নেপালের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কি কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহ?
Published: 9th, September 2025 GMT
বিক্ষোভের কারণে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এই মুহূর্তে দেশটির বাসিন্দাদের দৃষ্টি রাজধানী কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহের দিকে, যিনি ব্যালেন নামে পরিচিত। অনেকে অনলাইন প্রচারণার মাধ্যমে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য তাকে উৎসাহিত করছেন। খবর এনডিটিভি অনলাইন।
সরকার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব এবং এক্স সহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার পর নেপালে তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার পুলিশি অভিযানে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত এবং দেশব্যাপী শত শত আহত হন। এ ঘটনার পর অস্থিরতা মারাত্মক আকার ধারণ করে।
এই বিক্ষোভের মধ্যে র্যাপার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া বলেন্দ্র শাহ বিক্ষোভকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। একটি ফেসবুক পোস্টে, কাঠমান্ডুর জানিয়েছেন, আয়োজকদের নির্ধারিত বয়সসীমার কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেনন। তিনি বিশ্বাস করেন যে তাদের কণ্ঠস্বর শোনা প্রয়োজন।
শাহ লিখেছেন, "এই সমাবেশটি স্পষ্টতই জেন-জি এর একটি স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন, যাদের কাছে আমিও বৃদ্ধ বলে মনে হতে পারি। আমি তাদের আকাঙ্ক্ষা, উদ্দেশ্য এবং চিন্তাভাবনা বুঝতে চাই। রাজনৈতিক দল, নেতা, কর্মী, আইন প্রণেতা এবং প্রচারকদের তাদের নিজস্ব স্বার্থে এই সমাবেশকে ব্যবহার করার জন্য অতিরিক্ত বুদ্ধিমত্তা থাকা উচিত নয়।”
মেয়র জানিয়েছেন, যদিও তিনি শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকবেন না, তার ‘পূর্ণ সমর্থন’ তরুণদের সাথে রয়েছে।
বালেন্দ্র শাহ ১৯৯০ সালে কাঠমান্ডুতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নেপালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যয়ন করেন এবং পরে ভারতের বিশ্বেশ্বরায়া টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
রাজনীতিতে প্রবেশের আগে শাহ নেপালের আন্ডারগ্রাউন্ড হিপ-হপ জগতে একজন র্যাপার এবং গীতিকার হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। প্রায়শই তার সঙ্গীতের মাধ্যমে দুর্নীতি এবং বৈষম্যের মতো বিষয়গুলো উত্থাপন করতেন তিনি।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাবাকে দেওয়া কথা রেখেছেন, ৬৯ বছর বয়সে করেছেন পিএইচডি
সময়টা ১৯৯৯ সাল। মরিশাস থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পাড়ি জমান নিদ্যানন্দ রায়া। উদ্দেশ্য ছিল স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করা। বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, জীবনে যত দিন পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন, তত দিন পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন তিনি।
এরপর দুই দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। বাবাকে দেওয়া সেই কথা রেখেছেন নিদ্যানন্দ। এখন তাঁর বয়স ৬৯ বছর। এ বয়সে এসে মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটি থেকে সামাজিক নীতি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। নামের শুরুতে ‘ড.’ শব্দটি যুক্ত করেছেন।
এ অর্জন কেমন লাগছে? প্রশ্নের জবাবে নিদ্যানন্দের চটজলদি জবাব, ‘তেমন কিছুই না। এটা জীবনের একটা অর্জন মাত্র।’
বিবিসি রেডিও লন্ডনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে নিদ্যানন্দ বলেন, আমি বেশ গরিব পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন নাপিত। আর মা পরিচারিকার কাজ করতেন। আমি বন থেকে কাঠ, ফলমূল সংগ্রহ করতাম। মা–বাবার বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আমাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। এসব কারণই আমাকে শৃঙ্খলাবোধ আর জ্ঞান অর্জনের পথে উদ্বুদ্ধ করেছিল।ড. নিদ্যানন্দ এখন লন্ডনের এনফিল্ডে বসবাস করেন। পড়াশোনার জন্যই দেশ ছেড়েছিলেন। বলছিলেন, নিজ দেশে পড়াশোনার সুযোগ সীমিত ছিল। তাই দেশ ছেড়ে এসেছিলেন।
বিবিসি রেডিও লন্ডনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিদ্যানন্দ বলেন, ‘আমি বেশ গরিব পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন নাপিত। আর মা পরিচারিকার কাজ করতেন। আমি বন থেকে কাঠ ও ফলমূল সংগ্রহ করতাম। মা–বাবার বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় আমাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। এসব কারণই আমাকে শৃঙ্খলাবোধ আর জ্ঞান অর্জনের পথে উদ্বুদ্ধ করেছিল।’
যুক্তরাজ্যকে ‘সুযোগের ভূখণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করে নিদ্যানন্দ বলেন, ‘এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে আপনি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন।’
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর নিদ্যানন্দ সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার প্রস্তাব পান। কিন্তু সেখানে কাজের সুযোগ না থাকায় সেটা করতে পারেননি।
মাঝের সময়টায় যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে নিদ্যানন্দকে। দীর্ঘ সময় পরিবারের খরচ চালাতে স্কুলশিক্ষক স্ত্রী ল্যাকসোমিকে সহায়তা করতে পারেননি তিনি। বরং স্ত্রীই তখন পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। নিদ্যানন্দ বলেন, ‘তখন আমাকে চাকরি খুঁজে বের করতে হয়েছিল। আমাকে স্থায়ী হতে হয়েছিল। আমাকে সবকিছু করতে হয়েছিল।’
‘এখানে আসার পর আমি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। পরে আমাকে একজন পরিচর্যাকারী হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে,’ বলেন নিদ্যানন্দ।
নিজের পিএইচডি গবেষণায় নিদ্যানন্দ মৌরিতানিয়ার ক্রেওলের ফরাসিভাষী সম্প্রদায়ের মানুষদের ঔপনিবেশিক–পরবর্তী অভিজ্ঞতার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিনোর কফম্যানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এই শিক্ষক বলেন, আমি তাঁর সাফল্যে রোমাঞ্চিত। আশা করব, তিনি তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা চালিয়ে যাবেন।নিজের পিএইচডি গবেষণায় নিদ্যানন্দ মৌরিতানিয়ার ক্রেওলের ফরাসিভাষী সম্প্রদায়ের মানুষদের ঔপনিবেশিক–পরবর্তী অভিজ্ঞতার বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিনোর কফম্যানের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন নিদ্যানন্দ। এই শিক্ষক বলেন, ‘আমি তাঁর সাফল্যে রোমাঞ্চিত। আশা করব, তিনি তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা চালিয়ে যাবেন।’
জীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিষয়ে বলতে গিয়ে কয়েক দশক আগে বাবাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করেন নিদ্যানন্দ। তিনি বলেন, ‘আমি বাবাকে দেওয়া কথা রেখেছি। বাবা, আমি তোমাকে গর্বিত করেছি।’