এক সাবেক সদস্যের দেওয়া তথ্য—সব মিলিয়ে অনুসন্ধানকারী দল তাঁকে দুবাইয়ের মধ্যবিত্ত এলাকা জুমেইরাহতে খুঁজে পায়।

আরও পড়ুনদুবাইয়ের যৌনপল্লি থেকে তরুণী উদ্ধার, আসামিদের অব্যাহতি চায় পুলিশ২৭ মার্চ ২০২২

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছিল, মোসিগার ব্যবসা মূলত অবমাননাকর যৌনকর্মের জন্য নারীদের সরবরাহ করা। বিষয়টি যাচাই করতে অনুসন্ধানী দল একজন ছদ্মবেশী প্রতিবেদককে পাঠায়। তিনি নিজেকে একজন অনুষ্ঠান আয়োজক হিসেবে পরিচয় দেন, যিনি বিলাসবহুল পার্টিগুলোর জন্য নারী খুঁজছেন।

অনুসন্ধানকারী দল যখন মোসিগার সঙ্গে তাঁর ব্যবসার বিষয়ে কথা বলছিল, তখন তাঁকে শান্ত ও আত্মবিশ্বাসী বলে মনে হচ্ছিল।

মোসিগা বলেন, ‘আমাদের কাছে ২৫ জনের মতো মেয়ে আছে। এদের অনেকেই মুক্তমনা…তারা প্রায় সবকিছুই করতে পারে।’

খরচের ব্যাপারে মোসিগা বলেন, রাতপ্রতি একেকজনের জন্য এক হাজার ডলার থেকে শুরু। তবে অস্বাভাবিক কাজের জন্য বেশি অর্থ দিতে হবে। তিনি বিবিসির রিপোর্টারকে একটা নমুনা রাতের দাওয়াত দেন।

মোসিগা বলেন, এই ব্যবসা তাঁর অতি প্রিয়। লটারিতে ১০ লাখ পাউন্ড জিতলেও তিনি এ ব্যবসা চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, ‘এটি এখন আমারই একটি অংশ হয়ে গেছে।’

ট্রয় নামের এক ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি মোসিগার চক্রের অপারেশনস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। চক্রটি কীভাবে পরিচালিত হয় সে বিষয়ে তিনি বিবিসির অনুসন্ধানী দলকে তথ্য দেন।

ট্রয় বলেন, মোসিগা বিভিন্ন নৈশক্লাবের নিরাপত্তাকর্মীদের টাকা দেন, যাতে তাঁর পাঠানো নারীরা ভেতরে ঢুকে গ্রাহক খুঁজতে পারে।

আরও পড়ুনদুবাইয়ে ধর্ষণের শিকার নরওয়েজীয় নারীর কারাদণ্ড২১ জুলাই ২০১৩

ট্রয়ের দাবি, মোসিগা এত দিন এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে পেরেছেন কারণ, তিনি আনুষ্ঠানিক কাগজপত্রে কখনো নিজের নাম ব্যবহার করতেন না। গাড়িচালক, গাড়ি ও বাড়ি ভাড়াসহ সব কাজে ট্রয় এবং তাঁর মতো অন্যদের নাম ব্যবহার করা হতো।

২০২২ সালের ২৭ এপ্রিলে দুবাইয়ে প্রবাসীদের মধ্যে জনপ্রিয় আবাসিক এলাকা আল বারশায় একটি সেলফি তুলে পোস্ট করেছিলেন মোনিক। এর চারদিন পরই তিনি মারা যান। দুবাইয়ে আসার চার মাসের মাথায় তাঁর মৃত্যু হয়।

মিয়ার বলছেন, মোনিক যত দিন ছিলেন, মোসিগার সঙ্গে তাঁর নিয়মিত ঝগড়া হতে দেখেছেন। মোনিক মোসিগার চাহিদা পূরণ করতে অস্বীকার করছিলেন এবং চক্র থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজে পেয়েছিল।

মিয়া বলেন, মোনিক একটি চাকরি পেয়েছিলেন। তিনি উচ্ছ্বসিত ছিলেন। ভেবেছিলেন, অবশেষে ঘৃণ্য জীবন থেকে মুক্তি পাবেন এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।

মোসিগার ভাড়া করা ফ্ল্যাট ছেড়ে প্রায় ১০ মিনিট হাঁটা দূরত্বে অন্য একটি ফ্ল্যাটে চলে যান মোনিক। ২০২২ সালের ১ মে ওই বাসার বারান্দা থেকে তিনি নিচে পড়ে যান।

মোনিকের আত্মীয় মাইকেল তখন দুবাইতে ছিলেন। তিনি বলেন, মোনিকের মৃত্যুর কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশ তাঁকে বলেছিল, তারা তদন্ত বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ, মোনিকের বাসা থেকে মাদক ও অ্যালকোহল পাওয়া গেছে। বারান্দায় শুধু মোনিকের আঙুলের ছাপ ছিল।

আরও পড়ুনদুবাইয়ের ড্যান্স বারে বাংলাদেশ থেকে তরুণী পাচার, বাধ্য করা হচ্ছে যৌন পেশায়২২ নভেম্বর ২০১৯

মাইকেল হাসপাতাল থেকে মোনিকের মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু এতে উল্লেখ ছিল না, তিনি কীভাবে মারা গেছেন।

মোনিকের পরিবারের জন্য এখন শোকের সঙ্গে ভয় মিলেমিশে গেছে। ভয় অন্য পরিবারগুলোর জন্য, যারা একই ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

বিবিসি চার্লস অ্যাবি মোসিগার কাছে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো সম্পর্কে জানতে চায়। তিনি অবৈধ যৌন ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এগুলো সব মিথ্যা।’

এদিকে মোনিকের পরিবার তাঁর লাশ পায়নি। বিবিসির অনুসন্ধান বলছে, তাঁকে দুবাইয়ে আলকুসাইস কবরস্থানের ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ অংশে দাফন করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • মুসলিম পরিবারে শিশুর নিরাপত্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের