রাকসু নির্বাচন: ভিপি-জিএসসহ বিভিন্ন পদে লড়ছেন ৩২ নারী প্রার্থী
Published: 13th, September 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৩টি ও সিনেটের পাঁচটি পদের বিপরীতে লড়াই করবেন ৩২০জন।
এবারের নির্বাচনে পুরুষ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নারী শিক্ষার্থীদেরও ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় সংসদ ও সিনেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মোট ৩২ জন নারী প্রার্থী। এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়াও ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা রয়েছেন।
আরো পড়ুন:
রাকসু নির্বাচন: ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেল থেকে সড়ে দাঁড়ালেন ফাহির
রাকসু নির্বাচন: আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ৫ প্রার্থী
এর মধ্যে, ভিপি পদে একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাসিন খান (২০২০-২১)। পাশাপাশি তিনি সিনেট সদস্য পদেও লড়ছেন। জিএস পদে রয়েছেন পরমা পারমিতা (২০১৮-১৯), নুসরাত জাহান নুপুর (২০১৯-২০), আছিয়া খাতুন (২০১৯-২০) ও আফরিন জাহান (২০১৮-১৯)।
এজিএস পদে আছেন জান্নাত আরা নওশিন (২০২১-২২) ও ছাত্রদল সমর্থিত জাহিন বিশ্বাস এষা (২০২০-২১), ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ছাত্রদল সমর্থিত নার্গিস খাতুন (২০১৯-২০)।
সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আছেন সারাফ আনজুম বিভা (২০২১-২২), মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আবিদা আক্তার লাবনী (২০২১-২২), ছাত্রদল মনোনীত মোছা.
সহকারী মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন হাসনাহেনা বর্ষা (২০২০-২১), নুসরাত জাহান অহনা (২০২২-২৩), নাদিয়া হক (২০২২-২৩), জান্নাতুল ফেরদৌসি তৃষা জান্নাত (২০২০-২১), শ্রেয়সী রায় (২০২১-২২), শিবির মনোনীত সামিয়া জাহান (২০২০-২১), ফারহিন শবনম শায়ন্তি (২০২৪-২৫), নূসরাত আফরিন (২০১৯-২০) এবং ছাত্রদল সমর্থিত নূসরাত ঈষিতা (২০১৯-২০)।
সহকারী সম্পাদক (পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোছা. ইশিথা পারভিন তিথি (২০২০-২১) ও শিবির সমর্থিত মাসুমা ইসরাত মুমু (২০২২-২৩)।
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তামান্না আক্তার (২০২২-২৩), মোছা. জান্নাতুন নাঈম তুহিনা (২০১৯-২০), ইউষা জান্নাত সোহা (২০২২-২৩), রেনেসা রাত্রী (২০২০-২১) ও তাহরিমা আক্তার (২০১৮-১৯)।
এছাড়া, সিনেটের পাঁচটি পদের বিপরীতে মনোনয়ন নিয়েছেন ৬০ জন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী ৭ জন। তারা হলেন- তাসিন খান, মোছা. জান্নাতুন নাঈম তুহিনা, ইউষা জান্নাত সোহা, রেনেসা রাত্রী, পরমা পারমিতা, তাহরিমা আক্তার ও আফরীন জাহান।
সবমিলিয়ে রাকসুর আসন্ন নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের এমন অংশগ্রহণ আগে দেখা যায়নি।
শিক্ষার্থীদের মতে, এত বড় সংখ্যক নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ কেবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বৈচিত্র্যময় করছে না, বরং বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে নারীর নেতৃত্ব, নীতি নির্ধারণে অংশগ্রহণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকা ক্রমশ শক্তিশালী করে তুলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ বিষয়ক সহকারী সম্পাদক লুবনা শারমিন বলেন, “এটা আমাদের জন্য একটা বড় অর্জন। একটা বিগ রেভুলুশন ঘটেছে এবার। আমি এটাকে খুবই পজিটিভভাবে দেখছি। সবরকম ভয়ভীতি কাটিয়ে তারা যে অংশগ্রহণ করেছে এটাই অনেক। আমরা আশাবাদী সামনে আরো নারী শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবে।”
জিএস প্রার্থী নুসরাত জাহান নুপুর বলেন, “রাকসু যেহেতু ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে পরিচালিত একটি গণতান্ত্রিক মঞ্চ, তাই শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তার লক্ষ্য হলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং ছাত্রবান্ধব পরিবেশে গড়ে তোলা।”
ভিপি প্রার্থী তাসিন খান বলেন, “তফসিল ঘোষণার আগেই সাইবার টিম গঠনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সাইবার বুলিংয়ের কারণে অনেক নারী শিক্ষার্থী আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি সাইবার টিম গঠন করলেও তাদের কার্যক্রম এখনো স্পষ্ট নয়। এতে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে, যা হতাশাজনক।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সমর থ ত ছ ত রদল করছ ন গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অভিযুক্তরা এর আগে শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী হিসেবে শেয়ার কারসাজিতে জড়িত ছিলেন এবং তাদেরকে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
