ঢাকার মানুষের মাথাপিছু আয় ৫১৬৩ ডলার
Published: 25th, October 2025 GMT
ঢাকা জেলার মানুষের গড়ে মাথাপিছু আয় বর্তমানে ৫ হাজার ১৬৩ মার্কিন ডলার। এটি দেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয়ের প্রায় দুই গুণের কাছাকাছি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত অর্থবছর (২০২৪–২৫) শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৮২০ মার্কিন ডলার।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ইকোনমিক পজিশন ইনডেক্স (ইপিআই) বা অর্থনৈতিক অবস্থান সূচক প্রণয়নবিষয়ক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ঢাকার মানুষের মাথাপিছু আয়ের এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সংস্থা, অর্থনীতিবিদ, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা চেম্বার জানায়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১১ সালে করা জেলাভিত্তিক জিডিপির তথ্যকে ভিত্তি ধরে এ জেলার বিনিয়োগ, ভোগ, ব্যয়, আমদানি, রপ্তানি, আয়তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা জেলার মাথাপিছু আয়ের এ হিসাব অনুমান করা হয়েছে। যদিও ঢাকার মাথাপিছু আয় ও জিডিপির এসব তথ্যের সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি।
সর্বশেষ গত মে মাসে জাতীয় মাথাপিছু আয়ের তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস। এতে উঠে আসে, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন (২০২৪–২৫ অর্থবছর) ২ হাজার ৮২০ মার্কিন ডলার। এই মাথাপিছু আয় এযাবৎকালের রেকর্ড। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৮২ ডলার। গত অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৩৮ ডলার। তবে বিবিএস বিভাগ বা জেলাভিত্তিক মাথাপিছু আয়ের হিসাব করে না।
মাথাপিছু আয় ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরীণ আয়ের পাশাপাশি প্রবাসী আয়সহ যত আয় হয়, তা একটি দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে এই হিসাব করা হয়।
বিবিএসের হিসাবে দেখা গেছে, ২০২১–২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। এরপর ২০২২–২৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৪৯ ডলারে। গত অর্থবছরে তা আরও কমে ২ হাজার ৭৩৮ ডলার হয়। মূলত ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় বিবিএসের হিসাবে মাথাপিছু আয়ের পার্থক্য হয়।
কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ ঢাকায়আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এ কে এম আসাদুজ্জামান পাটোয়ারী। তিনি জানান, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বড় একটি অংশ সম্পন্ন হয় ঢাকা জেলায়। দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশ আসে এই জেলা থেকে। ঢাকাকে বিবেচনা করা হয় আর্থিক খাতের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাড়ে ৭০০–এর বেশি কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ঢাকা জেলায় অবস্থিত।
আসাদুজ্জামান জানান, দেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩২ শতাংশের বাস ঢাকা জেলায়। আর মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ ঢাকায় থাকেন। ঢাকা খুবই শিল্পঘন জেলা। দেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৪০ শতাংশের বেশি হয় এ জেলা থেকে। সব মিলিয়ে মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) এককভাবে ৪৬ শতাংশ অবদান রাখছে ঢাকা জেলা।
ইপিআই সূচক চালু করবে ঢাকা চেম্বারদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে ইকোনমিক পজিশন ইনডেক্স (ইপিআই) বা অর্থনৈতিক অবস্থান সূচক প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা চেম্বার। প্রতি তিন মাস পরপর ইপিআই সূচক প্রকাশ করা হবে। এতে মূলত শিল্প ও সেবা খাতের অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের পরিবর্তন চিহ্নিত করা হবে এবং তার আলোকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।
ঢাকা চেম্বারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় ইপিআই সূচক নির্ধারণের প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ পরিমাপের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন সূচক, যেমন বিসিআই, ইজ অব ডুইং বিজনেস ইনডেক্স, জিডিপি প্রভৃতি রয়েছে। তবে এসব সূচক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রকৃত পরিবর্তন ও কারণগুলো যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে পারে না। সরকার অনেক সময় ভূ–অর্থনৈতিক পটভূমি নীতিনির্ধারণ করে, কিন্তু হালনাগাদ তথ্য না থাকায় সেগুলো সব সময় কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।
