বাউল আবুল সরকারকে মুক্তি দিয়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি
Published: 25th, November 2025 GMT
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মানিকগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার পালাকার ও বয়াতি আবুল সরকারকে বিনা শর্তে মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে তাঁর ভক্ত ও সমর্থকদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবিও জানিয়েছে তারা।
মানিকগঞ্জে আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার ও তাঁর অনুসারীদের ওপর হামলার পর সারা দেশে ক্ষোভ–বিক্ষোভের মধ্যে আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ দাবিগুলো জানায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
বাউল আবুল সরকারের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর ব্যাখ্যায় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, শত শত বছর ধরে গ্রামবাংলায় প্রচলিত কবিগান ও পালাগানের যে ঐতিহ্য, তারই এক ধারা হলো বিচারগান। এই ধারার গানে দুজন স্বভাবকবি বা শিল্পী দুটি পক্ষে ভাগ হয়ে যুক্তিতর্ক হাজির করেন। কথা ও গান দুই উপায়ে এক পক্ষ অপর পক্ষকে তর্কে হারানোর চেষ্টা করে। সেদিন জীব ও পরম—এই দুই পক্ষে লড়াই করছিলেন আবুল সরকার, প্রতিপক্ষের নামও ছিল আবুল সরকার (যিনি ফরিদপুর থেকে এসেছিলেন)। আলোচ্য আবুল সরকার মহারাজ ছিলেন জীবের পক্ষে, পরমকে ছদ্ম আক্রমণই ছিল তাঁর লড়াইয়ের লক্ষ্য। সেদিন দুই কবির দার্শনিক বাহাস চলে চার ঘণ্টা ধরে। সেই চার ঘণ্টা থেকে কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও কেটে অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে কটূক্তি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। পরে মামলা করা হয়েছে, দ্রুত গ্রেপ্তার করাও হয়েছে।
আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বাউলশিল্পী আবুল সরকার কারাগারে২১ নভেম্বর ২০২৫মানিকগঞ্জের ঘিওরের এক ইমামের করা ধর্ম অবমাননার মামলায় আবুল সরকারকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর গত রোববার তাঁর অনুসারীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সময় ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম–ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে একদল ব্যক্তি তাঁদের ওপর হামলা চালান।
বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে চারটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো আবুল সরকারকে বিনা শর্তে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া; যে সূত্র থেকে ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা; আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে হওয়া সমাবেশে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে কট্টরবাদী ও দঙ্গলবাজদের অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক আবদার রক্ষা করার চর্চা বাদ দিয়ে সব নাগরিকের জন্য সমান আচরণ করা।
আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী আবুল সরকারের ভক্তদের ওপর হামলা, আহত ৪২৩ নভেম্বর ২০২৫বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার আমলের শেষের দিকে টাঙ্গাইলের বাউল রীতা দেওয়ানের বিরুদ্ধে একই ছকে একাধিক মামলা করা হয় এবং গ্রেপ্তার করা হয়। বাউল–ফকিরদের ওপর কট্টরবাদীদের এ রকম বিদ্বেষ ও হামলা নতুন নয়। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সময়ে অতি ডানপন্থীদের আস্ফালন যেমন বেড়েছে, তেমনি সরকারের দিক থেকে আশকারাও তারা পেয়েছে। আগে বাউলের মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করলে সেখানে অন্তত হামলা হতো না। এবারে হলো।
আরও পড়ুনধর্ম অবমাননার অজুহাত তুলে হামলা-মামলা বন্ধের দাবি ২৫৮ নাগরিকের২৪ নভেম্বর ২০২৫সরকারের প্রশ্রয়ের কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, ৫ আগস্টের পরে শত শত মাজার ভাঙা হয়েছে, গানের আসর পণ্ড করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের বহু ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ধ্বংস করা হয়েছে, পথেঘাটে নারীদের অপমান–অপদস্ত করা হয়েছে, এমনকি ‘ইসলামবিরোধী’ চিহ্নিত করে কবর থেকে লাশ উঠিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দঙ্গলপ্রবণতা সমাজের সর্বস্তরে দেখা যাচ্ছে, তার কিছুটা অভ্যুত্থান–পরবর্তী অনুমিত বাস্তবতা ধরা গেলেও বেশির ভাগটাই সরকারের নীরবতা বা প্রশ্রয়ের কারণে হচ্ছে।
