গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও বিচার ত্বরান্বিত করতে নির্বাচিত সরকার দরকার: দুদু
Published: 14th, September 2025 GMT
দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং শেখ হাসিনার বিচার ত্বরান্বিত করতে নির্বাচিত সরকার দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটভুক্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
আরো পড়ুন:
সিলেটে পাথর লুটের ঘটনায় পদ স্থগিত বিএনপি নেতা সাহাব গ্রেপ্তার
বিএনপি ক্ষমতায় এলে ফের খাল খনন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে: সালাউদ্দিন টুকু
দুদু বলেন, “আগামী নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা পাবে এবং শেখ হাসিনার বিচার আরো ত্বরান্বিত হবে। এছাড়া বিদেশে যে টাকা পাচার করা হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই ভূমিকাগুলো একমাত্র পালন করতে পারে নির্বাচিত সরকার।”
তিনি বলেন, “আমি মনে করি বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত নির্বাচন কমিশন আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে যে নির্বাচনের কথা বলেছে, যে রোডম্যাপ দিয়েছে, সে অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। নির্বাচন হলে আমি মনে করি বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালনকারী দল বিএনপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।ফ্যাসিবাদী হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য দলও ভূমিকা পালন করেছে।”
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “হাসিনাতন্ত্রের পতন হয়েছে প্রায় এক বছরের অধিককাল; কিন্তু প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের উত্তরণের যে বিষয়টি ছিল, সেটি এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণ হয়নি। আমরা ১৫ থেকে ১৬ বছরে ৩টি নির্বাচন দেখেছি। তৎকালীন দাবিদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছাধীনে তার নির্বাচন কমিশনে এসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যে নির্বাচন কোনোভাবেই গণতন্ত্রের পক্ষে তো যায়নি, বরঞ্চ গণতন্ত্রবিনাশী ভূমিকা পালন করেছে।”
তিনি বলেন, “স্বৈরাচারের পতনের পর এখন মানুষ তার পছন্দের প্রার্থী, মার্কা এবং দলের পক্ষে ভোট দিতে চায়। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয়-সরকার তার এক বছরের অধিককালেও এই দায়িত্বটি এখনো পালন করতে পারেনি। আবার কোনো কোনো মহল নানান বক্তব্য ও কর্মসূচি দিচ্ছে এবং বলছে, সেটি (বিভিন্ন দাবি-দাওয়া) আগে সম্পূর্ণ করতে হবে। এই দাবি দিয়ে তারা নির্বাচনের বিরোধিতা করছে।”
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “আমি মনে করি কোনো রাজনৈতিক দল তার কর্মসূচি ভালোবাসে বলেই সেই দল করে। কিন্তু সেই কর্মসূচি যদি প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তাহলে জনগণের কাছে গিয়ে সেই ম্যান্ডেট নিয়ে আসতে হবে এবং সরকার গঠন করতে হবে। তারপরে তারা নিজেদের কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার পর কখনো জাতীয় সংসদে একটা সিটও পায়নি। এখন তারাও বলছে, তাদের মতো করে সরকারকে কাজ করতে হবে। এটা হাস্যকর, এটা চাপিয়ে দেওয়ার মতো একটা ঘটনা।”
জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে কৃষক দলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এস কে সাদি, জাগপার কেন্দ্রীয় নেতা আওলাদ হোসেন শিল্পীসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মার চরে জোড়া খুনের ঘটনায় ‘কাকন বাহিনীর’ সদস্যদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
পদ্মার চরে দুজনকে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার নিহতের বাবা-মাসহ স্বজনেরা হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে সেখানে অঝোরে কেঁদেছেন। এ সময় অন্যরাও চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি।
আজ শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের খানপুর বাজারে ‘হতাহতদের পরিবার ও এলাকাবাসী’র ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। আমান মণ্ডল ও নাজমুল মণ্ডলকে গুলি করে হত্যাসহ মুনতাজ মণ্ডল ও রাকিব হোসেনকে আহত করার প্রতিবাদ এবং দোষীদের বিচার দাবিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনের ব্যানারের এক পাশে নিহত-আহত ব্যক্তিদের ছবি, আরেক পাশে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনের ছবি সাঁটিয়ে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান তাঁরা। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার না করা হলে তাঁরা কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
আরও পড়ুনদুজনকে হত্যার ঘটনায় ‘কাকন বাহিনীর’ কাকনকে প্রধান আসামি করে মামলা২৯ অক্টোবর ২০২৫বাঘা উপজেলার নিচ খানপুর গ্রামের নিহত আমান মণ্ডলের বাবা মিনাজ মণ্ডল জানান, দিনদুপুরে গুলি করে তাঁর ছেলেসহ দুজনকে গুলি করে হত্যা করার পরও আসামিরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের স্বজনেরাও ঘুরে বেড়াচ্ছে বুক ফুলিয়ে। প্রশাসনকে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেনের ভাষ্য, হত্যাকাণ্ডের ৫ দিন পার হলেও মূল আসামিদের ধরতে না পারা রহস্যজনক। খানপুর গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ মণ্ডল বলেন, হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করলে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার করা যাবে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার আরেক যুবক নাজমুলের বাবা শুকুর মণ্ডল মানববন্ধনে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে আর কিছু বলতে পারেননি। তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন।
গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজশাহীর বাঘা ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তের ১৪ হাজার মাঠ নামে পরিচিত চাকলার চর এলাকায় কাশবনখেত নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন আমান মণ্ডল, নাজমুল মণ্ডল (২৬), মুনতাজ মণ্ডল (৩২) ও রাকিব হোসেন (১৮)। এর মধ্যে আমান ও নাজমুল মারা যান। অপর দুজন রামেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
মুনতাজ মণ্ডলের পিতা চান মণ্ডল বলেন, নদীভাঙনের শিকার হয়ে তাঁরা বর্তমানে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নিচ খানপুর গ্রামে বসবাস করছেন। চাকলার চর এলাকায় তাঁদের পৈতৃক জমি রয়েছে। সেই জমিতে তাঁরা কাশবনের খড় কাটছিলেন। কথিত ‘কাকন বাহিনী’র লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সেই জমি দখলে নিতে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে।
এ ঘটনায় বাহিনীর প্রধান দৌলতপুর থানার মাঝদিয়াড় বৈরাগী চরের হাসানুজ্জামান ওরফে কাকন ইঞ্জিনিয়ারকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ২০–৩০ জনকে আসামি করে মিনাজ মণ্ডল দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পরবর্তী সময় পুলিশ শটগানের কার্তুজের ৫৫টি খালি খোসা ও ১৫টি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে।
এদিকে ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর অনুমান ১২টার সময় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা এলাকার পদ্মা নদীতে ভাসমান অবস্থায় লিটন ঘোষ (৩০) নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। লিটন ঘোষ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার রায়টা ঘোষপাড়া গ্রামের জামরুল ঘোষের ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী লক্ষ্মীকুণ্ডা নৌ পুলিশ ক্যাম্পের (ইনচার্জ) এসআই শফিউদ্দিন বলেন, তাঁর শরীরে অসংখ্য জখমের চিহ্ন ছিল। সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে লিটনও নিখোঁজ ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, দৌলতপুর-বাঘা সীমান্তে চর দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সময় তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ মুঠোফোনে বলেন, এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।
আরও পড়ুনকথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল১১ ঘণ্টা আগে