এমন বাস্তবতায় ইপিআই সূচক প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তাসকিন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ঢাকা জেলাকে কেন্দ্র করে এই সূচক প্রকাশ করা হবে। ভবিষ্যতে সারা দেশে এর আওতা বাড়ানো হবে।
তাসকিন আহমেদ আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক কার্যক্রম মূল্যায়নের প্রচলিত পদ্ধতিতে আমরা সাধারণত বার্ষিক বা প্রান্তিক জাতীয় হিসাবের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু দ্রুত পরিবর্তনশীল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও ব্যবসায়িক আস্থা মূল্যায়নে রিয়েলটাইম বা হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণ জরুরি।’
ডিসিসিআই প্রণীত ইপিআই দেশের উৎপাদন ও সেবা খাতের কার্যক্রম ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে মূল্যায়ন করবে। এর মাধ্যমে উৎপাদন, বিক্রয়, রপ্তানি, ক্রয়াদেশের প্রবাহ, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের প্রবণতা জানা সম্ভব হবে। প্রাথমিকভাবে সূচকের হিসাবে ছয়টি উপখাত রাখা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে তৈরি পোশাক, বস্ত্র, পাইকারি ও খুচরা বিক্রয়, আবাসন, পরিবহন ও সংরক্ষণ এবং ব্যাংক খাত।
অর্থনীতি ভালো করছেগত বছরের দুটি প্রান্তিকের তথ্য নিয়ে প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক অবস্থান সূচকের (ইপিআই) তথ্য প্রকাশ করেছে ঢাকা চেম্বার। এ জন্য শূন্য থেকে এক পর্যন্ত মোট ছয়টি স্কোর নির্ধারণ করেছে তারা। এগুলো হচ্ছে (অর্থনীতির গতি) খুবই কম, কম, মাঝামাঝি, বেশি ও অনেক বেশি। এর মধ্যে শূন্য দশমিক ৮০ স্কোর পেয়ে ২০২৪ সালের অক্টোবর–ডিসেম্বর প্রান্তিকে ঢাকা জেলার অর্থনীতি বেশি বা ভালো গতিতে এগিয়েছিল বলে জরিপে উঠে আসে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, ওই বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে অর্থনীতি অনেকটা স্তিমিত ছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কিছু ত্বরিত সিদ্ধান্তের কারণে পরের প্রান্তিকে অর্থনীতি ভালো করেছে।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন সূচকে দেখা যায়, ‘দেশের অর্থনীতি ভালো করছে। কিন্তু বৈশ্বিক সূচকের কিংবা অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখতে পাই, আমরা বিভিন্ন সূচকে সবচেয়ে নিচের দিকে থাকি। তাই এসব সূচকের তথ্যে আত্মতুষ্টির কারণ নেই; বরং এসব সূচককে বৈশ্বিক মানের সঙ্গে তুলনা করে প্রকাশ করলে সেটি বেশি কার্যকর হবে।’
আর ইপিআই সূচকটি প্রতি মাসে প্রকাশ করা ও সূচকের পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দেন ঢাকা চেম্বারের আরেক সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশনের (এনপিও) মহাপরিচালক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন জনস খ য ব ব এস অবস থ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অর্থ আত্মসাতে ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি’ জোট
রাজধানীর আগারগাঁও বাজার বণিক সমবায় সমিতির বৈদ্যুতিক সংযোগের হিসাব নম্বর-১৭০০৪৯৯০ অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮২৭ টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
কিন্তু সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি ওই অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিল বাবদ ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৭৯ টাকা ব্যয় দেখিয়েছে। যা প্রকৃত পরিশোধের চেয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা বেশি। সমিতির সদস্যদের অভিযোগ, অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে কমিটির নেতারা ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
বিদ্যুৎ বিলের বাইরে নেতারা কুলখানি ও মিলাদ, আপ্যায়ন, প্রশাসনিক খরচ, অনুদান, সম্মানী ভাতা, মামলার খরচ, বিদ্যুতের মালামাল ক্রয় ও যাতায়াত বাবদ ব্যয় দেখিয়ে গত দুই অর্থবছরে অন্তত দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ মর্মে সমিতির সদস্যরা জেলা সমবায় কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। অনেক খাতে টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে, যেখানে সমিতির ব্যয়ের সুযোগ নেই এবং সদস্যদের অনুমোদনও নেওয়া হয়নি।
