খালি গায়ে নিজের কার্যালয়ের সামনে বসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সম্বোধন করে চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন। আবার নিজ কার্যালয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে গানের সুরে সুরে বলছেন মাদক গ্রহণের কথা। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসলাম খানের এমন কয়েকটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তার এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে অনেকেই সমালোচনায় মেতে উঠেছেন।

মো.

আসলাম খান নামের ওই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলায়। ৯ অক্টোবর তিনি বান্দরবানের থানচি উপজেলা থেকে বদলি হয়ে সন্দ্বীপে যোগদান করেছেন।

গানে গানে মাদক গ্রহণের কথা বলার যে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি নওশাদ আকরাম নামের স্থানীয় এক সংবাদকর্মীকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ধারণ করা। নওশাদ বলেন, তিনি ২৩ অক্টোবর কিছু অভিযোগের বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন। অনুমতি নিয়েই সাক্ষাৎকারের ভিডিও ধারণ হচ্ছিল। কিন্তু ২০ মিনিটের সাক্ষাৎকারে অভিযোগের জবাব না দিয়ে অসংলগ্ন নানা কথাবার্তা বলে গেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা। এরই এক ফাঁকে তিনি সুরে সুরে মাদক গ্রহণের কথা বলেন।

ইউএনওকে সম্বোধন করে চিৎকার-চেঁচামেচির ভিডিওটি কখন ধারণ করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফেসবুকের একাধিক আইডি-পেজে ভিডিওটি শেয়ার করতে দেখা গেছে। ‘সন্দ্বীপ সংযোগ’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার মো. আসলাম খানের ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি ২২ ঘণ্টায় ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ দেখেন। পোস্টটির মন্তব্যের ঘরে ফছিহুল আলম নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘সন্দ্বীপ উপজেলা যেন এক পুনর্বাসন কেন্দ্র’। মো. আল মামুন নামে একজন লেখেন, ‘এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সন্দ্বীপে একটা ব্রিজ প্রয়োজন।’ মোস্তফা শামীম নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘শিক্ষা অফিসারের এ অবস্থা হলে, শিক্ষার কী পরিণতি হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানচিতে কর্মরত অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিসংক্রান্ত মৌলিক প্রশিক্ষণ চলাকালে এক যুগ্ম সচিবকে গালিগালাজের কারণে তাঁকে গত ১৭ জুলাই কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলা শাখা। আসলাম খান নোটিশের জবাব দেননি, ফলে সরকারি আদেশ অমান্য ও অসদাচরণের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এরপর তাঁকে সন্দ্বীপে বদলি করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানচিতে কর্মরত অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিসংক্রান্ত মৌলিক প্রশিক্ষণ চলাকালে এক যুগ্ম সচিবকে গালিগালাজের কারণে তাঁকে গত ১৭ জুলাই কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলা শাখা। আসলাম খান নোটিশের জবাব দেননি, ফলে সরকারি আদেশ অমান্য ও অসদাচরণের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এরপর তাঁকে সন্দ্বীপে বদলি করা হয়।

ভিডিও দুটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসলাম খান। এসব বদলি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় বলে জানান তিনি। মো. আসলাম খান বলেন, ‘কর্মজীবনে এটি আমার ৩২তম বদলি। আমি ৮ থেকে ১০ বার বিভাগীয় মামলার মুখোমুখি হয়েছি। এখন এসবই আমার পরম বন্ধু। শাস্তিমূলক বদলি হিসেবে আমাকে থানচিতে বদলি করা হয়েছিল, আর উচ্চ শাস্তিমূলক বদলি হিসেবে এখন আমি সন্দ্বীপে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। খোঁজ নিয়ে বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করবেন এবং বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এস এম মোসলেম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা পর্যায় থেকে জেলা অফিস হয়ে কোনো অভিযোগ আসলে আমরা আমলে নেব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র আসল ম খ ন সন দ ব প ফ সব ক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

একজন ‘প্রধানমন্ত্রী’ ধর্ষণ করেছিলেন ভার্জিনিয়া জিউফ্রেকে: স্মৃতিকথায় দাবি

যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক জেফরি এপস্টেইনের কাছে থাকা ভার্জিনিয়া জিউফ্রেকে অজ্ঞাতনামা একজন ‘প্রধানমন্ত্রী’ নির্মমভাবে মারধর ও ধর্ষণ করেছিলেন। তিনি ভয় পেয়েছিলেন, ‘হয়তো যৌনদাসী হিসেবেই তাঁর মৃত্যু হতে পারে।’

ভার্জিনিয়া জিউফ্রে তাঁর স্মৃতিকথায় এমনটা দাবি করেছেন। প্রায় ছয় মাস আগে অস্ট্রেলিয়ায় জিউফ্রে আত্মহত্যা করেন।

এপস্টেইন ও তাঁর চক্রের বিষয়ে জিউফ্রে লিখেছেন, ‘তাঁদের সঙ্গে থাকার সময় তাঁরা আমাকে বহু ধনী, ক্ষমতাবান মানুষের কাছে পাঠাতেন। নিয়মিতভাবে আমাকে ব্যবহার করা হতো এবং আমাকে অপমান করা হতো। কিছু ক্ষেত্রে আমাকে শ্বাসরোধ, মারধর এবং এমনকি রক্তাক্ত করা হতো।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি মনে করতাম, একজন যৌনদাসী হিসেবে আমার মৃত্যু হতে পারে।’

