‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’–এর আলামত দেখছেন হাসনাত আবদুল্লাহ
Published: 24th, October 2025 GMT
আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ আমলের মতো কারচুপির ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ।
হাসনাত বলেছেন, ‘একটা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দিকে আবার আমরা যাচ্ছি৷ ২০২৪, ২০১৮ ও ২০১৪ সালের যে বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে, আমরা চাই না এই বিতর্কিত নির্বাচনের আর পুনরাবৃত্তি ঘটুক। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, যেভাবে নির্বাচনপ্রক্রিয়া চলছে, সেই প্রক্রিয়ায় আরেকটি প্রি–ইঞ্জিনিয়ার্ড একটি নির্বাচন আবার জাতি উপহার পাবে।’
আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এনসিপির এক সভায় এ কথা বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এনসিপির ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) এবং ঢাকা জেলা শাখা নিয়ে এ সভা হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণেরা রাজনৈতিক দল এনসিপি গঠন করে সেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে রাজনৈতিক দলগুলো নানা মাত্রায় চেষ্টা করেছে অভিযোগ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এখন সচিবালয়ে বসে ডিসি ভাগাভাগি চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে। যেমন চট্টগ্রামের ডিসি আমি নেব, উত্তরবঙ্গের দুইটা ডিসি আমাকে ছাড়তে হবে; যদি রংপুরের ডিসি ছাড়ি, তাহলে আমাকে আরেক জায়গার ডিসি ছেড়ে দিতে হবে।’
দলের নাম উল্লেখ না করে এনসিপি নেতা বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল তার নিয়ন্ত্রিত যে ব্যাংকগুলো দখল করেছে, যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো দখল করেছে, সেই ব্যাংক এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের পোলিং এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটা রাজনৈতিক দল স্কুল কমিটিগুলো ও এগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ দখল করেছে, শিক্ষকদের জিম্মি করেছে। আগামী নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করার জন্য তাঁদের এখনই সশস্ত্র কায়দায় ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সমালোচনা করে হাসনাত বলেন, ‘এই কমিশন একটা স্পাইনলেস (মেরুদণ্ডহীন) কমিশন। নির্বাচন কমিশনকে গনিমতের মাল হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলো ভাগাভাগি করে নিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো উপদেষ্টার কাছে গিয়ে বলে যে এই উপদেষ্টা থাকতে পারবেন না, ওই উপদেষ্টা থাকতে পারবেন; ওই উপদেষ্টা থাকতে পারবেন না, সেই উপদেষ্টা থাকতে পারবেন। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এই দুইটা দল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়ে গিয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে হুঁশিয়ার করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, আপনি যদি এই দর্শকের ভূমিকা পালন করেন.
সেনানিবাসে থাকা ‘এক ব্যক্তি’ও নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে চাইছেন বলে অভিযোগ করেন এনসিপির এই নেতা। নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘তিনি ক্যান্টনমেন্টে বসে বসে ষড়যন্ত্র করছেন, কাকে নির্বাচনে জেতাবেন আর কাকে নির্বাচনে হারাবেন।
`আমরা বলতে চাই, আমাদের দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীর কলঙ্কমুক্ত হওয়ার সুযোগ এসেছে। আবার যদি ক্যান্টনমেন্টে বসে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়, আমাদের আপনারা দাবায় রাখতে পারবেন না। আমাদের ওপর ট্যাংক চালায় দিলেও আমরা রাস্তা থেকে সরব না।’
আরও পড়ুনএনসিপি ক্ষমতায় না গেলেও ‘পোষা’ বিরোধী দল হবে না: সারজিস আলম২ ঘণ্টা আগেএনসিপিকে দুর্বল না ভাবতে অন্য দলগুলোকে আহ্বান জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এনসিপিকে সংখ্যা দিয়ে মাপতে যাবেন না। আপনার লাখ লাখ নেতা-কর্মী রাস্তায় নেমে আসেনি। এই বড়াই আওয়ামী লীগকে দিতে শুনতাম। ছাত্রলীগ নাকি এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ছাত্রসংগঠন ছিল! এশিয়া মহাদেশে, শুধু বাংলাদেশের না! এখন টর্চলাইট দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। এক জায়গায় বলে “জয়”, আবার দুই মাইল দূরে গিয়ে বলে “বাংলা”। নিজেরা দৌড়ের ওপরে থাকে, ব্যানারটা নিয়ে দৌড়ের ওপরে থাকে। এসব লাখ লাখ নেতা-কর্মী কাজে আসেনি। ন্যায্যতার পক্ষে একজন মানুষ থাকলে সে যখন ঘুরে দাঁড়ায়, তখন সারা বাংলাদেশ তাকে সমর্থন দেয়।’