বিদ্যুৎ বিল বেশি দেখানোর সুযোগ নেই। কোনো কারণে অতিরিক্ত খরচ হলে তা সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে দেখানো হয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) যার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, সমিতির চার সদস্যের একটি চক্র বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।সমিতির সভাপতি এ বি এম নুরুল হক চৌধুরীসমিতির সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, বর্তমান কমিটির নেতারা ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় থেকেই সাধারণ সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করছেন। প্রতিবাদ করলে সদস্যপদ বাতিল ও নানাভাবে অত্যাচার করা হয়। অতীতে এর মূলে ছিলেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগপন্থী নেতারা। বর্তমানে বিএনপিপন্থী নেতারা সক্রিয় এবং আওয়ামীপন্থীদের যোগসাজশে টাকা আত্মসাৎ চলছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সমিতির মার্কেট ভবনের নির্মাণকাজ চলছে নূরানী কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের মাধ্যমে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি দোকানের আকার প্রায় ৭০ বর্গফুট বা তার বেশি। কিছু দোকান একত্রে বড় আকারে তৈরি হচ্ছে। নকশা অনুযায়ী, দুটি বেজমেন্টসহ ভবনটি ১৩ তলার। বেজমেন্ট-২–এ পার্কিং, বেজমেন্ট-১–এ কাঁচাবাজার এবং নিচতলা থেকে দোকান থাকবে। মোট সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ৪৫৫টির বাইরে আরও অর্ধশত দোকান তৈরি হবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে অতিরিক্ত প্রায় দুই লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি এ বি এম নুরুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ বিল বেশি দেখানোর সুযোগ নেই। কোনো কারণে অতিরিক্ত খরচ হলে তা সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে দেখানো হয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) যার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, সমিতির চার সদস্যের একটি চক্র বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম নিয়োগ করা কর্মকর্তাকে নিয়ে তাঁদের আপত্তির কারণে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা এইচ এম সহিদ-উজ-জামান ‘বিএনপি-আওয়ামী’ জোটসাধারণ সদস্যদের টাকা আত্মসাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সমিতির সদস্যরা। অতীতে কমিটিতে থাকা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করতেন। এখন এ কাজে তাঁদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন, যোগসাজশ করছেন কমিটিতে থাকা বিএনপিপন্থী নেতারা। ফলে পটপরিবর্তনের পর সদস্যরা এসব নিয়ে প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
বাজারের বর্তমান কমিটি নেতারা ২০২৩ সালের মার্চে নির্বাচিত হয়েছেন। ওই সময় ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফোরকান হোসেন এবং থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসফিকুর রহমানের (উজ্জ্বল) প্রভাব ছিল। তাঁদের প্রভাবে সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন এ বি এম নুরুল হক চৌধুরী, যিনি শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। সাধারণ সম্পাদক আব্দুন নুর-শাহী এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক মামুন হোসেন ছিলেন থানা কমিটির সদস্য।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর কমিটিতে থাকা বিএনপিপন্থী নেতারা সক্রিয় হন। এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহসভাপতি মো. নুরুজ্জামান। তাঁর ছেলে মো. মনিরুজ্জামান ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির শেরেবাংলা নগর ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক। আছেন শেরেবাংলা নগর থানা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য সমিতির পরিচালক শাহ আলম। বিএনপিপন্থী আরও তিন পরিচালক—শাহাদাত হোসেন, আতাউল কবির ও আবু সাঈদও রয়েছেন।
প্রশ্রয় ও যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করছেন থানা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য পরিচালক শাহ আলম। তিনি বলেছেন, গত ১৬ বছর এতটাই নির্যাতিত হয়েছেন যে তিনি দেশেও থাকতে পারেননি। তাঁদের কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেননি, দেবেন না। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পদে থাকার বিষয়ে সমিতির সভাপতি এ বি এম নুরুল হক চৌধুরী বলেন, বাজারের স্বার্থে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ রাখতেই ওই পদ গ্রহণ করেছিলেন। নির্বাচনে তাঁর বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী থাকায় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের সহযোগিতায় কোষাধ্যক্ষ পদে ছিলেন।