জিউফ্রের মৃত্যুর ছয় মাস পর গতকাল মঙ্গলবার তাঁর স্মৃতিকথা ‘নোবডি’স গার্ল’ প্রকাশিত হয়েছে। এতে কিশোরী বয়সে তাঁর ওপর হওয়া নির্যাতন এবং নিজের ও তাঁর সঙ্গে নির্যাতিত অন্য মেয়েদের ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে তাঁর সংগ্রামের মর্মান্তিক বর্ণনা রয়েছে।

বইয়ের মার্কিন সংস্করণে জিউফ্রে দাবি করেছেন, তাঁকে একজন লোক ধর্ষণ করেছিলেন, যাঁকে তিনি শুধু ‘একজন সুপরিচিত প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যুক্তরাজ্যের সংস্করণে ওই অংশগুলো প্রায় অভিন্ন। তবে সেখানে ওই লোককে ‘একজন সাবেক মন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বইয়ের দুই সংস্করণে এই অসংগতির কারণ স্পষ্ট নয়।

এপস্টেইনের ক্যারিবীয় দ্বীপে থাকার সময় জিউফ্র কীভাবে তাঁকে এক লোকের কাছে পাচার করেছিলেন, সেই বর্ণনা রয়েছে। ওই ব্যক্তি তাঁকে আগেকার যে কারও চেয়ে বেশি নৃশংসভাবে ধর্ষণ করেছিলেন বলে লিখেছেন জিউফ্রে। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর।

জিউফ্রে লিখেছেন, ‘তিনি বারবার আমার গলা টিপে ধরেছিলেন, যতক্ষণ না আমি জ্ঞান হারাই এবং আমাকে ভয় পেতে দেখে তিনি আনন্দ পেতেন। যখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে ভয়াবহভাবে আঘাত করতেন, তখন তিনি হাসতেন। আমি যখন তাঁকে থামতে মিনতি করতাম, তখন তিনি আরও বেশি উত্তেজিত হতেন।’

জিউফ্রে লিখেছেন, ‘পরে আমি অশ্রুসিক্ত চোখে এপস্টেইনের কাছে অনুরোধ করেছিলাম, যেন তিনি আমাকে আর ওই ব্যক্তির কাছে আর না পাঠান।’

জিউফ্রে স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘আমি তাঁর পায়ে ধরে অনুরোধ করেছিলাম। আমি জানি না, এপস্টেইন লোকটিকে ভয় পেতেন নাকি তাঁর কাছে ঋণী ছিলেন। তিনি আমাকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি; বরং রাজনীতিবিদের নৃশংসতার কথা শুনে নির্দয়ভাবে বলেছিলেন, “কখনো কখনো তুমি এমনটাই পাবে।”’

জিউফ্রের এই স্মৃতিকথা এপস্টেইনের সঙ্গে ধনী ও ক্ষমতাশালী মানুষের কাছাকাছি থাকার কেলেঙ্কারিকে আরও তীব্র করবে। এ ঘটনা যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কয়েক মাস ধরে মার্কিন কংগ্রেসকে পর্যন্ত নাড়া দিয়ে যাচ্ছে।

বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ওপর নতুন করে নজরদারি বাড়বে। যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের এই সদস্যের বিরুদ্ধে জিউফ্রে অভিযোগ এনেছিলেন, তিনি কিশোরী থাকাকালে এই ব্যক্তি তাঁর ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছিলেন।

বর্তমান রাজা চার্লসের ভাই প্রিন্স অ্যান্ড্রু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন।

স্মৃতিকথায় জিউফ্রে দাবি করেছেন, যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তিনি তিনবার যৌন সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। এর মধ্যে একবার যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সময় জেফরি এপস্টেইন ছাড়াও আরও আটজন তরুণী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

জিউফ্রে ও লেখক অ্যামি ওয়ালেস মিলে নতুন বইটি লিখেছেন।

স্মৃতিকথায় জিউফ্রে বলেছেন, ২০০১ সালের মার্চে তিনি প্রথমবার প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এপস্টেইনের বান্ধবী গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল তাঁকে জাগিয়ে বলেছিলেন, দিনটি একটি ‘বিশেষ দিন’ হবে এবং ‘সিন্ডারেলার মতো’ তিনি একজন সুদর্শন প্রিন্সের দেখা পাবেন।

জিউফ্রে আরও বলেছেন, দিনের শেষের দিকে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে যখন তাঁর দেখা হয়, ম্যাক্সওয়েল তাঁকে (অ্যান্ড্রু) বলেছিলেন তাঁর (জিউফ্রে) বয়স অনুমান করতে।

অ্যান্ড্রুর বয়স তখন ৪১ বছর ছিল। তিনি যথাযথভাবেই জিউফ্রের বয়স বলতে পেরেছিলেন। তখন জিউফ্রের বয়স ছিল ১৭ বছর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সৌম‍্যর এত প্রশংসা করবেন না, নজর লাগবে: ফারিয়া
  • ইসরায়েল ইস্যুতে সিনেটে জেরার মুখে পড়লেন কুয়েতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ট্রাম্পের মনোনীত গালিব
  • পাবনায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু, গ্রেপ্তার ২
  • কুবিতে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ২ 
  • টেস্ট অধিনায়কের শর্ট লিস্টে চারজন!
  • শপথ নিলেন নির্বাচিত চাকসু নেতারা, ফেসবুক পোস্টের জেরে ছিলেন না একজন
  • পুলিশ কমিশন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হওয়া নিয়ে শঙ্কা
  • সিলেট সীমান্তে চোরাকারবারিদের হামলা ঠেকাতে বিজিবির গুলি, যুবক নিহত
  • একজন ‘প্রধানমন্ত্রী’ ধর্ষণ করেছিলেন ভার্জিনিয়া জিউফ্রেকে: স্মৃতিকথায় দাবি