শেয়ার কারসাজির কোম্পানিগুলো হলো- গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স পিএলসি, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পিপলস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তথ্য মতে, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে তারা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই সময়ে অর্থাৎ ১০ দিনে কোম্পানির শেয়ারের দাম বহুগুণ বেড়ে যায়। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে দীর্ঘদিন পর কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
পুঁজিবাজারে ওই সময়কালে গুঞ্জন ছিল- গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানিটির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে ৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়ানোর দায়ে ৩ ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মো. সাইফ উল্লাহকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা, মো. এ.জি. মাহমুদ ও মো. সাইফ উল্লাহকে যৌথভাবে ৪২ লাখ টাকা ও এস. এম. মোতাহারুল জানানকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে অভিযুক্তদের মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
কারসাজিতে জড়িতদের পরিচিতি
স্বল্প সময়ের মধ্যে ৫টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করে মো. সাইফ উল্লাহ, মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানান বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ শেয়ার কারসাজিতে নেতৃত্ব দেন শেয়ার ব্যবসায়ী মো. সাইফ উল্লাহ। আর তাকে সহযোগিতা করেন শেয়ার ব্যবসায়ী মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানান। এর মধ্যে মো. সাইফ উল্লাহর শ্যালক মো. এ.জি. মাহমুদ। আর এস. এম. মোতাহারুল জানান তাদের সহযোগী। সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স লিমিটেডে অভিযুক্ত ৩ ব্যক্তির বিও হিসাব রয়েছে। তারা সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ায়। তারা সবাই সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও বিশিষ্ট শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুর সহযোগী।
এর আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্ব থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে শেয়ার কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে ১৫ লাখ টাকা ও মো. এ.জি. মাহমুদকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতেও জড়িত থাকার অভিযোগে হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, মো. সাইফ উল্লাহকে ৫০ লাখ টাকা ও মো. এ.জি. মাহমুদকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়।
ওই বছরের মে মাসে ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার নিয়ে শেয়ার কারসাজির জন্য মো. সাইফ উল্লাহকে ৩০ লাখ টাকা এবং মো. এ.জি. মাহমুদকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
একই বছরের আগস্টে জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে মো. সাইফ উল্লাহকে ৪০ লাখ টাকা এবং মো. এ.জি. মাহমুদ ও এস. এম. মোতাহারুল জানানকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম
২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৩.৯২ শতাংশ, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ২৫.২৮ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ৩৪.৬৫ শতাংশ, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ৩৭.৩৫ শতাংশ ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার ১৪.৭৪ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করতে স্বল্প সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ায় কারসাজি চক্র। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির তদন্তে দীর্ঘদিন পর অবশেষে তা প্রমাণিত হয়েছে।
বিএসইসির সিদ্ধান্ত
কমিশন জানায়, অভিযুক্তরা ২০২১ সালের ১৯ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে কারসাজি করে অভিযুক্তরা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি করে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং এ কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থি। তাই অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জরিমানা ধার্য করা হয়।
ঢাকা/এনটি/ইভা