যশোরে ইরানি দম্পতিকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হেনস্থা
Published: 9th, September 2025 GMT
ইরানি নাগরিক ফায়েজ ও তার স্ত্রী ঘোলির বিরুদ্ধে ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ ব্যবহার করে ১২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন একটি গ্যাস বিপণন সংস্থার দুই কর্মী।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে যশোর শহরতলীর খয়েরতলা পেট্রোল পাম্পের সামনে দুই বিদেশিকে পেয়ে গ্যাস বিপণন প্রতিষ্ঠানের কর্মী আনারুল ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর তাদের ধরে ফেলেন। এরপর লোকজন উপস্থিত হলে ইরানিরা তাদের কাছ থেকে সোনার হার ও আংটি ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
আরো পড়ুন:
৩ চোর ছেড়ে দিল পুলিশ, বাড়ি ঘেরাও
ছাত্রদল নেতার চুরি যাওয়া মোবাইল থেকে আপত্তিকর পোস্ট
খবর পেয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এরপর দুই বিদেশি নাগরিকসহ চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
যশোরে আফিল গ্রুপের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ওয়াহেদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা ওমেরা নামে এলপি গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটর। আমাদের শ্রমিক আনারুল ও ড্রাইভার জাহাঙ্গীর বিভিন্ন দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিপণন করেন। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে যশোর সদরের পুলেরহাট এলাকায় দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়ার সময় ওই ইরানি নাগরিকরা তাদের ভাষায় এবং ইঙ্গিতে আনারুলকে কাছে ডাকেন। এরপর একটি পাঁচশত টাকার নোট দেখিয়ে সেটি আসল কি-না জানতে চান। ওই সময় টাকা আনারুল তার নাকের সামনে নিলে তিনি আকৃষ্ট হন। তারপর তারা আনারুলের কাছে ওই ধরনের আর নোট আছে কি-না দেখতে চান। আনারুল তার কাছে থাকা পাঁচশত টাকার নোটের বান্ডিল তাদের কাছে দেন। পরে বান্ডিলটি ফিরিয়ে দেওয়ার পর আনারুল অফিসে এসে টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার সময় দেখেন, বান্ডিলে থাকা ২৪টি নোট, অর্থাৎ ১২ হাজার টাকা নেই।’’
হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ওয়াহেদুল ইসলাম বলেন, ‘‘সেদিন তাদের বেতন দেওয়ার কথা ছিল। আমি তাদের বেতনের থেকে ৬ হাজার করে ১২ হাজার টাকা কেটে পরিশোধ করি।’’
ওয়াহেদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আজ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) খয়েরতলা পেট্রোলপাম্পের পাশে একটি দোকানে মালামাল দেওয়ার সময় ওই বিদেশি নাগরিকরা ফের আনারুলকে ডাকেন এবং টাকা ভাংতি চান। মুখ থেকে মাস্ক সরালে আনারুল তাদের চিনতে পারেন এবং সেই সময় ওই পুরুষ বিদেশির কলার ধরে চিৎকার করতে থাকেন। স্থানীয়রা এগিয়ে এলে ইরানিরা আনারুলকে ‘ছিনতাইকারী’ হিসেবে আখ্যা দেন এবং তাদের কাছ থেকে সোনার হার ও আঙটি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন। পরে সেখানে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।’’
খবর পেয়ে বিকেল ৫টার দিকে যশোর কোতোয়ালি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা বিদেশি নাগরিক দুইজনসহ চারজনকে থানায় নিয়ে যায়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত খান বলেন, ‘‘উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় আমরা উভয়পক্ষকে হেফাজতে নিয়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত গুরুতর অপরাধের তেমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’’
তবে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ঢাকা/রিটন/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।