সদস্যদের অভিযোগ, অতীতে সমিতি থেকে কারও কুলখানির আয়োজন করা হয়েছে বলে সদস্যরা কেউ জানেন না। এ ছাড়া কুলখানি আয়োজন করবেন মৃত ব্যক্তির পরিবার, স্বজন ও সন্তানেরা। কোনো মিলাদ মাহফিলের বিষয়েও সদস্যরা জানেন না।কুলখানি, মিলাদ, অনুদানে ব্যয়বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতারা কুলখানি, মিলাদ মাহফিল ও অনুদান বাবদ সমিতির টাকার ব্যয় দেখিয়েছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওই খাতে ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৩ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সমিতি থেকে অনুদান দেওয়া হয় প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। আর ২০২৪-২৫–এ খাতে বরাদ্দ ছিল ছয় লাখ টাকা।
সদস্যদের অভিযোগ, অতীতে সমিতি থেকে কারও কুলখানির আয়োজন করা হয়েছে বলে সদস্যরা কেউ জানেন না। এ ছাড়া কুলখানি আয়োজন করবেন মৃত ব্যক্তির পরিবার, স্বজন ও সন্তানেরা। কোনো মিলাদ মাহফিলের বিষয়েও সদস্যরা জানেন না। মিলাদ-কুলখানিতে অর্থ ব্যয়ের জন্য সদস্যরা অনুমোদনও দেননি। তাই ওই সব খাতে সদস্যদের আমানতের টাকা ব্যয়ের সুযোগ নেই। সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ করেই ওই তিন খাতে ব্যয় দেখিয়েছেন সমিতির নেতারা।
অভিযোগকারী আরেক সদস্য ইসফাকুল কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কমিটির নেতারা সদস্যদের উপস্থিতির স্বাক্ষরকে প্রস্তাব অনুমোদনের স্বাক্ষর দেখিয়ে ভুয়া প্রতিবেদন দিয়েছেন। আসলে অধিকাংশ সদস্য আত্মসাতের বাজেট সমর্থন করেননি।
ছয় খাতের ব্যয় নিয়েও আপত্তিসদস্যদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতারা ছয় খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় দেখিয়েছেন। খাতগুলো হলো আপ্যায়ন, প্রশাসনিক, সম্মানী ভাতা, মজুরি, মামলা পরিচালনা ও যাতায়াত। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সম্মানী ভাতায় ৬ লাখ ৯৪ হাজার, আপ্যায়নে ৬ লাখ ৩৬ হাজার এবং প্রশাসনিক খরচে ৫ লাখ ২২ হাজার টাকা। কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-বোনাস দেওয়ার পরও আলাদা করে মজুরি বাবদ দেড় লাখ ও যাতায়াতে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। অথচ সমিতির কাজের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ এক-দুই কিলোমিটার দূরের সংশ্লিষ্ট সমবায় কিংবা গণপূর্তের কার্যালয়ে যাওয়া লাগে।
অভিযোগকারীরা বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে নতুন মার্কেট ভবনের নির্মাণকাজ শুরুর পর সব দায়িত্ব গণপূর্ত ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। সদস্যরা কিস্তিতে সেই টাকা পরিশোধ করছেন। তাই আপ্যায়ন কিংবা প্রশাসনিক খরচ ঠিকাদারের বহন করার কথা। এসব খাতে দেখানো বিপুল ব্যয় মূলত আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ওই ছয় খাতে আগের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি, অর্থাৎ ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সম্মানী ভাতায় ২০ লাখ এবং আপ্যায়ন ও মামলা খরচে ১০ লাখ করে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম নিয়োগ করা কর্মকর্তাকে নিয়ে তাঁদের আপত্তির কারণে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা এইচ এম সহিদ-উজ-জামান তদন্ত চলছেসদস্যদের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন ৬ অক্টোবর দেওয়ার কথা ছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকা জেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির জানান, তাঁর অসুস্থতার কারণে আরেকজন কর্মকর্তা কাজটি করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ওই কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরানো হলে তিনি নতুনভাবে কাজ শুরু করেছেন। সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে আয়-ব্যয়ের সব তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্য পেলে সেগুলো যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তা এইচ এম সহিদ-উজ-জামান প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম নিয়োগ করা কর্মকর্তাকে নিয়ে তাঁদের আপত্তির কারণে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।