গত অক্টোবরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে (পণ্য রাখার স্থান) ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা নাশকতা ছিল না। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে।

এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি আজ মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তুলে দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি। পরে বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব আখতার আহমেদ।

তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, এটা কোনো ‘সাবোটাজ’ (নাশকতা) ছিল না। বৈদ্যুতিক আর্ক (বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ) পরবর্তী শর্টসার্কিটের কারণে কুরিয়ার শেডের বর্ধিত অংশের উত্তর-পশ্চিম কোণে পাশাপাশি থাকা ডিএইচএল, আরএস এবং এস আর কে কুরিয়ার এজেন্সির খাঁচাগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। তুরস্ক থেকে আসা বিশেষজ্ঞ দল, বুয়েট বিশেষজ্ঞ, অগ্নিনির্বাপণ বিশেষজ্ঞ এবং সিআইডি ফরেনসিকের প্রতিবেদনে উল্লেখিত অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন কুরিয়ার এজেন্সির জন্য নির্ধারিত ৪৮টি ছোট ছোট লোহার খাঁচায় অফিস ছিল। কুরিয়ার শেডের ভেতরে অফিস এলাকায় ফায়ার অ্যালার্ম, স্মোক ডিটেক্টর ও স্প্রিং কলার ছিল না। কোনো অগ্নিনির্বাপক হাইড্রেন্ট ছিল না। কোনো ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা ও সতর্কতা ছাড়াই পলিথিনে মোড়ানো কাপড়ের রোল, রাসায়নিক পদার্থ, পারফিউম এবং বডি স্প্রের বোতল, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র, ব্যাটারি, ওষুধজাত পণ্যের কাঁচামালের মতো অত্যন্ত দাহ্য এবং বিপজ্জনক পদার্থ এলোপাতাড়িভাবে যেখানে-সেখানে স্তূপ করে রাখা ছিল।

আরও পড়ুনদ্রুত জানতে পেরেও শুরুতে কেন কার্গো ভিলেজের আগুন নেভানো যায়নি ২১ অক্টোবর ২০২৫

প্রধান ত্রুটিগুলো

প্রতিবেদনে বলা হয়, এখানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মেনে চলা হয়নি। অ্যাপ্রোন এলাকায় (যেখানে বিমানগুলো পার্ক করা, জ্বালানি ভরা, লোড-আনলোড করা, যাত্রী ওঠানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়) রাখা স্তূপ করা পণ্যের কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি কুরিয়ার শেডে অগ্নিকাণ্ডের স্থলে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টন পণ্য অ্যাপ্রোনে পড়ে থাকে।

এ ছাড়া আমদানি পণ্য সংরক্ষণের কার্যকর ব্যবস্থাপনা এবং তদারকি ছিল না। এমনকি দাহ্য এবং বিপজ্জনক পণ্যের জন্য কোনো বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। বেবিচকের অবকাঠামোর সুরক্ষার জন্য কোনো স্থায়ী ফায়ার স্টেশনও নেই।

প্রেস সচিব জানান, তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ২০১৩ সালের পর এখানে সাতটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে; যা প্রতিরোধ ও নির্বাপণে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ছিল না।

বিমানবন্দর পরিচালনায় স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ

প্রেস সচিব বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থা থেকে সরে এসে বিমানবন্দর কার্যক্রমের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ বা অপারেটর প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে বলে তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে। এ ক্ষেত্রে বেবিচক কেবল নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সঙ্গে সমন্বয় করে বেবিচককে দ্রুত একটি বিশেষ শ্রেণির ফায়ার স্টেশন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া আরও একাধিক সুপারিশ রয়েছে।

গত ১৮ অক্টোবর বেলা আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ সময় উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। আগুন নেভাতে গিয়ে আনসার বাহিনীর ২৫ সদস্যসহ মোট ৩৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ উপদ ষ ট র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরে কিশোরী ধর্ষনের শিকার

‎বন্দরে (১৪) বছরের এক কিশোরী ধর্ষনের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী কিশোরীর দিনমজুর পিতা বাদী হয়ে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে ২ জনকে আসামি করে বন্দর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এ মামলা দায়ের করেন। 

এর আগে গত শনিবার (২২ নভেম্বর) রাত দেড়টায় বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়নের চৈরারবাড়ীস্থ আল আমিনের বসত ঘরে ওই ধর্ষনের ঘটনা ঘটে।

মামলার তথ্য সূত্রে জানা গেছে , গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) বাদীর কিশোরী কন্যা সোনারগাঁয়ে খালার বাড়ি থেকে মায়ের বাসা ঢাকার কেরানীগঞ্জে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা হয়। এ সময় ওই কিশোরী মোগড়াপাড়া থেকে বাসে উঠলে উক্ত বাসের হেলপার রানার সাথে পরিচয় হয়। 

এ সময় সে কেরানীগঞ্জ যাওয়ার জন্য যাত্রাবাড়ী এলাকায় নামতে চাইলে বন্দর থানার চৈরারবাড়ী এলাকার আবুল মিয়ার লম্পট ছেলে হেলপার রানা কিশোরীকে বাস থেকে নামতে বাধা প্রদান করে এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে একই তারিখ রাত ১১টায় বন্দর থানার চৈরারবাড়ী ২নং বিবাদী আল আমিনের বসত ঘরে নিয়ে আসে। 

পরবর্তীতে শনিবার (২২ নভেম্বর) রাত দেড়টায় ১নং বিবাদী বাস হেলপার রানা বাদী কিশোরী মেয়েকে কুপ্রস্তাব দেয়। ওই সময় কিশোরী কু প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষন করে। 

ওই সময় লম্পট আল আমিন বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে পাহাড়া দেয়। পরে ধর্ষক ও তার সহয়তাকারি  চলে গেলে ওই সুযোগে ধর্ষিতা কিশোরী ছাড়া পেয়ে  জনৈক আজাহার মিয়ার বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। পরে পুলিশ ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে ডাক্তারি পরিক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে প্রেরণ করে।

এ ব্যাপারে বন্দর থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান,এ ঘটনায় থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে  মামলা দায়ের হয়েছে। ধর্ষক ও ধর্ষনের সহয়তাকারিকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যহত রয়েছে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