বাউলদের ওপর হামলার ঘটনায় দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন আনু মুহাম্মদ, গীতি আরা নাসরিন, কামরুল হাসান মামুন, ফাহমিদুল হক, আসিফ মোহাম্মদ শাহান, সামিনা লুৎফা, কাজী মারুফুল ইসলাম, কাজলী সেহরীন ইসলাম, মোশাহিদ সুলতানা, মার্জিয়া রহমান, রুশাদ ফরিদী, মাহবুবুল হক ভূঁইয়া প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ হ ন ত কর ম ন কগঞ জ সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
১৩ বছর ধরে টিউশন মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে কেয়ারটিউটরস অ্যাপ
এখন থেকে ১৩ বছর আগে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের হাতে কেয়ারটিউটরস নামে টিউশনের সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক একটি মাধ্যম গড়ে ওঠে ঢাকায়। অনলাইনের পাশাপাশি সম্পূর্ণ অ্যাপভিত্তিক টিউশন ব্যবস্থাপনার ইকোসিস্টেমে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সেবাগ্রহীতার সংখ্যাও পৌঁছেছে ৫ লাখের ওপরে।
কেয়ারটিউটরস অ্যাপ ইকোসিস্টেম তৈরি করে যেখানে নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অ্যাপটি টিউটর ও সেবাগ্রহীতাদের যাচাই করে। এ ছাড়া অ্যাপ থেকেই টিউটররা প্ল্যাটফর্ম চার্জের পেমেন্ট করতে পারেন। এতে রয়েছে অ্যাটেনডেন্স ট্র্যাকিং, যা অভিভাবকদের বাসার বাইরে থেকেও টিউটরের আসা–যাওয়ার হালনাগাদ তথ্য দেয়। কনফারমেশন লেটারের মাধ্যমে টিউশন চুক্তি ডিজিটাল সাইন করে নিশ্চিত করা যায়। টিউটররা টিউশন হালনাগাদ সরাসরি অ্যাপে জানাতে পারেন এবং রিয়েল-টাইম নোটিফিকেশনের মাধ্যমে নতুন টিউশন, অ্যাপ্লাই স্ট্যাটাস, প্রোফাইল ভিউ বা সার্ভিস হালনাগাদ সম্পর্কে জানতে পারেন। একইভাবে অভিভাবক-শিক্ষার্থীরাও এসব নোটিফিকেশন পান।
দেশে অনলাইন টিউশন খোঁজার প্ল্যাটফর্ম কেয়ারটিউটরস ১৩ বছরের পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরার একটি রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে কেয়ারটিউটরসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন ছোট নয়, আকাশছোঁয়া। দেশের সেরা টিউটর খোঁজার প্ল্যাটফর্ম হওয়া এখন আমাদের অঙ্গীকার।’
কেয়ারটিউটরসের অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস—দুই প্ল্যাটফর্মেই পাওয়া যায়। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি এ পর্যন্ত ৩ লাখের বেশিবার নামানো হয়েছে, যেখানে ৪ হাজার ৫৮০-এর বেশি ব্যবহারকারী রেটিং ও রিভিউ দিয়েছেন। আইওএস অ্যাপের ডাউনলোডের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং ৬৬৬-এর বেশি ব্যবহারকারী রিভিউ প্রদান করেছেন। এর দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮-১০ হাজারের মধ্যে রয়েছে।
অ্যাপের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে এটি বিষয়, ক্লাস, এলাকা ও বাজেট অনুসারে উপযুক্ত টিউটর খোঁজার সুবিধা দেয়, যাতে অভিভাবক বা শিক্ষার্থীরা মাত্র কয়েকটি ক্লিকে পছন্দমতো পরিষেবা পেতে পারেন।
এ ছাড়া টিউটরদের এক ক্লিকে টিউশনে অ্যাপ্লাই করার সুযোগ আছে এখানে। বিস্তারিত প্রোফাইল ও রেটিং সিস্টেম থাকায় অভিভাবকেরা টিউটরের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও রিভিউ দেখে সিদ্ধান্ত নেন। লোকেশনভিত্তিক ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে টিউটররা নিজের এলাকার টিউশনগুলো সহজেই খুঁজে পান এবং নিজের যোগ করা লোকেশনে টিউশন পোস্ট হলেই নোটিফিকেশন পান।
কেয়ারটিউটরসে অনলাইন ও হোম টিউশন—দুই সুবিধাই আছে। অভিযোগ কিংবা পরামর্শের ক্ষেত্রে ‘মেসেজ টু সিইও’ অপশন ব্যবহার করে সরাসরি প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছে জানানো যায়। আবার ‘এক্সক্লুসিভলি ইয়োরস’ সুবিধার মাধ্যমে ৪০টির বেশি কোম্পানির বিশেষ ছাড় সুবিধা উপভোগ করা যায়।
কেয়ারটিউটরস পাওয়া যাবে এই ওয়েব ঠিকানায়। দেশের সব বিভাগীয় শহরসহ সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায় সেবা প্রসারিত করেছে। কেয়ারটিউটরসে ৪ লাখ ৫০ হাজারের বেশি টিউটর যুক্ত। যাঁরা একাডেমিক, ছবি আঁকা, ধর্মীয় শিক্ষা, ভাষা, দক্ষতা উন্নয়নসহ ১৩টি শ্রেণিতে পড়ান। মাসুদ পারভেজ জানান, আগামী বছরগুলোতে নতুন সুবিধা যুক্ত করে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও টিউটরদের আরও ভালো অভিজ্ঞতা দেওয়ার লক্ষ্যে কেয়ারটিউটরস কাজ করে যাচ্ছে।