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হাসনাত বলেন, ‘আমি সব সময় বলি, পুলিশের গাড়ি সামনে রেখে একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি...আপনাদের রাজনীতি এখনো শুরু হয়নি। যেদিন পুলিশের গাড়ি পেছনে থাকবে, সেদিন আপনাদের মূলত রাজনীতি শুরু হবে। আপনি যদি মনে করেন প্রশাসন সহায়তা করলে আপনার রাজনীতি এগোবে, তাহলে আপনি ভুল রাজনীতি করছেন, আপনাকে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। অনেকেই ভাবছেন, দল ক্ষমতায় গেলে আমরা ক্ষমতার অংশ হিসেবে...তাহলে আপনারা ভুল পথে আছেন। যাঁদের এই চিন্তা রয়েছে, আপনারা এখনই এনসিপি ত্যাগ করে নিজেদের মতো করে অন্য রাজনৈতিক দলে চলে যেতে পারেন।’
এনসিপির কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে নেতা-কর্মীদের ‘সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ডে’ গা না ভাসানোর আহ্বানও জানান হাসনাত। তিনি বলেন, এনসিপিতে বিভিন্ন সংগঠন থেকে অনেকে গুপ্তচর হিসেবে ‘স্যাবোটাজ’ (অন্তর্ঘাত) করার জন্য এসেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোপাগান্ডায় গা ভাসানোর আগে ‘ফ্যাক্ট চেক’ করতে হবে এবং নিজের সহযোদ্ধার ওপর আস্থা রাখতে হবে, বিপদে তাঁকে সমর্থন দিতে হবে, না হয় সংগঠন কখনোই বড় হবে না।
এনসিপির এ সভায় দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুনবিএনপি-জামায়াত দুই দলকেই কথায় বিদ্ধ করলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী১ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ই উপদ ষ ট এনস প র র র জন র জন য প রব ন য গ কর র ওপর ক ষমত আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি মানতে চাপ দিতে হবে
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশকে ইসরায়েলকে গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন বন্ধে আরও কঠোরভাবে চাপ দিতে হবে। প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা বা অস্ত্র বিক্রি বন্ধের মাধ্যমে এ পদক্ষেপ নিতে হবে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার সবচেয়ে তীব্র সমালোচক দেশের একটি হচ্ছে ন্যাটো সদস্য তুরস্ক। শুরুতে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকলেও এখন তারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় সরাসরি অংশ নিচ্ছে। গত মাসে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এরদোয়ানের বৈঠকের পর থেকে এই ভূমিকা আরও জোরদার হয়েছে।
এরদোয়ান সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। হামাস পক্ষ যুদ্ধবিরতি মেনে চলছে, বরং তারা প্রকাশ্যেই তাদের অঙ্গীকার জানাচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে।
এরদোয়ান আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলকে সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধবিরতি ও চুক্তি মেনে চলতে বাধ্য করার জন্য আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। ইসরায়েলকে তার প্রতিশ্রুতি রাখতে বাধ্য করতে হবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও অস্ত্র বিক্রি বন্ধের মাধ্যমে।
তুরস্ক জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে নজরদারি করতে একটি টাস্কফোর্সে যোগ দেবে। প্রয়োজনে তুর্কি সেনারা সামরিক বা বেসামরিক উভয় ভূমিকায় কাজ করতে পারে। পাশাপাশি, গাজা পুনর্গঠনে তারা সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।
বুধবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দেন, গাজায় তুর্কি নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো ভূমিকাকে তিনি সমর্থন করেন না।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এরদোয়ান বলেন, ‘গাজায় কাজ করবে যে টাস্কফোর্স, তার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এর কাঠামো এখনো স্পষ্ট নয়। এটি বহুমাত্রিক একটি ইস্যু, তাই ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। আমরা গাজাকে যেকোনোভাবে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
তিনি উপসাগরীয় দেশগুলোকে গাজা পুনর্গঠনে অর্থায়নের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এই বিশাল কাজটি কোনো একক দেশের পক্ষে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েল ও তুরস্কের দীর্ঘদিনের মিত্রতা নতুন নিম্নস্তরে নেমে এসেছে। আঙ্কারা অভিযোগ করেছে, নেতানিয়াহুর সরকার গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে—যা ইসরায়েল বারবার অস্বীকার করেছে।