ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা আগামীকাল সোমবার প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ।

গতবারের চেয়ে এবার ভোটকেন্দ্র বাড়ছে, খসড়া তালিকায় ৪২ হাজার ৬১৮টি ভোটকেন্দ্র ছিল। চূড়ান্ত হওয়ার পর তা কতটিতে দাঁড়াচ্ছে, তা আগামীকালই জানা যাবে।

ইসির ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০ অক্টোবরের মধ্যে ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। এর ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও কেন তা প্রকাশ করা হয়নি, জানতে চাইলে আখতার আহমেদ বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের ওটা চূড়ান্ত হয়েছে। কিছু সংশোধনের প্রস্তাব এসেছিল, সেটাও করা হয়েছে। কাল সকালে ব্রিফ করে দেব।’

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ৪২ হাজার ১৫০টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৫৮টি। আখতার আহমেদ গত সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন, এবার মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ ৬১ হাজার ২০১ জন। গড়ে প্রতি তিন হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র হবে, তাতে কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪২ হাজার ৬১৮টি।

নিবন্ধন প্রক্রিয়া এই সপ্তাহে শেষ হবে

নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চলতি সপ্তাহের মধ্যে শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দল নিবন্ধনের ব্যাপারে মাঠপর্যায় থেকে কিছু বাড়তি তথ্য এসেছে। এটা পর্যালোচনা চলছে। এই সপ্তাহের ভেতর করে দেওয়া হবে। কারণ, আমাদেরও তো একটা দায় আছে, আমাদের দিক থেকে তাগিদ আছে।’

ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসিতে নিবন্ধনের জন্য ১৪৩টি দল আবেদন করেছিল। প্রাথমিক বাছাইয়ে ২২টি দল টিকেছিল, যেগুলোর বিষয়ে মাঠপর্যায়ে তথ্য যাচাই করে ইসি। গত সেপ্টেম্বরে ইসি জানিয়েছিল, দুটি দল শর্ত পূরণ করতে পেরেছে। তিনটি দলের বিষয়ে আরও পর্যালোচনা করা হবে। ৯টি দলের বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করা হবে।

ইসির শর্ত পূরণ করলেও প্রতীকের প্রশ্নে ঝুলে আছে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নিবন্ধন। এনসিপি শাপলা প্রতীক চাইলেও তালিকায় নেই বলে তা দিতে না পারার কথা বলছে ইসি।

এনসিপির প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, সাংবাদিকেরা তা জানতে চাইলে আখতার আহমেদ সরাসরি কিছু বলেননি। তিনি বলেন, ‘প্রতীকের ব্যাপারটি আমরা পরে জানাব।’

‘সবকিছু ১০০% করা সম্ভব নয়’

ইসির ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অগ্রগতি কতদূর, সাংবাদিকেরা তা জানতে চাইলে আখতার আহমেদ বলেন, ‘সবকিছু ১০০ পারসেন্ট (শতাংশ) করা সম্ভব নয়। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কিছু জায়গায় অ্যাডজাস্টমেন্ট, কিছু বিষয় আগেই কমপ্লিট (শেষ) করেছি। কিছু বিষয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে এবং কিছু কিছু বিষয়ে আরেকটু হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। সবকিছুই নিক্তিতে মেপে সময় ও দিনক্ষণ-তারিখ অনুযায়ী করা সম্ভব নয়। এই অ্যাডজাস্টমেন্ট আমাদের রাখতে হবে।’

তবে এখন পর্যন্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার মতো কোনো কারণ বা পরিস্থিতি হয়নি, বলেন আখতার আহমেদ। তখন সাংবাদিকেরা জানতে চান, গতকাল শনিবার রাতে নির্বাচন ভবনের দক্ষিণ পাশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ইসি মামলা করবে কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশ অভিযুক্তকে আটক করেছে। এটা বাইরে ফেটেছে। ইসিকে যদি মামলা করতে হয়, করব।’

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আজ বিকেলে কমনওয়েলথের একটি পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও ইসি সচিব। এই বৈঠক প্রসঙ্গে আখতার আহমেদ বলেন, তাঁরা নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এ ছাড়া প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন, প্রযুক্তির অপব্যবহার, নির্বাচনকালীন সময়ে নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আরও পড়ুনত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা২৮ আগস্ট ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আখত র আহম দ ভ টক ন দ র

এছাড়াও পড়ুন:

আট দশক পর দেশের মাটিতে ফিরে যাওয়া

জাপানের টোকিওর নগরকেন্দ্রের ব্যস্ত এক জায়গাজুড়ে আছে বিতর্কিত একটি শিন্তো মন্দির। জাপানে যেটা ইয়াসুকুনি মন্দির নামে পরিচিত। ১৮৬৯ সালে যাত্রা শুরু করা শিন্তো ধর্মের এই মন্দির তৈরি করা হয়েছিল মূলত এক বছর আগে গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সামন্ত্রতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে আধুনিক জাপানের ভিত্তি তৈরি করে নেওয়া মেইজি পুনরুত্থানের সময় গৃহযুদ্ধে নিহত বিজয়ী পক্ষের সৈন্যদের ‘দেবতুল্য’ ভাবমূর্তি তুলে ধরার উদ্দেশ্যে। ফলে বিজয়ী পক্ষের নিহত সব সৈনিকের নাম সেখানে দেবতার সারিতে সন্নিবেশিত আছে, পরাজিতদের নয়।

দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জীবন বিসর্জন দেওয়ার বিনিময়ে পাওয়া এ রকম প্রতিদানের মধ্যে বিতর্কের কিছু থাকার কথা নয়। দীর্ঘকাল ধরে এটা নিয়ে কোনো রকম বিতর্কও ছিল না। তবে সেই হিসাব পাল্টে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সর্বোচ্চ সাজা পাওয়া জাপানের সেই সময়ের কয়েকজন নেতাকে ১৯৭০–এর দশকের শেষ দিকে ইয়াসুকুনির দেবতার তালিকায় যুক্ত করার প্রচেষ্টা চালানোর মধ্য দিয়ে।

ফলে যুদ্ধের পুরো সময় ধরে জাপানের যে কয়েক লাখ তরুণ দেশপ্রেমে নিবেদিত থেকে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, ইয়াসুকুনির সেই ঘটনার আলোকে তাঁদেরও এখন ধরে নেওয়া হচ্ছে ‘বিতর্কিত’ হিসেবে। জাপানের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের বাইরে অন্য একটি মর্মান্তিক দিক হচ্ছে এটা।

যেকোনো যুদ্ধের বলি সর্বাগ্রে হতে হয় যুদ্ধে জড়িত কোনো একটি দেশের তরুণদের। নিজেরা না চাইলেও দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিতে যাঁদের সাধারণত বাধ্য করা হয়। এর পরোক্ষ ফলশ্রুতিতে নেতৃত্বের স্খলনের জন্য নেতারাই কেবল নয়, সেসব তরুণকেও চিহ্নিত করা হয় ‘খলনায়ক’ হিসেবে।

এমনটাই সম্ভবত ঘটেছে আট দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত জাপানের কয়েকজন তরুণ সৈনিকের জীবনে। তাঁদের অনেকেরই সম্ভবত জানা ছিল না কেন তাঁরা যুদ্ধে জড়িত। আর যাঁরা তাঁদের যুদ্ধের ময়দানে পাঠিয়েছিলেন, তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা সেই তরুণদের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী ঘটে, তা নিয়ে খুব বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করার দরকার সম্ভবত নেই।

সমাধিতে চিরনিদ্রায় শায়িত জাপানিদের নামফলক

সম্পর্কিত নিবন্ধ